ডাকাতের মা গল্পের নামকরণ

শ্রেণী একাদশ
বড় প্রশ্ন (মান-৫)

ডাকাতের মা

প্রশ্ন- ডাকাতের মা গল্পের নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর। (৫)

উত্তর- সাহিত্যে নামকরণের প্রসঙ্গটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নামকরণ থেকেই সংশ্লিষ্ট রচনা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। সাহিত্যের নামকরণ হয় মূলত (১) চরিত্রকেন্দ্রিক, (২) প্রধান ঘটনাকেন্দ্রিক অথবা (৩) ব্যঞ্জনা ধর্মী। আমাদের আলোচ্য সতীনাথ ভাদুড়ীর লেখা ‘ডাকাতের মা’ গল্পের নামকরণ চরিত্রকেন্দ্রিক।

সতীনাথ ভাদুড়ীর ডাকাতের মা

গল্পের প্রধান চরিত্র হল সৌখীর মা অর্থাৎ ডাকাতের মা। এই গল্পে তার ব্যক্তিনামটির উল্লেখ নেই। আসলে পুরুষশাসিত সমাজে নারীর পরিচিতিও পুরুষ-নির্ভর। আগে, সৌখীর বাবা যখন বেঁচে ছিল, তখন সে ছিল ডাকাতের বউ। এখন ছেলের পরিচয়ে সে হয়েছে ডাকাতের মা। তার চিন্তাভাবনা এবং কাজকর্মই এই গল্পের প্রধান চালিকাশক্তি। তার স্মৃতিচারণার মাধ্যমে আমরা সৌখী এবং তার বাবার পরিচয় পাই; তার অপত্যস্নেহ তাকে চৌর্যবৃত্তিতে প্রণোদিত করে এবং তার ভুলের কারণেই তার নিরপরাধ ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। সৌখী একজন ডাকাত এবং তার মা এই গল্পের মুখ্য চরিত্র, সেই হিসেবে এই নামকরণ যথার্থ হয়েছে।

তবে, আরো একটি দিক থেকে এই গল্পের নামকরণের সর্থকতা বিচার করা যেতে পারে। গল্পের প্রধান চরিত্র সৌখীর মা, কিন্তু গল্পের নাম ‘ডাকাতের মা’। সৌখী একজন ডাকাত, তার বাবাও ডাকাত ছিল। ডাকাতি নিঃসন্দেহে একটি নিন্দনীয় পেশা। কিন্তু সৌখীর মায়ের কাছে সেটাই গর্বের ব্যাপার। এমনকি পারিবারিক পেশা হিসেবে ডাকাতি করাটা তার স্বামী-ছেলের ‘হকের পেশা’ বলেই মনে করে সৌখীর মা। সাজার মেয়াদ কমে যাওয়ায় সৌখী যখন চুপিচুপি বাড়ি ফিরে আসে, তখনও তার মায়ের মনে হয়েছে যে তার ছেলে ‘বুক ফুলিয়ে পাড়া জাগিয়ে ঢুকতে পারত’। অর্থাৎ, মনেপ্রাণে সে ‘ডাকাতের মা’ হয়ে উঠেছিল। এই কারণে গল্পটির নামকরণ সার্থক হয়েছে।

error: Content is protected !!