নাটক- গুরু
সূচিপত্র
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নাটক-পরিচিতি– রবীন্দ্রনাথের নাটকের সঙ্গে অন্যান্য নাটকের পার্থক্য এই যে, রবীন্দ্রনাথের নাটকে কোনো একটি মানবিক সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা থাকে। অনেক রবীন্দ্রনাটকই তত্বমূলক। তেমনি একটি নাটক হল ‘অচলায়তন’। ‘অচলায়তন’ নাটকের মূলভাব হল প্রথার সঙ্গে প্রাণের দ্বন্দ্ব। এই নাটকেরই সংক্ষিপ্ত এবং অভিনয়যোগ্য সংস্করণ হল ‘গুরু’ নাটক।
কাহিনি– নাটকের কাহিনির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে অচলায়তন নামের একটি বিদ্যালয়। বিদ্যালয়কে বিদ্যায়তনও বলা হয়। কিন্তু এই বিদ্যালয়ের নাম অচলায়তন। নামেই লুকিয়ে আছে রহস্য। এই বিদ্যালয়ের প্রধান অর্থাৎ আচার্য অদীনপুণ্য, উপাধ্যায়, অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী এবং ছাত্রেরা সকলেই একসাথে থাকে। ঠিক যেন এখনকার আশ্রমিক বিদ্যালয়। অচলায়তনের ছাত্র-শিক্ষক সকলে বাইরের জগত থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে। বাইরে উঁচু প্রাচীর আর সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ যাতে বাইরের হাওয়া পর্যন্ত ভেতরে ঢুকতে না পারে। কঠিন কঠোর নিয়মে সকলের জীবন বাঁধা। পান থেকে চুন খসলেই অর্থাৎ সামান্য ভুল করলেও শাস্তি। এতো নিয়মের ভিড়ে মানুষগুলো যেন যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। দু’জন মানুষ ছাড়া প্রায় সকলেই এই নিয়মের শৃংখলা মেনে সুখে আছে- একজন হল এখানকার বয়স্ক ছাত্র পঞ্চক আরেকজন হল স্বয়ং আচার্য অদীনপুন্য। এমনই সময় ঘটল সেই ঘটনা। সুভদ্র নামের একটি ছাত্র একটা জানলা খুলে বাইরের প্রকৃতি দেখে ফেলল যা অচলায়তনের নিয়মে অত্যন্ত পাপ। সবাই চায় সুভদ্রের প্রায়শ্চিত্র হোক কিন্তু পঞ্চক আর আচার্য বাধা দেন। মহাপঞ্চকের নেতৃত্বে অচলায়তনের বাকি সদস্যরা পঞ্চক আর আচার্যকে অচলায়তনের বাইরে করে দেয়। এইরকম সংকটময় পরিস্থিতে সেখানে গুরুর আবির্ভাব ঘটে।
কে এই গুরু? এই নাটকে গুরুর তিনরকম রূপ রয়েছে- গুরু, গোঁসাই ঠাকুর এবং দাদাঠাকুর। আক্ষরিক অর্থে গুরু হলেন এই অচলায়তনের প্রধান, এমনকি আচার্যেরও গুরু। তার নির্দেশে এবং তারই আদর্শে এই বিদ্যালয় চালিত হয়। আর গভীরতর অর্থে, তিনি হলেন প্রাণের নেতা, প্রাণের অধিনায়ক, পরমপুরুষ। যাইহোক সুভদ্রকে কেন্দ্র করে অচলায়তনে যে লড়াই শুরু হয়েছিল- প্রাণের সঙ্গে প্রথার লড়াই, গুরু আসার পর তার অবসান ঘটে। অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙ্গে দিয়ে গুরু সেখানে প্রাণের প্রতিষ্ঠা করেন।
৫ নাম্বারের প্রশ্নোত্তর