নুন

একাদশ শ্রেণির বাংলা

পাঠ্য কবিতা- নুন

জয় গোস্বামীর কবিতা নুন
জয় গোস্বামীর কবিতা নুন

কবি পরিচিতি

নুন কবিতাটি লিখেছেন আধুনিক সময়ের একজন উল্লেখযোগ্য কবি জয় গোস্বামী (১৯৫৪-)। কবির বিখ্যাত কবিতা সংকলনগুলি হল ‘প্রত্নজীব’, ‘ঘুমিয়েছ ঝাউপাতা?’, ‘পাগলী তোমার সঙ্গে’ ইত্যাদি। ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’ কাব্য-উপন্যাসটি কবির একটি উল্লেখযোগ্য রচনা।  

উৎস

কবিতাটি কবির ‘ভুতুমভগবান’ কবিতা সংকলন থেকে নেওয়া হয়েছে। 

কবিতাটির গদ্যরূপ

কবিতাটি উত্তম পুরুষের জবানিতে লিখিত। অর্থাৎ, বক্তা আমি/ আমরা দিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। এখানে বক্তাকে ‘কবি’ না বলে ‘কথক’ বলাই ভালো। এবার দেখে নেওয়া যাক ‘নুন’ কবিতার কথকের বক্তব্যটা কী?

কবিতার শুরুতেই কথক নিজেদের মানসিকতা স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছে যে তারা অল্পেই খুশি। এজন্য তাদের দুঃখ নেই। সাধারণ অন্ন-বস্ত্রে তাদের দিন কেটে যায়।

তাদের দিন চলে যায়। অসুখ হলে একটু অসুবিধা হয়; ধারদেনা করে বহুকষ্টে সংসার চলে। অভাবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে নেশা করার ঝোঁক। রাতের বেলা দু’ভাইয়ে মিলে গঞ্জিকাতে টান দেয়। বলে রাখা ভালো, এখানে দুই ভাই মানে যে কথকের সহোদর, এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। হতে পারে সে কথকের নিজের ভাই, অথবা, কথকের মতোই আরেকজন অভাবী মানুষ।

সবদিন তাদের রোজগার হয় না, তাই সবদিন বাজারও হয় না। তবে, যেদিন একটু বেশি রোজগার হয়, সেদিন মাত্রাছাড়া বাজার করা হয়। প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় কিছুই বাদ যায় না সেদিন। নিজেদের থাকার মতো ভালো জায়গা নেই তার উপর বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসে গোলাপের চারা।

গোলাপের চারা তো এল, কিন্তু কোথায় সেটা পোঁতা হবে? কারণ, গোলাপ তো ফুলের রানী, গরিবের ঝুপড়ি-বস্তিতে তাকে রাখবে কোথায়? আর যদি একটু ভালোমতো জায়গা দেখে চারাটা পোঁতাই হয়, তাকে তো নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। সুতরাং প্রশ্ন একটা থেকেই যায়- “ফুল কি হবেই তাতে”? সেটা অবশ্য পরের কথা। এখন এতসব না ভেবে টান দেয় গঞ্জিকাতে। আসলে এই নেশা হল তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

এই জীবনেই তারা সন্তুষ্ট। কথকের মতে, “আমরা তো এতেই খুশি”। এর বেশি তাদের চাওয়ার নেই। ‘হেসে, খেলে, কষ্ট করে’ কোনোমতে তাদের দিন কেটে যায়।

কিন্তু কারো সবদিন সমান যায় না। ‘দিন-আনি-দিন-খাই’-এর সংসারে কোনোদিন উপার্জন না হলে সংসারের চাকাটা হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। কথক হতাশার সুরে বলে- “মাঝে মাঝে চলেও না দিন”। কাজ নেই, হাতে টাকাও নেই। পেটভর্তি খিদে নিয়ে দুপুররাতে বাড়ি ফিরে আসে। রাতে ভাত খেতে বসে যখন দেখে যে ঠান্ডা ভাতে নুনটুকুও নেই, তখন সে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। ক্ষুধার জ্বালা আর নিত্য-অভাব মাথা বিগড়ে দেয় তার, রাগে ফেটে পড়ে সে।

আসলে ‘নুন’ তো শুধু লবণ নয়, নুন হল বেঁচে থাকার ন্যূনতম রসদ। সেটুকুও যখন জুটছে না, তখন রাগ হওয়াই স্বাভাবিক। পেটে খিদে আছে, তাই রাগের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সেই কথাটিই কবিতায় সুন্দরভাবে বলা হয়েছে- “রাগ চড়ে মাথায় আমার, আমি তার মাথায় চড়ি”- অর্থাৎ, উত্তরোত্তর রাগ বাড়তেই থাকে। এরপর ঘরের কথা আর ঘরে থাকে না, সারা পাড়া জানাজানি হয়ে যায়। “বাপব্যাটা দু-ভাই মিলে” চেঁচিয়ে সারা পাড়া মাথায় করে। এখন প্রশ্ন হতে পারে, বাপ আর ব্যাটা দু’ভাই হয় কী করে? এটা আসলে রাগের বহিঃপ্রকাশ। রাগলে মানুষের বাহ্যিক জ্ঞান লোপ পায়, সেইজন্য ‘বাপব্যাটা দু-ভাই’ বলা হয়েছে।

ঘরের অভাবের কথা বাইরের লোক শুনল, তাদের কিন্তু এতে কোনো আক্ষেপ নেই। দুপুররাতে সারা পাড়া মাথায় করেছে, এটা ভেবে যদি কেউ বিরক্ত হয়, তাতেও কিছু যায় আসে না। কথকের সাফ জবাব- “করি তো কার তাতে কী?” তারা তো নিতান্তই সামান্য লোক, তাই তাদের চাহিদাটাও সামান্য। কবিতার শেষে কথক কোনোরকম রাখঢাক না করে দাবি জানিয়েছে- “আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।” এই দাবি সমাজের উঁচুতলার মানুষের কাছে।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর (৫ নাম্বার)

শর্ট-এমসিকিউ

কবিতাটি ভালোভাবে পড়া হলে এই লিংক থেকে এমসিকিউ টেস্ট দিয়ে দাও। বিগত বছরের এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ এমসিকিউ প্রশ্ন দিয়ে মক টেস্টটি সাজানো হয়েছে।

দ্বীপান্তরের বন্দিনী  সুয়েজখালে হাঙ্গর শিকার

error: Content is protected !!