একাদশ শ্রেণির বাংলা

বাড়ির কাছে আরশিনগর

কবি-পরিচিতি

আমাদের পাঠ্য ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ একটি বাউলগান। গানটি লিখেছেন লালন ফকির (১৭৭২-১৮৯০)। তিনি একজন বাউল সাধক, সমাজ সংস্কারক এবং একজন মানবতাবাদের পূজারি ছিলেন।

কবিতাটির উৎস

আলোচ্য কবিতাটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত ‘লালনগীতিকা’ সংকলন থেকে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন গীতিসংকলনে গানটি স্থান পেয়েছে।

বাউল এবং বাউলগান

লালন ফকিরের ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ হল একটি বাউলগান। আর লালন ফকির ছিলেন সর্বকালের সেরা একজন বাউল-সাধক। বাউলগান কী এটা জানার আগে জানা প্রয়োজন ‘বাউল’ কথার অর্থ কী?

গ্রামেগঞ্জে যে মানুষগুলি গেরুয়া বস্ত্র পরে, হাতে একতারা নিয়ে গান গেয়ে বেড়ায় তারাই বাউল। পন্ডিতদের মতে, ‘বাউল’ কথার অর্থ হল ‘বাতুল’ বা ‘বায়ুসেবনকারী’ অর্থাৎ বায়ুগ্রস্ত বা উন্মাদ। বাউল হল এমন এক সম্প্রদায় যারা সংসার-বিবাগী এবং সমস্তরকম জাতপাত, সংকীর্ণতা এবং সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্ধ্বে। হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়েরই বাউল রয়েছে। স্থান-কাল-পাত্রভেদে বাউল সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু কিছু পার্থক্য থাকলেও কয়েকটি মিল রয়েছে। যেমন-

১) বাউলসাধনা গুরুশিষ্য পরম্পরায় চলে;

২) তারা গানের মাধ্যমে ঈশ্বরের আরাধনা করেন;

৩) তারা বিশ্বাস করেন যে মানবদেহের মধ্যেই ঈশ্বর বাস করেন এবং

৪) বাউল সাধনায় দেহতত্ত্বের বিশেষ স্থান রয়েছে অর্থাৎ তাদের ঈশ্বরসাধনা হল দেহসাধনা। বাউলগানেও দেহসাধনার নানা ইঙ্গিত মেলে।

কবিতার বিষয়বস্তু

‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতাতেও দেহসাধনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কবি বলেছেন তাঁর বাড়ির কাছেই একটি জায়গা আছে আর সেখানে এক পড়শি বসবাস করেন। এই জায়গাটি হল কবির শুদ্ধতম হৃদয় আর পড়শিটি হলেন ঈশ্বর। জায়গাটির নাম আরশিনগর কেন? আসলে, আরশি মানে হল আয়না। আয়নাতে আমরা নিজেদের মুখ দেখি। তেমনি আমাদের অন্তরাত্মাই হল আমাদের প্রতিচ্ছবি আর সেই শুদ্ধতম ‘আমি’টাই হল ঈশ্বর।

কবির এই পড়শি অর্থাৎ ঈশ্বর এমনই যে তার হাত-পা-কাঁধ কিছুই নেই অর্থাৎ বাউলদের মতে ঈশ্বর হলেন নিরাকার। এই পড়শি কখনো শুন্যে ভাসেন আবার কখনো থাকেন জলে। অর্থাৎ ঈশ্বর কখনো অনুভূতিগোচর কখনো বা অনুভূতি-অতীত।

আমাদের মনের মধ্যে ঈশ্বর থাকেন তাহলে আমরা কেন তার সাক্ষাৎ পাই না? কবি বলেছেন, সেই পড়শি অর্থাৎ ঈশ্বর যেখানে থাকেন তার চারদিকে অগাধ জলরাশি। সেই জলের কোনো কিনারা নেই। এই জল হল মানুষের অন্তহীন বাসনা। আবার কবি বলেছেন সেই জল অতিক্রম করার মতো কোনো নৌকো নেই, অর্থাৎ মানুষকে বাসনামুক্ত করার কোনো উপায় বা পদ্ধতি নেই।

মানুষের বাসনাই তাকে ঈশ্বরের থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। কবি আক্ষেপ করে বলেছেন, সেই পড়শিকে অর্থাৎ ঈশ্বরকে একবার ছুঁতে পারলে কবির মৃত্যুযন্ত্রণা দূর হয়ে যেত কিন্তু পাশাপাশি থেকেও তিনি ছুঁতে পারছেন না।

গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন

এমসিকিউ টেস্ট

কবিতাটি যদি ভালো করে পড়া হয়ে গেছে তবে এই লিংকে ক্লিক করে এই কবিতার এমসিকিউ প্রশ্নের মক টেস্ট দিয়ে দাও। দেখো কত নাম্বার পাও।

নীলধ্বজের প্রতি জনা  দ্বীপান্তরের বন্দিনি

error: Content is protected !!