Pather Dabi- পথের দাবী

একনজরে– ‘পথের দাবী’ গল্পটি অমর কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ (১৯২৬) নামক রাজনৈতিক উপন্যাসের অংশবিশেষ।আলোচ্য পোস্টে ‘পথের দাবী’ গল্প থেকে গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন এবং অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

Pather Dabi by Sharat Chandra Chattopadhyay

Pather Dabi is a selected part of bengali novel ‘Pather Dabi’ written by Sharat Chandra Chattopadhyay. It is included in the syllabus of West Bengal Board of Secondary Education (WBBSE) Class Ten Bengali (first language). For short and long question from this story, read this post carefully.

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পথের দাবী'
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী

পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী মোট পাঁচটি গল্প থেকে তিনটি ১ নম্বরের বহু বিকল্পীয় প্রশ্ন, চারটি ১ নম্বরের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, একটি ৩ নম্বরের সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং একটি ৫ নম্বরের রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। এখানে ‘পথের দাবী’ রচনাংশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।

পথের দাবিঃ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

১. ‘পথের দাবী’ কী ধরনের রচনা?
উত্তর- ‘পথের দাবী’ একটি রাজনৈতিক উপন্যাস।

২. উত্তর-ব্রহ্মে বর্মা-অয়েল-কোম্পানির মিস্ত্রিরা রেঙ্গুনে চলে আসে কেন?
উত্তর– উত্তর-ব্রহ্মে বর্মা-অয়েল-কোম্পানির মিস্ত্রিরা সেখানকার জলহাওয়া সহ্য না হওয়ায় রেঙ্গুনে চলে আসে চাকরির সন্ধানে।

৩. পােলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক নিমাইবাবুর সামনে কীভাবে এসেছিল?
উত্তর– পােলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশে নিমাইবাবুর সামনে এসেছিল।

৪. ‘সংসারের মিয়াদ বােধ করি বেশি দিন নাই;’ – কী দেখে এমন বলা হয়েছে?
উত্তর- একটুখানি কাশির পরিশ্রমেই গিরিশ মহাপাত্র হাঁপাতে শুরু করেছিল। এটা দেখেই এমন বলা হয়েছে।

৫. ‘লােকটিকে আপনি কোনাে কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিন,’ – কেন এমন উক্তি?
উত্তর- কারণ, পোলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিকের সঙ্গে উক্ত লোকটির অর্থাৎ গিরীশ মহাপাত্রের কোনো মিল ছিল না।

৬. গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাঁক ও পকেট থেকে কী কী পাওয়া গিয়েছিল?
উত্তর- গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাঁক থেকে একটি টাকা ও গন্ডা ছয়েক পয়সা এবং পকেট থেকে একটি লোহার কম্পাস, কাঠের একটা ফুটরুল, কয়েকটা বিড়ি, একটা দেশলাই ও একটা গাজার কলিকা পাওয়া গিয়েছিল।

৭. গিরীশ মহাপাত্রের পাঞ্জাবির বিশেষত্ব কী ছিল?
উত্তর- গিরীশ মহাপাত্রের গায়ে জাপানি সিল্কের, রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি ছিল এবং তার বুক পকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটা রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল।

৮. ‘বুড়াে মানুষের কথাটা শুনাে৷’ – কোন কথা শুনতে বলা হয়েছে?
উত্তর– বুড়ো মানুষ অর্থাৎ, নিমাইবাবু উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে অর্থাৎ, গিরিশ মহাপাত্রকে গাঁজা খেতে নিষেধ করেছিলেন।

৯. জগদীশবাবু চটে গিয়ে গিরীশ মহাপাত্রকে কী বলেছিলেন?
উত্তর– জগদীশবাবু চটে গিয়ে গিরিশ মহাপাত্রকে বলেছিলেন, ‘দয়ার সাগর! পরকে সেজে দিই, নিজে খাইনে! মিথ্যেবাদী কোথাকার!’

১০. ‘এ শহরে আরও কিছুদিন নজর রাখা দরকার।’ – কেন?
উত্তর– কারণ, সব্যসাচী মল্লিক এখনো ধরা পড়েনি এবং পুলিশ নিশ্চিত যে তিনি যে বার্মায় এসেছেন।

১১. ‘এই জানােয়ারটাকে ওয়াচ করবার দরকার নেই বড়ােবাবু।’- কী কারণে এই উক্তি?
উত্তর– পুলিশ রাজদ্রোহী সব্যসাচী মল্লিকের সঙ্গে গিরীশ মহাপাত্রের কোন সাদৃশ্য খুঁজে পায়নি। সেইজন্য জগদীশবাবুর মতে, তাকে ওয়াচ করার দরকার নেই।

১২. রামদাসের স্ত্রী অপূর্বকে সনির্বন্ধ অনুরােধ করে কী বলেছিলেন?
উত্তর– রামদাসের স্ত্রী অপূর্বকে সনির্বন্ধ অনুরােধ করে বলেছিলেন যে যতদিন পর্যন্ত অপূর্বর বাড়ি থেকে তার মা অথবা অন্য কোনো আত্মীয় এসে তার খাবার বন্দোবস্ত করতে না পারেন ততদিন যেন তিনি রামদাসের স্ত্রীর হাতের তৈরি ‘যৎসামান্য মিষ্টান্ন’ গ্রহণ করেন।

১৩. ‘সমস্তই যাইতে পারিত’- অপূর্বর সবকিছু যায়নি কেন?
উত্তর- উপরতলায় যে খ্রিস্টান মেয়েটি থাকতো সে চোর তাড়িয়ে দরজায় নিজের তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। এইজন্য অপূর্বর সব কিছু চুরি যায়নি।

১৪. ‘ইহা যে কত বড়াে ভ্রম তাহা কয়েকটা স্টেশন পরেই সে অনুভব করিল’- ভ্ৰমটি কী?
উত্তর– অপূর্ব প্রথম শ্রেণীর যাত্রী ছিল এবং এইজন্য সে ভেবেছিল যে সকাল পর্যন্ত সে নির্বিঘ্নে ঘুমোতে পারবে। এটাই তার ভ্রম ছিল।

১৫. ‘হঠাৎ হাসির ছটায় যেন দম আটকাইবার উপক্রম হইল।’ – কী কারণে এমন হয়েছিল?
উত্তর– গিরীশ মহাপত্রের পোশাক-পরিচ্ছদের বাহার কল্পনা করে অপূর্বর এমন অবস্থা হয়েছিল।

১৬. ‘এরা কি আপনাদের বাংলাদেশের পুলিশ?’ – কেন এমন মন্তব্য?
উত্তর- অপূর্ব তার বাড়িতে যে চুরি হয়েছে সেই ঘটনার খবর পুলিশকে জানাতে গিয়ে দেখে যে পুলিশের দল রাজ-বিদ্রোহী জনৈক সব্যসাচী মল্লিককে ধরার জন্য ব্যস্ত। এইজন্য তলোয়ারকর এই প্রশ্ন করেছিল।

১৭. ‘তিনি ঢের বেশি আমার আপনার।’ – কার সম্পর্কে এই মন্তব্য?
উত্তর– আলোচ্য অংশে অপূর্ব যে মানুষটিকে ‘ঢের বেশি আপনার’ বলে মন্তব্য করেছে তিনি হলেন পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক।

১৮. ‘তার লাঞ্ছনা এই কালাে চামড়ার নীচে কম জ্বলে না তলওয়ারকর!’- কোন্ লাঞ্ছনার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর– কয়েকজন ফিরিঙ্গি ছোঁড়া অপূর্বকে বিনাদোষে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল এবং এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে ইংরেজ স্টেশনমাস্টার অপূর্বকে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দিয়েছিল। এখানে এই লাঞ্ছনার কথা বলা হয়েছে।

১৯. ‘এমনি তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে।’- কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর– অপূর্ব একদিন স্টেশনে কয়েকজন ফিরিঙ্গির দ্বারা নিগৃহীত হয়েছিল। সেখানে অনেক হিন্দুস্তানি ছিল কিন্তু কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি। এখানে সেই ঘটনার কথা বলা হয়েছে।

২০. ‘আমার ইচ্ছা তুমি একবার সবগুলাে দেখে আস।’ – সবগুলাে বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর– আলোচ্য অংশে ‘সবগুলো’ বলতে সব অফিসের কথা বলা হয়েছে। অফিসগুলো যথাক্রমে ভামো, ম্যানডালে, শোএবো, মিকথিলা এবং প্রোমে অবস্থিত ছিল।

২১. ‘কিন্তু তােমার বাপু একটা ভুল হয়েছে?’ – কোন্ ভুলের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর– ভুলটা এই যে গিরীশ মহাপাত্র ভেবেছিল অপূর্ব পুলিশের লোক।

২২. ‘অপূর্ব লক্ষ করিল না’ – কী লক্ষ করল না?
উত্তর– অপূর্ব লক্ষ্য করল না যে, গিরিশ মহাপাত্রকে দেখার পর রামদাসের প্রশস্ত উজ্জ্বল ললাটের উপরে যেন কোন এক অদৃশ্য মেঘের ছায়া এসে পড়েছে।

২৩. ‘ও নিয়ম রেলওয়ে কর্মচারীর জন্য,’ – কোন্ নিয়ম?
উত্তর– নিয়মটি হল এই যে, একজন প্রথম শ্রেণীর যাত্রীকে মাঝরাতে জাগিয়ে তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানো যায়না।

২৪. ভামো যাত্রাকালে অপূর্বর সহচর কারা ছিল?
উত্তর– অফিসের একজন হিন্দুস্তানি ব্রাহ্মণ পিয়াদা এবং আরদালি।

২৫. ‘তোমার মত সাহস আমার নেই’- কে কাকে একথা বলেছিল?
উত্তর– অপূর্ব রামদাসকে একথা বলেছিল।

পথের দাবীঃ সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্ন

প্রশ্ন- “বাবাই একদিন এঁর চাকরি করে দিয়েছিলেন।”- বক্তা কে ? তাঁর বাবা কাকে কী চাকরি করে দিয়েছিলেন ? ১+২ [মাধ্যমিক ২০১৮]

উত্তর– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব একথা বলেছিল।

অপূর্বর বাবা নিমাইবাবুকে পুলিশের চাকরি করে দিয়েছিলেনে। সেই নিমাইবাবুই বর্মায় গিয়েছিলেন পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে ধরার জন্য। 

প্রশ্ন- “সহসা আশঙ্কা হয়, সংসারের মিয়াদ বােধ করি বেশি দিন নাই”- কার সম্পর্কে বলা হয়েছে? কেন এমন বলা হয়েছে? ১+২

উত্তর– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্র সম্পর্কে একথা বলা হয়েছে।

গিরীশ মহাপাত্রের বয়স ত্রিশ-বত্রিশ বছরের বেশি ছিলনা। কিন্তু তাঁর শরীর এতোই রুগ্ন ছিল যে সামান্য কাশির পরিশ্রমেই হাঁপাতে শুরু করেছিল। সেইজন্য এমন বলা হয়েছে।

প্রশ্ন- “কেবল এই জন্যই যেন সে আজও বাঁচিয়া আছে।” – ‘সে’ কে? কেন তার সম্পর্কে এমন মন্তব্য করা হয়েছে? ১+২

উত্তর– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনা থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশে ‘সে’ বলতে গিরীশ মহাপাত্রকে বোঝানো হয়েছে।

আপাতদৃষ্টিতে গিরীশ মহাপাত্রকে দেখে রোগগ্রস্ত মনে হলেও তাঁর চোখদুটি অপূর্বর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। অত্যন্ত গভীর জলাশয়ের মতো সেই চোখদুটি যেন তাঁর প্রাণশক্তিকে লুকিয়ে রেখেছিল। সেইজন্য অপূর্বর একথা মনে হয়েছিল।

প্রশ্ন- “সে যে এ নয়, তার আমি জামিন হতে পারি।”- উক্তিটি কার? কী দেখে বক্তা এই উক্তি করেছে? ১+২

উত্তর– অমর কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনায় অপূর্ব এই উক্তি করেছিল।

বাংলা দেশের পুলিশ বর্মা মুলুকে গিয়ে সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে আটক করেছিল। কিন্তু বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রে অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী, বিলেতফেরত ডাক্তার রাজদ্রোহী সব্যসাচী মল্লিকের সঙ্গে গিরীশের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেইজন্য অপূর্ব নিশ্চিতভাবে বলেছিল যে ধৃত গিরীশ মহাপাত্র সব্যসাচী মল্লিক নয়।

প্রশ্ন- “তার কালচারের কথাটা একবার ভেবে দেখুন।”- কার উক্তি? কেন এই উক্তি? ১+২

উত্তর– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব একথা বলেছিল।

পুলিশের লোক সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে আটক করেছিল। কিন্তু উচ্চশিক্ষিত, বিলেতের ডাক্তার উপাধিধারী রাজশত্রু সব্যসাচী মল্লিকের সঙ্গে বিচিত্র সাজে সজ্জিত গিরীশ মহাপাত্রের কোনোরকম সাদৃশ্য ছিল না। তাই অপূর্ব একথা বলেছিল।

প্রশ্ন- “কীরূপ সদাশয় ব্যক্তি ইনি।”- কার সম্পর্কে এমন উক্তি? এমন উক্তির কারণ কী? ১+২

উত্তর– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে গিরীশ মহাপাত্র সম্পর্কে এই উক্তি করা হয়েছিল।

পুলিশ-থানায় গিরীশ মহাপাত্রের বাক্স-বিছানা খানাতল্লাশির পর তার পকেট থেকে অন্যান্য জিনিসে সঙ্গে একটি গাঁজার কলকে পাওয়া গিয়েছিল। নিমাইবাবু তাকে জিজ্ঞাসা করেন সে গাঁজা খায় কি না। উত্তরে সে জানায় যে, সে নিজে খায় না কিন্তু যদি কারও কাজে লাগে এই ভেবে গাঁজার কলকেটা পকেটে ভরে রেখেছিল। এরপরেই জগদীশবাবুকে উদ্দেশ্য করে গিরীশ মহাপাত্র সম্পর্কে নিমাইবাবু এই উক্তি করেছিলেন।

প্রশ্ন- “রাত্রের মেল ট্রেনটার প্রতি একটু দৃষ্টি রেখাে”- কার উক্তি? মেল ট্রেনটার প্রতি দৃষ্টি রাখার কারণ কী? ১+২

উত্তর– অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনায় পুলিশ আধিকারিক জগদীশবাবু একথা বলেছিলেন।

রাজদ্রোহী সব্যসাচী মল্লিককে গ্রেপ্তার করার জন্য নিমাইবাবু, জগদীশবাবু সহ একদল পুলিশ বর্মা মুলুকে পাড়ি দিয়েছিলেন। রেঙ্গুন বন্দর থেকে সব্যসাচী সন্দেহে জনা ছ’য়েক বাঙালিকে আটকও করা হয়েছিল। যদিও এই ছয়জনের মধ্যেই একজন ছিলেন প্রকৃত সব্যসাচী মল্লিক কিন্তু পুলিশ তাঁকে ধরতে পারেনি। অথচ, পুলিশের কাছে নিশ্চিত খবর ছিল যে সব্যসাচী মল্লিক বর্মায় গিয়েছেন। এইজন্য রাতের মেল ট্রেনটার প্রতি দৃষ্টি রাখার কথা বলা হয়েছে।

প্রশ্ন- “কাল তাহার ঘরে চুরি হইয়া গেছে” – কার ঘরে চুরি হয়েছিল? সবকিছু চুরি হয়নি কেন? ১+২

উত্তর– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্বর ঘরে চুরি হয়েছিল।

অপূর্বর অনুপস্থিতিতে তার ঘরে চোর এসেছিল। তবে টাকাকড়ি ছাড়া আর কিছু চুরি হয়নি। উপরে যে ক্রিশ্চান মেয়েটি থাকত সে গিয়ে চোর তাড়িয়েছিল এবং নিজের ঘরের তালা অপূর্বর ঘরের দরজায় লাগিয়ে দিয়েছিল। এইজন্য তার সবকিছু চুরি হয়ে যায়নি।

প্রশ্ন- “এরা কি আপনার বাংলাদেশের পুলিশ?”- কার উক্তি? কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি? ১+২

উত্তর– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্বর সহকর্মী রামদাস তলোয়ারকর একথা বলেছিল।

রামদাসের বাড়িতে জলযোগ করতে গিয়ে অপূর্ব তার বাড়িতে চুরি যাওয়ার বৃত্তান্ত উপস্থাপন করেছিল। চুরির ঘটনা পুলিশকে জানাবার জন্য অপূর্ব থানায় গিয়েছিল কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখে যে সমস্ত পুলিশ সব্যসাচী মল্লিককে ধরার কাজে ব্যস্ত, সাধারণ মানুষের অভিযোগ শোনার সময় তাদের ছিল না। এই প্রসঙ্গেই রামদাস উপরোক্ত কথাগুলি বলেছিল।

প্রশ্ন- “তিনি ঢের বেশি আমার আপনার।”- কার সম্পর্কে এই উক্তি? বক্তার এমন উক্তির কারণ কী?

উত্তর– অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব রাজদ্রোহী সব্যসাচী মল্লিক সম্পর্কে একথা বলেছিল।

অপূর্ব শিক্ষিত মানুষ। পরাধীনতার যন্ত্রণা সে বুঝত। সে নিজেও অকারণে ব্রিটিশদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিল। কিন্তু সরাসরি ব্রিটিশদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস তার ছিল না। তবে, ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য যে মানুষটি জীবন পণ করেছিল, সেই সব্যসাচী মল্লিককে অপূর্ব আপন মনের সিংহাসনে বসিয়েছিল। তাই নিমাইবাবু তার আত্মীয় হলেও সব্যসাচী মল্লিককে তার বেশি আপন মনে হয়েছিল।

প্রশ্ন- “তার লাঞ্ছনা এই কালো চামড়ার নীচে কম জ্বলে না”- কে কাকে বলেছিল? সেই লাঞ্ছনার কথা উল্লেখ কর। ১+২

উত্তর– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব রামদাসকে একথা বলেছিল।

কয়েকজন ফিরিঙ্গি যুবক অপূর্বকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। অপূর্বর কোনো দোষ ছিল না। তাই সে স্টেশন মাস্টারের কাছে গিয়েছিল প্রতিবাদ জানাতে। কিন্তু ভারতীয় হওয়ার অপরাধে সাহেব স্টেশন মাস্টার অপূর্বকে তার নিজের দেশের স্টেশন থেকে কুকুরের মতো দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে এই লাঞ্ছনার কথা বলা হয়েছে।

প্রশ্ন- “আমার ইচ্ছে তুমি একবার সবগুলাে দেখে আস।” – কে কী দেখতে বলেছে? কেন সেগুলাে দেখতে বলেছে? ২+১

উত্তর– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্বর অফিসের বড়োসাহেব তাকে সবকটা অফিস দেখতে বলেছিল।

বড়োসাহেবের কথা অনুযায়ী, ভামোর অফিসে কোনো শৃঙ্খলাই হচ্ছিল না। উপরন্তু ম্যানডালে, শোএবো, মিকথিলা এবং প্রোম-এর অফিসেও গোলযোগ ঘটছিল। বড়োসাহেব চাইছিলেন যেন অপূর্ব সবকটা অফিস একবার ঘুরে আসুক। তাছাড়া, সাহেবের অবর্তমানে সব ভার অপূর্বর। সুতরাং সব অফিসে তার পরিচিতি হওয়া প্রয়োজন ছিল। এইজন্য অপূর্বকে সবগুলো দেখে আসতে বলা হয়েছিল।

প্রশ্ন- “সুমুখে আসিতেই অপূর্ব ডাকিয়া কহিল”- কাকে অপূর্ব ডেকেছিল? তাকে ডেকে কী বলেছিল? ১+২

উত্তর– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনায় অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে ডেকেছিল।

রেলস্টেশনে অপূর্ব পুনরায় গিরীশ মহাপাত্রকে দেখতে পেয়েছিল। তার বেশভূষা একইরকম ছিল, শুধু বুকপকেটের বাঘ আঁকা রুমালখানা গলায় জড়ানো ছিল। সামনে আসতেই অপূর্ব তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিল, “কি হে গিরীশ, আমাকে চিনতে পারো? কোথায় চললে?”

প্রশ্ন- “কিন্তু তােমার বাবু একটা ভুল হয়েছে”- কার, কী ভুল হয়েছিল? ১+২

উত্তর– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে একথা বলেছিল।

গিরীশের সঙ্গে অপূর্বর প্রথমবার সাক্ষাৎ ঘটেছিল পুলিশ স্টেশনে। সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে পুলিশ গিরীশ মহাপাত্রকে আটক করেছিল। ঐদিন অপূর্বও পুলিশ স্টেশনে চুরির অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল। তাই গিরীশ ভেবেছিল যে অপূর্ব হয়তো পুলিশের লোক। এটাই গিরীশের ভুল হয়েছিল।

প্রশ্ন- “অপূর্ব লক্ষ করিল না, কিন্তু লক্ষ করিলে দেখিতে পাইত”- অপূর্ব কী লক্ষ করেনি? লক্ষ করলে সে কী দেখতে পেত?

উত্তর– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব রামদাসের মুখখানা লক্ষ করেনি।

অপূর্ব তার সহকর্মী রামদাসের মুখের দিকে তাকালে দেখতে পেত যে তার চওড়া কপালে যেন কোনো এক অদৃশ্য মেঘের ছায়া এসে পড়েছিল এবং সেই সুদূর দুর্নিরীক্ষ্য লোকেই তার মনশ্চক্ষু উধাও হয়ে গিয়েছিল। 

প্রশ্ন- “কিন্তু ইহা যে কত বড়াে ভ্রম তাহা কয়েকটা স্টেশন পরেই সে অনুভব করিল।”- ‘সে’ কে? সে কী অনুভব করেছিল? ১+২

উত্তর– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে ‘সে’ বলতে অপূর্বর কথা বলা হয়েছে।

অপূর্ব ভেবেছিল যে সে যেহেতু প্রথম শ্রেণির যাত্রী তাই কেউ মাঝরাতে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে না। কিন্তু সেই রাতে তিনবার পুলিশের লোক তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তার নাম-ধাম ইত্যাদি লিখে নিয়ে গিয়েছিল। নিজের ভাবনাটা যে কতোবড় ভুল, কয়েকটা স্টেশন পরে সেটাই সে অনুভব করেছিল।

পথের দাবীঃ রচনাধর্মী প্রশ্ন

প্রশ্ন- “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ যােলাে আনাই বজায় আছে।” – বাবুটি কে? তার সাজসজ্জার পরিচয় দাও। ১+৪ [মাধ্যমিক ২০১৭]

উঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে ‘বাবুটি’ বলতে সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রের কথা বলা হয়েছে।

গিরীশ মহাপাত্রের সাজসজ্জা থানায় উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তার মাথার সামনের দিকে ছিল বড়ো বড়ো চুল কিন্তু দুপাশে এবং পিছনের দিকে চুল ছিল না বললেই চলে। তার মাথায় চেরা সিঁথি এবং চুল থেকে নেবুর তেলের গন্ধ বেরোচ্ছিল। তার গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি, বুক পকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটা রুমালের কিছু অংশ বেরিয়েছিল এবং উত্তরীয় ছিল না। তার পরনে ছিল বিলেতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি।

তার পায়ে সবুজ রঙের ফুল মোজা, সেগুলি হাটুর উপরে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা এবং দু’পায়ে বার্নিশ করা পাম্প শু। জুতোর তলাটা মজবুত ও টেকসই করার জন্য আগাগোড়া লোহার নাল বাঁধানো ছিল। এছাড়া, তার হাতে ছিল হরিণের শিং-এর হাতল দেওয়া এক গাছি বেতের ছড়ি, যেগুলি গত কয়েকদিনের জাহাজের ধকলে নোংরা হয়ে গিয়েছিল।

প্রশ্ন- “তাহার পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরাইয়া হাসি গােপন করিল”— কে হাসি গােপন করল? তার হাসি পাওয়ার কারণ কী? ১+৪ [মাধ্যমিক ২০২০]

উত্তর- অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব মুখ ফিরিয়ে হাসি গোপন করেছিল।

গিরীশ মহাপাত্রের অদ্ভুত সাজসজ্জা দেখে অপূর্বের মনে হাসির উদ্রেক ঘটেছিল। আসলে, শুধু অপূর্ব নয়, গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষা থানায় উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

তার মাথার সামনের দিকে ছিল বড়ো বড়ো চুল কিন্তু দুপাশে এবং পিছনের দিকে চুল ছিল না বললেই চলে। সেই চুল থেকে নেবুর তেলের যে উৎকট গন্ধ বেরোচ্ছিল তাতে সকলের মাথা ধরে গিয়েছিল। তার গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি, পরনে ছিল বিলেতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি। পাঞ্জাবির বুক পকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটা রুমালের কিছু অংশ বেরিয়েছিল এবং উত্তরীয় ছিল না।

তার পায়ে সবুজ রঙের ফুল মোজা, সেগুলি হাটুর উপরে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা এবং দু’পায়ে বার্নিশ করা পাম্প শু। জুতোর তলাটা মজবুত ও টেকসই করার জন্য আগাগোড়া লোহার নাল বাঁধানো ছিল। এছাড়া, তার হাতে ছিল হরিণের শিং-এর হাতল দেওয়া এক গাছি বেতের ছড়ি, যেগুলি গত কয়েকদিনের জাহাজের ধকলে নোংরা হয়ে গিয়েছিল।

প্রশ্ন- ‘কই এ ঘটনা তো আমাকে বলেন নি’- বক্তা কে? উক্ত ঘটনার বিবরণ দাও। ১+৪

উত্তর- অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে রামদাস তলোয়ারকর অপূর্বকে এই কথা বলেছিল।

অপূর্ব একবার ব্রিটিশদের হাতে চূড়ান্তভাবে অপমানিত হয়েছিল। কিন্তু সেইসময় রামদাসকে ওই ঘটনার কথা জানায়নি। তারপর একদিন কথাপ্রসঙ্গে অপূর্ব সেই লাঞ্ছনার কথা রামদাসের সামনে তুলে ধরেছিল। উদ্ধৃত অংশে যে ঘটনার কথা বলা হয়েছে তা হল এইরকম-

কয়েকজন ফিরিঙ্গি যুবক অপূর্বকে বিনা দোষে লাথি মেরে প্লাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে অপূর্ব স্টেশন মাস্টারের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু অন্যায়ের প্রতিকার করা দূরের কথা, সাহেব স্টেশন মাস্টার অপূর্বকে স্টেশন থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। অপূর্বর অপরাধ এটাই ছিল যে সে একজন ভারতীয়। তাই বিদেশি স্টেশন মাস্টার অপূর্বর সঙ্গে কুকুরের মতো ব্যবহার করেছিল।

সেইসময় স্টেশনে বহুসংখ্যক ভারতীয় উপস্থিত ছিল কিন্তু তারা কেউ ব্রিটিশদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেনি। বরং তারা এই ভেবে ধন্য হয়েছিল যে, সাহেবদের লাথির চোটে অপূর্বর হাড়-পাঁজরা সব ভেঙে যায়নি। তবে, এই ঘটনা অপূর্বর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল।

প্রশ্ন- ‘পথের দাবী’ রচনা অবলম্বনে অপূর্বের চারিত্রিক বিশ্লেষণ করো। ৫

উত্তর- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অন্যতম প্রধান চরিত্র হলো অপূর্ব। সে একজন সৎ, শিক্ষিত এবং আদর্শবান যুবক। আলোচ্য পাঠ্যাংশে অপূর্ব চরিত্রের যে দিকগুলি ফুটে উঠেছে হয়েছে সেগুলি হল-

প্রতিবাদী– অপূর্ব রামদাসের মতো সাহসী ছিল না কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মতো সৎ সাহসটুকু তার ছিল। সেইজন্য কয়েকজন ব্রিটিশ যুবক তাকে বিনা দোষে লাথি মেরে প্লাটফর্ম থেকে বের করে দিলে সে স্টেশন মাস্টারের কাছে প্রতিবাদ জানাতে ছুটে গিয়েছিল।

দেশপ্রেমী– নিজের দেশের প্রতি তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ছিল। সেইজন্য রাজদ্রোহী বলে ঘোষিত সব্যসাচী মল্লিকের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন ছিল। সে একথা জানত যে ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধাচরণ করার পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। কিন্তু যে মানুষটি তার মা, ভাইবোনদের ঔপনিবেশিক শক্তির নির্মমতা থেকে রক্ষা করতে চায় সেই সব্যসাচী মল্লিককেই তার সবথেকে আপন মনে হয়েছিল।

বিনয়ী– তার বাবার বন্ধু নিমাইবাবু ব্রিটিশ সরকারের অজ্ঞাবাহী একজন পুলিশ অফিসার। অপূর্ব ব্যক্তিগতভাবে ইংরেজদের ঘৃণা করত ঠিকই কিন্তু তার পিতৃতুল্য নিমাইবাবুর প্রতি সে শ্রদ্ধাবনত ছিল।

আত্মসম্মানবোধ– অপূর্ব যেদিন রেল স্টেশনে হেনস্থার শিকার হয়েছিল সেদিন অনেক ভারতীয় সেখানে উপস্থিত ছিল। কিন্তু কারো মনে সেই ঘটনা রেখাপাত করেনি কারণ ভারতীয়দের প্রতি এরকম অত্যাচার প্রায়ই ঘটত। তবে, সেই লাঞ্ছনা অপূর্বর আত্মসম্মানে আঘাত হেনেছিল। লজ্জায় সেই ঘটনার কথা রামদাসকেও বলতে পারেনি সে।

প্রশ্ন- “যাকে খুঁজছেন সে যে এ নয় তার আমি জামিন হতে পারি”- কে কার সম্পর্কে এই উক্তি করেছিল? বক্তার এরূপ উক্তির কারণ কী?

উত্তর- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্র সম্পর্কে এই উক্তি করেছিল।

রাজদ্রোহী সব্যসাচী মল্লিককে ধরার জন্য বাংলা দেশের পুলিশ বর্মা মুলুকে হাজির হয়েছিল। নিমাইবাবুর নেতৃত্বে পুলিশের লোক রেঙ্গুন বন্দর থেকে জনা ছ’য়েক বাঙালি শ্রমিককে সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে আটক করেছিল। তাদের মধ্যে সবথেকে সন্দেহভাজন যে লোকটি, তারই নাম গিরীশ মহাপাত্র।

কিন্তু এই গিরীশ মহাপাত্রের সঙ্গে পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিকের কোনোরূপ সাদৃশ্য অপূর্বর চোখে পড়েনি। একদিকে সব্যসাচী মল্লিক, যার প্রতাপে ব্রিটিশ পুলিশ ভীতসন্ত্রস্ত; আরেকদিকে গিরীশ মহাপাত্র, যে সামান্য কাশির পরিশ্রমেই হাঁপাতে শুরু করেছিল। বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী এবং বিলেতফেরত ডাক্তার সব্যসাচী মল্লিকের সঙ্গে নেবুর তেলের গন্ধবিলাসী গিরীশ মহাপাত্রের সত্যিই কোনো মিল ছিল না।

এইজন্য অপূর্ব নিশ্চিতভাবে বলেছিল যে পুলিশ যাকে খুঁজছিল সেই ব্যক্তি গিরীশ মহাপাত্র নয়।

প্রশ্ন- “তিনি আমাদের আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষী … দেশের চেয়ে তো আপনার নন”- কে কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছিল? এই উক্তির আলোকে বক্তার মনোভাব ব্যক্ত কর।

উত্তর- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব নিমাইবাবু সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছিল।

অপূর্ব একজন সৎ, শিক্ষিত এবং নির্বিরোধী প্রকৃতির যুবক। ব্রিটিশ রাজশক্তির সঙ্গে তার কোনো বিবাদ ছিল না বরং তার পরিবার ইংরেজদের ঘনিষ্ঠ ছিল বলেই মনে হয়। তবে, সে নিজে একবার ব্রিটিশদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিল। একবার কয়েকজন ইংরেজ যুবক বিনা কারণে তাকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল এবং সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে সাহেব স্টেশন মাস্টার তাকে কুকুরের মতো স্টেশন থেকে বের করে দিয়েছিল। অপূর্বর সংবেদনশীল মনে এই ঘটনা রেখাপাত করেছিল এবং সে অত্যাচারী ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিল।

আলোচ্য অংশে অপূর্ব রামদাসকে জানিয়েছিল যে নিমাইবাবু তাদের পারিবারিক বন্ধু হলেও তার কাছে প্রথমে তার দেশ। আর সেই দেশের নিরীহ মানুষকে ব্রিটিশদের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে যিনি জীবন পণ করেছিলেন, সেই সব্যসাচী মল্লিককেই সে মনে মনে সমর্থন করেছিল। এই কথার মাধ্যমে তার নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম-ভাবনা উজ্জ্বলরূপে প্রকাশিত হয়ে উঠেছে।

বাংলা গল্প-প্রবন্ধ

বাংলা কবিতা-নাটক

error: Content is protected !!