প্রকল্প- সাক্ষাৎকার

একাদশ শ্রেণি
বাংলা প্রকল্প

একজন আলোকচিত্রীর সাক্ষাৎকার

(সম্প্রতি “ওয়াইল্ড বিউটি” পত্রিকা বিচারে বর্ষসেরা আলোকচিত্রীর সম্মান পেলেন রোহিত বাদ্যকর। এই বাংলার এক অখ্যাত গ্রামের ছেলে রোহিত। পারিবারিক দুরবস্থা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব কাটিয়ে কিভাবে এই অসাধ্য সাধন করলেন রোহিত? ‘নতুন দিশা’ পত্রিকার প্রতিবেদক শ্রীজাত পালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেইসব কথাই উঠে এল।)

শ্রীজাত– ‘নতুন দিশা’র পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।
রোহিত– ধন্যবাদ।

শ্রীজাত– প্রথমেই আপনার কাছে জানতে চাইবো এই ‘ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফির’ চিন্তাটা কীভাবে মাথায় এল? মানে ধরুন, ক্যামেরা নিয়ে বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো আর বন্যজন্তুদের ছবি তোলা তো একরকমের অ্যাডভেঞ্চার। এই নেশাটা কীভাবে পেলেন।
রোহিত– ঠিকই বলেছেন, এটা একধরনের নেশা। আসলে ছোটোবেলা থেকেই আমার বন, বন্যপ্রাণী এসবের প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল। টিভিতে বন্যপ্রাণী নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান হলে মন দিয়ে দেখতাম। বিভিন্ন বন্যজন্তু সম্পর্কে বইয়েও পড়তাম। এই টান থেকেই বার বার ছুটে যাই জঙ্গলে।

শ্রীজাত– ফটোগ্রাফির কোনো প্রতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কি?
রোহিত– না না। সবটাই নিজের উদ্যোগে। আসলে আমার বাবা একজন চিত্রশিল্পী। বাবার কাছেই আমার ছবি আঁকার হাতেখড়ি। এরপর যখন হাতে স্মার্টফোন পাই তখন থেকেই ডিজিটাল ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। ডিএসএলআর ক্যামেরা পেয়েছি অনেক পরে।

শ্রীজাত– ততদিনে নিশ্চয় স্মার্টফোনেই হাত পাকা হয়ে গিয়েছিল?
রোহিত– তা বলা যেতে পারে। আসলে এখনকার স্মার্টফোনগুলো কিন্তু চমৎকার। ভালো লেন্স পেলে দারুণ ফটোগ্রাফি হতে পারে। তাছাড়া ত্রিপল ক্যাম বা কোয়াড ক্যাম স্মার্টফোনগুলো তো মেড-ফর-ফটোগ্রাফি।

শ্রীজাত– এখনো মোবাইল দিয়ে ছবি তোলেন নাকি?
রোহিত– মোবাইল তো আমার ফার্স্ট চয়েস। কলেজে পড়ার সময় মোবাইল ফটোগ্রাফির জন্য অনেক পুরষ্কার পেয়েছি। সাধারণ মোবাইল ফোনে লেন্স দিয়ে ছোটো ছোটো কীট-পতঙ্গের ছবি তুলতাম।

শ্রীজাত– মানে মাইক্রো ফটোগ্রাফি?
রোহিত– হ্যাঁ মাইক্রো ফটোগ্রাফি। একবার ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেখে কিছু ছবি পাঠালাম ইন্টারন্যাশনাল বায়োলজিক্যাল জার্নালের মেইলে। সব ছবিগুলোই ওদের পছন্দ হয়েছিল এবং জার্নালে ছাপাও হয়েছিল। এটা আমার আলোকচিত্রী-জীবনে প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

শ্রীজাত– ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফির জন্য এখনো পর্যন্ত কোথায় কোথায় গেছেন?
রোহিত– ভারতের মধ্যে প্রায় সবকটা জাতীয় উদ্যান এবং অভয়ারণ্যে গেছি। এছাড়া নেপাল, ভুটান, মায়ানমারের জঙ্গলেও গেছি। যদি সবকিছু ঠিকঠাক চলে তো আগামী বছরেই আমাজনের জঙ্গলে পা রাখতে চলেছি।

শ্রীজাত– বাহ্। দারুণ ব্যাপার তো। আমাজনের জঙ্গল- নামটা শুনলেই কেমন যেন শিহরণ দেয়।
রোহিত– আমারও বহুদিনের স্বপ্ন এটা। প্রকৃতি যে কতখানি রহস্যময়, আমাজনের বনভূমি তার উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। ঘন অরণ্য, ভয়ংকর জীবজন্তু, প্রতি পদক্ষেপে রহস্যের হাতছানি। ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফারদের স্বপ্ন আমাজনের জঙ্গল।

শ্রীজাত– কিন্তু জীবনের ঝুঁকিও তো আছে।
রোহিত– সে তো থাকবেই। ঝুঁকি না থাকলে কাজ করার মজাটাই কোথায়? শখের ফটোগ্রাফি করার ইচ্ছা থাকলে তো একটা স্টুডিও খুলেই বসা যেত। কিন্তু ওই যে বললাম, অরণ্য আমাকে ভীষণভাবে টানে।

শ্রীজাত– এইখানেই গড়পড়তা বাঙালির থেকে আপনার স্বাতন্ত্র্য। বেশিরভাগ বাঙালি টিভির পর্দাতেই বন্য জীবজন্তুদের দেখে ‘ধন্য ধন্য’ করে। সেখানে আপনি ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে নিশ্চিত বিপদের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন। একটা কথা জানতে খুব ইচ্ছে করছে, কখনো কি বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন?
রোহিত– বেশ কয়েকবার। একবার তো সুন্দরবনেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। সে বড় ভয়ংকর অভিজ্ঞতা।

শ্রীজাত– কীরকম? বাঘের মুখোমুখি না অন্য কিছু?
রোহিত– একেবারে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মুখোমুখি। তারপর সুন্দরবনের মৌলীদের সাহায্যে কোনোরকম প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলাম।

শ্রীজাত– মৌলী মানে যারা মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে?
রোহিত– হম্ম। ওরা গভীর বন থেকে মধু সংগ্রহ করে, সেইজন্য মাঝে মাঝে বাঘের সম্মুখীন হতে হয়। আত্মরক্ষার জন্য ওরা বাঘ তাড়াবার বিশেষ কৌশল জানে। সেবার ওরাই আমাকে উদ্ধার করেছিল।

শ্রীজাত– আপনি একাই অভিযানে বের হন? নাকি কোনো সঙ্গীসাথী নেন?
রোহিত– বেশিরভাগ সময় একাই যাই। তবে ইদানিং সৌরভ নামে আমার এক বন্ধু আমার সঙ্গে যায়। ও ভিডিওগ্রাফি করে এবং ওয়াইল্ডলাইফ ভ্লগার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে চায়।

শ্রীজাত– এবার বলুন, কোন বন্যপ্রাণীটি আপনার বিশেষ প্রিয়?
রোহিত– অবশ্যই বাঘ, মানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ভয়ংকর-সুন্দর বলতে যা বোঝায়, আমাদের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার হল সেই জিনিস।

শ্রীজাত– ভবিষ্যতে যারা আপনার মত ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার হতে চায়, তাদেরকে কী পরামর্শ দেবেন?
রোহিত– বনের পশুগুলোকে আগে খালি চোখে দেখো, তারপর ক্যামেরার লেন্স দিয়ে দেখবে।

শ্রীজাত– আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
রোহিত– ধন্যবাদ।

error: Content is protected !!