বাংলা সাহিত্যের আদিযুগ

শ্রেণী- একাদশ

IMG_20160328_233534

সমগ্র বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে তিনটি যুগে ভাগ করা হয়, যথা- আদিযুগ, মধ্যযুগ এবং আধুনিকযুগ। খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয় আদিযুগ, ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষপর্যন্ত মধ্যযুগ এবং উনিশ শতকের সূচনা থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আধুনিক যুগ।

চর্যাপদ
চর্যাপদ

বাংলা সাহিত্যের আদিযুগের একমাত্র নিদর্শন হল চর্যাপদ। অন্যভাবে বললে, বাংলা ভাষার প্রথম কাব্য বা কাবিতাসংকলন হল চর্যাপদ। চর্যার কবিগণ মূলতঃ সাধক ছিলেন এবং চর্যার পদগুলিতে বৌদ্ধ সহজিয়া ধর্মের সাধনতত্ব বর্ণিত হয়েছে। চর্যাপদের পুথিটি আবিষ্কার করেন ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। তিনি নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার থেকে ১৯০৭ সালে ‘চর্যাচর্য বিনিশ্চয়’ নামক একটি পুথি এবং ‘ডাকার্ণব’ ও ‘দোহাকোষ’ নামে আরো দুটি বই আবিষ্কার করেন। এগুলি তিনি ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে “হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান এবং দোহা” নামে প্রকাশ করেন।

চর্যাপদ নিয়ে বিতর্ক

১৯১৬ সালে গ্রন্থ আকারে প্রকাশের পর থেকেই চর্যাপদ কে নিয়ে অনেক বিতর্ক দেখা দিয়েছে বিতর্ক গুলি মূলত তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে-
১)চর্যার ভাষা বাংলা কিনা?
২) চর্যাপদের প্রকৃত নাম কী?
৩) চর্যাপদ কোন সময় লিখিত?

পালি এবং ওড়িয়া, অসমিয়া সহ অন্যান্য কয়েকটি নব্যভারতীয় ভাষার পণ্ডিতগণ চর্যাপদকে নিজেদের সাহিত্য বলে দাবি করেছিলেন। ১৯২৬ সালে বিশিষ্ট বাঙালি ভাষাবিদ ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তার ‘বাঙলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ’ নামক গ্রন্থে চর্যাপদের ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, ব্যাকরণ ও ছন্দ বিচার করে প্রমাণ করে দেন যে, চর্যার ভাষা বাংলা।

চর্যাপদের নামকরণ নিয়েও নানা মুনি নানা মত পোষণ করেন। কারো মতে এর নাম হওয়া উচিত আশ্চর্যচর্যচয়, কেউ বলেন চর্যাচর্যাবিনিশ্চয়, আবার কারো মতে চর্যাশ্চর্যবিনিশ্চয়। এছাড়াও অনেকে চর্যাগীতিকোষ কিংবা চর্যাগীতি নামকরণের পক্ষে। তবে প্রকৃত নাম যাই হোক না কেন, বাংলা সাহিত্যের আদি যুগের একমাত্র সাহিত্যিক নিদর্শনটি আপামর বাঙালির কাছে ‘চর্যাপদ’ নামেই পরিচিতি লাভ করেছে।

চর্যাপদগুলি কোন সময় লিখিত হয়েছিল সেই নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে। তবে অধিকাংশ পন্ডিতের মতে এগুলি সপ্তম থেকে দশম শতকের মধ্যেই লেখা হয়েছিল।

চর্যার পদ এবং পদকর্তা

চর্যাপদে মোট ৫১টি পদ রয়েছে। তবে অনেকের মতে পদের সংখ্যা পঞ্চাশ। কয়েকটি পাতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মোট সাড়ে ৪৬টি পদ উদ্ধার করা গেছে। ২৩নং পদটি খন্ডিত আকারে এবং ২৪, ২৫ এবং ৪৮ নং পদগুলো সম্পুর্ন বিলুপ্ত।

চর্যাপদের কবি বা পদকর্তা ২৪ জন। যথা-
১) লুইপাদ, ২) কাহ্নপাদ, ৩) ভুসুকপা, ৪) সরহপা, ৫) শবরীপা, ৬) শান্তিপাদ, ৭). কুক্কুরীপাদ, ৮)  বিরুআ, ৯) গুণ্ডরীপাদ, ১০) চাটিলপাদ, ১১) কম্বলাম্বরপাদ, ১২) ডোম্বীপাদ, ১৩) মহিণ্ডাপাদ, ১৪) বীণাপাদ, ১৫) আজদেব,১৬) ঢেণ্ঢণপাদ, ১৭) দারিক,১৮) ভদ্রপাদ, ১৯) তাড়কপাদ, ২০) কঙ্কণপা, ২১) জঅনন্দি,২২) ধামপাদ ও ২৩) তান্তীপা, ২৪) নাড়ীডোম্বীপাদ- এর পদটি পাওয়া যায়নি।

অনেকের মতে, চর্যাপদের আদিকবি লুইপা। আবার অনেকের মতে, প্রাচীনতম চর্যাকার শবরপা। তবে কাহ্নপার রচিত পদের সংখ্যা সর্বাধিক। তিনি ১৩টি পদ রচনা করেন।

 এই অধ্যায় থেকে অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

এই অধ্যায় থেকে বড় প্রশ্ন (মান-৫)

error: Content is protected !!