ভাষা ও উপভাষা

ভাষা-উপভাষা 

একাদশ শ্রেণি (চতুর্থ অধায়)

ভাষা হল মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করার মাধ্যম। পৃথিবীতে মানুষে মানুষে যত বৈচিত্র তেমনি বৈচিত্র মানুষের ভাষা ব্যবহারের। বস্তুতপক্ষে প্রত্যেক মানুষের ভাষা ব্যবহারের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। ব্যক্তিমানুসের এই নিজস্ব ভাষাভঙ্গীকে বলে বিভাষা বা নিজভাষা বা নিভাষা বা আইডিওলেক্ট (Ideolact)। এই মানুষটি আবার যখন তার সমাজে মেলামেশা করে তখন তার ভাষা সেই নির্দিষ্ট সমাজভাষাকে মেনে চলে। ভাষার সঙ্গে সমাজের বিশেষ সম্পর্ক আছে আর তাই প্রতি সমাজের নিজস্ব ভাষাভঙ্গী আছে। একটি সমাজের নিজস্ব ভাষাভঙ্গীকে বলে সমাজভাষা। সমাজভাষার থেকেও বেশি পরিধি উপভাষার। একটি উপভাষা অঞ্চলে বেশ কয়েকটি সমাজভাষা বর্তমান থাকতে পারে। যাইহোক, এই হল ভাষা ব্যবহারের বিন্যাস-

Vasa upovasa

গননায় দেখা গেছে যে প্রত্যেক ছয় কিমি অন্তর ভাষার রূপভেদ ঘটে। সেইজন্য বাংলাদেশের ভাষার সঙ্গে পুরুলিয়ার মানুষের মুখের ভাষার এতো পার্থক্য, যদিও উভয় ভাষাই বাংলা। এই যে এক একটি অঞ্চলে প্রচলিত বিশেষ ভাষাছাঁদ একেই বলা হয় উপভাষা। বাংলা উপভাষা পাঁচটি-

Vasa upovasa 1

এতগুলি উপভাষার মধ্যে কোন ভাষাটি ভালো বা কোনটি মন্দ সে প্রশ্ন করা বৃথা। সব ভাষাই সমান শুধু তাদের মধ্যে কিছু বিশিষ্টের হেরফের হয়। তবে কোনো ভাষার একাধিক উপভাষা থাকলে একটি উপভাষা মান্যভাষার মর্যাদা পায়। যেমন, বাংলার পাঁচটি উপভাষার মধ্যে রাঢ়ি উপভাষাকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।  এর কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে যে রাঢ়ি উপভাষা যে অঞ্চলে বলা হয়ে থাকে তার গুরুত্বের কারণেই রাঢ়ী উপভাষা মান্যভাষার মর্যাদা পেয়েছে। কলকাতা সহ হুগলি, হাওড়া প্রভৃতি অঞ্চলে রাঢ়ী উপভাষায় কথা বলা হয়। আর এই এলাকাটি অনেক আগে থেকেই শিল্প, ব্যাবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি এবং প্রশাসনিক কারণে উল্লেখযোগ্য। যেমন, পরাধীন ভারতে ১৯১১ সাল পর্যন্ত কলকাতা ছিল ভারতের রাজধানী এবং স্বাধীন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী বর্তমানে কলকাতা। আবার হুগলি নদীর দুই তীরে একসময় বিভিন্ন বিদেশী জাতি উপনিবেশ স্থাপন করেছিল বলে এই অঞ্চলটি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ছিল। সেইসুত্রে বিভিন্ন এলাকার বাংলাভাষী মানুষজন এই এলাকায় আসত। এইজন্য রাঢ়ী উপভাষা মান্যভাষার মর্যাদা পেয়েছে।

এ তো গেল কথা বলার ভাষা বা কথ্যভাষা। এবার আসি লেখার ভাষা প্রসঙ্গে। লেখার ভাষা বা লেখ্য ভাষা দুরকম হতে পারে- পদ্য ও গদ্য। গদ্য আবার দু’রকম হতে পারে- সাধু ও চলিত। সাধুভাষাতে সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ বেশি ব্যবহার করা হয়, ব্যাকরণ মেনে লেখা হয়, ক্রিয়া এবং সর্বনামের পুর্ণ্ রূপ ব্যবহার করা হয়। আর চলিত ভাষা হল মানুষের মুখের ভাষা।

এই অধ্যায় থেকে অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

এই অধ্যায় থেকে বড় প্রশ্ন

error: Content is protected !!