কর্তার ভূত

কর্তার ভূত

লেখক পরিচয়

‘কর্তার ভূত’ গল্পটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১- ১৯৪১) লেখা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রধান পরিচয় তিনি একজন কবি। তবে তাঁর সাহিত্য-প্রতিভা কেবল কবিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি কবিতা ছাড়াও উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গান এবং ছোটোগল্প লিখে গেছেন। তিনিই বাংলা ছোটোগল্পের প্রথম সার্থক স্রস্টা। ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যের জন্য ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারত তথা এশিয়া মহাদেশ থেকে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন।

কর্তার ভূত
কর্তার ভূত

উৎস

‘কর্তার ভূত’ রচনাটি রবি ঠাকুরের ‘লিপিকা’ (১৯২২) গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের এমন কিছু রচনাও আছে যেগুলি সাহিত্যের কোনো চেনা প্রকরণের মধ্যে পড়ে না। অর্থাৎ, সেগুলি গল্পও নয়, প্রবন্ধও নয়। ‘লিপিকা’র রচনাগুলিও সেই শ্রেণিতে পড়ে। 

বিষয় সংক্ষেপ

‘লিপিকা’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘কর্তার ভূত’ একটি রাজনৈতিক রূপক কাহিনী। রূপক কাহিনি বলতে সেই কাহিনিকে বোঝায় যার একটি অন্তর্নিহিত অর্থ থাকে। আলোচ্য গল্পে লেখক গল্পচ্ছলে উনিশ শতকের ভারতীয় সমাজের চালচিত্র তুলে ধরেছেন। গল্পটি আয়তনে ছোটো হলেও এর বিষয় ভাবগম্ভীর এবং তাৎপর্যপূর্ণ।

মনে রাখা দরকার, ‘কর্তার ভূত’ কোনো ভূতের গল্প নয় বরং বিজ্ঞানমনস্কতার গল্প। ‘ভূত’ শব্দের অর্থ অতীত এবং ভূত বলতে প্রেত, অশরীরী আত্মা ইত্যাদিকেও বোঝায়। এই গল্পে লেখক একদিকে যেমন ভারতীয়দের অতীতপ্রীতির দিকটি তুলে ধরেছেন, তেমনি ভূতের মূলে যে ভয়ের অস্তিত্ব থাকে সেই দিকেও আলোকপাত করেছেন। এরপর মূল গল্পের সারবস্তুটুকু দেখে নেওয়া যাক।

উনিশ শতকে সারা পৃথিবী যখন পুরাতন ধর্মতন্ত্রকে বিদায় জানিয়ে বিজ্ঞানকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছে তখন শুধু ভারতের মানুষ পুরাতন অচল ধর্মতন্ত্রকে নিয়ে বাঁচতে চাইছে। ভারতের মানুষ পুরাতনপন্থী এবং নতুন কিছুকে সহজে আয়ত্ত করতে দ্বিধা বোধ করে। সেইজন্য যখন সবাই শুনল যে পুরাতন ধর্মতন্ত্রের দিন শেষ হয়ে এসেছে সবাই ভাবতে বসল এবার তাদের কী হবে? নতুন কিছু এলে পুরাতনকে সরে যেতেই হয়। এটাই কালের নিয়ম। তাই ভারতের বুক থেকেও ধর্মতন্ত্র বিদায় নিল কিন্তু ধর্মভীরু সাধারণ মানুষ ধর্মতন্ত্রের কঙ্কালকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইল। কর্তা অর্থাৎ ধর্মতন্ত্র রইল না কিন্তু কর্তার ভূত অর্থাৎ পুরোহিততন্ত্র কায়েম রইল। চারিদিকে বিজ্ঞানের জয়জয়কার আর তার মাঝে ভারতে চলে ভূতের রাজত্ব।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে ‘ভূতের রাজত্ব’ আর কতদিন চলবে? পৃথিবীর বাকি সব দেশ বিজ্ঞানের চর্চা করে নিজেদের উন্নতি করছে আর ভারতের মানুষ তখনো ভূতের সেবায় মগ্ন। ভারতীয় সমাজ যেন ভূতের জেলখানা। এমন এক অদৃশ্য বন্ধনে সবাই জড়িয়ে পড়েছে যে ইচ্ছে করলেও কারো সাহস হয় না ‘ভূতের রাজত্ব’ নিয়ে প্রশ্ন করার। শেষমেষ দু’একজন বুড়ো কর্তার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে যে ভূতের রাজত্ব আর কতদিন? কর্তা উত্তর দেন তিনি ধরে রাখেননি, ভারতীয়রাই ভুতকে জড়িয়ে ধরে আছে- তারা ছাড়লেই ছাড়া। এর উত্তরে তারা জানায় যে তাদের ভয় করে। কর্তা বলেন যে এই ভয়ই হল ভূতের মূল।

বড় প্রশ্ন

এমসিকিউ টেস্ট 

শর্ট প্রশ্ন এবং এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য টেক্সট বইটি পড়া প্রয়োজন। গল্পটি পড়া থাকলে MCQ Mock Test দিয়ে জেনে নাও কতগুলি সঠিক উত্তর দিতে পারছো।

পরের পাঠ- তেলেনাপোতা আবিষ্কার

error: Content is protected !!