নাটক- বিভাব

নাট্যকার পরিচিতি

শম্ভু মিত্র (১৯১৫ –১৯৯৭) ছিলেন বাংলা তথা ভারতের একজন প্রবাদপ্রতিম নাট্য ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন ‘বহুরুপী’ নাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ। তিনি একাধারে অভিনেতা, নাট্যকার এবং পরিচালক। তাঁর রচিত নাটকগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ছিল ‘চাঁদ বণিকের পালা’। অন্যান্য নাটকের মধ্যে রয়েছে উলুখাগড়া, বিভাব, ঘূর্ণি, কাঞ্চনরঙ্গ প্রভৃতি। তাঁর স্ত্রী তৃপ্তি মিত্রও একজন স্বনামধন্য অভিনেত্রী ছিলেন। ১৯৭৬ সালে নাটক ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে ম্যাগসেসে পুরস্কার ও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয়।

IMG_20160513_010338.jpg

নামকরণ

সংস্কৃত নাট্যশাস্ত্র অনুযায়ী, ‘বিভাব’ কথার অর্থ হল যার দ্বারা দর্শকদের মনে ভাবের উদ্রেক হয়। এই নাটকেও নাট্যকার এমন কিছু করতে চেয়েছেন যার সাহায্যে দর্শকদের হাসি পায়।

কাহিনি সংক্ষেপ

প্রধান চরিত্র তিনটি- শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র এবং অমর গাঙ্গুলি। তিনটি নামই প্রকৃত নাম এবং এই নামেই তাঁরা মঞ্চে অবতীর্ণ হন।

নাটকের শুরুতে পর্দা ওঠা মাত্রই শম্ভু মিত্র বক্তৃতার ঢঙে দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলেন। তিনি বলেন গ্রুপ থিয়েটার যারা করে তাদের শখটুকু সম্বল কিন্তু নাটক করার অন্যান্য উপকরণ তাদের নেই। একে তো এহেন অভাব তার উপর সরকারের ট্যাক্সের চাপ। সবমিলিয়ে বেশ সঙ্কটজনক অবস্থা। তাই তিনি অনেক ভেবেচিন্তে একটি উপায় বার করেছেন। কোনো উপকরন দরকার নেই, নাটকের কুশীলবরা অভিনয়ের মাধ্যমে সব বুঝিয়ে দেবে আর দর্শকরাও সেইসব মেনে নেবে। এই বিষয়ে শম্ভু মিত্র তিনটি অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন-

১)একটি পুরনো বাংলা নাটকে আছে রাজা রথে চড়ার ভঙ্গী করলেন,

২) একটি ওড়িয়া যাত্রায় দেখা যায় রাজার দূত বাশের লাঠির উপর চেপে ঘোড়ায় চাপার ভঙ্গী করল,

৩) একটি মারাঠা তামাশায় একজন অভিনেতা একই স্টেজে একবার রাজা আর একবার পুরুত হয়ে অভিনয় করে গেল।

এই প্রসঙ্গে তিনি জাপানি কাবুকি থিয়েটারের কথা বলেন। সেখানেও নাটক করার জন্য নাট্য-উপকরন অপেক্ষা অভিনয়ের গুরুত্ব বেশি। এই চারটি নমুনা থেকে নাট্যকার মনে সাহস পান এবং নিজেই সেই পথে নাটকের অভিনয় শুরু করেন। শুরু হয় মূল নাটক।

শম্ভু মিত্র আসেন অমর গাঙ্গুলির বাড়ি। সেখানে তারা নতুন পদ্ধতিতে নাটক করার কথা বলেন। শম্ভু মিত্র অমরের বাড়িতে বসেন, সিগারেট খান- কোনোটাই আসল নয়, সবই কিন্তু ভঙ্গী মাত্র। এবারে সেখানে চা নিয়ে আসেন বৌদি অর্থাৎ তৃপ্তি মিত্র। তার পরিকল্পনাতেই সেখানে ‘লাভ সিন’ অভিনয় হয় কারণ লাভ অর্থাৎ প্রেম হল পৃথিবীর সবথেকে পপুলার জিনিস। নায়িকা তৃপ্তি মিত্র কলেজ থেকে ফিরছেন আর নায়ক শম্ভু মিত্র তাকে ধাক্কা মারেন এবং নায়িকার চড় খান। নেপথ্যে ফিল্মি স্টাইলে ন্যাকা ন্যাকা সুরে বাজে রবি ঠাকুরের ‘মালতী লতা দোলে’ গানটি। এতসব স্বত্বেও তাদের হাসি পেল না। শুরু হল দ্বিতীয় দৃশ্য।

এবারে শম্ভু মিত্র আন্ডারগ্রাউন্ড পোলিটিক্যাল নেতা, তৃপ্তি মিত্র তার স্ত্রী এবং অমর গাঙ্গুলি পুলিশের ইন্সপেক্টর। পুলিশের তাড়া খেয়ে শম্ভু মিত্র উপর থেকে সরাসরি নিচে লাফ দেন। এসবই কিন্তু অভিনয় বা ভঙ্গীমাত্র। যাইহোক, এবারেও হাসি পেল না তাদের।

এবার শম্ভু আর অমর হাসির খোরাক জোগাড় করার জন্য রাস্তায় নেমে আসেন। তারা দেখেন যে একদল শোভাযাত্রী এগিয়ে আসছে। তাদের দাবি খাদ্য চায় আর বস্ত্র চায়। অপরদিক থেকে আসে পুলিশ। পুলিশ জানায় তাদের মিছিল বন্ধ না করলে গুলি চালানো হবে। মিছিল বন্ধ হয় না, স্লোগানও চলতে থাকে আর তাই গুলি চালায় পুলিশ। একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সেখানেই পড়ে যায়। এবার শম্ভু মিত্র দর্শকদের জিজ্ঞেস করেন সবার হাসি পাচ্ছে কিনা?

বড় প্রশ্ন

এমসিকিউ মক টেস্ট

এই নাটক থেকে ছোটো প্রশ্ন এবং এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য মূল নাটকটি পড়তেই হবে। নাটকটি যদি পড়া থাকে তাহলে এখনি এই এমসিকিউ টেস্ট দেওয়া যেতে পারে।

ক্রন্দনরতা জননীর পাশে  নানা রঙের দিন

error: Content is protected !!