হারিয়ে যাওয়া কালি কলম- এই প্রবন্ধটি স্বনামধন্য লেখক নিখিল সরকারের ‘কালি আছে কলম নেই, কাগজ আছে মন নেই‘ গ্রন্থ থেকে গৃহিত হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, নিখিল সরকারের ছদ্মনাম শ্রীপান্থ। আলোচ্য পোস্টে ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন এবং অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
Bangla Bhasay Bijnan
Bangla Bhasay Bigyan is a bengali essay written by Rajshekhar Basu. It is included in the syllabus of West Bengal Board of Secondary Education (WBBSE) Class Ten Bengali (first language). For short and long question from this essay, read this post carefully.
হারিয়ে যাওয়া কালি কলম
পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী মোট দুটি প্রবন্ধ থেকে তিনটি ১ নম্বরের বহু বিকল্পীয় প্রশ্ন, তিনটি ১ নম্বরের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন এবং একটি ৫ নম্বরের রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। এখানে ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।
হারিয়ে যাওয়া কালি কলমঃ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১. ‘সবাই এখানে লেখক। কিন্তু আমি ছাড়া কারও হাতে কলম নেই।’ – এমন উক্তির কারণ কী?
উত্তর- কারণ লেখকদের অফিসে লেখালেখির কাজটা হত কম্পিউটারে।
২. ‘বাংলায় একটা কথা চালু ছিল’ – কথাটি কী?
উত্তর- কথাটি হল, ‘কালি নেই, কলম নেই, বলে আমি মুনশি।’
৩. ‘বড়ােরা শিখিয়ে দিয়েছিলেন’- কী শিখিয়েছিলেন?
উত্তর- বড়রা শিখিয়েছিলেন যে, কলম শুধু সুঁচলো হলে চলবে না, কালি যাতে একসঙ্গে গড়িয়ে না পড়ে তার জন্য মুখটা চিরে দেওয়া প্রয়োজন।
৪. ‘পুকুরে তা ফেলে দিয়ে আসতাম।’ – কেন তা পুকুরে ফেলা হত?
উত্তর- ছোটোবেলায় লেখক বাড়ি ফেরার পথে হোমটাস্কের কলাপাতা পুকুরে ফেলে দিয়ে আসতেন। কারণ, গোরুতে তা খেয়ে নিলে অমঙ্গল হবে।
৫. ‘প্রাচীনেরা বলতেন’ – কী বলতেন?
উত্তর- প্রাচীনেরা বলতেন- “তিল ত্রিফলা সিমুল ছালা/ ছাগদুগ্ধে করি মেলা/ লৌহপাত্রে লোহায় ঘসি/ ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মসি।”
৬. ‘তাই নিয়ে আমাদের প্রথম লেখালেখি,’ – কী নিয়ে প্রথম লেখালেখি?
উত্তর- বাঁশের কলম, মাটির দোয়াত, ঘরে তৈরি কালি আর কলাপাতা নিয়ে লেখকদের প্রথম লেখালেখি।
৭. ‘আমি যদি বাঙালি না হয়ে হতাম প্রাচীন সুমেরিয়ান বা ফিনিসিয়ান’- তাহলে তিনি কী করতেন?
উত্তর- লেখক যদি বাঙালি না হয়ে প্রাচীন সুমেরিয়ান বা ফিনিসিয়ান হতেন, তবে হয়তো তিনি নীল নদের তীর থেকে একটা নল-খাগড়া ভেঙে নিয়ে এসে সেটিকে ভোঁতা করে তুলি বানিয়ে লিখতেন।
৮. লেখক স্বয়ং জুলিয়াস সিজার হলে কী করতেন?
উত্তর- লেখক স্বয়ং জুলিয়াস সিজার হলে লেখনি হিসাবে ব্যবহার করতেন একটি ব্রোঞ্জের শলাকা, যার পোশাকি নাম স্টাইলাস।
৯. লর্ড কার্জন বাঙালি সাংবাদিকদের ইংরেজি লেখা দেখে কী বলতেন?
উত্তর- লর্ড কার্জন বাঙালি সাংবাদিকদের ইংরেজি লেখা দেখে বলতেন ‘বাবু কুইল ড্রাইভারস’।
১০. ‘একজন বিদেশি সাংবাদিক লিখেছিলেন’ – কী লিখেছিলেন?
উত্তর- বিদেশি সাংবাদিক লিখেছিলেন যে কলকাতার চৌরঙ্গীর পথে গিজগিজ করছে ফেরিওয়ালা যাদের এক-তৃতীয়াংশের পেশা কলম বিক্রি।
১১. ‘কলম তাদের কাছে আজ অস্পৃশ্য।’ – কাদের কাছে?
উত্তর- পকেটমারদের কাছে কলম আজ অস্পৃশ্য।
১২. ‘আবার তিনি ছুটলেন কালির সন্ধানে’- কেন?
উত্তর- তিনি অর্থাৎ লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান কালির সন্ধানে ছুটলেন কারণ তার চুক্তিপত্র লেখা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তার কালির দোয়াত উপুড় হয়ে গিয়ে সব কালি পড়ে গিয়েছিল।
১৩. আদিতে ফাউন্টেন পেনের কী নাম ছিল?
উত্তর- আদিতে ফাউন্টেন পেনের নাম ছিল রিজার্ভার পেন।
১৪. কলমকে দামি ও পােক্ত করার জন্য কী করা হত?
উত্তর- কলমকে দামি ও পোক্ত করার জন্য প্লাটিনাম, সোনা ইত্যাদি দিয়ে মুড়ে দেওয়া হতো।
১৫. ‘সব মিলিয়ে লেখালেখি রীতিমত ছােটোখাটো একটা অনুষ্ঠান।’ – এমন মন্তব্যের কারণ কী?
উত্তর- আগেকার দিনে লেখার জন্য অনেকগুলি উপকরণ সঙ্গে নিয়ে বসতে হত। লেখার পত্র, কলম, দোয়াতভর্তি কালি এবং লেখা শুকানোর বালি বা ব্লটিং পেপার। এজন্য এমন মন্তব্য করা হয়েছে।
১৬. বিভিন্নরকম দোয়াতের নাম উল্লেখ করাে।
উত্তর- বিভিন্ন রকম দোয়াতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- কাচের, পোর্সেলিনের, শ্বেতপাথরের, পিতলের, ব্রোঞ্জের, ভেড়ার সিংয়ের, সোনার দোয়াত ইত্যাদি।
১৭. গ্রামে দু’একটা পাশ দিতে পারলে বুড়াে-বুড়িরা কী বলে আশীর্বাদ করতেন?
উত্তর- গ্রামে দু’একটা পাশ দিতে পারলে বুড়াে-বুড়িরা এই বলে আশীর্বাদ করতেন- ‘বেঁচে থাকো বাবা, তোমার সোনার দোয়াত কলম হোক’।
১৮. ‘সমানি সম শীর্ষাণি ঘনানি বিরলানি চ’- অর্থ লেখাে।
উত্তর- এর অর্থ হল- সব অক্ষর সমান, প্রতিটি ছত্র সুশৃঙ্খল পরিচ্ছন্ন।
১৯. অষ্টাদশ শতকে চারখণ্ড রামায়ণ কপি করে একজন লেখক কী কী পেতেন?
উত্তর- নগদ সাত টাকা, কিছু কাপড় আর মিঠাই।
২০. টাইপ-রাইটারে লিখেছেন এমন দু’জন লেখকের নাম উল্লেখ করাে।
উত্তর- সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং অন্নদাশঙ্কর রায়।
২১. মনে মনে ফরাসি কবির মতাে লেখক কী বলেছিলেন?
উত্তর- মনে মনে ফরাসি কবির মতাে লেখক বলেছিলেন, “তুমি সবল, আমি দুর্বল। তুমি সাহসী, আমি ভীরু। তবু যদি আমাকে হত্যা করতে চাও, আচ্ছা, তবে তাই হোক। ধরে নাও আমি মৃত।”
২২. নিবের কলম কীভাবে ঘাতকের ভূমিকা নিয়েছিল?
উত্তর- স্বনামধন্য বাঙালি লেখক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের কলম অসাবধানতাবশত বুকে ফুটে গিয়েছিল এবং সেই আঘাতের ফলেই নাকি তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।
২৩. ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’-এ বর্ণিত সবচেয়ে দামি কলমটির দাম কত?
উত্তর- ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’-এ বর্ণিত সবচেয়ে দামি কলমটির দাম আড়াই হাজার পাউন্ড।
২৪. ‘’হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে উল্লেখিত যেকোনো দুটি প্রবাদ লেখো।
উত্তর- ‘কালি নেই, কলম নেই, বলে আমি মুনশি’ এবং ‘কলমে কায়স্থ চিনি, গোঁফেতে রাজপুত’।
২৫. ‘ছেলেবেলায় একজন দারোগাবাবুকে দেখেছিলাম’- সেই দারোগাবাবুর বিশেষত্ব কী ছিল?
উত্তর- সেই দারোগাবাবুর কলম ছিল পায়ের মোজায় গোঁজা।
২৬. দার্শনিক কোথায় কলম গুঁজে রাখেন?
উত্তর- দার্শনিক কানে কলম গুঁজে রাখেন।
২৭. পালকের কলমের ইংরেজি নাম কী?
উত্তর- পালকের কলমের ইংরেজি নাম কুইল।
২৮. কোন সাহিত্যিক শেষ পর্যন্ত নিবের কলমের মর্যাদা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন?
উত্তর- সত্যজিৎ রায় শেষ পর্যন্ত নিবের কলমের মর্যাদা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।
২৯. ফাউন্টেন পেনের কোন অনুষঙ্গের নামে যুদ্ধের গন্ধ পাওয়া যায়?
উত্তর- ব্যারেল, কার্টিজ ইত্যাদি শব্দে।
৩০. উনিশ শতকে বারো আনায় কত অক্ষর লেখানো যেত?
উত্তর- উনিশ শতকে বারো আনায় বত্রিশ হাজার অক্ষর লেখানো যেত।
হারিয়ে যাওয়া কালি কলমঃ রচনাধর্মী প্রশ্ন
প্রশ্ন- “আমার মনে পড়ে প্রথম ফাউন্টেন কেনার কথা”- বক্তার আসল নাম কী ? তাঁর ফাউন্টেন কেনার ঘটনাটি সংক্ষেপে বিবৃত করাে। ১+৪ [মাধ্যমিক ২০২০]
উত্তরঃ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধের রচনাকার শ্রীপান্থ একথা বলেছেন। তাঁর আসল নাম নিখিল সরকার।
আলোচ্য প্রবন্ধে শ্রীপান্থ তাঁর প্রথম ফাউন্টেন পেন কেনার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছর পরের ঘটনা। লেখক কলেজ স্ট্রিটের একটা নামী দোকানে গিয়েছিলেন একটা ফাউন্টেন পেন কেনার জন্য। কিন্তু দোকানকার যখন লেখকের কাছে কলমের নাম জানতে চায়, তখন তিনি রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। দোকানদার নিজে থেকেই তখন ‘পার্কার’, ‘শেফার্ড’, ‘ওয়াটারম্যান’, ‘সোয়ান’ ইত্যাদি কলমের নাম এবং দাম মুখস্ত বলে যায়। কিন্তু লেখকের পকেটের অবস্থা আন্দাজ করে দোকানদার লেখককে ‘শস্তার একটা পাইলট’ পেন কেনার পরামর্শ দেয়।
এরপর দোকানদার, সার্কাসে খেলা দেখানোর ভঙ্গিতে, কলমের খাপটা সরিয়ে ধাঁ করে ছুড়ে দেন কাঠবোর্ডের উপর এবং লেখককে অবাক করিয়ে সে দেখায় যে কলমটি সম্পূর্ণ অক্ষত ছিল। লেখক সেদিন খুশিমনে সেই জাপানি পাইলট নিয়ে বাড়ি ফেরেন এবং বহুদিন পর্যন্ত তিনি সেটিকে সযত্নে রক্ষা করেছিলেন।
প্রশ্ন- “আমরা কালিও তৈরি করতাম নিজেরাই।”- কারা কালি তৈরি করতেন? তারা কীভাবে কালি তৈরি করতেন ? ১+৪ [মাধ্যমিক ২০১৯]
উত্তরঃ প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে তাদের শৈশবকালের কিছু টুকরো স্মৃতি পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে ‘আমরা’ বলতে প্রাবন্ধিক এবং তার সমবয়সী ছেলেদের কথা বলা হয়েছে।
ছোটবেলায় লেখক এবং তাঁরা সমবয়সী ছেলেরা নিজেরাই তাদের লেখার কালি তৈরি করতেন। আলোচ্য প্রবন্ধে কালি তৈরি সম্পর্কে একটি ছড়ারও উল্লেখ রয়েছে- “তিল ত্রিফলা শিমুল ছালা/ ছাগ দুগ্ধে করি মেলা/ লৌহপাত্রে লোহায় ঘষি/ ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মসি।” এই ছিল কালি তৈরি করার আদর্শ পদ্ধতি।
তবে, লেখকদের এত আয়োজন ছিল না। তাঁরা কালি তৈরি করতেন সহজ পদ্ধতিতে। কাঠের উনুনে রান্নার পর কড়াইয়ের তলায় যে কালি জমা হতো, সেই কালি লাউপাতা দিয়ে ঘষে তুলে পাথরের বাটিতে গুলে দিতেন। যারা একটু ওস্তাদ গোছের, তারা ওই কালো জলে হরিতকী ঘষত, কেউ আবার আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে সেটা বেটে জলে মেশাত। এবার সেই জলে লাল টকটকে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া হতো এবং জল টগবগ করে ফোটার পর ন্যাকড়ায় ছেঁকে মাটির দোয়াতে ভরা হত।
প্রশ্ন- “আশ্চর্য, সবই আজ অবলুপ্তির পথে।”- কোন্ জিনিস আজ অবলুপ্তির পথে? এই অবলুপ্তির কারণ কী? এ বিষয়ে লেখকের মতামত কী? ১+১+৩ [মাধ্যমিক ২০১৮]
উত্তরঃ প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ তাঁর ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে কলম এবং লেখালেখির অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিস যেমন, নিব, কালি, দোয়াত ইত্যাদির অবলুপ্তির কথা বলেছেন।
লেখনী-যন্ত্র হিসেবে কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহারই এই অবলুপ্তির কারণ।
কলমের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়াতে লেখক বিপন্ন বোধ করেছেন। আসলে, তিনি সেই প্রজন্মের মানুষ যখন লেখার সরঞ্জামাদি ঘরেই প্রস্তুত করা হত। বাঁশের কঞ্চির কলম এবং বাড়িতে তৈরি করা কালি নিয়েই তাঁর শৈশব কেটেছে। পরে ফাউন্টেন পেন এবং বল পেনের ব্যবহারও তিনি করেছেন। তবে, ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন ‘কালি-খেকো’ কলমের ভক্ত। যাইহোক, কর্মসূত্রেও কলমের সঙ্গে লেখকের বিশেষ যোগ ছিল কারণ তিনি যেখানে কাজ করতেন সেটা ছিল লেখালেখির অফিস। সেই অফিসেও এখন স্বমহিমায় জায়গা করে নিয়েছে কম্পিউটার। লেখক সেই অফিসে বসে যা লেখেন সেসব লেখাও তার সহকর্মীরা সাদরে টাইপ করে দেন। আর এইভাবে কলমের গুরুত্ব কমে যাওয়াতে লেখক মর্মাহত হয়েছেন। মানুষের হাত থেকে যদি কলম ছিনিয়ে নেওয়া হয়, মানুষের হাতের লেখা যদি চিরকালের মতো মুছে দেওয়া হয়, তাহলে তো দুঃখ লাগারই কথা।
প্রশ্ন- ‘ফাউন্টেন পেন’ বাংলায় কী নামে পরিচিত? নামটি কার দেওয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে? ফাউন্টেন পেনের জন্ম ইতিহাস লেখাে। ১+১+৩ [মাধ্যমিক ২০১৭]
উত্তরঃ বিশিষ্ট প্রবন্ধকার শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, ‘ফাউন্টেন পেন’ বাংলায় ‘ঝরনা কলম’ নামে পরিচিত।
প্রবন্ধিকের মতে, এই নামটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া হতে পারে।
‘ফাউন্টেন পেন’-এর পূর্বনাম ছিল ‘রিজার্ভার পেন’। একেই উন্নত করে ‘ফাউন্টেন পেন’-এর রূপদান করা হয়েছিল। ‘ফাউন্টেন পেন’- এর স্রষ্টা ছিলেন লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান নামে জনৈক ব্যবসায়ী। কথিত আছে যে, তিনি একবার অন্য আরেক জন ব্যবসায়ীর সাথে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করতে যান। কিন্তু চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করাকালীন দোয়াতে রাখা কালি কাগজের উপর উল্টে পড়ে যায়। এর ফলে ওয়াটারম্যানকে কালি সংগ্রহের জন্য পুনরায় বাইরে যেতে হয়। কিন্তু তিনি ফিরে এসে শােনেন যে, ইতিমধ্যে অন্য এক তৎপর ব্যবসায়ী চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে চলে গিয়েছেন।
বিমর্ষ ওয়াটারম্যান সেদিনই এর একটা বিহিত করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। দোয়াতে রাখা কালির জন্য ঘটা এই দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেই উদ্দেশ্যে ওয়াটারম্যান রিজার্ভার পেন নিয়ে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং পূর্বোক্ত কলমের উন্নত সংস্করণ ‘ফাউন্টেন পেন’-এর আবিষ্কার করেন। এইভাবে লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যানের হাত ধরে ফাউন্টেন পেন জন্মলাভ করেছিল।
প্রশ্ন- “মুঘল দরবারে একদিন তাদের কতনা খাতির, কতনা সম্মান।”- আলোচ্য অংশে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের খাতির ও সম্মানের পরিচয় দাও। ১+৪
উত্তর- বিশিষ্ট প্রবন্ধকার নিখিল সরকারের লেখা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে ক্যালিগ্রাফিস্ট বা লিপিকুশলীদের খাতিরের কথা বলা হয়েছে।
যারা দক্ষ কলমবাজ তাদেরকে বলা হয় ক্যালিগ্রাফিস্ট বা লিপিকুশলী। মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত শিক্ষিত সমাজে লিপিকুশলীদের বিশেষ কদর ছিল। আলোচ্য প্রবন্ধে সংক্ষিপ্ত পরিসরে তাদের খাতির ও সম্মানের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
একসময় মুঘল দরবারে লিপিকুশলীদের অনেক খাতির ও সম্মান ছিল। শুধু মুঘল দরবারে নয়, প্রাবন্ধিকের মতে, বিশ্বের সকল রাজদরবারেই তাদের বিশেষ মর্যাদা ছিল। এমনকি প্রাচীন বাংলাতেও রাজা-জমিদাররা লিপিকুশলীদের ‘গুণী’ বলে সম্মান করতেন এবং তাদের পৃষ্টপোষকতা করতেন। অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারেও লিপিকরদের দিয়ে পুথি নকল করানো হত। তাদের সুন্দর হস্তাক্ষর সম্পর্কে প্রাবন্ধিক বলেছেন, “সমানি সম শীর্ষাণি ঘনানি বিরলানি চ।”
তবে, খ্যাতি থাকলেও লিপিকুশলীদের রোজগার খুব বেশি ছিল না। অষ্টাদশ শতকে চারখন্ড রামায়ণ কপি করে একজন লিপিকর নগদ সাত টাকা, কিছু কাপড় ও মিঠাই পেয়েছিলেন। জনৈক সাহেবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উনিশ শতকে বারো আনা খরচ বত্রিশ হাজার অক্ষর লেখানো যেত।
প্রশ্ন- ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ অনুসরণে বিভিন্ন সভ্যতার মানুষের লেখনি সামগ্রীর পরিচয় দাও।
উত্তর– নিখিল সরকারের ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে কলমের বিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসটি তুলে ধরা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে উঠে এসেছে প্রাচীন বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতার মানুষের বিচিত্র লেখনি সামগ্রীর কথা।
প্রাচীন মিশরীয়রা নলখাগড়া দিয়ে লেখালেখির কাজ করত। তারা নলখাগড়ার মুখটা ভোঁতা করে তুলি বানিয়ে তা দিয়ে লিখত, অথবা সেটিকে সুঁচালো করে কলম তৈরি করত। প্রাচীন ফিনিসিয়রা আবার লেখার জন্য পশুর হাড় ব্যবহার করত। আর, রোমানদের লেখার সামগ্রী ছিল ব্রোঞ্জের শলাকা, যার পোশাকি নাম স্টাইলাস। প্রাবন্ধিক জানিয়েছেন, রোমান সম্রাজ্যের অধীশ্বর স্বয়ং জুলিয়াস সিজারও তাই দিয়ে লিখতেন। তবে চিনারা প্রথম থেকেই তুলি দিয়ে লিখে এসেছে।
এছাড়া লেখনী সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হতো পাখির পালক, বাঁশের কঞ্চি অথবা খাগের কলম। ফাউন্টেন পেন আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত মোটামুটি এই ছিল লেখার সামগ্রী।
প্রশ্ন- ‘কলমকে বলা হয় তলোয়ারের চেয়েও শক্তিধর’ – কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর। ৫
উত্তর– বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে কলমের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে কলমকে ‘তলোয়ারের চেয়েও শক্তিধর’ বলেছেন।
ইংরেজিতে বলা হয়, “Pen is mightier than sword”। আপাতদৃষ্টিতে এই কথাটিকে নেহাতই কথার কথা বলে মনে হতে পারে কিন্তু এই প্রবাদবাক্যটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। লেখক অবশ্য বলেছেন যে, ফাউন্টেন পেনের অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত ‘ব্যারেল’, ‘কার্টিজ’ শব্দের মধ্যে বারুদের গন্ধ কানে আসে। এমনকি ইতিহাসেও দেখা গেছে যে কোনো পালকের কলমধারী সত্যই তলোয়ারধারী ক্রুর বা মিথ্যাচারী প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করে গেছেন।
তলোয়ারের সাহায্যে অনায়াসে প্রতিপক্ষের মুন্ডপাত করা যায়। অতীতে এমন ঘটনা বহু ঘটেছে। কিন্তু কলমের এক আঁচড়ে পরাক্রমী রাজার সিংহাসনও টলিয়ে দেওয়া যায়, ইতিহাসে এমন নজিরও আছে। তলোয়ার যেমন স্বৈরাচারী শাসকের অস্ত্র তেমনি কলম হল বুদ্ধিজীবীদের হাতিয়ার। তলোয়ারের শাসন একটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে কিন্তু কলমের মাধ্যমে সারা বিশ্বের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে জাগিয়ে তোলা যায় এবং অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা যায়। এইজন্য বলা হয় কলম তলোয়ারের চেয়েও বেশি শক্তিধর।