প্রলয়োল্লাস || Praloyollas

প্রলয়োল্লাস– ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি স্বনামধন্য কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা’ কাব্য থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন এবং অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

Praloyollas by Kazi Najrul Islam

Praloyollas is a bengali poem written by Kazi Najrul Islam. It is included in the syllabus of West Bengal Board of Secondary Education (WBBSE) Class Ten Bengali (first language). For short and long question from this story, read this post carefully.

কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়োল্লাস কবিতা
কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়োল্লাস কবিতা

প্রলয়োল্লাস

পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী মোট সাতটি কবিতা থেকে তিনটি ১ নম্বরের বহু বিকল্পীয় প্রশ্ন, চারটি ১ নম্বরের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, একটি ৩ নম্বরের সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং একটি ৫ নম্বরের রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। এখানে ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।

প্রলয়োল্লাস: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

১. ‘হাঁকে ওই’- কী বলে হাঁক দেয়?

উঃ “জয় প্রলয়ংকর” বলে হাঁক দেয়।

২. ‘আসছে ভয়ংকর!’ – ভয়ংকর কীভাবে আসছে?

উঃ কবি বলেছেন, বজ্রশিখার মশাল জেলে আসছে ভয়ংকর।

৩. ‘এবার মহানিশার শেষে’ উষা কীভাবে আসবে?

উঃ মহানিশা সমাপ্ত হলে ঊষা আসবে অরুণ হেসে।

৪. ‘দিগম্বরের জটায়’ কী হাসে?

উঃ দিগম্বরের জটায় হাসে ‘শিশু-চাঁদের কর’ বা সদ্য উদিত চাঁদের কিরণ।

৫. ‘রণিয়ে ওঠে’ – কোথায় কী রণিয়ে ওঠে?

উঃ বজ্ররূপ গানে এবং ঝড় তুফানে রণিয়ে ওঠে হ্রেষার কাঁদন।

৬. ‘আসছে নবীন’ – কী করতে আসছে?

উঃ জীবনহীন অসুন্দরকে চিরতরে ছেদ করতে আসছে নবীন।

৭. ‘…সে চিরসুন্দর!’- কেন তাকে চিরসুন্দর বলা হয়েছে?

উঃ সে ভাঙে আর গড়ে, তাই সে চিরসুন্দর।

৮. ‘…এবার ওই আসে সুন্দর!’ – কোন বেশে সুন্দর আসছেন?

উঃ কাল ভয়ংকরের বেশে সুন্দর আসছেন।

৯. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি কীসের মধ্যে ‘নূতনের কেতন’ দেখেছেন?

উঃ ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি কালবৈশাখীর ঝড়ের মধ্যে ‘নূতনের কেতন’ দেখেছেন

১০. ‘স্তব্ধ চরাচর’- চরাচর স্তব্ধ কেন?

উঃ প্রলয়নেশার নৃত্য-পাগল ‘ভয়ঙ্কর’-এর ‘অট্টরোলের হট্টগোলে’ চরাচর স্তব্ধ হয়েছিল।

প্রলয়োল্লাস: সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্ন

প্রশ্ন- “আসছে নবীন- জীবনহারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন?”-  উক্তিটির তাৎপর্য লেখাে। ১+২

উত্তর- বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় প্রলয়ের দেবতা রুদ্রদেবকে আহ্বান জানানো হয়েছে। কবির কল্পনায়, দেশের নবীন প্রজন্মই হল নবযুগের বার্তাবাহী সেই রুদ্রদেব। দেশমাতৃকার মুক্তিসাধনার ব্রতে ব্রতী তরুণ বিপ্লবীরা প্রথমেই জরাজীর্ণ পুরাতন মানসিকতার উপর আঘাত হানবে। যাকিছু জীবনীশক্তিহীন তথা অসুন্দর, সেই সবকিছুর বিনাশ করবে তারা। এইভাবে একটি মৃতপ্রায় সমাজব্যবস্থার ধ্বংসের মধ্য দিয়ে তারা নতুন যুগের সূচনা করবে। (শব্দসংখ্যা- ৫৮) 

প্রশ্ন- “প্রলয় বয়েও আসছে হেসে”- উদ্ধৃত অংশের তাৎপর্য লেখ। ৩

উত্তর- কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় প্রলয়ের দেবতা রুদ্রদেবকে আহ্বান জানানো হয়েছে। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, ধ্বংসের দেবতা রুদ্রদেব পুরাতন যুগের অবসান ঘটিয়ে নতুন যুগের সূচনা করেন। শুধু পুরাণে নয়, ইতিহাসেও দেখা গেছে যে, পুরাতন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে নতুন সভ্যতার জন্ম হয়। কালের নিয়ম এটাই যে, পুরাতনকে বিদায় নিতে হয় এবং নতুনের আবির্ভাব ঘটে। অর্থাৎ, ধ্বংসের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা। এইজন্য প্রলয়ঙ্কর প্রলয় বয়ে আনলেও মুখে তার হাসি। (শব্দসংখ্যা- ৬৫) 

প্রলয়োল্লাস: রচনাধর্মী প্রশ্ন

প্রশ্ন- “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন”- কোন ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে? প্রলয়কে কেন ‘নূতন সৃজন-বেদন’ বলা হয়েছে?

উত্তর– কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি পুরাতন, ক্ষয়িষ্ণু সমাজব্যবস্থা তথা পুরাতন মানসিকতার ধ্বংসের কথা বলেছেন।

আলোচ্য কবিতায় কবি এই সত্যকেই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন যে, ধ্বংসের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সৃষ্টির বীজ। যেমন, ধ্বংসাত্মক কালবৈশাখী ঝড়ে অনেক গাছপালা ভেঙে পড়ে, বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু ঝড়ের ফলে একদিকে যেমন গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তেমনি বায়ুবাহিত বীজের মাধ্যমে অনেক নতুন চারাগাছের জন্ম হয়।

কবি পরাধীন ভারতবাসীকে ব্রিটিশদের অপশাসনের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য ধ্বংসের দেবতাকেই আহ্বান করেছেন। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, ধ্বংসের দেবতা হলেন রুদ্রদেব। তবে, বাস্তবে কবি দেশের তরুণ বিপ্লবীদের আহ্বান জানিয়েছেন। এই তরুণ বিপ্লবীরা দেশকে পরাধীনতার বন্ধন থেকে মুক্ত করবে বলে কবি আশা পোষণ করেছেন। তবে, স্বাধীনতা লাভের পথ এতটা মসৃণ নয়। বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত দেশের নবীন প্রজন্মকে প্রথমেই হীনবল ভারতবাসীর দীনহীন মানসিকতাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে হবে, তারপরেই তারা ব্রিটিশ রাজশক্তিকে ভারত থেকে উৎখাত করতে পারবে।

কবির মতে, তরুণ বিপ্লবীদের ভূমিকা আপাতদৃষ্টিতে ধ্বংসাত্মক মনে হতে পারে। তাদের কর্মকান্ডে সমাজের স্থিতাবস্থা সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হলেও সেটা নতুন সৃষ্টির প্রতিক্রিয়া ছাড়া আর কিছু নয়। সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় জননী যেমন প্রসব-বেদনা অনুভব করে, তেমনি বিল্পবীদের ক্রিয়াকলাপের মধ্যেও থাকবে নতুনের ‘সৃজন-বেদনা’। (শদসংখ্যা- ১৭০) 

প্রশ্ন- ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় একদিকে ধ্বংসের চিত্র, আরেকদিকে নতুন আশার বাণী কীভাবে ফুটে উঠেছে, তা কবিতা অবলম্বনে লেখ। ৫

উত্তর– বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় একদিকে রয়েছে ধ্বংসের চিত্র, আরেকদিকে রয়েছে নতুন আশার বাণী। ধ্বংস সব অর্থেই নেতিবাচক, কিন্তু আলোচ্য কবিতায় কবি ধ্বংসের ভয়াবহতার মধ্যে আশার আলোর সন্ধান পেয়েছেন।

কবিতার শুরুতেই ধ্বংসাত্মক কালবৈশাখী ঝড়ের উল্লেখ রয়েছে। তবে, সেই কালবৈশাখী কবির কাছে শুধু ধ্বংসের প্রতীক নয়, ঝড়ের তান্ডবের মধ্যেই কবি নবযুগের কেতন উড়তে দেখেছেন।

ভারতকে পরাধীনতার বন্ধন থেকে মুক্ত করার জন্য কবি যাকে আহ্বান করেছেন, তিনিও ধ্বংসের প্রতীক। তার পরিচয় দিতে গিয়ে কবি বলেছেন, “প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল”। ‘সর্বনাশী জ্বালামূখী ধুমকেতু’ আজ্ঞাবাহী দাসের মতো তার সেবা করে। তার রক্তমাখা তরবারি এবং বজ্রশিখার মশাল দেখে সমস্ত চরাচর যেন স্তব্ধ। জগৎজুড়ে প্রলয় ঘনিয়ে আসছে দেখেও কবি আশা প্রকাশ করেছেন, “জরায়-মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ-লুকানো ওই বিনাশে!” ওই প্রলয়ের পরেই যেন দীর্ঘ অমাবস্যার সমাপ্তি ঘটবে এবং নতুন দিনের সূচনা হবে।

আবার, মহাকালের সারথি হিসেবে প্রলয়ঙ্করের আগমনের মধ্যেও ধ্বংসের ছায়া চোখে পড়ে। কিন্তু প্রলয়ঙ্করের আগমনের কারণটা ইতিবাচক। এতদিন ধরে যেসব দেবতাদের ‘অন্ধ কারার বন্ধ কূপে’ বন্দি করে রাখা হয়েছিল, তাদের উদ্ধার করার জন্যই মহাকালের সারথি প্রলয়ঙ্কর এগিয়ে আসছেন। অন্যভাবে বললে, কারারুদ্ধ স্বাধীনতাকামী তরুণ বিপ্লবীদের মুক্ত করার জন্যই ধ্বংসের দেবতা রুদ্রদেব আসছেন।

এভাবেই সমগ্র কবিতা জুড়ে কবি একদিকে ধ্বংসের চিত্র তুলে ধরেছেন, আরেকদিকে নতুন আশার বাণী শুনিয়েছেন। (শদসংখ্যা- ১৮৬)

প্রশ্ন- “তোরা সব জয়ধ্বনি কর”- কাদের উদ্দেশ্য কবির এই আহ্বান? কবিতার ভাববস্তু বিশ্লেষণ করে এই জয়ধ্বনির যৌক্তিকতা বিচার কর।

উত্তর- বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় পরাধীনতার শৃঙ্খলায় আবদ্ধ ভারতবাসীর উদ্দেশ্য এই আহ্বান করেছেন।

আলোচ্য কবিতায় কবি ব্রিটিশদের অত্যাচারে জর্জরিত ভারতবাসীর দুর্দশা মোচনের জন্য এমন একজনকে আহ্বান জানিয়েছেন, যিনি আগে কখনো আসেন নি। সেই ‘অনাগত’ হলেন ‘প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল’। প্রচণ্ড কালবৈশাখী ঝড়ের মত তিনিও তাণ্ডব করবেন। তার তাণ্ডবের মধ্যেই কবি নতুন যুগের নিশান দেখতে পেয়েছেন। কালবৈশাখী ঝড় যেমন ধ্বংসের মধ্য দিয়ে নতুন সৃষ্টির বীজ বপন করে, প্রলয়ঙ্কর তেমনি নতুন সমাজের ভিত্তি স্থাপন করবে। এইজন্য কবি সকলকে জয়ধ্বনি করতে করতে বলেছেন।

যিনি আসছেন তিনি ভয়ঙ্কর, তিনি প্রলয়ঙ্কর। জগৎ জুড়ে তিনি ধ্বংসলীলা চালাবেন। কিন্তু ওই ধ্বংসের মধ্যেই ‘জরায়-মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ’ লুকিয়ে আছে। পুরাতন সমাজব্যবস্থার ধ্বংস করে নতুন যুগের সূচনা করবেন বলেই কবি সকল দেশবাসীকে তার উদ্দেশ্যে জয়ধ্বনি করতে বলেছেন।

তিনি ভারতবাসীকে পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করবেন এবং নতুন আলোর সন্ধান দেবেন। এইজন্য কবি সকলকে জয়ধ্বনি করতে বলেছেন।

ব্রিটিশ রাজশক্তি স্বাধীনতাকামী তরুণ বিপ্লবীদের অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করেছিল। কবি আক্ষেপ করে বলেছেন, “অন্ধ কারার বন্ধ কূপে/ দেবতা বাধা যজ্ঞ-যুপে”। এইসব দেবতা-সম বিপ্লবীদের উদ্ধার করবেন তিনি। এইজন্য কবি তাকে স্বাগত জানিয়ে সকল দেশবাসীকে তার উদ্দেশ্যে জয়ধ্বনি করতে বলেছেন। (শদসংখ্যা- ১৭৩)

বাংলা গল্প ও প্রবন্ধ

বাংলা কবিতা ও নাটক

error: Content is protected !!