নানা রঙের দিন

নাট্যকার পরিচিতি

বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৩৩- ১৯৮৩)। তিনি একজন প্রতিভাবান অভিনেতা, দক্ষ নির্দেশক এবং উঁচু মাপের নাট্যকার ছিলেন। থিয়েটার জীবনের শুরুতে তিনি ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যোগ দিয়েছিলেন এবং পরে ‘নান্দীকার’ (১৯৬০) নামের একটি নাট্যগোষ্ঠী গড়ে তোলেন। আরো পরে, ১৯৭৭ সালে ‘নান্দীমুখ’ নামের আরেকটি নতুন নাট্যদল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। থিয়েটার ছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন।

নানা রঙের দিন
নানা রঙের দিন

নাটক প্রসঙ্গে

‘নানা রঙের দিন’ নাটকটি আন্তন চেকভের ‘Swan Song নাটকের অনুকরনে রচিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকগুলি নাটক অনুবাদও করেছিলেন। যদিও অনুবাদের ক্ষেত্রেও তাঁর স্বকীয়তা চোখে পড়ার মতো। আলোচ্য নাটকেও নাট্যকারের নিজস্বতা মিশে রয়েছে।

চরিত্র ও প্রেক্ষাপট

‘নানা রঙের দিন’ নাটকের চরিত্র দুটি। একজন হলেন রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়(৬৮ বছর) এবং অপরজন কালীনাথ সেন (৬০বছর)। রজনীবাবু হলেন পেশাদারি থিয়েটারের একজন প্রাক্তন অভিনেতা এবং কালিনাথ সেই থিয়েটারের প্রম্পটার।  

নাটকের প্রেক্ষাপট- পেশাদারি নাটকের ফাঁকা রঙ্গমঞ্চ। নাটক শেষ হয়ে গেছে এবং সকল পাত্রপাত্রী, দর্শক চলে গেছে। সেই শুন্য মঞ্চে রজনীবাবুর আগমণ ঘটে। 

কাহিনি সংক্ষেপ

নাটক শেষ হয়ে গেছে। সমস্ত কলাকুশলী, দর্শক সব পালিয়ে গেছে। এমন সময় ঘুম ভাঙল বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীবাবুর। মদ খেয়ে গ্রিনরুমেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তখন গভীর রাত এবং চারিদিক শুনশান। এতবড় থিয়েটার তখন খাঁখাঁ করছে।রজনীবাবুর বেশ ভয় ভয় করছিল। এই নিস্তব্ধ-গভীর রাতে শুরু হল আত্মকথন। তেইশ বছর বয়সে থিয়েটারের জগতে পা রেখেছিলেন তিনি। এখন তার বয়স আটষট্টি। তার পঁয়তাল্লিশ বছরের থিয়েটার জীবনের ইতিহাস খোলা পাতার মতো তার সামনে হাজির। এখন তিনি বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। যতই তিনি চুলে হাফশিশি কলপ লাগিয়ে বা কমবয়সীদের সঙ্গে ঠাট্টা-তামাশা করে দিন কাটান, বয়স তো তার হয়েছে। দীর্ঘ আটষট্টি বছর একপা একপা করে তিনি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন। রাত্রির নির্জনতা আর মৃত্যু তার কাছে একরকম মনে হয়। এমনকি চিতার আগুনের তাপটাও তিনি অনুভব করতে পারেন।

এমন সময় তাদের প্রম্পটার কালীনাথ সেন এসে হাজির হয়। কালীনাথের নিজের ঘর নেই তাই থিয়েটারে শুয়েই রাত কাটায় সে। তাকে দেখে রজনীবাবু প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। যাইহোক, কালীনাথের সামনে এবার রজনীবাবু তার জীবনের সংক্ষিপ্ত ইথিহাস তুলে ধরেন। যখন তার বয়স কম ছিল একটি মেয়ে তার অভিনয় দেখে প্রেমে পড়েছিল। বড়লোকের সুন্দরী সেই মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে রজনীবাবুর সঙ্গে প্রেম করেও তাকে বিয়ে করতে রাজী হয়নি। এরপর রজনীবাবু সম্পুর্ন ভেঙ্গে পড়েছিলেন। জীবনকে নিয়ে তার সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছিল। এরপর থেকে শুধুই থিয়েটার আর অভিনয়- নিজের দিকে তাকাবার সময়ও তিনি পাননি। আজ যখন ফাঁকা মঞ্চে একা দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন বুঝলেন যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। সেই মেয়েটির কোনো খবর তিনি পাননি, তবে রজনীবাবু আজ সম্পুর্ন একা।

তিনি প্রতিভাবান অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়, তাই বয়সে তার কী যায় আসে? এইজন্য তিনি কালীনাথের সামনে পুরনো দিনের একএকটা নাটকের সংলাপ গড়গড় করে বলতে থাকেন। তিনি যেন মনে প্রাণে প্রমাণ করতে চান যে বয়স বাড়লেও কিন্তু তার প্রতিভা মরেনি। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি স্বীকার করে নেন- “আমাদের দিন ফুরিয়েছে”। সময় সবথেকে বলবান। সে নিষ্ঠুরভাবে মানুষের নাম-যশ-প্রতিভা-যৌবন সব কিছু কেড়ে নিয়ে মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়। জীবনের চরম সত্য যে মৃত্যু একথা তিনি মনে মনে স্বীকার করে নেন।

প্রাসঙ্গিক তথ্য

‘নানা রঙের দিন’ নাটকে অন্য তিনজন নাট্যকারের ৫টি নাটকের সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছে। সেগুলি হল- (১) মনোমোহন বসুর ‘রিজিয়া’ (২) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘সাজাহান’ এবং (৩) উইলিয়াম শেকসপিয়ারের তিনটি নাটক যথাক্রমে ‘ওথেলো’, ‘ম্যাকবেথ’ এবং ‘রিচার্ড দি থার্ড’ নাটক। 

বড় প্রশ্ন

এমসিকিউ টেস্ট

এই নাটক থেকে ছোটো প্রশ্ন এবং এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য মূল নাটকটি পড়তেই হবে। নাটকটি যদি পড়া থাকে তাহলে এখনি এই এমসিকিউ টেস্ট দেওয়া যেতে পারে।

বিভাব নাটক পড়তে জানে এমন…

error: Content is protected !!