আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি || Ay Aro Bendhe Bendhe Thaki

আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি– কবিতাটি সমসাময়িক কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শঙ্খ ঘোষের ‘জলই পাষাণ হয়ে আছে’ কাব্যসংকলন থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে ‘আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন এবং অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

Ay Aro Bendhe Bendhe Thaki by Shankha Ghosh

Ay Aro Bendhe Bendhe Thaki is a bengali poem written by Shankha Ghosh. It is included in the syllabus of West Bengal Board of Secondary Education (WBBSE) Class Ten Bengali (first language). For short and long question from this story, read this post carefully.

আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকিঃ শঙ্খ ঘোষ

পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী মোট সাতটি কবিতা থেকে তিনটি ১ নম্বরের বহু বিকল্পীয় প্রশ্ন, চারটি ১ নম্বরের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, একটি ৩ নম্বরের সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং একটি ৫ নম্বরের রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। এখানে ‘আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল। কবিতাটি সম্পূর্ণ বোঝার জন্য উপরের ভিডিওটি দেখতে পারো।

আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকিঃ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

১. আমাদের ডানে ও বাঁয়ে কী রয়েছে?

উত্তর- আমাদের ডানে ধ্বস ও বাঁয়ে গিরিখাদ রয়েছে।

২. ‘আমাদের পথ নেই’ কেন?

উত্তর- চারিদিক থেকে মৃত্যুর বিভীষিকা পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছিল, তাই কবি বলেছেন যে আমাদের পথ নেই।

৩. ‘আমাদের ঘর উড়ে গেছে’ কীভাবে?

উত্তর- সর্বনাশা যুদ্ধের তাণ্ডবে আমাদের ঘর উড়ে গেছে।

৪. আমাদের কাছে-দূরে কী ছড়ানাে রয়েছে?

উত্তর- আমাদের কাছে-দূরে ছড়ানাে রয়েছে শিশুদের শব।

৫. ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’- কেন এই আহ্বান?

উত্তর- মানবতা যখন বিপন্ন, তখন যৌথভাবে প্রতিকুলতার মোকাবিলা করাই ভালো। তাই কবির আহ্বান- ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’।

৬. ‘আমাদের ইতিহাস নেই’ – কেন?

উত্তর- আমরা এতই সাধারণ যে কবির মনে হয়েছে যে আমাদের ইতিহাস নেই। আসলে, ইতিহাস সাধারণ মানুষের কথা লিখে রাখে না; আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ‘চোখ-মুখ ঢাকা’ থাকে ইতিহাসে।

৭. আমরা কেন ‘বারােমাস ভিখারি’?

উত্তর- আমাদের অবস্থা ভিখারির মতোই করুণ এবং কখনই এই অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। তাই কবি বলেছেন, ‘আমরা ভিখারি বারোমাস’।

৮. ‘আমাদের কথা কে-বা জানে’ – এমন বলার কারণ কী?

উত্তর- সাধারণ মানুষ সব অর্থেই সাধারণ বা বিশেষ-পরিচয়হীন হয়। তাই কবি বলেছেন যে আমাদের কথা কেউ জানে না।

৯. আমরা দোরে দোরে ফিরছি কেন?

উত্তর- আমরা ‘ভিখারি বারোমাস’ এবং সেইজন্য আমরা দোরে দোরে ফিরছি।

১০. ‘পৃথিবী হয়তাে গেছে মরে’- কেন এমন বলা হয়েছে?

উত্তর- চারিদিকে মৃত্যুমিছিল এবং যারা বেঁচে আছে তাদের কাছেও সেই বিভীষিকা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো পথ ছিল না। তাই কবির এমন মনে হয়েছে।

আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকিঃ সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্ন

১) “আমাদের ইতিহাস নেই”- কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের ইতিহাস নেই কেন? ১+২

উত্তর- কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় সংকটাপন্ন সাধারণ মানুষের কথা বলা হয়েছে।

প্রচলিত ইতিহাস কেবল শোষকের কথা বলে, শোষিত সাধারণ মানুষের ব্যাপারে ইতিহাস বড়ই নীরব। সেইজন্য ইতিহাসের পাতায় তাদের স্থান হয়নি। ইতিহাস যুদ্ধবাজ শাসকদের নাম লিখে রাখে কিন্তু যুদ্ধে নিহত সাধারণ মানুষের নাম কেউ জানতে পারে না। আলোচ্য কবিতায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নিপীড়িত মানুষের কন্ঠে তাই শোনা যায় হতাশার সুর- “আমাদের ইতিহাস নেই”।

২) “এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি?”- এই আশঙ্কার কারণ কী? ৩

উত্তর- কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় বিপন্ন মানবতার ছবি তুলে ধরা হয়েছে।

কবি এমন এক সংকটময় পরিস্থিতির কথা বলেছেন যেখানে সাধারণ মানুষের ডানদিকে ধস, বাঁয়ে গিরিখাত, মাথার উপর বোমারু বিমান এবং পায়ের তলায় হিমানীর বাঁধ। অর্থাৎ, সেই দমবন্ধকর পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো পথ নেই। এরই মাঝে দেখা যায়, চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিশুদের শব। মৃত্যুর এই প্রতিচ্ছবি দেখে সাধারণ মানুষের মনে এরূপ আশঙ্কা হয়েছিল।

৩) “আমাদের পথ নেই কোনো”- ‘আমাদের’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? ‘পথ নেই’ কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর। ১+২

উত্তর- কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় ‘আমাদের’ বলতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অসহায় সাধারণ মানুষের কথা বলা হয়েছে।

কথায় আছে, ‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, প্রাণ যায় উলুখাগড়ার’। যুদ্ধের ফলে সাধারণ মানুষ সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আলোচ্য কবিতার শুরুতেই দেখি বিপন্ন মানুষের দুর্দশার চিত্র। তাদের ডানদিকে ধস, বাঁদিকে গিরিখাত, মাথার উপরে টহলরত বোমারু বিমান এবং পায়ের তলায় হিমানীর বাঁধ। অর্থাৎ, এই বিপদ থেকে পালিয়ে বাঁচবার কোনো পথ ছিল না তাদের। তাই বলা হয়েছে, “আমাদের পথ নেই কোনো”।

৪) “আমাদের কথা কে বা জানে”- এই মন্তব্যের দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? ৩

উত্তর- শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় যুদ্ধ-কবলিত অসহায় মানুষ আক্ষেপের সুরে বলেছে, “আমাদের কথা কে বা জানে!” এই উক্তির মাধ্যমে কবি সাধারণ মানুষের পরিচয়হীনতার কথা বলতে চেয়েছেন।

যুদ্ধে সাধারণ মানুষের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু তাদের কথা কেউ জানতে পারে না। যুদ্ধবাজ শাসকের নাম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে কিন্তু যুদ্ধের কারণে সর্বস্বান্ত হওয়া মানুষগুলো নামপরিচয়হীন হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। যেহেতু সাধারণ মানুষের কথা কেউ জানে না তাই তাদের মৃত্যুতে কারো কিছু এসে যায় না। এইজন্য এমন মন্তব্য করা হয়েছে।

আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকিঃ রচনাধর্মী প্রশ্ন

১) “আমরাও তবে এইভাবে/এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি?” – এমনটা মনে হচ্ছে কেন? ৫ [মাধ্যমিক ২০১৮]

উত্তর- কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় এক সংকটময় পরিস্থিতির ছবি তুলে ধরা হয়েছে। যুদ্ধের সর্বগ্রাসী লেলিহান শিখা যখন মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় তখন সাধারণ মানুষের পালাবার কোনো পথ থাকে না। দিশেহারা মানুষের ডানদিকে ধস, বাঁয়ে গিরিখাত, মাথার উপর বোমারু বিমান। অর্থাৎ, যেকোনো দিক থেকেই আকস্মিক বিপদ নেমে আসতে পারে। কিন্তু সেই মৃত্যুকূপ থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো পথ নেই কারণ পায়ের তলায় হিমানীর বাঁধ চলার পথে বাধা সৃষ্টি করে।

যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা নিষ্পাপ শিশুদেরকেও রেহাই দেয়না। মানুষ দেখে যে তাদের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শিশুদের শব। শিশুদের বলা হয় দেশের ভবিষ্যৎ, মানবতার ভবিষ্যৎ। শিশুদের মৃত্যু হওয়া মানে মানবতার মৃত্যু অনিবার্য। চোখের সামনে নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শেষ হয়ে যেতে দেখে সাধারণ মানুষের মনে সংশয় জাগে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত পৃথিবীতে তারা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার আশাটুকু হারিয়ে ফেলে। তাই তারা নিজেদেরকেই প্রশ্ন করে- “আমরাও তবে এইভাবে/এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি”?

২) “আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি”- কবিতার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লেখাে। ৫ [মাধ্যমিক ২০২০]

উত্তর- আধুনিককালের খ্যাতনামা কবি শঙ্খ ঘোষের একটি অনবদ্য কবিতা হল ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’। আলোচ্য কবিতায় যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীতে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই এবং হাতে হাত রেখে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করার কথা বলা হয়েছে।

কবিতার শুরুতেই এক সংকটময় পরিস্থিতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। অসহায় সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে যে, তাদের ডানদিকে ধস, বাঁদিকে গিরিখাত, মাথার উপর বোমারু বিমান এবং পায়ের তলায় হিমানীর বাঁধ। অর্থাৎ, যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে মুক্তির কোনো উপায় নেই। আবার, যুদ্ধের ফলে তারা গৃহহারা হয়েছে।

তারা দেখে যে তাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শিশুদের শব। নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এইভাবে শেষ হতে দেখে তাদের মনে প্রশ্ন জাগে- “আমরাও তবে এইভাবে/এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি?” এই সংকটের মুহূর্তের সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে, হাতে হাত রেখে বাঁচার সংকল্প করে।

এইসব সাধারণ মানুষ নামপরিচয়হীন। ইতিহাসেও তাদের কোনো উল্লেখ নেই। চারদিকে মৃত্যুর হাতছানি দেখে তাদের ভ্রম হয় যে পৃথিবী বেঁচে আছে কিনা। তবে, হতাশাই শেষ কথা নয়। যুদ্ধের বিভীষিকা অতিক্রম করে যারা এখনো বেঁচে আছে, তারা সকলে আবার হাতে হাত রেখে বেঁচে থাকার শপথ নেয়।

৩) “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি” কবিতার নামকরণের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। ৫

উত্তর- সাহিত্যে নামকরণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নামটুকু পড়েই যেকোনো সাহিত্যিক রচনা সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা লাভ করা যায়। তবে এটাও ঠিক যে, নামকরণ যথার্থ হওয়া দরকার। নাহলে লেখার সঙ্গে নামের সঙ্গতি রক্ষা হয় না এবং পাঠক সেই রচনার রসাস্বাদন করতে ব্যর্থ হয়। এবার দেখে নেয়া যাক, আমাদের পাঠ্য, কবি শঙ্খ ঘোষের লেখা ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতাটির নামকরণ যথার্থ হয়েছে কি না।

আলোচ্য কবিতার প্রেক্ষাপটে রয়েছে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অসহায় মানুষের জীবনসংগ্রামের কথা। বিপদ তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। তাদের বাঁয়ে গিরিখাত, ডানদিকে ধস, মাথায় বোমারু বিমান এবং পথ চলতে বাধার সৃষ্টি করে হিমানীর বাঁধ। এহেন বিপর্যয়ের দিনে কারো মাথা গোঁজার জায়গা নেই কারণ যুদ্ধের ফলে তাদের ঘরের ছাউনি উড়ে গেছে। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিশুদের শব দেখে তারা ভাবে যে হয়তো তারাও এবার মরে যাবে। বাঁচার শেষ ইচ্ছেটুকু নিয়ে অসহায় মানুষজন একে অপরের হাত ধরে।

বিশেষ-পরিচিতিহীন এইসব মানুষ ইতিহাসে ব্রাত্য। এদের কথা ভাবার মতো কেউ নেই। আবার, চারিদিকে মৃত্যুর ছায়া দেখে এরা বুঝে উঠতে পারে না যে পৃথিবী আদৌ বেঁচে আছে না মরে গেছে। এইরকম বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে যা করা উচিত, এরাও তাই করেছে। যে’কজন বেঁচে আছে তারা একে অপরের হাত ধরে, সঙ্ঘবদ্ধভাবে বাঁচার শপথ নেয়।

জীবন যখন সংকটাপন্ন তখন ঐক্যবদ্ধভাবে বেঁচে থাকাই জীবনের একমাত্র মন্ত্র হয়ে দাঁড়ায়। আলোচ্য কবিতাতেও দু’বার সেই কথার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে- ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’। অতএব, বিষয়বস্তুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই কবিতার নামকরণ সার্থক হয়েছে, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

বাংলা গল্প ও প্রবন্ধ

বাংলা কবিতা ও নাটক

error: Content is protected !!