বিশ্বের ভাষা পরিবার(একাদশ শ্রেণি)

একাদশ শ্রেণির বাংলা পাঠ্যসূচিতে বাংলা ভাষাবিজ্ঞান বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তারই প্রথম অধ্যায় হল বিশ্বের ভাষা পরিবার। এই অধ্যায় থেকে অনেক কিছু শেখার আছে এবং অনেকগুলি প্রশ্নও রয়েছে। সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা মূল বইটি পড়তে পারো অথবা নিচের ভিডিওটি দেখতে পারো।

পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা পরিবার

ভাষা হল মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম। পৃথিবীতে প্রায় তিন হাজার ভাষা প্রচলিত রয়েছে। ভাষাবিজ্ঞানীরা চেষ্টা করেছেন এইসব ভাষাগুলিকে শ্রেণীবদ্ধ করার। নানাভাবে ভাষাকে শ্রেণীকরণ বা বর্গীকরণ করা হয়। যেমন-

রূপতত্ত্ব অনুযায়ী ভাষার বর্গীকরণ

রূপতত্ত্ব হল ভাষাবিজ্ঞানের সেই শাখা যা শব্দ তৈরির নানান কৌশল নিয়ে আলোচনা করে। দ্বাদশ শ্রেণীতে রূপতত্ত্ব বিষয়ে বিশদে আলোচনা রয়েছে। যাইহোক, রূপতত্ত্ব অনুযায়ী ভাষা দু’রকমের- 

  1. অসমবায়ী- যেমন চীনা ভাষা
  2. সমবায়ী- সমবায়ী ভাষা আবার তিনরকমের- ১)মুক্তাম্বয়ী[তুর্কী ভাষা]  ২)অত্যাম্বয়ী[এস্কিমোদের ভাষা]  ৩)সমম্বয়ী [বাংলা, ইংরেজি ইত্যাদি]।

ভাষাবংশ অনুযায়ী বর্গীকরণ– পৃথিবীর প্রধান প্রধান ভাষাবংশগুলি ক’টি এই নিয়ে ভাষাতাত্ত্বিকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে, অধিকাংশ পণ্ডিতদের মতে পৃথিবীর প্রধান ভাষাবংশগুলি হল- 

১। ইন্দো-ইউরোপীয়, ২। সেমীয়-হামীয়, ৩। বান্টু, । ফিনো-উগ্রীয় বা উরালীয় ৫। তুর্ক-মোঙ্গল-মাঞ্চু বা আলতাইক ৬। ককেশীয় ৭। দ্রাবিড় ৮। অস্ট্রিক ৯। ভোট-চিনীয় ১০। প্রাচীন এশীয় ১১। এসকিমো এবং ১২। আমেরিকার আদিম ভাষাসমূহ। 

মনে রাখার মতো তথ্য 

  • এতোগুলি ভাষাবংশের মধ্যে সবথেকে বড় হল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী। এই ভাষাগোষ্ঠীর একটি শাখা ভারতে প্রবেশ করে। কালক্রমে এর থেকেই বাংলা, অসমিয়া। ওড়িয়া সহ অধিকাংশ নব্যভারতীয় ভাষার জন্ম হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে এই বিষয়ে আলোচনা আছে।
  • গ্রিক ভাষায় লেখা হোমারের ইলিয়াড ও ওডিসি।
  • আবেস্তীয় ভাষায় রচিত ‘জেন্দআবেস্তা’ ইরানীয় ভাষার প্রাচীন নমুনা। এই শাখার আধুনিক দুটি ভাষা- পুশতু, বেলুচি
  • সেমীয় শাখার দুটি ভাষা- হিব্রু ও আরবি । হিব্রু ভাষা ইজরায়েলের সরকারি ভাষা। হিব্রু ভাষায় রচিত বাইবেলের ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’।
  • সেমীয়-হামীয় ভাষাবংশের বাইরে আফ্রিকার সমস্ত ভাষাগোষ্ঠীকে বান্টু বলা হয়।
  • উত্তর আমেরিকার মায়া সভ্যতার ভাষা মায়া।
  • আজতেক সভ্যতার ভাষা ‘উটো’ আজতেক বংশের।
  • দক্ষিন আমেরিকার ‘ইনকা’ সভ্যতার মানুষ ‘কিচুয়া’ ভাষায় কথা বলত।
  • পৃথিবীতে এমন কিছু ভাষা আছে যাদের কোনো বংশের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি তাদের অবর্গীভূত ভাষা বা Unclassified Language বলে। যেমন- জাপানি ভাষা, কোরীয় ভাষা, বাস্ক ভাষা (ফ্রান্স এবং স্পেনে প্রচলিত)।
  • ভারতের একটি অবর্গীভূত ভাষা হল আন্দামানি।
  • মিশ্র ভাষা- নানা কারণে একাধিক ভাষার মানুষ একটি অঞ্চলে মিলিত হলে তাদের ভাষাগুলির মিশ্রনের ফলে পিজিনের জন্ম। যেখানে ইংরেজরা গেছে সেখানে ‘ইংলিশ পিজিন’, যেখানে ফরাসিরা গেছে সেখানে ‘ফ্রেঞ্চ পিজিন’ জন্ম নিয়েছে।
  • পিজিন হল বিজনেস কথার চিনা উচ্চারণ।
  • পিজিন যখন কোনো এলাকার মানুষের কথ্যভাষা হয়ে ওঠে তখন তাকে বলে ক্রেওল। আর পিজিন থেকে ক্রেওল হওয়ার পদ্ধতিকে বলে ক্রেওলাইজেশন।
  • কৃত্রিম ভাষা- উনিশ শতকে যোহান মার্টিন শ্লেইয়ার ‘ভোলাপুক’ নামে একটি কৃত্রিম ভাষা তৈরি করেন। শ্লেইয়ার চেয়েছিলেন এমন একটি বর্নমালা তৈরি করতে যা পৃথিবীর সকলে বুঝবে।
  • এসপারেন্টো- ১৮৮৭ সালে পোল্যান্ডের একজন চক্ষু চিকিৎসক এল এল জামেনহফ এসপারেন্তো নামে একটি কৃত্রিম ভাষা তৈরি করেন। জামেনহফ ডক্টর এস্পারেন্তো (Doktoro Esperanto) ছদ্মনামে এর প্রস্তাব রচনা করেন। রুশ ভাষায় এসপারেন্তো মানে আশাবাদী (Hopeful)। যাইহোক সেই থেকে এই ভাষার নাম এসপারেন্তো।
  • হাত, চোখ, মাথা প্রভৃতি অঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে যে ভাষা ব্যবহার করা হয় তাকে Para Language বলে।
  • মূক বধিরদের ভাষা হল সাংকেতিক ভাষা [Sign Language]
  • ১৭৭৫ সালে ফরাসি শিক্ষাবিদ Abbe Charles Michel de I’Epee প্রথম সাংকেতিক ভাষা তৈরি করেন।
  • Paget-Gorman পদ্ধতি হল একটি হাত দিয়ে কথা বলার পদ্ধতি।
  • Dactylology বা আঙ্গুল দিয়ে কথা বলার পদ্ধতি।

বিশ্বের ভাষা পরিবারঃ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

একাদশ শ্রেণির পাঠ্য বাংলা ভাষাবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় হল বিশ্বের ভাষা পরিবার। এই অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ন শর্ট প্রশ্নের জন্য এই লিঙ্কে ক্লিক করো।

বিশ্বের ভাষা পরিবারঃ বড় প্রশ্ন 

পরের অধ্যায়ঃ ভারতের ভাষা পরিবার

error: Content is protected !!