একাদশ শ্রেণী
ভারতের ভাষাপরিবার ও বাংলা ভাষা
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
১। বাংলা ভাষার উৎপত্তি ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫
অথবা, সংস্কৃত ভাষাকে কি বাংলা ভাষার জননী বলা যায়। ৫
উত্তর- নব্য ভারতীয় আর্য ভাষাগুলির মধ্যে অন্যতম হল বাংলা ভাষা। অনেকে সংস্কৃত ভাষাকে বাংলা ভাষার জননী বলে মনে করেন। কিন্তু বাংলা ভাষার প্রকৃত জন্ম-ইতিহাসটি লুকিয়ে আছে ভারতীয় আর্যভাষার বিবর্তনের ইতিহাসে।
১৫০০ খ্রীঃ পূঃ ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের একটি শাখা ভারতীয় আর্য নামে ভারতে প্রবেশ করে। এই ভারতীয় আর্য ভাষার বিবর্তনের তিনটি স্তর-
প্রাচীন ভারতীয় আর্য(১৫০০ খ্রীঃ পূঃ থেকে ৬০০ খ্রীঃ পূঃ)- এই স্তরের প্রধান ভাষাটি হল বৈদিক যা বেদের ভাষা। পরে বৈদিক ভাষার সংস্কার সাধন করা হয়, নাম হয় সংস্কৃত ভাষা।
মধ্য ভারতীয় আর্য(৬০০খ্রীঃপূঃ থেকে ৯০০ খ্রীঃ)- এই দেড় হাজার বছরে সংস্কৃত ভাষার আমূল পরিবর্তন ঘটে। প্রথমে সংস্কৃত ভাষার ‘প্রকৃতি’(মূলরূপ) নিয়ে নতুন ভাষার জন্ম হল যার নাম প্রাকৃত। ভারতের বিভিন্ন স্থানে পাঁচ রকমের প্রাকৃত প্রচলিত ছিল। যথা- মহারাষ্ট্রী প্রাকৃত, শৌরসেনী প্রাকৃত, পৈশাচী প্রাকৃত, মাগধী প্রাকৃত ও অর্ধমাগধী প্রাকৃত। প্রাকৃতের পরবর্তী পর্যায়টি হল অপভ্রংশ। একেকটি প্রাকৃত থেকে একেকটি অপভ্রংশ জন্ম নেয়।
নব্য ভারতীয় আর্যভাষা- এই স্তরে বিভিন্ন অপভ্রংশ থেকে নব্যভারতীয় আর্যভাষাগুলির জন্ম হয়। ভাষাবিজ্ঞানীদের মতে, আনুমানিক ৯০০ খ্রীঃ নাগাদ মাগধী প্রাকৃতের অপভ্রংশের পূর্বী শাখা থেকে অহমিয়া, ওড়িয়া এবং বাংলা ভাষা জন্মলাভ করে।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলা ভাষার জননী সংস্কৃত ভাষা নয়। পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, সংস্কৃত বাংলা ভাষার “অতি-অতি-অতি-অতি-অতিবৃদ্ধ পিতামহী”। (শব্দ- ১৮০)
এই অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নঃ