নীলধ্বজের প্রতি জনা

একাদশ শ্রেণীর পাঠ্য বাংলা কবিতাগুলির প্রথমটি হলো নীলধ্বজের প্রতি জনা। মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতা সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের মনে একটা ভীতি কাজ করে। কারণ, মধুকবির কবিতায় অনেক কঠিন শব্দ থাকে যেগুলির মানে উদ্ধার করার জন্য অভিধান খুলতে হয়। অনেক ছাত্রছাত্রী তাদের এই অসুবিধার কথা জানিয়েছে। এইজন্য এই কবিতাটি লাইন ধরে বিশ্লেষণ করা হলো।

নীলধ্বজের প্রতি জনা

কবি পরিচয়

‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ কবিতাটি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের (১৮২৪-৭৩) লেখা। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত কবির বাসনা ছিল ইংরেজি সাহিত্যচর্চা করার। জীবনের প্রথম দুটি কাব্য ইংরেজি ভাষাতেই লেখা। কিন্তু ইংরেজি সাহিত্য রচনা করে তিনি সাফল্য পাননি। পরে বন্ধু-শুভাকাঙ্খীদের পরামর্শে তিনি বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন এবং সফল হন। 

উৎস

কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বীরাঙ্গনা’  (১৮৬২) পত্রকাব্যের একাদশ সংখ্যক কবিতা। পত্রকাব্যের বিষয়বস্তু হল একজন নারী তাঁর প্রিয়তমকে মনের কথা জানায় পত্র অর্থাৎ চিঠির মাধ্যমে। এই পত্রটি রানী জনা লিখেছেন তাঁর স্বামী নিলধ্বজকে।

কবিতার পটভূমি

মাহেশ্বরপুরীর রাজা নীলধ্বজ। তাঁর পুত্র প্রবীর নিতান্তই বালক। অর্জুনের অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া সে আটকে দিয়েছিল। পরে অর্জুন এসে একপ্রকার অন্যায়যুদ্ধ করে বালক প্রবীরকে হত্যা করেছিল। নীলধ্বজ ভেবেছিল অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করে প্রবীরের হত্যার প্রতিশোধ নেবে। কিন্তু তাঁর জামাতা অগ্নি তাঁকে বলে যে অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করলে হারতেই হবে। তাই তাঁর সঙ্গে সন্ধি করাই বুদ্ধিমানের কাজ। বিবাদ করতে অনিচ্ছুক (বিবাদপরাঙ্মুখ) নীলধ্বজ অর্জুনকে রাজসভায় নিয়ে এসে নাচগানের আসর বসায়। এই ঘটনা প্রবীরের মা তথা নীলধ্বজের স্ত্রী জনা কোনোমতেই মেনে নিতে পারছিল না। পত্রের মাধ্যমে জনা সেই কথাই ব্যক্ত করেছেন। উল্লেখ্য যে, মহাভারতের অশ্বমেধ পর্বে এই ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।

কবিতাটির গদ্যরূপ (অর্থসহ)

‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ কবিতার লাইন ধরে বিশ্লেষণ, শুধু লাইন নয়- প্রতিটি লাইনের শব্দ ধরে বিশ্লেষণ। কঠিন শব্দগুলি পাশে ব্র্যাকেটের ভিতর নীল কালিতে দেওয়া হল। বইটি সামনে রেখে একবার এই গদ্যরূপটি পড়লে সম্পুর্ণ কবিতাটি বোঝা যাবে আশা করছি।

আজ  রাজবাড়ির সদর দরজায় (রাজতোরণে)  যুদ্ধের বাজনা (রণবাদ্য) বাজছে। ঘোড়া ডাকছে (হ্রেষে অশ্ব), হাতি গর্জন করছে (গর্জে গজ), উড়ছে আকাশে রাজপতাকা(রাজকেতু); রাজসৈন্যরা অনবরত যুদ্ধের উন্মাদনায় হুঙ্কার ছাড়ছে! (মুহুর্মুহুঃ হুঙ্কারিছে মাতি রণমদে রাজসৈন্য)—কিন্তু কোন্‌ কারণে (হেতু)?

হে রাজা (নররাজ), সদলবলে যুদ্ধ করার জন্য (যুঝিতে সদলে) তুমি কি রণসজ্জায় সাজছ (সাজিছ)? — পুত্র প্রবীরের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য (প্রতিবিধিৎসিতে), অর্জুনের রক্তে (ফাল্পুনির লোহে) আমার দুঃখের আগুন নেভাতে (নিবাইতে এ শোকাগ্নি)?

এই তো সাজে তোমাকে (তোমারে), তুমি ক্ষত্রিয় কুলের মণি (ক্ষত্রমণি), মহাবলশালী (মহাবাহু)! দ্রুত যাও (যাও বেগে) যেমন করে সগর্জনে (নিনাদে) গজরাজ যায় (গজরাজ যথা) যমের দণ্ডের মতো শুড় আস্ফালন করে (যমদণ্ডসম শুণ্ড আস্ফালি)!

আজ যুদ্ধক্ষেত্রে (রণস্থলে) অর্জুনের (কিরীটীর) গর্ব্ব ভেঙে চুরমার করে দাও (টুট)।

তার কাটা মুন্ড (খণ্ডমুণ্ড তার) নিয়ে এস (আন) শূলদণ্ডের মাথায় চাপিয়ে (শূল-দণ্ড-শিরে)!

অন্যায় যুদ্ধে (সমরে) মূর্খ (মূঢ়) বালক হত্যা করল (নাশিল বালকে);

মেরে ফেল (নাশ), হে মহা ধনুর্ধর (মহেষ্বাস), তাকে (তারে)!

এ যন্ত্রণা ভুলব (ভুলিব এ জ্বালা), এই ভয়ংকর যন্ত্রণা (এ বিষম জ্বালা), হে স্বামী (দেব), তাড়াতাড়ি ভুলতে পারব (ভুলিব সত্বরে)!

জন্ম হলেই মৃত্যু হয়, বিধাতার এটাই নিয়ম (জন্মে মৃত্যু ;—বিধাতার এ বিধি জগতে)।

ক্ষত্রিয় কুলের রত্ন (ক্ষত্রকুল-রত্ম) পুত্র প্রবীর সুমতি, মুখোমুখি যুদ্ধ করে (সম্মুখসমরে পড়ি), গেছে স্বর্গধামে,— কি কাজ দুঃখ করে (বিলাপে), প্রভু?

হে রাজা, মহারাজ, নিজের বাহুবলে ক্ষত্রিয়দের ধর্ম, ক্ষত্রিয়দের কর্ম পালন কর(পাল, মহীপাল, ক্ষত্রধর্ম্ম, ক্ষত্রকর্ম্ম সাধ ভুজবলে)।

হায়, পাগলিনী জনা! তোমার (তব) সভার মাঝে আজ নর্ত্তকী নাচছে, গায়ক গাইছে, উথলে উঠছে (উথলিছে) বীণাধ্বনি!

তোমার (তব) সিংহাসনে বসেছে পুত্রের হত্যাকারী (পুত্রহা) শত্রু(রিপু)— সে তোমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু (মিত্রোত্তম) এখন (এবে)!

অতিথি-রত্নটিকে যত্ন করেই সেবা করছ (সেবিছ যতনে তুমি অতিথি-রতনে)।—

কি লজ্জা! দুঃখের কথা, হায়, বলব কাকে(কব কারে)?

পুত্রের অভাবে (পুত্রের বিহনে) আজ কি তুমি জ্ঞান হারিয়েছ (হতজ্ঞান আজি কি হে) , মাহেশ্বরী-পুরীর রাজা (মাহেশ্বরী-পুরীশ্বর) নীলধ্বজ রথী?

হে রাজা, যে দারুণ বিধাতা (বিধি), আজ আমার পুত্রকে হরণ করে (হরি পুত্রধনে) আমার রাজ্য অন্ধকার করে দিল (আঁধারিলা), তিনি কি তোমার জ্ঞানও হরণ করলেন (হরিলা কি তিনি জ্ঞান তব)?

তা না হলে, বল আমাকে (কহ মোরে), কেন এ পাপিষ্ঠ (পাষণ্ড) পাণ্ডবদের রথী অর্জুন (পাণ্ডুরথী পার্থ) তোমার ঘরে (তব পুরে) অতিথি?

কেমন করে তুমি, হায়, বন্ধুর মতো (মিত্রভাবে) স্পর্শ কর সেই হাত (পরশ সে কর), যা প্রবীরের রক্তে লাল (লোহে লোহিত)? হে রাজা (নৃমণি) এটা কি ক্ষত্রিয়ধর্ম্ম?

কোথায় ধনুক, কোথায় বাণ রাখবার জায়গা (তূণ), কোথায় চামড়া (চর্ম্ম), কোথায় তরবারি (অসি)?

যুদ্ধক্ষেত্রে (রণক্ষেত্রে) তীক্ষ্ণতম শর দিয়ে শত্রুর বুক ভেদ না করে (না ভেদি রিপুর বক্ষ), তুমি কি সভাতলে মিষ্টি কথায় (মিষ্টালাপে) তার কান তোষণ করছ (তুষিছ কি কর্ণ তার)?

কি বলবে, বল, যখন দেশ-দেশান্তরে জানাজানি হবে এই কাহিনি (জনরব লবে এ কাহিনী),— কী বলবে যত ক্ষত্রিয় রাজা (ক্ষত্রপতি)?

রাজা, শুনলাম (শুনিনু) অর্জুনকে (পার্থে) নরনারায়ণ ভেবে (নররারায়ণ-জ্ঞানে), ভক্তিভাবে পূজা করছ (পূজিছ)—এ কি ভ্রান্তি তোমার?

হায়, ভোজরাজের কন্যা (ভোজবালা) কুন্তী—কে না জানে তাকে, স্বেচ্ছাচারিণী (স্বৈরিণী)?

হে রাজরথি, এমন ছেলে (তনয়) তার যার জন্মের ঠিক নেই (জারজ) সেই অর্জুনকে কী গুণ দেখে নরনারায়ণ-জ্ঞানে তুমি পূজা কর? কী লজ্জার কথা (কি লজ্জা)! হে দারুণ বিধাতা, এ কি লীলাখেলা তোর, বুঝব কেমন করে?

একমাত্র পুত্র দিয়ে পুনরায় তাকে নিয়ে নিলি, অকালে। মানটুকু ছিল (আছিল মান) — তাও কি শেষ করে দিলি (নাশিলি)?

নরনারায়ণ নাকি পার্থ? অসতী (কুলটা) যে নারী— বারাঙ্গনা (বেশ্যা) — তার গর্ভে কি হে এসে জন্ম নিল বিষ্ণু (জনমিলা হৃষীকেশ)? কোন্‌ শাস্ত্রে, কোন্‌ বেদে লেখে— কি পুরাণে—এ কাহিনী? কেবল মহাভারত-রচয়িতা ব্যাসদেব (দ্বৈপায়ন ঋষি) পাণ্ডবদের গুণকীর্ত্তন গান সবসময় (গায়েন সতত)।

সত্যবতীর ছেলে (সত্যবতীসুত) ব্যাসদেব জগতে বিখ্যাত। তার মা জেলে (ধীবরী জননী) আর বাবা ব্রাহ্মণ!

দুজন ভ্রাতৃবধূকে নিয়ে (লয়ে কোলে ভ্রাতৃবধূদ্বয়ে) কামনার খেলা করল (করিলা কামকেলি), সে কিনা ধর্ম্মমতি! কি দেখে তাঁর কথা গ্রাহ্য কর বোঝাও তো এই দাসীকে? (দাসীরে, অর্থাৎ জনা নিজেকে বলেছে)। তিনি অর্থাৎ ব্যাসদেব হলেন কু-কুলের কুলাচার্য্য।

তবে যদি নারায়ণ (পীতাম্বর) পার্থরূপেই পৃথিবীতে (ভবে) অবতীর্ণ হয়েছেন, কোথায় লক্ষ্মী (পদ্মালয়া ইন্দিরা)? দ্রৌপদী বুঝি? আঃ মরি, কি সতী! শাশুড়ীর যোগ্য বৌমা (বধূ)!

পাণ্ডবদের সরোবরে পদ্ম (পৌরব-সরসে নলিনী)! অলি বা মৌমাছির সখী, সূর্য বা রবির অধীনা ও বাতাসের প্রিয়া (সমীরণ-প্রিয়া)! ধিক্‌! এত দুখেও (হেন দুঃখে) হাসি আসে মুখে যদি ভাবি দ্রৌপদীর (পাঞ্চালীর) কথা! এই ভ্রষ্টা রমণী কি জগতের মাতা লক্ষ্মীদেবী (লোকমাতা রমা)?

আমি জানি লোকে বলে রথীকুল-পতি পার্থ। মিথ্যা কথা, স্বামী (নাথ)! বিবেচনা কর, সূক্ষ্ম বিবেচক হিসেবে তুমি বিখ্যাত জগতে।—

স্বয়ম্বর সভায় ছদ্মবেশে লক্ষ রাজাকে ছলনা করল (ছলিল) দুর্ম্মতি ( অর্জুনকে দুর্মতি বলা হয়েছে)। সেই যুদ্ধে (সে সংগ্রামে) তাকে ব্রাহ্মণ ভেবে কোন্‌ ক্ষত্রীয় রথী বল তো যথাসাধ্য যুদ্ধ করল (যুঝিল)? রাজাদের দলে (রাজদলে) সেইজন্য (তেঁই) সে জিতেছিল।

দুষ্ট অর্জুন খাণ্ডব বন দহন করেছিল (দহিল খাণ্ডব) কৃষ্ণের সাহায্য নিয়ে (সহায়ে)।

শিখণ্ডীর সাহায্য নিয়ে (সহকারে) কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে (রণে) কৌরব এবং পাণ্ডব বংশের গৌরব (পৌরব-গৌরব) বৃদ্ধ পিতামহ ভীষ্মকে হত্যা করেছিল (সংহারিল) মহাপাপী অর্জুন।

গুরু দ্রোণাচার্য্য,— তাঁকে কি কুছলে নরাধম অর্জুন বধ করল (বধিল), দেখ মনে করে (স্মরি)?

ব্রহ্মশাপের জন্য কর্ণের রথের চাকা যখন (রথচক্র যবে) পৃথিবী গ্রাস করেছিল (বসুন্ধরা গ্রাসিলা সরোষে), তখন যুদ্ধে অক্ষম (বিকল সমরে) মহান যশস্বী কর্ণকে (কর্ণ মহাযশাঃ) বর্বর অর্জুন বধ করেছিল (নাশিল বর্ব্বর)।

হে মহারথী, আমাকে বল তো এটা কি মহারথী প্রথা (কহ মোরে, শুনি, মহারথী-প্রথা কি হে এই মহারথি)?

ফাঁদের মাঝে এনে (আনায়-মাঝারে আনি) পশুরাজকে কৌশলে বা ছলনা করে বধ করে (মৃগেন্দ্রে কৌশলে বধে) ভীতু শিকারি (ভীরুচিত ব্যাধ); কিন্তু সেই পশুরাজ যখন শত্রুকে বধ করে (মৃগেন্দ্র যবে নাশে রিপু), আক্রমণ করে সে (আক্রমে সে) নিজ পরাক্রমে!

কি না তুমি জান রাজা? কি বলব (কব) তোমারে? জেনে শুনে তবে কি ছলনে ভুলে গেলে নিজের গৌরব (আত্মশ্লাঘা), হে মহারথি? হায় রে কি পাপে, রাজ-শিরোমণি রাজা নীলধ্বজ আজ মাথা নিচু করে আছে (নতশির),—হে বিধাতা !— অর্জুনের সামনে (পার্থের সমীপে)?

কোথায় বীরের অহংকার (বীরদর্প) তোমার? মর্যাদার অহংকার (মানদর্প) কোথায় গেল? চণ্ডালের পদধূলি ব্রাহ্মণের কপালে (ভালে)?

হরিণের চোখের জলে কি আর দাবানল নেভে (কুরঙ্গীর অশ্রুবারি নিবায় কি কভু দাবানলে)? কোকিলের কাকলী-লহরী গর্জনশীল ঝড়কে (উচ্চনাদী প্রভঞ্জনে) কবে শান্ত করেছে (নীরবয়ে কবে)?

দুর্বলের আবেদন কি সবল গ্রাহ্য করে (ভীরুতার সাধনা কি মানে বলবাহু)?

কিন্তু বৃথা এ তিরস্কার (গঞ্জনা)। গুরুজন তুমি; তোমাকে দোষ দিলে ভীষণ পাপে পড়ব (পড়িব বিষম পাপে গঞ্জিলে তোমারে)।

কুলনারী আমি, স্বামী (নাথ), বিধির বিধানে পরাধীনা। সেই শক্তি নেই যে নিজের জোরে (স্ববলে) এ পোড়া মনের ইচ্ছা (বাঞ্ছা) পূরণ করি (মিটাই)। দুরন্ত অর্জুন (ফাল্গুনি), [এই কুন্তীপুত্র যোদ্ধাকে (এ কৌন্তেয়-যোধে) বিধাতা সৃষ্টি করেছিল আমার বিশ্বসুখ নাশ করার জন্য (ধাতা সৃজিলা নাশিতে বিশ্বসুখ!)] নিঃসন্তান করল আমাকে!

তুমি স্বামী, ভাগ্যদোষে তুমি আমার প্রতি বাম! কোন্‌ সাধে বাঁচি (প্রাণ ধরি) ধরাধামে? হায় রে, এ জনবহুল পৃথিবী (জনাকীর্ণ ভবস্থল) আজ নির্জন (বিজন) জনার পক্ষে! এ পোড়া কপালে (ললাটে) বিধাতা যা লিখল, সেটাই হল (ফলিল তা কালে)!—

হায় প্রবীর! এই কারণে (হেতু) কি তোকে দশ মাস দশ দিন নানা যত্ন সহ্য করে এ উদরে ধরেছিলাম? কোন্‌ জন্মে, কোন্‌ পাপে পাপী তোর কাছে অভাগিনী, তাই দিলি বাছা, এ যন্ত্রণা (তাপ)? আশার লতা তাই রে ছিঁড়লি? হা পুত্র। এইরূপে কি রে তুই শোধ করলি (শোধিলি) মাতৃঋণ (মাতৃধার)? এই কি রে ছিল তোর মনে?—

কেন রে পোড়া আঁখি বৃথাই ঝরে যাস (বরষিস্‌) আজ চোখের জল (বারিধারা)? ওরে অবোধ, কে মুছবে তোকে? কেন বা জ্বলিস্‌ মন? কে জুড়ারে আজ তোকে মিষ্টি কথায় (বাক্য-সুধারসে)? মধ্যম পাণ্ডব অর্জুনের শরে তোর শিরোমণি নিহত হয়েছে (পাণ্ডবের শরে খণ্ড শিরোমণি তোর); গর্তে লুকিয়ে (বিবরে লুকায়ে), কাঁদি মনের দুঃখে (খেদে), মর্‌, ওরে মণিহারা সাপ (ফণি)!—

চলে যাও হে মহারাজ (মহাবল), যাও হস্তিনাপুরে (কুরুপুরে) নতুন বন্ধু পার্থকে নিয়ে (নব মিত্র পার্থ সহ)! অভাগা জনা পুত্রের উদ্দেশ্যে মহাপ্রস্থান করবে (মহাযাত্রা করি চলিল অভাগা জনা পুত্রের উদ্দেশে)! ক্ষত্রিয় কুলের মেয়ে (ক্ষত্র-কুলবালা) আমি; ক্ষত্রিয় কুলের বউ (ক্ষত্র-কুল বধু); কেমন করে এ অপমান সহ্য করব (সব) ধৈর্য্য ধরি? ছাড়িব এ পোড়া প্রাণ (গঙ্গার) জাহ্নবীর জলে; দেখব যদি যমলোক গিয়ে সব ভুলতে পারি (দেখিব বিস্মৃতি যদি কৃতান্তনগরে লভি অন্তে)!

চাইছি (যাচি) চির বিদায় ও পদে! ফিরে এসে যখন (ফিরি যবে) রাজপুরে প্রবেশ করবে, মহারাজ (নরেশ্বর), যদি ডাক “কোথায় জনা?” বলে, তোমার কণ্ঠের প্রতিধ্বনি উত্তর দিবে (উত্তরিবে) “কোথা জনা?” বলে।

গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন এবং উত্তর

MCQ Mock Test

কবিতাটি যদি ভালো করে পড়া হয়ে গেছে তবে এই লিংকে ক্লিক করে এই কবিতার এমসিকিউ প্রশ্নের মক টেস্ট দিয়ে দাও। দেখো কত নাম্বার পাও।

ডাকাতের মা  বাড়ির কাছে আরশিনগর 

error: Content is protected !!