একনজরে– ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি স্বনামধন্য লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ‘কুমকুম’ গল্প সংকলন থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্প থেকে গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন এবং অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
Gyanchokkhu by Ashapurna Devi
Gyanchokkhu is a bengali short story written by Ashapurna Devi. It is included in the syllabus of West Bengal Board of Secondary Education (WBBSE) Class Ten Bengali (first language). For short and long question from this story, read this post carefully.
আশাপূর্ণা দেবীর জ্ঞানচক্ষু
পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী মোট পাঁচটি গল্প থেকে তিনটি ১ নম্বরের বহু বিকল্পীয় প্রশ্ন, চারটি ১ নম্বরের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, একটি ৩ নম্বরের সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং একটি ৫ নম্বরের রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। এখানে ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্প থেকে গুরুত্বপূর্ণ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।
জ্ঞানচক্ষুঃ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১. তপনের গল্প পড়ে ছােটোমাসি কী বলেছিলেন?
উত্তর- তপনের গল্প পড়ে ছোটোমাসি প্রশংসা করেছিল এবং একইসঙ্গে সন্দেহবশত জিজ্ঞেস করেছিল যে, সে গল্পখানা কারো নকল করে লেখেনি তো।
২.কোন কথা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গিয়েছিল?
উত্তর- তপনের নতুন মেসোমশাই একজন লেখক- একথা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গিয়েছিল।
৩. তপনের লেখা কোন গল্প ততক্ষণে ছােটোমেসোর হাতে চলে গেছে?
উত্তর- তপনের বিদ্যালয়জীবনের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতাকে অবলম্বন করে লেখা গল্প ‘প্রথমদিন’।
৪. ‘মেসােকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের’- কেন এমন উক্তি?
উত্তর- তপনের ধারণা ছিল যে লেখকরা অন্য জগতের মানুষ। সেইজন্য তার লেখক-মেসোকে দেখে তার জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছিল।
৫. ‘মেসাের উপযুক্ত কাজ হবে সেটা’ – কোন কাজের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর- তপনের লেখা গল্পটা কোনো পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
৬. ‘তপনের হাত আছে’ – এমন বলার কারণ কী?
উত্তর- তপনের বয়সী ছেলেরা গল্প লিখলে হয় রাজা রানীর গল্প লেখে, না হয় খুন-জখম, অ্যাক্সিডেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে। তপন নিজের বিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতাকে অবলম্বন করে গল্প লিখেছিল। তাই একথা বলা হয়েছে।
৭. ‘দুপুরবেলা সবাই যখন নিথর নিথর’ তখন তপন কী করছিল?
উত্তর- তখন তপন আস্তে আস্তে একটি খাতা আর কলম নিয়ে তিনতলার সিঁড়িতে উঠে গিয়ে গল্প লিখতে শুরু করল।
৮. ‘এমন সময় ঘটল সেই ঘটনা।’ – কোন ঘটনার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর- ঘটনাটি হল- তপনের ছোটোমাসি আর মেসো তাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল এবং মেসোর হাতে ছিল এক সংখ্যা ‘সন্ধ্যাতারা’।
৯. তপনের লেখা গল্পের বিষয় কী ছিল?
উত্তর- তপনের লেখা গল্পের বিষয় ছিল তার বিদ্যালয়-জীবনের প্রথম দিন অর্থাৎ ভর্তির দিনের অভিজ্ঞতা।
১০. ‘পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে?’ – কোন ঘটনাকে অলৌকিক বলা হয়েছে?
উত্তর- তপনের লেখা গল্প মুদ্রিত হয়ে হাজার হাজার ছেলের হাতে ঘুরবে- এটাই তপনের মতে অলৌকিক ঘটনা।
১১. গল্প ছাপার পর যে আহ্লাদ হওয়ার কথা তা তপনের হয়নি কেন?
উত্তর- কারণ, তপনের লেখা ছাপানোর পুরো কৃতিত্বটা মেসোকে দেওয়া হচ্ছিল।
১২. ‘আমাদের থাকলে আমরাও চেষ্টা করে দেখতাম৷’ – কেন এমন মন্তব্য?
উত্তর- তপনের মেজোকাকুর মতে, ছোটোমেসোর কারেকশনের জন্যই তপনের গল্পটি ছাপানো হয়েছিল। তাই তিনি বলেছিলেন যে ওইরকম একটি লেখক মেসো থাকলে তারাও লেখক হবার চেষ্টা করতেন।
১৩. “এর মধ্যে তপন কোথা?” – কেন এমন বলাহয়েছে?
উত্তর- তপনের লেখা গল্পটি কারেকশন করতে গিয়ে নতুন মেসোমশাই গল্পের আগাগোড়া পাল্টে ফেলেছিলেন এবং গল্পের প্রতিটি লাইন তপনের কাছেই আনকোরা মনে হয়েছিল। তাই এমন বলা হয়েছে।
১৪. ‘বাবা, তাের পেটে পেটে এত!’ – কেন এই উক্তি?
উত্তর- তপনের লেখা গল্প ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এজন্য তপনের মা তার সন্তানের প্রশংসা করে এই কথা বলেছিল।
১৫. ‘গভীরভাবে সংকল্প করে তপন।’ – কী সংকল্প করে?
উত্তর- তপন সংকল্প করেছিল যে, যদি কখনো সে তার লেখা ছাপতে দেয় তো নিজে গিয়ে দেবে।
১৬. ‘গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো তপনের’- তপনের গায়ে কাঁটা দেওয়ার কারণ কী?
উত্তর- নিজের লেখা গল্প পড়েই তপনের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল।
১৭. ‘যেন নেশায় পেয়েছে’- কাকে কোন নেশায় পেয়েছিল?
উত্তর- তপনকে গল্প লেখার নেশায় পেয়েছিল।
১৮. প্রথম গল্পটি লেখার পর তপন তার বাড়িতে কী কী নতুন নাম পেয়েছিল?
উত্তর- কবি, সাহিত্যিক, কথাশিল্পী।
১৯. ‘রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই’- একথা কেন বলা হয়েছে?
উত্তর- তপনের নতুন মেসো একজন লেখক, তাই তপনের লেখার প্রকৃত মূল্য তিনিই বুঝবেন।
২০. ‘সূচিপত্রেও নাম রয়েছে’- কী নাম ছিল?
উত্তর- ‘প্রথমদিন’ (গল্প) শ্রীতপন কুমার রায়।
জ্ঞানচক্ষুঃ সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্ন
১) “যে ভয়ংকর আহ্লাদটা হবার কথা, সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না।”- ‘আহ্লাদ’ হবার কথা ছিল কেন? ‘আহ্লাদ খুঁজে না পাওয়ার’ কারণ কী? ১+২ [মাধ্যমিক ২০১৯]
উত্তর– আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে নিজের লেখা গল্প ছাপা হলে তপনের আহ্লাদ হবার কথা ছিল।
তপনের লেখা গল্প ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপানো হলে একসংখ্যা পত্রিকা সঙ্গে নিয়ে নতুন মেসো তপনদের বাড়িতে আসেন। কিন্তু বাড়ির সকলে তপনের প্রশংসা না করে তার নতুন মেসোর প্রশংসা করেছিল। কারণ, তিনি নাকি গল্পটা অল্পবিস্তর ‘কারেকশন’ করেছিলেন এবং তার পরিচিতির জন্যই গল্পটা ছাপা হয়েছিল। এইসব কথার জন্য তপন কোনো আহ্লাদ খুঁজে পায়নি।
২) “রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই।” – এমন উক্তির কারণ কী?
উত্তর– আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের মনে হয়েছিল “রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই”।
তপন একজন প্রতিভাবান কিশোর লেখক। সে তার লেখক মেসোকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি গল্প লিখেছিল। নিজের লেখা গল্প পড়ে তপন নিজেই আশ্চর্যচকিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার গল্পের মূল্য অন্য কেউ বুঝবে কি না এবিষয়ে তার সন্দেহ ছিল। তবে, নতুন মেসো যেহেতু একজন লেখক তাই তিনি তপনের গল্পের মূল্য বুঝবেন। এইজন্য একথা বলা হয়েছে।
৩) “পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে?” – কোন্ ঘটনাকে অলৌকিক বলা হয়েছে? কেন বলা হয়েছে? ১+২
উত্তর– আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে যখন তপনের নতুন মেসো একসংখ্যা ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা নিয়ে তপনদের বাড়িতে এসেছিল, তখন তপনের এরকম মনে হয়েছিল।
তপন একজন প্রতিভাবান কিশোর লেখক। তপনের স্বপ্ন ছিল যে তার লেখা গল্প একদিন ছাপানো হবে। তবে, সেই স্বপ্ন যে এত সহজে পূরণ হওয়ার নয়, এটাও সে জানত। তার লেখা গল্প ছাপার অক্ষরে হাজার হাজার ছেলের হাতে ঘুরবে, এটাই তপনের কাছে অলৌকিক ঘটনা বলে মনে হয়েছিল।
৪) “এর মধ্যে তপন কোথা?” – কীসের মধ্যে তপন ছিল না? এরকম মন্তব্যের কারণ কী? ১+২
উত্তর– আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে দেখা যায় যে তপনের নিজের লেখা গল্পে সে নিজেই ছিল না। অর্থাৎ, সেই গল্পে কোথাও তপনের নিজের হাতের ছোঁয়া ছিল না।
তপনের লেখা প্রথম গল্পটি তার নতুন মেসো ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গল্পটি তিনি এমনভাবে কারেকশন করেছিলেন যে সেই গল্পের প্রতিটি লাইন তপনের কাছে আনকোরা মনে হয়েছিল। এইজন্য বলা হয়েছে যে সেই গল্পের মধ্যে কোথাও তপন ছিল না।
৫) “তপনের মাথায় ঢােকে না- সে কী পড়ছে।” – তপন কী পড়ছিল? তা পড়ার সময় কেন তার মাথায় ঢোকেনি? ১+২
উত্তর– আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত তার নিজের লেখা গল্প পড়ছিল।
তপনের নতুন মেসো যেহেতু একজন লেখক তাই অনেক পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে তার পরিচিতি ছিল। তিনি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার সম্পাদককে বলে তপনের গল্পটা ছাপিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাপার অক্ষরে নিজের গল্প পড়তে গিয়ে তপন বুঝতে পারে যে তার লেখক মেসো কারেকশনের নাম করে তার গল্পটা আগাগোড়া পাল্টে ফেলেছিলেন। এইজন্য তপনের মাথায় ঢােকে না- সে কী পড়ছে।
জ্ঞানচক্ষুঃ রচনাধর্মী প্রশ্ন
১) “তপন আর পড়তে পারে না। বােবার মতাে বসে থাকে।”- তপনের এরকম অবস্থার কারণ বর্ণনা করাে। ৫ [মাধ্যমিক ২০১৮]
উত্তর– আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন একটা গল্প লিখেছিল। তার সেই গল্প যখন ছাপা হল, নিজের লেখা গল্প পড়তে গিয়ে তপন হতবাক হয়েছিল।
ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষে মামাবাড়িতে এসে তপন জানতে পেরেছিল তার নতুন মেসো একজন লেখক। তাকে দেখেই জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছিল তপনের। সে ভাবে, নতুন মেসো যদি একজন লেখক হন তবে তপনের বা লেখক হতে বাধা কোথায়? এরপর সে হোমটাস্কের খাতায় আস্ত একখানা গল্প লিখে ফেলে। সেই গল্প ছোটোমাসির হাত ধরে নতুন মেসোর কাছে পৌঁছায়। গল্প পড়ে লেখক মেসো তপনের অনেক প্রশংসা করেন এবং সেই গল্পটি কোনো পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
তার লেখা গল্প হাজার হাজার ছেলের হাতে হাতে ঘুরবে- এই স্বপ্ন নিয়ে তপন অধীর আগ্রহে দিন গুনতে থাকে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর একদিন নতুন মেসো একসংখ্যা সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে তপনদের বাড়িতে আসেন। তপন বুঝতে পারে তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
কিন্তু ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা গল্প পড়তে বসে তপন বুঝতে পারে সেই গল্পে তার হাতের ছোঁয়া নেই। নতুন মেসো সেই গল্পটা আগাগোড়া কারেকশন করে নতুন রূপ দিয়েছেন, যে গল্পের প্রতিটা লাইন তার কাছে অপরিচিত। এইজন্য তপন আর পড়তে পারে না, বােবার মতাে বসে ছিল।
২) “শুধু এই দুঃখের মুহুর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন”- কী সংকল্প করেছিল? তার ‘এই দুঃখের মুহুর্তের’ প্রেক্ষাপট আলোচনা করো। ১+৪
উত্তর– আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন সংকল্প করেছিল যে যদি কোনোদিন তার লেখা ছাপাতে দিতে হয় তো সে নিজে গিয়ে সম্পাদককে তার লেখা দিয়ে আসবে- তাতে তার গল্প ছাপানো হোক বা না হোক।
ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষে মামার বাড়িতে গিয়েছিল তপন। সেখানে সে নিজের হোমটাস্কের খাতায় একটা আস্ত গল্প লিখে ফেলেছিল। আসলে, তপনের নতুন মেসো ছিল একজন লেখক এবং তাকে দেখেই তপনের লেখক হওয়ার বাসনা জেগেছিল। যাইহোক, তপনের গল্প ছোটোমাসির হাত দিয়ে নতুন মেসোর কাছে পৌঁছায়। মেসো তপনের লেখার প্রশংসা করেন এবং সেই গল্প কোনো পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তপন কৃতার্থ হয়ে বসে বসে দিন গুনতে থাকে।
বেশ কিছুদিন পর নতুন মেসো একসংখ্যা ‘সন্ধ্যাতারা’ নিয়ে তপনদের বাড়িতে এলেন। পত্রিকা দেখে তার বুকের রক্ত ছলকে উঠেছিল। সে বুঝতে পেরেছিল যে তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
সত্যিই তপনের গল্প ছাপা হয়েছিল। কিন্তু গল্পটা কারেকশন করার এবং ছাপিয়ে দেওয়ার পুরো কৃতিত্বের দাবীদার হয় তার মেসো। গল্প ছাপা হলে যে আহ্লাদ হবার কথা, সেই আহ্লাদ খুঁজে পায়না তপন।
গল্পটা পড়তে গিয়ে তপন বুঝতে পারে যে নতুন মেসো আগাগোড়া কারেকশন করে পুরো গল্পটাই পাল্টে ফেলেছেন। সেই গল্পে তপনের হাতের ছোঁয়া ছিল না- সবকটা লাইন তার অপরিচিত। বইটা ফেলে রেখে ছাদে গিয়ে সে শার্টের তলাটা দিয়ে চোখ মুছে। এরপরেই তপন এই সংকল্প করেছিল।
৩) ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্প অবলম্বনে তপনের চরিত্র বিশ্লেষণ করো। ৫
উত্তর– আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হল তপন। আলোচ্য গল্পে তার জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত হওয়ার ঘটনাই তুলে ধরা হয়েছে। গল্পটি পড়ে তপনের চরিত্র সম্পর্কে যা জানা যায় তা হল-
১) প্রতিভাবান– তপন একজন প্রতিভাবান কিশোর লেখক। নতুন মেসোকে দেখে যখন সে জানল যে লেখকরা সাধারণ মানুষের মতো হয়, তখন সে ভাবল যে তারও তবে লেখক হতে বাধা নেই। আর তারপরেই একাসনে বসে আস্ত একটা গল্প লিখে ফেলেছিল।
২) ভাবুক– তপন স্বভাবত একজন ভাবুক প্রকৃতির ছেলে। এই ভাবুক স্বভাবের জন্য নিজের বিদ্যালয় জীবনের প্ৰথম দিনের স্মৃতিকে অবলম্বন করে গল্প লিখতে পেরেছিল। আবার, ছোটো মেসোকে দেখার আগে পর্যন্ত লেখক সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না। তবে, লেখকরা যে কেমন হতে পারে সেই নিয়ে অনেক কিছু ভেবে রেখেছিল যে।
৩) মর্যাদাবোধ– তপনের গল্প ছাপা হলে লেখক হিসেবে সে যত প্রশংসা পেয়েছিল, গল্পটা ছাপিয়ে দেওয়ার জন্য নতুন মেসো তার থেকে বেশি প্রশংসা অর্জন করেছিল। এতে তপন অপমানিত বোধ করেছিল।
৪) বাস্তববুদ্ধি– ছোটোমাসি যখন তপনের লেখা গল্পটা নতুন মেসোর কাছে নিয়ে যাচ্ছিল, তপন তখন মুখে ‘না-আ-আ’ বলে আপত্তি করলেও মনে মনে ভেবেছিল যে তার লেখার প্রকৃত মূল্য কেবল তিনিই বুঝবেন।
৫) মানসিক দৃঢ়তা– নতুন মেসো তপনের গল্পটা কারেকশনের নামে আগাগোড়া পাল্টে দিয়েছিল। এইজন্য তপন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে এরপর সে নিজের গল্প নিজে গিয়ে ছাপতে দিয়ে আসবে, তাতে সে গল্প ছাপা হোক বা না হোক।
৪) ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের নামকরণের যথার্থতা বিশ্লেষণ করো। ৫
উত্তর– আশাপূর্ণা দেবীর লেখা একটি ভিন্ন স্বাদের ছোটগল্প হল ‘জ্ঞানচক্ষু’। জ্ঞানচক্ষু কথার আক্ষরিক অর্থ হল জ্ঞান রূপ চক্ষু। জ্ঞানচক্ষু খুলে গেলে মানুষ প্রকৃত সত্যের সন্ধান পায়।
আলোচ্য গল্পের প্রধান চরিত্র তপন নামের একটি ছেলে। ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষে সে মামাবাড়িতে এসেছিল। যার সঙ্গে ছোটোমাসির বিয়ে হল, সেই নতুন মেসো নাকি একজন লেখক। এর আগে লেখকদের সম্পর্কে তপনের কোন ধারণা ছিল না। তারা যে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই হয়, সে একথা জানত না। এই লেখক-মেসোকে দেখেই তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়। সেও গল্প লিখতে শুরু করে এবং তার প্রথম গল্প পড়ে নতুন মেসো সেটি ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন।
সেই গল্প ছাপা হলে আরেকবার জ্ঞানচক্ষু খুলে যায় তপনের। গল্পটা লেখার জন্য তপন যেটুকু বাহবা পেয়েছিল, গল্পটা ছাপিয়ে দেওয়ার সুবাদে নতুন মেসো তার থেকে বেশি প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। আবার, ছাপার অক্ষরে নিজের গল্প পড়তে গিয়ে সে বুঝতে পারে যে মেসো তার গল্পটা আগাগোড়া কারেকশন করেছেন এবং সেই গল্পে তপন নিজেকে খুঁজে পায় না। সেদিন সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে এরপর কোনোদিন কোনো গল্প ছাপাতে হলে সে নিজে গিয়ে পত্রিকার দপ্তরে দিয়ে আসবে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, তপনের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত হওয়াই এই গল্পের প্রধান বিষয়বস্তু। সেই অর্থে এই গল্পের নামকরণ সার্থক হয়েছে বলা যেতে পারে।