সর্বনাম পদ

সর্বনাম

যে পদ কোনাে বিশেষ্যপদের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়, সেই পদকে সর্বনামপদ বলে। ইংরেজিতে Pronoun বলতে যা বোঝায় বাংলায় তাকেই সর্বনাম বলা হয়। যেমন- আমি, তুমি, সে, তারা ইত্যাদি।

বাংলা সর্বনাম পদ

সর্বনামের ব্যবহার

বাক্যে পরপর একই বিশেষ্য পদ ব্যবহার করলে শুনতে খারাপ লাগে। সেইজন্য বিশেষ্যপদের বিকল্প হিসেবে সর্বনাম পদগুলি ব্যবহার করা হয়। যেমন- “রাম খুব ভালো ছাত্র। রাম পড়াশোনাতে ভালো। রাম খেলাধুলাতেও খুব ভালো।” তিনটি বাক্যেই ‘রাম’ কথাটা আছে বলে শুনতে খারাপ লাগছে। কিন্তু যদি বলা হয় “রাম খুব ভালো ছাত্র। সে পড়াশোনাতে ভালো। সে খেলাধুলাতেও খুব ভালো”, তাহলে এটা শুনতে ভালো লাগবে।

সর্বনামের প্রকারভেদ

১) ব্যক্তিবাচক সর্বনামপদ– কোনাে ব্যক্তির নামের পরিবর্তে যে সর্বনামপদ ব্যবহৃত হয়, তাকে ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক সর্বনামপদ বলে। যেমন- আমি, তুমি, সে, তিনি ইত্যাদি। ব্যক্তিবাচক সর্বনাম আবার তিন প্রকার। সেগুলি হল-

ক) উত্তম পুরুষের ব্যক্তিবাচক সর্বনাম- আমি, আমরা, আমাকে, আমাদেরকে, আমার, আমাদের ইত্যাদি।

খ) মধ্যম পুরুষের সর্বনাম- তুমি, তোমার, তোমাকে, তোমরা, তোমাদের, তোমাদেরকে। এছাড়া আপনি, আপনার, আপনাকে, আপনারা, আপনাদের, আপনাদেরকে (সম্ভ্রমার্থে) এবং তুই, তোর, তোকে, তোরা, তোদের, তোদেরকে (তুচ্ছার্থে) ইত্যাদি।

গ) প্রথম পুরুষের ব্যক্তিবাচক সর্বনাম- সে, তার, তাকে, তারা, তাদের, তাদেরকে, তিনি (সম্ভ্রমার্থে) ইত্যাদি।

২) নির্দেশক সর্বনাম– যে সর্বনামপদ কোনাে ব্যক্তি বা বস্তুকে নির্দেশ বা নির্ণয় করে, তাকে নির্দেশক বা নির্ণয়সূচক সর্বনামপদ বলে। যেমন- এ, এরা, ও, ওরা ইত্যাদি। নির্দেশক সর্বনাম আবার দু’প্রকার। সেগুলি হল-

ক) নৈকট্যসূচক বা সামীপ্যবাচক- যে সর্বনামপদ নিকটের ব্যক্তি বা বস্তুকে নির্দেশ করে তাকে সামীপ্যবাচক নির্দেশক বলা হয়। যেমন- এ, এই, এটা, ইহা, এরা, এইগুলি, ইহারা ইত্যাদি।

খ) দূরত্ববাচক- যে সর্বনামপদ দূরের ব্যক্তি বা বস্তুকে নির্দেশ করে তাকে দুরত্ববাচক নির্দেশক বলা হয়। যেমন- ও, ওই, ওটা, উহা, ওরা, ওইগুলি, উহারা ইত্যাদি।

৩) অনির্দেশক সর্বনাম– যে সর্বনামপদ কোনাে অনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে ইঙ্গিত করে, তাকে অনির্দেশক সর্বনাম বলা হয়। যেমন- কোনো, কেউ, কোনাে কোনাে, কেউ কেউ ইত্যাদি।

৪) প্রশ্নসূচক বা প্রশ্নবাচক সর্বনাম– যে সর্বনামপদ দ্বারা কোনো প্রশ্ন করা হয়, তাকে প্রশ্নসূচক সর্বর্নাম বলে। যেমন- কে, কারা, কী, কী কী, কাকে, কারা ইত্যাদি।

[প্রশ্নসূচক সর্বনাম নিয়ে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। কে, কি, কী, কোন, কোথায়, কার, কত ইত্যাদি পদ দিয়ে প্রশ্ন করা হয়। অনেকে মনে করে প্রশ্ন করা হলেই প্রশ্নসূচক সর্বনাম হয়। কিন্তু তেমনটা নয়। কোনো প্রশ্নের উত্তর যদি কোনো বিশেষ্য পদ হয় তবেই সেই প্রশ্নসূচক পদটিকে সর্বনাম বলা হবে। যেমন- “তোমার নাম কী?” এখন এই ‘কী’-এর উত্তর দিতে হলে কোনো নামই বলতে হবে। নাম মানেই বিশেষ্য পদ। তাই ‘কী’ হল প্রশ্নসূচক সর্বনাম। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়- “তোমার বয়স কত?”, এর উত্তরে কোনো সংখ্যাই বলা হবে। ধরা যাক, উত্তর দেওয়া হল- “আমার বয়স আঠারো বছর।” আঠারো একটি সংখ্যা এবং তা ‘বছর’ পদটিকে বিশেষত করছে, তাই ‘আঠারো’ একটি বিশেষণ পদ এবং ‘কত’ পদটি প্রশ্নসূচক বিশেষণ।]

৫) সমষ্টিবাচক বা সাকল্যবাচক সর্বনাম– যে সর্বনামপদ ব্যক্তির বা বস্তুর সমষ্টি বা দলকে বােঝায়, তাকে সমাষ্টিবাচক বা সাকল্যবাচক সর্বনাম বলা হয়। যেমন- সব, সকলে, সবাই, ইত্যাদি।

৬) আত্মবাচক সর্বনাম– কর্তার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করার জন্য যে আত্মজ্ঞাপক পদ ব্যবহার করা হয়, তাকে আত্মবাচক সর্বনাম বলা হয়। যেমন- নিজে, স্বয়ং, আপনি, স্ব ইত্যাদি।

৭) সাপেক্ষ সর্বনাম– একই বাক্যে ব্যবহৃত দুটি সর্বনামপদ যখন একটি আরেকটির উপর নির্ভরশীল হয়, তাদেরকে সাপেক্ষ সর্বনাম বলা হয়। যেমন- যে-সে, যারা-তারা, যাকে-তাকে ইত্যাদি।

৮) পারস্পরিক বা ব্যাতিহার সর্বনাম– পারস্পরিক সাহচর্যে কোনো কাজ সম্পন্ন হয়েছে এই অর্থে যে সর্বনাম পদ ব্যবহার করা হয় তাকে পারম্পরিক সর্বনাম বলে। যেমন- নিজেনিজেই, উভয়ে ইত্যাদি।

বিশেষ্য পদ সূচিপত্র বিশেষণ পদ

error: Content is protected !!