আফ্রিকা || Africa

আফ্রিকা– ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পত্রপুট‘ কাব্য থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন এবং অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

Africa by Rabindranath Tagore

Africa is a famous bengali poem written by Rabindranath Tagore. It is included in the syllabus of West Bengal Board of Secondary Education (WBBSE) Class Ten Bengali (first language). For short and long question from this story, read this post carefully.

রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের আফ্রিকা কবিতা
রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের আফ্রিকা কবিতা

আফ্রিকা

পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী মোট সাতটি কবিতা থেকে তিনটি ১ নম্বরের বহু বিকল্পীয় প্রশ্ন, চারটি ১ নম্বরের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, একটি ৩ নম্বরের সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং একটি ৫ নম্বরের রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। এখানে ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।

আফ্রিকাঃ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

১. স্রষ্টা নিজের প্রতি অসন্তোষে কী করেছিল?

উত্তর- স্রষ্টা নিজের প্রতি অসন্তোষে নতুন সৃষ্টিকে বারবার বিধ্বস্ত করছিল।

২. স্রষ্টা অধৈর্য হয়ে কী করেছিল? উত্তর- স্রষ্টা অধৈর্য হয়ে ঘনঘন মাথা নাড়ছিল।

৩. ‘শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে’ – কেমন করে?

উত্তর- বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায় তাণ্ডবের দুন্দুভিনিনাদে আপনাকে উগ্র করে শঙ্কাকে হার মানাতে চাচ্ছিল।

৪. ‘কালাে ঘােমটার নীচে’ কী ছিল?

উত্তর- কালো ঘোমটার নীচে আফ্রিকার মানবরূপ ঢাকা পড়েছিল।

৫. ‘এল ওরা লােহার হাতকড়ি নিয়ে’- লােহার হাতকড়ি দিয়ে কী করেছিল?

উত্তর- লোহার হাতকড়ি দিয়ে তারা আফ্রিকার নিরীহ মানুষদের দাস বানিয়েছিল।

৬. ‘এল মানুষ ধরার দল’ – এদের প্রকৃতি কেমন?

উত্তর- এরা ছিল সভ্যতার গর্বে অন্ধ এবং এদের নখ ছিল আফ্রিকার নেকড়ের নখের চেয়েও তীক্ষ্ণ।

৭. ‘নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতাকে’- কীভাবে?

উত্তর- আফ্রিকার সহজ সরল মানুষের উপর অকথ্য নির্যাতন করে ঔপনিবেশিক শক্তি নিজেদের নির্লজ্জ অমানুষতাকে প্রকাশ করেছিল।

৮. ‘পঙ্কিল হলাে ধূলি’- কীভাবে?

উত্তর- আফ্রিকার মানুষের রক্তে-অশ্রুতে পঙ্কিল হয়েছিল ধূলি।

৯. ‘সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়ায় পাড়ায়’- কী হচ্ছিল?

উত্তর- সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়ায় পাড়ায় মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘণ্টা। 

১০. কবির সংগীতে কী বেজে উঠেছিল?

উত্তর- কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল সুন্দরের আরাধনা।

আফ্রিকাঃ সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্ন

১) “সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি”- সেখানে বলতে কোন খানের কথা বলা হয়েছে? নিভৃত অবকাশে সে কী করছিল? ১+২

উত্তর- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশে ‘সেখানে’ বলতে ‘বনস্পতির নিবিড় পাহারায়’ স্থিত ‘কৃপণ আলোর অন্তঃপুরের’ কথা বলা হয়েছে।

নিভৃত অবকাশে সে অর্থাৎ আফ্রিকা দুর্গমের রহস্য সংগ্রহ করছিল এবং চিনে নিচ্ছিল জলস্থল ও আকাশের দুর্বোধ্য সংকেতগুলি। সেখানে সে ‘বিরূপের ছদ্দবেশে’ ভয়ংকরকে বিদ্রূপ করছিল এবং ‘বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়’ নিজেকে উগ্র করে ভয়কে হার মানাতে চাচ্ছিল।

২) “মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘণ্টা” – কোন্ মন্দিরের কথা বলা হয়েছে? সেখানে পূজার ঘণ্টা কেন বেজেছিল? ১+২

উত্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশে সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয়দের পাড়ায় পাড়ায় যে মন্দির রয়েছে, সেই মন্দিরের কথা বলা হয়েছে।

সাম্রাজ্যবাদীরা আফ্রিকার উপর অমানুষিক অত্যাচার করেছিল কিন্তু তাদের নিজের দেশে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখেছিল। ঔপনিবেশিক প্রভুদের পাড়ায় পাড়ায় মন্দিরে ঘন্টা-ধ্বনি অব্যাহত ছিল। সেখানে সকাল-সন্ধ্যায় দয়াময় দেবতার নামে পূজার ঘন্টা বাজত।

৩) “নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতাকে”- কারা এমন করেছিল? কীভাবে তারা তাদের অমানুষতা প্রকাশ করেছিল? ১+২

উত্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশে সভ্যতার মুখোশধারী সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয়দের কথা বলা হয়েছে। আফ্রিকায় এসে তারা তাদের ‘নির্লজ্জ অমানুষতাকে’ উন্মুক্ত করেছিল।

প্রাকৃতিক সম্পদের লোভে সাম্রাজ্যবাদীরা পশুর মতো আফ্রিকার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। একদিকে তারা দুহাত দিয়ে আফ্রিকার সম্পদ লুঠ করেছিল, আরেকদিকে তারা আফ্রিকার মানুষকে অকথ্য নির্যাতন করেছিল। এইভাবে, তারা তাদের অমানুষতা প্রকাশ করেছিল।

৪) “চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তােমার অপমানিত ইতিহাসে।”- কারা কীভারে চিরচিহ্ন দিয়ে গিয়েছিল? ১+২

উত্তর- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় কবি সংক্ষেপে আফ্রিকার ‘অপমানিত ইতিহাসের’ কথা তুলে ধরেছেন। আগ্রাসনকামী ইউরোপীয়রা আফ্রিকার অপমানিত ইতিহাসে চিরচিহ্ন দিয়ে গিয়েছিল।

মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আফ্রিকা একসময় সভ্য জগতের কাছে অবহেলিত ছিল। কিন্তু কালক্রমে লোভী সাম্রাজ্যবাদীদের চোখ পড়ে আফ্রিকার উপর। তারা সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ করে এবং নিরীহ-নিষ্পাপ মানুষকে অত্যাচার করে আফ্রিকার ইতিহাসকে লাঞ্ছিত করেছিল।

আফ্রিকাঃ রচনাধর্মী প্রশ্ন

১) “চিরচিহ্ন দিয়ে গেল। তােমার অপমানিত ইতিহাসে।”– ‘তােমার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তার ‘অপমানিত ইতিহাসের’ সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। ১+৪ [মাধ্যমিক ২০১৯]

২) “এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে”- ওরা কারা? ওরা আফ্রিকাতে কী কী করেছিল তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। ১+৪

(উপরের দুটি প্রশ্নের একই উত্তর হবে। শুধু শর্টগুলি আলাদা আছে। অর্থাৎ, ১ নাম্বারের প্রশ্নগুলির উত্তরগুলি আলাদা হবে। ৪ নাম্বারের উত্তরগুলি একই হবে।)

উত্তর- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশে ‘তোমার’ বলতে আফ্রিকার কথা বলা হয়েছে। (১ নং প্রশ্নের উত্তর।)

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশে ‘ওরা’ বলতে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের বোঝানো হয়েছে। (২ নং প্রশ্নের উত্তর।)

গভীর অরণ্য বেষ্টিত হওয়ায় আফ্রিকা একসময় সভ্য জগতের কাছে অবহেলিত ছিল। কিন্তু বিশ শতকের প্রথমার্ধে ইউরোপের শক্তিধর দেশগুলি আফ্রিকার বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদের কথা জানতে পারে। এরপরেই আফ্রিকা সাম্রাজ্যবাদীদের কু’নজরে পড়েছিল।

বাইরের জগতের কাছে ইউরোপীয়রা সভ্য এবং শিক্ষিত বলেই পরিচিত। কিন্তু আফ্রিকায় এসেই তারা সভ্যতার মুখোশ খুলে ফেলল। তারা দেখিয়ে দিল যে তারা কতটা লোভী, কতটা বর্বর। আফ্রিকার অরণ্যে যে নেকড়ে থাকে তার থেকেও তীক্ষ্ণ নখবিশিষ্ট সাম্রাজ্যবাদীর দল ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আফ্রিকার উপর। দুহাত দিয়ে আফ্রিকার সম্পদ লুঠ করার পাশাপাশি তারা আফ্রিকার সহজসরল মানুষদেরকে অকথ্য অত্যাচার করতে লাগল। তাদের রক্তে এবং চোখের জলে আফ্রিকার মাটি কর্দমাক্ত হয়ে উঠল।

আফ্রিকায় আগত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে কবি বলেছেন “মানুষ ধরার দল”। সভ্যতার গর্বে অন্ধ হয়ে তারা ভুলে গেল সাধারণ মনুষ্যত্বের কথা। তারা ‘লোহার হাতকড়ি নিয়ে’ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের বন্দি বানিয়ে ক্রীতদাস হিসেবে ইউরোপে চালান করতে লাগল। এইভাবে সাম্রাজ্যবাদীরা আফ্রিকা এবং তার সন্তানদের উপর অত্যাচার করে আফ্রিকার ইতিহাসকে অপমানিত করেছিল।

৩) “হায় ছায়াবৃতা” – ‘ছায়াবৃতা’ বলার কারণ কী? তার সম্পর্কে কবি কী বলেছেন সংক্ষেপে লেখাে। ১+৪ [২০১৭]

উত্তর– বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশে আফ্রিকাকে ছায়াবৃতা বলা হয়েছে। আফ্রিকার বুকে গভীর অরণ্য থাকায় সেখানে সূর্যের আলোও প্রবেশ করতে পারে না। সবসময় ছায়াচ্ছন্ন থাকে বলে কবি আফ্রিকাকে ছায়াবৃতা বলেছেন।

আলোচ্য কবিতায় কবি আফ্রিকার জন্মলগ্ন থেকে ঔপনিবেশিক শাসনকাল পর্যন্ত বিস্তৃত সময়কালকে তুলে ধরেছেন।

সৃষ্টির আদি লগ্নে রুদ্র সমুদ্রের বাহু প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল এবং তাকে স্থাপন করেছিল বনস্পতির নিবিড় পাহারায়, যেখানে আলোও প্রবেশ করে না। সেই নিরালায় বসে আফ্রিকা নিজেকে দুর্গম করে তুলছিল এবং প্রকৃতির সঙ্গে আত্মস্থ হয়ে জল, স্থল, আকাশের দুর্বোধ্য সংকেতগুলি আয়ত্ত করছিল। নিজেকে উগ্ররূপে সাজিয়ে সে ভয়ংকরকে বিদ্রূপ করেছিল এবং ভয়কেও হার মানিয়েছিল। এভাবে বহুকাল আফ্রিকা সভ্য জগতের কাছে অপরিচিত ছিল।

তারপর সেখানে এল সভ্যতার গর্বে অন্ধ ইউরোপীয় দুর্বৃত্তরা। কবির ভাষায় ‘মানুষ ধরার দল’। আফ্রিকার নেকড়ের চেয়েও তীক্ষ্ণ নখ নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আফ্রিকার উপর। সম্পদ লুঠ করার পাশাপাশি তারা আফ্রিকার সহজ সরল মানুষগুলোকে ক্রীতদাস বানিয়ে ইউরোপে পাচার করেছিল। এইভাবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আফ্রিকার ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছিল।

বাংলা গল্প ও প্রবন্ধ

বাংলা কবিতা ও নাটক

error: Content is protected !!