সিরাজদ্দৌলা– স্বনামধন্য নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ (১৯৩৮) নাটকের দ্বিতীয় অংকের প্রথম দৃশ্যটি দশম শ্রেণির পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্নগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
Sirajddomula by Sachin Sengupta
Sirajddoula is a bengali drama written by Sachindranath Sengupta. It is included in the syllabus of West Bengal Board of Secondary Education (WBBSE) Class Ten Bengali (first language). For short and long question from this story, read this post carefully.
সিরাজদ্দৌলা
পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ থেকে একটি ৫ নম্বরের রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। এখানে ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটক থেকে গুরুত্বপূর্ণ রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।
সিরাজদ্দৌলাঃ রচনাধর্মী প্রশ্ন
১) “এইবার হয় তাে শেষ যুদ্ধ!” কোন্ যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে? বক্তা এই যুদ্ধকে ‘শেষ যুদ্ধ’ বলেছেন কেন? ১+৩ [মাধ্যমিক ২০২০]
উত্তরঃ শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে পলাশীর যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে।
বাংলার নবাব হিসেবে সিংহাসন লাভ করার পর থেকেই সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল রচনা করা হয়েছিল। আসলে অপুত্রক নবাবের দৌহিত্র সিরাজকে বাংলার মসনদের উত্তরাধিকারি হিসেবে অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। এমনকি, সিরাজের সিংহাসনে বসা নিয়ে তাঁর আত্মীয়স্বজনদের মনেও ক্ষোভ ছিল। ধূর্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর পূর্ণ সুযোগ নিয়েছিল। তারা সিরাজের আত্মীয়স্বজনদের মন বিষিয়ে দিয়েছিল এবং তাঁর সভাসদদের নবাব-বিরোধী কাজে প্ররোচিত করেছিল। একইসঙ্গে তারা সিরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন শুরু করে দিয়েছিল। পলাশির প্রান্তরে যে যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সিরাজ সে খবর জানতেন। কথা প্রসঙ্গে সেই কথাই তিনি বেগম লুৎফাকে বলেছিলেন।
সিরাজ এই পলাশির যুদ্ধকেই ‘শেষ যুদ্ধ’ বলেছেন কারণ তিনি জানতেন যে, এই যুদ্ধে ইংরেজদের হারাতে পারলে ইংরেজদের প্রতিহত করা সম্ভব হবে এবং তিনি যদি হেরে যান তবে তাঁকে প্রাণে মরতে হবে।
২) “দরবার ত্যাগ করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি জাঁহাপনা।”- বক্তা কে? তারা কেন দরবার ত্যাগ করতে চান? ১+৩ [মাধ্যমিক ২০২০]
উত্তর- শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে মীরজাফর একথা বলেছেন।
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্ররোচনায় সিরাজের সভাসদদের একাংশ রাজদ্রোহে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। সেই দলে ছিলেন মীরজাফর, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, জগতশেঠ প্রমুখ। আলোচ্য অংশে ‘আমরা’ বলতে এইসকল সভাসদদের বোঝানো হয়েছে। তারা নবাবের দরবার ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন।
আসলে নবাব-বিরোধী সভাসদদের প্রধান মন্ত্রনাদাতা ছিলেন জনৈক ইংরেজ কর্মচারি ওয়াটস। এই ওয়াটস ছিল নবাবের দরবারে নিযুক্ত ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন প্রতিনিধি। রাজদ্রোহে লিপ্ত থাকার অপরাধে সিরাজ তাকে দরবার থেকে বিতাড়িত করেন। রাজা রাজবল্লভ এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে নবাব রাজদ্রোহী সভাসদদের সতর্ক করে বলেন যে সকলের কুকীর্তির খবর তিনি রাখেন। এই প্রসঙ্গে নবাব-অনুগামী মোহনলাল এবং মীরমদন নবাবের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানায়। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলে, “আমরা নবাবের নিমক বৃথাই খাই না”। তাদের কথায় অপমানিত বোধ করেন নবাবের প্রধান সেনাপতি মীরজাফর। সেইজন্য তিনি স্বপক্ষীয় সভাসদদের সঙ্গে দরবার ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন।
৩) “বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না।”- কাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হয়েছে? কোন্ দুর্দিনের জন্য তাঁর এই আবেদন ? ১+৩ [মাধ্যমিক ২০১৯]
উত্তর– শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ তাঁর সভাসদদের উদ্দেশ্যে একথা বলেছিলেন।
সিরাজ সিংহাসনে আরোহণ করার পর থেকেই বাংলার রাজনৈতিক বাতাবরণ যথেষ্ট উত্তপ্ত ছিল। একদিকে তাঁর নিজের আত্মীয়স্বজনরা তাঁর বিরুদ্ধে নানারকম চক্রান্ত শুরু করেছিল তো আরেকদিকে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবকে পর্যুদস্ত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। নবাব নিজে ইংরেজদের দুরভিসন্ধির কথা বুঝতে পারলেও তাঁর সভাসদরা ইংরেজদেরকেই আপন ভেবেছিল এবং নবাব-বিরোধী ষড়যন্ত্রে হাত মিলিয়েছিল।
এদিকে, দিন দিন ইংরেজদের ধৃষ্টতা লাগামছাড়া হয়ে উঠেছিল। কলকাতায় দুর্গ স্থাপন, জোর করে ফরাসি বাণিজ্যকুঠি দখল ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে কোম্পানির সঙ্গে নবাবের তিক্ততা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। নবাবের দরবারে নিযুক্ত কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসের গোপন চিঠি আবিষ্কার হওয়ার পর নবাব জানতে পারেন যে কোম্পানি সেনা তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ-অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আলোচ্য অংশে সিরাজ এই দুর্দিনের কথা বলতে চেয়েছেন।
৪) “ওখানে কী দেখচ মূর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখাে।” – বক্তা কে ? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি বক্তার কী মনােভাব লক্ষ্য করা যায়? ১+৩ [মাধ্যমিক ২০১৯]
উত্তর– শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে একথা বলেছিল সিরাজের মাসি ঘসেটি বেগম।
উদ্দিষ্ট ব্যক্তি অর্থাৎ সিরাজের প্রতি ঘসেটি বেগমের অত্যন্ত বিরূপ মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। ঘসেটি সিরাজের মাসি হলেও সিরাজ তাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করতেন কিন্তু সিরাজের প্রতি ঘসেটির আচরণ সন্তানসুলভ ছিল না। ঘসেটি বেগম সিরাজকে শুধু ঘৃণাই করত না বরং মনে মনে সে সিরাজের পতন কামনা করত।
সিরাজের জন্য ঘসেটি গৃহহারা হয়েছিল। রাজনৈতিক কারণে সিরাজ তাকে মতিঝিল থেকে এনে নবাবের অন্দরমহলে গৃহবন্দী করে রেখেছিলেন। তার সঞ্চিত সম্পদ থেকেও তাকে বঞ্চিত করে রেখেছিলেন সিরাজ। তাছাড়া, যে সিংহাসনে সিরাজ উপবিষ্ট হয়েছিলেন সেই সিংহাসনের একজন দাবিদার ছিল ঘসেটির পালিত পুত্র। আর এইসব কারণে ঘসেটির মনে ক্ষোভের অন্ত ছিল না। সে এতটাই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠেছিল যে সিরাজের সামনেই তাঁর মৃত্যুকামনা করতে ভয় পায়নি। কোম্পানির ফৌজ মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করে সিরাজকে পরাস্ত করুক, এই ছিল তার একান্ত বাসনা।
৫) “বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয়।” – মিলিত হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা।”- কাদের উদ্দেশ্য করে একথা বলা হয়েছে? এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বস্তার কী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে? [মাধ্যমিক ২০১৮]
উত্তর– শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে সিরাজ তার বিদ্রোহী সভাসদদের উদ্দেশ্য করে একথা বলেছিলেন। এই বিদ্রোহী সভাসদদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাজা রাজবল্লভ, ভাগ্যবান জগৎশেঠ, শক্তিমান রায়দুর্লভ প্রমূখ।
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার অসাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। একইসঙ্গে, সিরাজের এই উক্তি নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমের ভাবনায় উজ্জ্বল।
বস্তুতপক্ষে, সিরাজ সিংহাসনে আরোহণ করার পর বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকেই সিরাজকে বাংলার নবাব হিসাবে মেনে নিতে পারেনি। এই বিষয়ে নবাবের অন্দরমহলে তাঁর আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে যেমন ক্ষোভ ছিল তেমনি রাজকর্মচারীদের মনেও অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। স্বাধীনচেতা নবাবকে নিয়ে ঘরে-বাইরে নানা অপবাদ রটানো হয়েছিল। কিন্তু উদ্ধৃত উক্তির মাধ্যমে সিরাজ বলতে চেয়েছেন যে তিনি কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন নন। তিনি নিজে একজন মুসলমান হলেও বাংলার মাটিতে হিন্দু-মুসলমানের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। আবার, নিজের মাতৃভূমিকে মনোরম ‘গুলবাগ’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
৬) “মুন্সিজি, এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন।”- কে, কাকে পত্র লিখেছিলেন? এই পত্রে কী লেখা ছিল? ১+৩ [মাধ্যমিক ২০১৮]
উত্তর– শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে জনৈক অ্যাডমিরাল ওয়াটসন সিরাজের দরবারে নিযুক্ত কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসকে এই পত্র লিখেছিলেন।
আলোচ্য পত্রে বাংলার বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ ছিল। তবে সমগ্র পত্র পাঠ করা হয়নি। নবাবের আদেশ অনুযায়ী ওয়াটস পত্রের শেষের দিকটা পড়েছিল এবং মুন্সিজি সেই অংশটুকু বাংলায় তর্জমা করে সভাসদদের শুনিয়েছিল।
এতে লেখা ছিল যে, কর্নেল ক্লাইভ উল্লেখিত সৈন্যবাহিনী শীঘ্রই কলকাতায় পৌঁছনোর কথা। অ্যাডমিরাল ওয়াটসন আরো লেখেন যে, তিনি তাড়াতাড়ি আরেকটি জাহাজ মাদ্রাজে পাঠিয়ে সংবাদ দিতেন বাংলায় আরো সৈন্য এবং জাহাজ পাঠানোর জন্য। উক্ত পত্রে ভীতি প্রদর্শনের সুরে বলা হয়েছিল যে বাংলায় তিনি এমন আগুন জ্বালাতেন যা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়েও নেভানো যেত না।
৭) ‘সিরাজদৌল্লা’ নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজদ্দৌল্লার চরিত্র বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে। [মাধ্যমিক ২০১৭]
উত্তর– শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকের প্রধান চরিত্র হল বাংলার নবাব সিরাজ। আলোচ্য নাট্যাংশে সিরাজ চরিত্রের যে দিকগুলি ফুটে উঠেছে সেগুলি হল-
১) দক্ষ শাসক- সিরাজ একজন দক্ষ নবাব ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব রাজকর্মচারী ষড়যন্ত্রের জাল রচনা করেছিল তাদের সকলকে তিনি হাতেনাতে ধরেছিলেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসের গোপন চিঠি তিনি যেমন আবিষ্কার করেছিলেন তেমনি তাঁর অনেক সভাসদের কুকীর্তির কথাও তিনি জানতেন।
২) বিচক্ষণ- সিরাজ একজন বিচক্ষণ রাজনীতিক ছিলেন। তাঁর অনেক সভাসদ ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলালেও তিনিই প্রথম বুঝেছিলেন ইংরেজদের দুরভিসন্ধির কথা।
৩) দেশপ্রেমী- মীরজাফর সহ অনেক রাজকর্মচারী নবাব-বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সিরাজ তাদের শাস্তি দেননি বরং বাংলার দুর্দিনে হাতে হাত রেখে লড়াই করার জন্য তাদেরকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। দেশকে ভালোবেসে তিনি তাঁর সভাসদদের অপরাধ মার্জনা করে দিয়েছিলেন।
৪) অসাম্প্রদায়িক- সিরাজ নিজে একজন মুসলমান হলেও বাংলার মাটিতে হিন্দুদের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। তাঁর মতে, “মিলিত হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা।”
৫) দূরদর্শী- ইংরেজরা জোর করে ফরাসি বাণিজ্যকুঠি দখল করছে জেনেও সিরাজ নিজের সৈন্যবল এবং রাজকোষের কথা ভেবে ইংরেজদের সঙ্গে বিবাদে জড়াতে চাননি।
৬) মানবিক- ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-র প্রতি তাঁর বিনয়, ঘসেটি বেগমের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা এবং বিপথগামী সভাসদদের প্রতি উদার দৃষ্টিভঙ্গি সিরাজ চরিত্রটিকে আরো বেশি মানবিক করে তুলেছে।
৮) “কিন্তু ভদ্রতার অযােগ্য তােমরা”- কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে? একথা বলার কারণ কী? ১+৩ [মাধ্যমিক ২০১৭]
উত্তর– শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে নবাবের দরবারে নিযুক্ত কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে।
আলিনগরের সন্ধির শর্তগুলি যাতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ঠিকমতো পালন করে সেইজন্য কোম্পানির প্রতিভূ হিসেবে ওয়াটসকে সিরাজ তাঁর দরবারে স্থান দিয়েছিলেন। কিন্তু ওয়াটস গোপনে সিরাজের বিরুদ্ধাচরণ করতে শুরু করেছিল। সিরাজের সিংহাসনে বসা নিয়ে তাঁর কয়েকজন কর্মচারীর মনে যে অসন্তোষ ছিল, ওয়াটস সেই ক্ষোভের আগুনে ইন্ধন জুগিয়েছিল। সে মীরজাফর সহ কয়েকজন রাজকর্মচারীকে নবাবের বিরোধিতা করার জন্য প্ররোচিত করেছিল।
এছাড়া, ওয়াটস কলকাতায় ইংরেজদের উপদেশ দিয়েছিল যাতে তারা সিরাজের আদেশ অগ্রাহ্য করে। তার চিঠিতে একথা স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, “নবাবের উপর নির্ভর করা অসম্ভব। চন্দননগর আক্রমণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।”
তার উদ্দেশ্যে লেখা অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের পত্র পড়ে জানা যায় যে ওয়াটস সিরাজকে সিংহাসনচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।
সিরাজের বিরুদ্ধে এহেন চক্রান্ত করার জন্যই সিরাজ বলেছিওএন যে, তারা অর্থাৎ ইংরেজরা ভদ্রতার অযোগ্য।
৯) “আজ বিচারের দিন নয়, সোহার্দ্য স্থাপনের দিন”- কে, কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছেন? কথাটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। ১+৩
উত্তর– শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁর সিপাহসালার মীরজাফরকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছেন।
‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের শুরুতেই দেখা যায় নবাবের দরবার কার্যত বিচারসভায় পরিণত হয়েছিল। দরবারে নিযুক্ত ইংরেজি প্রতিনিধি ওয়াটসকে লেখা একটি গোপন চিঠি সিরাজের হস্তগত হয়েছিল। তারপরেই নবাব রাজদ্রোহী ওয়াটসকে দরবার থেকে বিতাড়িত করেন। তবে শুধু ওয়াটস নয়, সিরাজের কয়েকজন কর্মচারীও তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তে যুক্ত ছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও নবাব তাদের বিচার না করে সোহার্দ্য-স্থাপনের জন্য আহ্বান জানান।
আসলে, সিরাজ কঠিন সময়ে তাঁর আপনজনদের হারাতে চাননি। বাংলার ভাগ্যাকাশে তখন সত্যিই ‘দুর্যোগের ঘনঘটা’। একদিকে বাংলার সিংহাসন নিয়ে নবাবের অন্দরমহলে গৃহদ্বন্দ্ব, আরেকদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ধূর্ত, দুর্বিনীত বণিক সম্প্রদায়। সিরাজ তাঁর পনেরো মাসের রাজত্বে গৃহদ্বন্দ্বের প্রায় অবসান ঘটিয়েছিলেন, কিন্তু ইংরেজরা ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠছিল। তারা বাংলার নবাবকেও তোয়াক্কা করত না। ইংরেজদের শায়েস্তা করার জন্য প্রয়োজন ছিল সম্মিলিত প্রয়াস। এইজন্য সিরাজ নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি দূর করে তাঁর সভাসদদের সৌহার্দ্য স্থাপনের আহ্বান জানান।
১০) “তোমাদের কাছে আমি লজ্জিত”- কে কার কাছে লজ্জিত? এই লজ্জা পাওয়ার কারণ কী? ১+৩
উত্তর- শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে বাংলার নবাব সিরাজ ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লার কাছে লজ্জা প্রকাশ করেছেন। নবাব বলেছেন যে, তিনি ফরাসিদের কাছে লজ্জিত।
ইংরেজদের মতো ফরাসিরাও এদেশে বাণিজ্য করতে এসেছিল। তারা চন্দননগরে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করেছিল। কিন্তু ইংরেজরা যেমন নবাবের আদেশ অগ্রাহ্য করে নবাবের বিরুদ্ধাচরণ করত, ঠিক তার বিপরীতে, ফরাসিরা নবাবের অনুগত ছিল। সেইজন্য তারা নবাবের বিশেষ প্রিয়ও ছিল।
কিন্তু ইংরেজরা বাংলাদেশে একাধিপত্য বিস্তার করার লক্ষ্যে ফরাসি বাণিজ্যকুঠি দখল করতে শুরু করেছিল। এদেশে ইংরেজরা ফরাসিদের তুলনায় অনেক বেশি পরাক্রমশালী ছিল। তাই সুবিচারের আশায় ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা এসেছিলেন নবাবের দরবারে।
ইতিমধ্যে একের পর এক যুদ্ধে সিরাজের লোকবল এবং অর্থবল ক্ষীণ হয়ে পড়েছিল। সেইজন্য ইচ্ছে থাকলেও ফরাসি বাণিজ্যকুঠি বাঁচানোর উদ্দেশ্য ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ করার উপায় ছিল না। তাই সিরাজ অকপটে স্বীকার করেছেন যে তিনি লজ্জিত।