বিশাল ডানাওয়ালা এক থুত্থুরে বুড়ো
গাব্রিয়েল গর্সিয়া মার্কেজ
মার্কেজ হলেন ম্যাজিক রিয়ালিজমের বা যাদু বাস্তবতার জনক। অবাস্তব প্রেক্ষাপটে অবাস্তব ঘটনার মিশ্রণে এমন একটি গল্পের অবতারনা করা হয় যে মনে হবে সবটাই বানানো। কিন্তু লেখক সাবলীলভাবে গল্প বলে যান এবং কোনো চিরন্তন সত্যকে প্রকাশিত করেন। এটাই হল যাদু বাস্তবতা।
এই গল্পে দেখা যায়, কয়েকদিন টানা ঝড়-জলের পর যেদিন বৃষ্টি থামল সেদিন বিকেলে পেলাইয়ো আর এলিসেন্দ্রার বাড়ির উঠোনে একজন থুত্থুরে বুড়ো পড়ে আছে। অতি সাধারণ এক বুড়ো যার দাঁত ফোকলা, মাথায় চুল নেই বললেই চলে, এমন ভাষায় কথা বলে যে বোঝা মুশকিল- অথচ তার দুটো ডানা আছে। একেবারেই স্বাভাবিক ডানা। একজন পড়োশিনি বলে যে উনি দেবদূত। সেই মহিলার বক্তব্য হল যে এই দেবদুত ক্রমাগত ঝড়-জলের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সে আরো বলে যে এর খাবার হল ন্যাপথলিন। তার সন্দেহ যে পেলাইয়োদের অসুস্থ শিশুকে নিয়ে যাবার জন্য হয়তো সে এসেছিল। তার কথামতো পেলাইয়ো মগুর হাতে পাহারা দিয়েছিল যাতে সেই দেবদুত বাচ্চার কোনো ক্ষতি করতে না পারে।
এদিকে ডানাওয়ালা বুড়ো যে জ্যান্ত দেবদূত এটা প্রচার হবার পর থেকেই পরদিন সকাল থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় জমতে লাগল পেলাইয়োর বাড়িতে। এরপর এলিসেন্দ্রার কথামতো দেবদূতকে দেখার জন্য আদায় করা হল এবং খুব শীঘ্রই তারা বড়লোক হয়ে উঠল।
কদিন পর সেখানে আসর পাতল একটি মেয়ে যে আগে মেয়ে ছিল বর্তমানে মাকড়সায় পরিনত হয়েছে। মানুষের ভিড় এবার তার দিকে। দেবদূতকে দেখার জন্য আর কেউ আসে না। একসময় পেলাইয়োরা নতুন বাড়ি বানালো। তখন তাদের কাছে বুড়োকে আপদ বলে মনে হত। অথচ তার ওড়ার ক্ষমতা নেই। একসময় আস্তে আস্তে সে সুস্থ হয়ে উঠল। পৃথিবীর আর কারো নজর তখন তার দিকে ছিল না, এমন সময় তার ডানা শক্ত সামর্থ্য হয়ে উঠল। একদিন বিকেলে এলিসেন্দ্রা রান্নাঘর থেকে দেখল বুড়ো ওড়ার চেষ্টা করছে। একসময় সত্যি সে উড়ে চলে গেল এবং দ্রুত আকাশের রেখায় লীন হয়ে গেল।
গল্পটি শেষ হবার পরেও অনেক প্রশ্ন মাথায় ভিড় জমায়- বুড়োটা তাহলে কে? তার ডানা এল কীকরে? মেয়েটাই বা কীকরে মাকড়সা হল? এই গল্পের কতটুকু বাস্তব? এতগুলি প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে গল্পটি শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও এর মধ্যে মিশে আছে বাইবেলের মেটামরফসিস, শয়তান-দেবদূত তত্ত্ব এবং মানুষের মনের জটিলটা। গল্পটির আবরনে অবাস্তবের ছোঁয়া থাকলেও আদপে গল্পটি পুরোপুরি বাস্তব।
[শর্ট প্রশ্ন এবং এম সি কিউ-এর উত্তর দিতে হলে মূল টেক্সট পড়তেই হবে কারণ পড়ার কোনো বিকল্প নেই।]
এমসিকিউ টেস্ট
সূচিপত্র