Koni- কোনি- পূর্ণাংঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ

মতি নন্দীর কোনি- একজন অতি-দরিদ্র পরিবারের মেয়ে কনকচাঁপা পাল বা কোনি কীভাবে সাঁতার শিখে বাংলার জাতীয় সাঁতার দলে জায়গা করে নিয়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে শত ষড়যন্ত্রের জাল অতিক্রম করে কীভাবে সে সেরার শিরোপা অর্জন করেছিল, সেটাই কোনি উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য। উপন্যাসটি একটি প্রেরণাদায়ক রচনা যা সকল ছাত্রছাত্রীর পড়া উচিত।

Koni by Moti Nandi

Koni is a bengali novel written by Moti Nandi. In this novel, Koni is a young girl from a poor family; Khsitish Sinha or Khidda is an experienced swimming coach. One day Khsitish sees Koni swimming in the Ganges and thinks she can be an excellent swimmer. He decides to coach her for free and adopts her and puts her to work in a tailor shop. Under the supervision of Khidda, Koni learns how to properly swim in the competition. After a long struggle, Koni got a chance to prove her and takes first place in the swimming competition. This is an inspirational story.

Koni by Moti Nandi
মতি নন্দীর উপন্যাস কোনি

মতি নন্দীর কোনি

পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী কোনি উপন্যাস থেকে দুটি ৫ নম্বরের রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। এই উপন্যাস থেকে কোনো ছোটো প্রশ্ন আসবে না, তাই মূল পুস্তকটি পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ন ঘটনাক্রমগুলি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। এখানে ‘কোনি’ উপন্যাস থেকে গুরুত্বপূর্ণ রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।

কোনি উপন্যাসঃ রচনাধর্মী প্রশ্ন

১) কোনির পারিবারিক জীবনের পরিচয় দাও। [মাধ্যমিক ২০১৭]

উত্তরঃ সাহিত্যিক মতি নন্দী রচিত ‘কোনি’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কনকচাঁপা পাল বা কোনি একজন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাদের পরিবারকে দরিদ্র বললে কম বলা হবে, বরং বলা যেতে পারে, ‘খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটা যাদের কাছে বিলাসিতা’, তেমনই একটি পরিবারের সন্তান কোনি।

কোনিদের বাসস্থান শ্যামপুকুর বস্তিতে। সাত ভাই-বোনের মধ্যে কোনি চতুর্থ। বড় ভাই কমল রাজাবাজারে একটা মোটর গ্যারেজে কাজ করে মাসে শ’ দেড়েক টাকা উপার্জন করে, তাতেই তাদের পরিবারের অন্নসংস্থান হয়; মেজো ভাই ট্রেনের ইলেকট্রিক তারে প্রাণ হারিয়েছে আর সেজো থাকে পিসির বাড়িতে কাঁচরাপাড়ায়। কোনির পরেও রয়েছে দুই বোন এবং এক ভাই। টি. বি রোগে আক্রান্ত হয়ে কোনির বাবা আগেই গত হয়েছেন। মা আর বাকি ভাইবোনদের সঙ্গে কোনি থাকে বস্তির স্যাঁতসেঁতে ঝুপড়িতে।

একসময় কমলেরও শখ ছিল নামকরা সাঁতারু হওয়ার, অ্যাপেলোতে প্রশিক্ষণ নিত সে। কিন্তু তার বাবার অকাল মৃত্যুতে সাঁতার শেখা আর হয়ে ওঠে না, এমনকি তাকে স্কুলও ছাড়তে হয়। ইচ্ছে থাকলেও কোনিকে সাঁতার শেখানোর মতো সামর্থ্য তার ছিল না।

বাবার পথ অনুসরণ করে বড় ভাই কমলও টি.বি রোগে মারা যায়। কোনিদের পরিবার চরম দুর্দিনের মুখোমুখি হয়। এইসময় ক্ষিতীশ দেবদূতের মতো তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং কোনির প্রশিক্ষণ সহ তাদের পরিবারের অন্নসংস্থানের বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল।

২) ক্ষিদ্দা কীভাবে কোনির জীবনে প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল সে সম্পর্কে আলােচনা করাে। [মাধ্যমিক ২০১৭]

উত্তরঃ মতি নন্দীর “কোনি” উপন্যাসে কোনির ‘ক্ষিদ্দা’ ক্ষিতীশ সিংহ এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব। এক অতিদরিদ্র পরিবারের মেয়ে থেকে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু হওয়ার সফরে যে মানুষটি কোনির বন্ধু, দার্শনিক এবং পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছিলেন, তিনি হলেন এই ক্ষিদ্দা অর্থাৎ ক্ষিতীশ সিংহ।

খেলাধুলার প্রতি কোনির আগ্রহ ছিল ঠিকই কিন্তু তাকে সাঁতার শেখানোর মতো সামর্থ্য ছিলনা তার পরিবারের। ক্ষিতীশই কোনির সাঁতার-প্রতিভার সন্ধান পেয়েছিলেন এবং নিজে থেকেই তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই অর্থে কোনি হল ক্ষিদ্দারই আবিষ্কার। কোনি যে একজন সাঁতারু এবং তার ‘আসল লজ্জা জলে এবং আসল গর্বও জলে’, একথা ক্ষিদ্দাই কোনিকে শিখিয়েছিলেন।

ক্ষিদ্দা কোনিকে কেবল সাঁতারের প্রশিক্ষণই দেননি, তিনি কোনিকে নানাভাবে উৎসাহিত করেছিলেন। কোনিকে তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদদের জীবন সংগ্রামের কাহিনি শোনাতেন। তার মতো দারিদ্র-পীড়িত অতিসাধারণ ঘরের মেয়েরাও যে জীবনে সফল হতে পারে, ক্ষিদ্দাই কোনিকে সেই স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। ক্ষিদ্দার জন্যই কোনির মধ্যে এক অদম্য লড়াকু মানসিকতা তৈরি হয়েছিল।

ক্ষিদ্দা কোনিকে দিয়ে যেমন কঠোর অনুশীলন করিয়েছেন তেমনি বিভিন্ন সময়ে কোনির ভিতরে বারুদ ভরে দিয়েছেন। অমিয়া, হিয়ার প্রতি কোনির যে বিরূপ মনোভাব ছিল, ক্ষিদ্দা সেটাকে আরো উসকে দিতেন। কোনির তেজ তিনি ভোঁতা হতে দেননি, বরং তাতে আরো শান দিয়ে গেছেন। কারণ, তিনি জানতেন এই তেজটাই সাঁতার কাটার সময় কোনিকে ক্ষিপ্র করে তুলবে।

তাই বলা যায়, ক্ষিদ্দার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং ‘হার না মানার মন্ত্র’ কোনিকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে গিয়েছিল।

৩) “জোচ্চুরি করে আমাকে বসিয়ে রেখে এখন ঠেকায় পড়ে এসেছ আমার কাছে”- কোনির এই অভিমানের কারণ কী? এর পরবর্তী ঘটনা সংক্ষেপে বর্ণনা করাে। ২+৩ [মাধ্যমিক ২০১৭]

উত্তরঃ মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কোনি অর্থাৎ কনকচাঁপা পাল ক্লাবকর্তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার। জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে যোগদান করার জন্য মাদ্রাজে গিয়েও সে কোনো ইভেন্টে নামতে পায়নি, নানা অজুহাতে তাকে কেবল বসিয়ে রাখা হয়েছিল। শেষপর্যন্ত বাংলার এক প্রতিযোগী অমিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে কোনির ডাক পড়েছিল। এইজন্য কোনির অভিমান হয়েছিল।

মেয়েদের ৪×১০০ মিটার রিলে রেসে নামার জন্য কোনিকে ডাকতে এসেছিল হিয়া। কিন্তু এতোদিন ধরে তাকে বিনা কারণে বসিয়ে রাখা হয়েছে বলে কোনি ক্ষুব্ধ, মর্মাহত। সে কোনোমতেই রিলে রেসে নামতে রাজি হয়না। হিয়া কোনিকে বোঝায় যে বেঙ্গল টিমের জন্যই তাকে প্রয়োজন। কোনির অভিযোগ, হিয়া নিজের সোনার মেডেল নিশ্চিত করার জন্যই তাকে ডাকতে এসেছে। উত্তেজিত হিয়া কোনিকে চড় মারার জন্য হাত তুললে কোনিও তাকে মারতে উদ্যত হয়। কোনির কস্ট্যুম ছিল না, হিয়ার অতিরিক্ত কস্ট্যুমটা পরেই সে প্রস্তুত হয়।

জলে নামার ঠিক আগের মুহূর্তে কোনিকে অবাক করে দিয়ে সেখানে হাজির হন ক্ষিদ্দা। ‘ফাইট, কোনি ফাইট’ ধ্বনিতে গর্জে ওঠেন তিনি। এবার সুইমিংপুলের জলে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করার মনোবল ফিরে পেল সে। রমা জোশির থেকে তিন সেকেন্ড পরে জলে নেমেও দুর্বার গতিতে এগিয়ে গিয়ে আগেই বোর্ড স্পর্শ করে কোনি।

৪) ‘কোনি’ উপন্যাস অবলম্বনে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের চরিত্র সংক্ষেপে আলােচনা করাে। ৫ [মাধ্যমিক ২০১৮]

উত্তরঃ সাংবাদিক-সাহিত্যিক মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র ক্ষিতীশ সিংহ বা ক্ষিদ্দা ছিলেন জুপিটার ক্লাবের সাঁতার প্রশিক্ষক। উপন্যাসটি পাঠ করে তার চরিত্র সম্পর্কে যে ধারণা জন্মায় তা হল-

১) যথার্থ শিক্ষক– একজন যথার্থ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কঠোর অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা দেন। ক্ষিতীশ সিংহ ছিলেন তেমনি একজন শিক্ষক। ফাঁকি দিয়ে বেশি দূর এগোনো যায় না, এটা তিনি মনে করতেন। আর এজন্যই তিনি জুপিটারের সুইমারদের অপ্রিয় পাত্র হয়ে উঠেছিলেন।

২) আপোষহীন সততা– তার নিজের ক্লাব জুপিটারেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল রচনা করা হয়েছিল। ক্লাবের কয়েকজন কর্মকর্তা সুইমারদের সঙ্গে অসাধু চক্রান্ত করে ক্ষিতীশকে ক্লাবছাড়া করার বন্দোবস্ত করেছিল। নিজের প্রাণাধিক প্রিয় ক্লাবকে ছেড়ে দিতে কষ্ট হলেও ক্ষিতীশ মাথা নত করে অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করেননি। এমনকি, জুপিটার থেকে বিতাড়িত হবার পরেও তিনি মনেপ্রাণে জুপিটারকে ভালোবেসে গেছেন। এএকম সততা সত্যিই বিরল।

৩) ক্রীড়াপ্রেমী– ক্ষিতীশ একজন প্রকৃত ক্রীড়াপ্রেমী ছিলেন। তিনি সম্পূর্ণ বিনা স্বার্থে কোনিকে সাঁতার শেখানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কোচ হিসেবে পারিশ্রমিক পাওয়া দূরে থাক, কোনির জন্য তাকেই অর্থ ব্যয় করতে হয়েছিল। আবার, কোনি মেডেল জিতলে সেই সম্মানের ভাগীদার হওয়ার লোভও তার ছিল না। কারণ, ক্ষিতীশের মতে, তিনি যেহেতু কোনিকে অ্যাপোলোর ছত্রছায়ায় প্রশিক্ষণ দিতেন, তাই কোনির পাওয়া মেডেলের দাবিবার অ্যাপেলো ক্লাব।

৪) স্নেহশীল– কোনির প্রশিক্ষক হিসেবে ক্ষিতীশ যতখানি কঠোর ছিলেন, তার অভিভাবক হিসেবে ততটাই স্নেহশীল ছিলেন।

৫) প্রেরণাদাতা– ক্ষিতীশ কোনিকে শুধুমাত্র প্রশিক্ষণই দেননি, তাকে সফলতার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন। তিনি কোনিকে বিশ্বসেরা ক্রীড়াবিদদের জীবন সংগ্রামের কাহিনি শোনাতেন আর কোনির মরমে এই একটা কথা গেঁথে দিয়েছিলেন- “সব পারে, মানুষ সব পারে।”

সর্বোপরি, একজন ক্রীড়া-প্রশিক্ষক হিসেবে ক্ষিতীশ মনে করতেন, খেলাধুলা মানে বিলাসিতা নয়- খেলাধুলা হল সাধনা। খেলোয়াড়দের সঠিক পথে চালিত করে তাদেরকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথপ্রদর্শক ছিলেন ক্ষিতীশ সিংহ।

৫) “ওইটেই তাে আমি রে, যন্ত্রণাটাই তাে আমি”- বক্তা কে? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে। ১+8 [মাধ্যমিক ২০১৮]

উত্তরঃ মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসে কোনির প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ একথা বলেছেন।

মাদ্রাজে আয়োজিত ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে শেষ মুহূর্তে জলে নামার সুযোগ পেয়েছিল কোনি। সাঁতারু হিসেবে অংশগ্রহণ করেও তাকে নানা অজুহাতে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। মেয়েদের রিলে রেসের আগে অমিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বিনা প্রস্তুতিতে জলে নামতে হয়েছিল। এতোদিন দর্শকাসনে বসে থাকার পর যখন সে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেল তখন নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে রমা জোশীকে হারিয়ে বাংলার জয় নিশ্চিত করেছিল কোনি। জল থেকে উঠে ক্ষিদ্দাকে নিজের শারীরিক কষ্টের কথা জানালে ক্ষিদ্দা বলেছিলেন, “ওইটেই তাে আমি রে, যন্ত্রণাটাই তাে আমি”।

আসলে, প্রশিক্ষক হিসেবে ক্ষিতীশ সিংহের মূল মন্ত্র ছিল অনুশীলন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে শরীরকে ঘষে ঘষে শানিয়ে তুললে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। তিনি কোনির প্রশিক্ষণে এতোটুকু খামতি রাখেন নি। কখনো ভয় দেখিয়ে কখনো বা খাবার লোভ দেখিয়ে তিনি কোনিকে দিয়ে সাধ্যাতীত পরিশ্রম করিয়েছিলেন। তারই ফল কোনি পেয়েছিল মাদ্রাজে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে। এইজন্য ক্ষিতীশ বলেছিলেন, “যন্ত্রণাটাই তাে আমি”।

৬) “অবশেষে কোনি বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল।”- কোনি কীভাবে বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল তা সংক্ষেপে লেখাে। ৫ [মাধ্যমিক ২০১৮]

উত্তরঃ মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসে কোনির সাঁতার কাটার শুরু গঙ্গার জলে। সেখানেই ক্ষিতীশের চোখে পড়েছিল সে। ক্ষিতীশ কোনিকে যথাযোগ্য প্রশিক্ষণ দিয়ে একজন ভালো মানের সাঁতারু তৈরি করেছিল এবং শেষপর্যন্ত সে বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেয়েছিল। কিন্তু কোনির চলার পথ মোটেও মসৃণ ছিল না, তাকে বহু বাধা অতিক্রম করতে হয়েছিল।

কোনির সাঁতারু হওয়ার পথে মূলত দু’রকমের প্রতিবন্ধকতা ছিল। প্রথমটা তার ব্যক্তিগত এবং দ্বিতীয় কারণটা ছিল ক্ষিতীশ-কেন্দ্রিক। কোনি একজন বস্তির মেয়ে, তাই স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য সুইমার এবং ক্লাব-কর্মকর্তাদের অবজ্ঞার পাত্রী ছিল।তবে, কোনিকে বাংলার দলে না নেওয়ার মূল কারণ ছিল জুপিটার ক্লাবের ক্ষিতীশ-বিরোধী মনোভাব।

হিয়ার প্রশিক্ষক প্রণবেন্দু বিশ্বাসই প্রথম কোনিকে দলে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। তিনি নির্বাচনী সভায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “কনকচাঁপা পালকে বাংলা দলে রাখতে হবে”। কোনি যে ক্লাবকর্তাদের দলাদলির শিকার, একথা তিনি জানতেন। কোনি হিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া সত্বেও প্রণবেন্দু বাংলা দলে কোনিকে নিতে চেয়েছিলেন কারণ, তিনি জানতেন মহারাষ্ট্রের রমা যোশীর যোগ্য জবাব হবে কনকচাঁপা পাল। আসলে, কোনির যোগ্যতা সম্পর্কে প্রণবেন্দুর মনে বিন্দুমাত্র সংশয় ছিল না। বরং তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে, কোনি বাংলা দলে স্থান পেলে চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার একটা সম্ভাবনা থাকবে। যাইহোক, ধীরেন ঘোষ, বদু চাটুজ্যেরা প্রণবেন্দুর প্রস্তাব মানতে অস্বীকার করলে তিনি বলেন যে, কোনিকে না নেওয়া হলে বালিগঞ্জ ক্লাবও ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে কোনো সুইমার পাঠাবে না। এরফলে ক্ষিতীশ-বিরোধী গোষ্ঠী কার্যত মাথা নত করতে বাধ্য হয়।

এইভাবে নির্বাচনী সভায় তুমুল বাক-বিতণ্ডার পর শেষপর্যন্ত কোনিকে বাংলার দলে নেওয়া হয়েছিল।

৭) “আপনি আমার থেকে চার হাজার গুণ বড়ােলােক, কিন্তু চার লক্ষ টাকা খরচ করেও আপনি নিজে শরীরটাকে চাকর বানাতে পারবেন না।”- বক্তা কাকে, কেন একথা বলেছিলেন? ১+৪ [মাধ্যমিক ২০১৯]

উত্তরঃ মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসে জুপিটার ক্লাবের সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ গঙ্গার ঘাটে ম্যাসাজ নিতে আসা বিষ্টুচরণ ধরকে এই কথাগুলি বলেছিলেন।

বছর চল্লিশের বিষ্টুচরণ বনেদি বংশের লোক। খান সাতেক বাড়ি, বড়োবাজারে ঝাড়ন মশলার দোকান এবং সর্বোপরি একটি সাড়ে তিন মণ দেহের মালিক সে। সপ্তাহে একদিন সে গঙ্গার ঘটে আসতো ম্যাসাজ করবার জন্য। বারুণীর দিন গঙ্গায় চান করতে এসে বিষ্টু ধরের চর্বি-বহুল শরীরে মালিশের বহর দেখে ক্ষিতীশ বিদ্রুপ করেছিলেন। প্রথমে চোখের চাহনিতে, তারপর হাসিঠাট্টার মাধ্যমে তিনি বিষ্টুকে উত্তপ্ত করছিলেন। ক্ষিতীশ নিজে থেকেই তার প্রেসার, সুগার, কোলেস্টেরল লেবেল জানতে চান। তার দেহের স্থূলতা যে হার্টের পক্ষে ক্ষতিকর সেকথা বলেই পরক্ষণে ক্ষিতীশ তাকে হাতি এবং হিপোর সঙ্গে তুলনা করে বসেন। বিষ্টু বিরক্তি প্রকাশ করলেও মনে মনে ভয় পায় এবং ক্ষিতীশকে জিজ্ঞাসা করে, “আমি কি মরে যেতে পারি?”

ক্ষিতীশ তার থেকে বয়সে বড় হলেও শারীরিকভাবে অনেক বেশি সক্ষম। বিষ্টু ধরের মতো ক্ষিতীশের অর্থকৌলিন্য ছিলনা ঠিকই কিন্তু নিয়মিত শরীরচর্চা করে তিনি শরীরটাকে নিজের চাকর বানিয়ে ফেলেছিলেন। বিষ্টু ধর ক্ষিতীশের থেকে ঢের গুণ বড়লোক হলেও তার মতো দৌড়ঝাঁপ করার ক্ষমতা ছিল না। এইজন্য ক্ষিতীশ তাকে একথা বলেছিলেন।

৮) “এটা বুকের মধ্যে পুষে রাখুক।” – কী পুষে রাখার কথা বলা হয়েছে? কী কারণে এই পুষে রাখা? ২+৩ [মাধ্যমিক ২০১৯]

উত্তরঃ মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনি বয়সে ছোট হলেও বুঝতো গরিব বড়লোকের পার্থক্য। সে জানতো ধনীরা গরীবদের খারাপ চোখে দেখে, ঘৃণা করে। এটা তার সম্পূর্ণ নিজস্ব ভাবনা। কোনির মনেও ধনীদের প্রতি একটা বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই, হিয়ার প্রতিও কোনির যথেষ্ট রাগ ছিল। তাই যেদিন ক্ষিদ্দার সঙ্গে কোনি চিড়িয়াখানা ঘুরতে গিয়েছিল, হিয়া তাকে জল খেতে দিলে জলভর্তি গ্লাস কোনি ছুড়ে ফেলেছিল। কোনির এরূপ আচরণে ক্ষিদ্দা লজ্জিত হলেও তিনি মনে মনে খুশিই হয়েছিলেন। ক্ষিদ্দা চেয়েছিলেন হিয়ার প্রতি তার রাগটা কোনি বুকের মধ্যে পুষে রাখুক।

হিয়া ধনী পরিবারের মেয়ে এবং একজন প্রতিভাবান সাঁতারু। ক্ষিদ্দা জানতেন যে হিয়াই হল কোনির ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বী। কোনিকে ক্ষিতীশ এইভাবে তৈরি করেছিলেন যে সে অনায়াসে বাংলার অন্য মেয়েদের টক্কর দিতে পারতো। কিন্তু কঠোর অধ্যবসায়ের সঙ্গে কোনির এই তেজটাও জরুরি ছিল। ক্ষিতীশ সিংহ একজন উঁচু মানের প্রশিক্ষক, তাই তিনি জানতেন যে হিয়ার প্রতি কোনির এই রাগটা পুষে রাখতে পারলে সাঁতারের সময় তার সুফল পাওয়া যাবেই। এইজন্য হিয়ার প্রতি রূঢ় আচরণ করলেও ক্ষিতীশ কোনিকে বকেন নি, বরং কোনির রাগটাকে আরো উসকে দিয়েছেন। মুখোমুখি লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে পর্যুদস্ত করার জন্য যে জেদটা থাকা প্রয়োজন, কোনির সেই জেদটা আরো বাড়িয়ে তোলার জন্য এই রাগটা পুষে রাখা প্রয়োজন ছিল।

৯) ‘কোনি’ উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে স্বামীর যােগ্য সহধর্মিণী রূপে লীলাবতীর পরিচয় দাও। [৫ [মাধ্যমিক ২০১৯]

উত্তরঃ সাংবাদিক-সাহিত্যিক মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র ক্ষিতীশ সিংহ ছিলেন জুপিটার ক্লাবের একজন সাঁতার প্রশিক্ষক। নিঃসন্তান ক্ষিতীশের পরিবারে তার স্ত্রী লীলাবতীই ছিল প্রকৃত কর্ত্রী। কোনির সাঁতারু হওয়ার পিছনে যেমন ক্ষিতীশের অবদান সবথেকে বেশি ছিল, তেমনি ক্ষিতীশের জীবনে লীলাবতীর প্রভাব ছিল অপিরিসীম। লীলাবতীর যেসব গুণাবলী সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেগুলি হল-

উপার্জনকারী– লীলাবতী স্ত্রী হয়েও সংসারের ভরণপোষণের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। ক্ষিতীশ যখন ব্যবসা দেখাশোনা করত, তাদের পারিবারিক দর্জির দোকান ‘সিনহা টেলারিং’ প্রায় ডুবতে বসেছিল এবং ঠিক তখনই লীলাবতী এসে শক্ত হাতে তার হাল ধরেছিল। এখন দোকানের নাম বদলে রাখা হয়েছে ‘প্রজাপতি’ এবং সেই প্রজাপতি রীতিমতো ডানা মেলে উড়তে শুরু করেছে। লীলাবতীর তীক্ষ্ণ ব্যবসায়িক বুদ্ধির ফলেই তাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

সংসারের কর্ত্রী– দোকান সামলানোর পাশাপাশি লীলাবতী সংসারের কর্ত্রী। ক্ষিতীশ যেরকম সারাক্ষণ ক্লাব নিয়ে ব্যস্ত থাকে, লীলাবতী যদি সংসারের দিকে বিশেষ নজর না দেয় তবে কোনো কাজই ঠিকমতো হবে না।

স্বামীর অনুগত– লীলাবতী একটু ভোজনরসিক কিন্তু ক্ষিতীশ তার বিপরীত স্বভাবের। লীলাবতী তেলমশলা দিয়ে খাবার খেতেই পছন্দ করে। আবার, ক্ষিতীশের তেলমশলা একেবারেই পছন্দ নয়। প্রথম প্রথম লীলাবতী এসবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। শেষপর্যন্ত লীলাবতী স্বামীর কথামতোই তেলমশলা বিহীন খাবারেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, ক্ষিতীশের আপত্তি সত্বেও সে স্বামীর এঁটো থালায় নিজে খাবার খায়।

স্বামীর সমর্থক– ক্ষিতীশের ক্লাবে যাওয়া নিয়ে তার স্ত্রী লীলাবতীর একটু আপত্তি ছিলই। যখন সে ব্যবসা দেখাশোনা করত, তখন দুপুর ছাড়া বাকি সময়টা ক্লাবেই কাটাতো। এইজন্য তাদের ব্যবসাও ভরাডুবি হয়েছিল। ভালো সাঁতারু তৈরি করার নেশায় ক্ষিতীশ নিজের পরিবারের দিকেও মনোযোগ দিতে পারেনি। কিন্তু এসব সত্বেও এই অপনভোলা, আদ্যোপান্ত ক্রীড়াপ্রেমী মানুষটিকে লীলাবতী সমর্থনই করত, তার পাগলামিটা যেন মনে মনে উপভোগ করত। তাই কমলদীঘিতে কোনির সাঁতার দেখতেও হাজির হয়েছিল লীলাবতী।

সহমর্মী– কমলের মৃত্যুর পর কোনির পরিবার যখন পায়ের তলায় মাটি হারিয়েছিল, তখন ক্ষিতীশ তাদেরকে বুক দিয়ে আগলেছিল। কোনিকে নিজের ঘরে রেখে সাঁতার শেখার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তাদের পরিবারের অন্নসংস্থানের বন্দোবস্ত করেছিল ক্ষিতীশ। আর, এই কাজে ক্ষিতীশের পাশে ছিল তার স্ত্রী লীলাবতী।

সর্বোপরি, স্বামীর যোগ্য সহধর্মিণী হিসেবে লীলাবতী ক্ষিতীশকে সেই অবসরটুকু দিয়েছে যাতে ক্ষিতীশ ভালো মানের সাঁতারু তৈরি করতে পারে।

১০) “ফাইট কোনি, ফাইট”- সাধারণ সাঁতারু থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠতে গিয়ে কোনিকে কী ধরনের ‘ফাইট’ করতে হয়েছিল, নিজের ভাষায় লেখ। [মাধ্যমিক ২০২০]

উত্তরঃ আধুনিককালের বাংলা উপন্যাসিক মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসে একজন সাধারণ মেয়ের অসাধারণ সাফল্যের কাহিনি বিবৃত হয়েছে। শ্যামপুকুর বস্তির এক হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে কোনি বহু বাধা পেরিয়ে একসময় ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু হয়ে ওঠে। কোনির এই উত্তরণ স্বাভাবিক ছন্দে হয়ে ওঠে নি, রীতিমতো তাকে ‘ফাইট’ করেই এগোতে হয়েছে। সাধারণ সাঁতারু থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠতে গিয়ে কোনিকে যে ধরনের ‘ফাইট’ করতে হয়েছিল তা এইরকম-

দারিদ্রের বিরুদ্ধে ফাইট- কোনির প্রথম লড়াইটা ছিল দারিদ্র্যের সঙ্গে। সে এমন এক পরিবারের মেয়ে যেখানে তিনবেলা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটাই একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। সুতরাং তার পরিবারের পক্ষে কোনিকে সাঁতার শেখানো তো দূরের কথা, একটা কস্ট্যুম কিনে দেওয়ার সামর্থ্যও তাদের ছিল না। তাছাড়া, দারিদ্রের কারণেই তাকে সাঁতার শেখার শুরুর সময় থেকে মাদ্রাজ পৌঁছনো অবধি নানাভাবে বিদ্রুপের শিকার হতে হয়েছে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, ক্ষিতিশের নজরে না পড়লে কোনির সাঁতার শেখাই হতো না।

নিজের সঙ্গে ফাইট- কোনি না ছিল বড়লোক বাড়ির মেয়ে, না ছিল তার তেমন শিক্ষাদীক্ষা। তাই অমিয়া যখন তাকে ‘ঝি’ বলেছিল, সে খুব লজ্জা পেয়েছিল। সে তখন ভেবেছিল যে হাতের লেখাটা ভালো হলে কাউন্টারে বসত। সেটা যখন হয়ে ওঠেনি, কোনি ক্ষিদ্দাকেই প্রশ্ন করে “অমিয়ার রেকর্ডটা কবে ভাঙতে পারবো?” আসলে এটা ছিল তার নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই, ক্ষমতা দিয়ে অক্ষমতা ঢাকানোর লড়াই।

ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ফাইট- জুপিটারের ক্ষিতীশবিরোধী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিল কোনি। তাকে কখনো অন্যায়ভাবে ডিসকোয়ালিফাই করা হয় কখনো হারানোর চেষ্টা করা হয়। এমনকি, বিএএসএ নির্বাচনী সভায় তাকে বাংলা দল থেকে বাদ দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়।

বঞ্চনার বিরুদ্ধে ফাইট- মাদ্রাজে পৌঁছেও কোনিকে নানা অজুহাতে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। একের পর এক প্রতিযোগিতা সে গ্যালারিতে বসে দেখেছে, জলে নামার সুযোগ পায়নি।

তবে, শেষপর্যন্ত সত্যেরই জয় হয়। মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় শেষ মুহূর্তে নামার সুযোগ পেয়ে কোনি নিজের প্রতিভা প্রমাণ করে দিয়েছিল।

১১) “খিদ্দা, এবার আমরা কী খাব?”- বক্তা কে?উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কীভাবে তাদের সাহায্য করেছেন? ১+৪ [মাধ্যমিক ২০২০]

উত্তরঃ মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসে কোনি ক্ষিতীশকে একথা বলেছিল।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি অর্থাৎ কোনের সাঁতার-প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ শুধু একজন ভালো প্রশিক্ষক ছিলেন না, একজন বিরাট হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। গঙ্গায় কোনির সাঁতার দেখে তিনি স্বেচ্ছায় তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেছিলেন। শুধু তাই নয়, কোনির খাবারের ব্যবস্থাও তিনি করেছিলেন। তারপর হঠাৎ একদিন কোনিদের পরিবারে দুর্যোগের কালো মেঘ নেমে আসে- টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় কোনির বড় দাদা কমল। সেই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তার মৃত্যুতে কোনিদের পরিবার সর্বস্বান্ত হয়। এইরকম পরিস্থিতিতে কোনি ক্ষিতীশকে জিজ্ঞেস করেছিল “খিদ্দা, এবার আমরা কী খাব?”

ক্ষিতীশ এরপর নিজের সাধ্যের বাইরে গিয়ে কোনির পরিবারের অন্নসংস্থানের বন্দোবস্ত করেছিল। কোনির সঙ্গে সঙ্গে কোনির পরিবারকে বুক দিয়ে আগলেছিল কোনির প্রিয় ক্ষিদ্দা।

ক্ষিতীশ কোনির মাকে ছিট কাপড় কাটার কাজ দিয়েছিলেন। তিনি নিজে এসে ছিট কাপড় পৌঁছে দিয়ে যেতেন এবং সেগুলি কাটা হয়ে গেলে কোনির মাধ্যমে পাঠানো হতো। এর থেকে তাদের অল্প কিছু উপার্জন হত। তাছাড়া, কোনিকেও লীলাবতীর দোকানে চল্লিশ টাকা মাসমাইনের কাজ জোগাড় করে দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও ক্ষিতীশ নানাভাবে কোনির পরিবারকে সাহায্য করতেন।

১২) “খাওয়ায় আমার লােভ নেই। ডায়েটিং করি।”- বক্তা কে ? তার ডায়েটিং-এর পরিচয় দাও। ১+৪ [মাধ্যমিক ২০২০]

উত্তরঃ সাংবাদিক-সাহিত্যিক মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসে বিষ্টুচরণ ধর একথা বলেছিল।

ভোজনরসিক বিষ্টু ধর একজন অত্যন্ত বনেদি বংশের লোক এবং অন্যান্য সম্পত্তির সঙ্গে সে একটি সাড়ে তিন মণ দেহের মালিক। তার এই স্থূলতার জন্য ঘরে বাইরে তাকে নিন্দাবাণে জর্জরিত হতে হয়। বারুণীর দিন গঙ্গার ঘাটে মালিশ করাতে এসেও তার রেহাই নেই। জনৈক চশমাধারী ছিপছিপে চেহারার প্রৌঢ় (ক্ষিতীশ) তাকে হিপো, হাতি ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে দেন। এই প্রসঙ্গেই বিষ্টু ধর অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে জানায় যে সে রীতিমত ডায়েটিং করে। তার ডায়েটিং ছিল এইরকম-

সে রোজ তিনশো গ্রাম ক্ষীর খায়, আগে খেতো আধ কিলো; জলখাবারে খায় পনেরোটা লুচি, আগে খেতো কুড়িটা; আড়াইশো গ্রাম চালের ভাত এবং রাতে বারোখানা রুটি রয়েছে তার দৈনিক খাদ্যতালিকায়। এখন গরম ভাতের সঙ্গে মাত্র চার চামচ ঘি খায় সে, আগে অনেক বেশি খেতো। তার অন্যান্য আহারের মধ্যে রয়েছে বিকেলে দু-গ্লাস মিছরির শরবত আর চারটে কড়াপাক। তবে, মাছ বা মাংস সে ছুঁয়েও দেখে না কারণ বাড়িতে রাধাগোবিন্দ বিগ্রহ রয়েছে।

অন্যরা যে যাই বলুক, বিষ্টু ধরের মতে, সকাল থেকে রাত অবধি ব্যবসা সামলে এই আহার নিতান্তই অপর্যাপ্ত। দুঃখের সুরে সে বলে, “এত খাটুনির পর এইটুকু খাদ্য!”

১৩) “তোর আসল লজ্জা জলে আসল গর্বও জলে”- কে কাকে একথা বলেছিল? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। ১+৪

উত্তরঃ মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসে ক্ষিদ্দা অর্থাৎ ক্ষিতিশ সিংহ কোনিকে একথা বলেছিল।

একদিন রাত্রে খাওয়ার পর ক্ষিতীশ কোনিকে বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল। ক্ষিতীশ স্টপওয়াচটা কোনির চোখের সামনে ধরে কীভাবে ছোটখাটো রেকর্ডগুলো ভেঙে ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের দিকে এগোতে হবে সেই নিয়ে আলোচনা করছিল। হঠাৎ কোনি জানতে চায় যে সে কবে অমিয়ার রেকর্ড ভাঙতে পারবে। এর কারণ জানতে চাইলে কোনি বলে যে সেদিন অমিয়া তাদের দোকানে ব্লাউজ করাতে এসেছিল এবং সবার সামনে কোনিকে ‘ঝি’ বলেছে। অমিয়ার কথায় সে লজ্জা পেয়েছিল। এরপরই ক্ষিতীশ কোনিকে উদ্ধৃত কথাগুলি বলেছিল।

কোনি একজন প্রতিভাবান সাঁতারু। সমস্ত পরিচয়ের ঊর্ধ্বে এটাই তার আসল পরিচয়। সাঁতার প্রতিযোগিতায় হারজিতের ভিত্তিতেই তার যোগ্যতা প্রমাণিত হওয়া উচিত। এইজন্য ক্ষিতীশ বলেছিল, “তোর আসল লজ্জা জলে, আসল গর্বও জলে”। অর্থাৎ, প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করলেই কোনির গর্ব এবং হেরে গেলে লজ্জা পাওয়া উচিত।

বাংলা গল্প-প্রবন্ধ

বাংলা কবিতা-নাটক

error: Content is protected !!