অভিষেক– ‘অভিষেক’ কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘মেঘনাদবধ’ মহাকাব্য থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে ‘অভিষেক’ কবিতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন এবং অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
Abhishek by Madhusudan Dutta
Abhishek is a bengali poem written by Madhusudan Dutta. It is included in the syllabus of West Bengal Board of Secondary Education (WBBSE) Class Ten Bengali (first language). For short and long question from this story, read this post carefully.
অভিষেক
পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী মোট সাতটি কবিতা থেকে তিনটি ১ নম্বরের বহু বিকল্পীয় প্রশ্ন, চারটি ১ নম্বরের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, একটি ৩ নম্বরের সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং একটি ৫ নম্বরের রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। এখানে ‘অভিষেক’ কবিতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।
অভিষেকঃ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১. ‘ছদ্দবেশী অম্বুরাশি-সুতা’- ‘অম্বুরাশি-সুতা’ কার ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল?
উঃ ‘অম্বুরাশি-সুতা’ অর্থাৎ দেবী লক্ষী মেঘনাদের ধাত্রী প্রভাষা রাক্ষসীর ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল।
২. ‘কহ দাসে লঙ্কার কুশল।’- উদ্দিষ্ট ব্যক্তি বক্তাকে লঙ্কার কোন খবর দিয়েছিলেন?
উঃ উদ্দিষ্ট ব্যক্তি অর্থাৎ ছদ্দবেশী লক্ষীদেবী বক্তা মেঘনাদকে লঙ্কার যে খবর দিয়েছিলেন তা হল, ঘোরতর যুদ্ধে বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে।
৩. ‘এ অদ্ভুত বারতা, জননী/কোথায় পাইলে তুমি,’ – কোন্ অদ্ভুত বার্তার কথা বলা হয়েছে?
উঃ অদ্ভুত বার্তাটি হল, ঘোরতর যুদ্ধে মেঘনাদের প্রিয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে।
৪. ‘হা ধিক্ মােরে’ – বক্তা নিজেকে ধিক্কার জানিয়েছে কেন?
উঃ বক্তা অর্থাৎ মেঘনাদ নিজেকে ধিক্কার জানিয়েছে কারণ শত্রুর দল তার জন্মভূমি অর্থাৎ লঙ্কা ঘিরে ফেলেছে, অথচ সে তখন ‘বামাদল মাঝে’ আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত।
৫. ‘এই কি সাজে আমারে’ – তাকে কী সাজে না?
উঃ উদ্ধৃতাংশের বক্তা মেঘনাদের মতে, স্বদেশ যখন বিপন্ন তখন নারীসান্নিধ্যে অবসর যাপন করা তাকে সাজে না।
৬. ‘মায়াবী মানব/সীতাপতি’ – সীতাপতিকে ‘মায়াবী মানব’ কেন বলা হয়েছে?
উঃ সীতাপতি রামচন্দ্র মরে গিয়েও পুনরায় বেঁচে উঠেছিল বলে তাকে ‘মায়াবী মানব’ বলা হয়েছে।
৭. ‘ধরি পতি-কর-যুগ’ – পতির কর-যুগল ধরে কী বলেছিল?
উঃ পতির কর-যুগল ধরে প্রমীলা বলেছিল যে, তাকে রেখে তার প্রাণসখা কোথায় চলে যাচ্ছেন।
৮. ‘বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী।’ – কেন এই অনুনয়?
উঃ মেঘনাদ রাঘবকে বধ করার জন্য লঙ্কায় ফিরে যাচ্ছিল। সেইজন্য তার প্রিয়তমা স্ত্রী প্রমীলার কাছে অনুনয়সহ বিদায় চেয়েছিল।
৯. ‘কাঁপিলা লঙ্কা, কাঁপিলা জলধি।’ – কী কারণে লঙ্কাপুরী ও জলধি কেঁপেছিল?
উঃ মেঘনাদ রাগে তার ধনুকের শিঞ্জিনী টেনে যে ‘টংকার’ (টং ধ্বনি) ছেড়েছিল, তার ফলেই লঙ্কা এবং সমুদ্র কেঁপে উঠেছিল।
১০. ‘এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি!’ – কোন্ মায়ার কথা বলা হয়েছে?
উঃ রামচন্দ্র মরে গিয়েও আবার বেঁচে উঠেছিল। আলোচ্য অংশে এই মায়ার কথা বলা হয়েছে।
১১. ‘হায়, বিধি বাম মম প্রতি।’ – কেন এই উক্তি?
উঃ মহাপরাক্রমী রাবণকে সামান্য বনচারী রামের কাছে কার্যত হার স্বীকার করতে হয়েছে। এইজন্য বক্তা অর্থাৎ রাবণের মনে হয়েছে যে বিধাতা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
১২. ‘এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।’ – কোন্ কলঙ্কের কথা বলা হয়েছে?
উঃ পুত্র মেঘনাদের বর্তমানে পিতা রাবণ যুদ্ধ করতে গেছেন- এটা মেঘনাদের কাছে কলঙ্কের মতো।
১৩. ‘তায় আমি জাগানু অকালে’- এর ফল কী হয়েছিল?
উঃ যাকে অকালে জাগানো হয়েছিল সেই কুম্ভকর্ণ বলী রাঘবের হাতে পরাস্ত ও নিহত হয়েছে এবং তার দেহ সমুদ্রতীরে ভূপতিত রয়েছে।
১৪. ‘আগে পূজ ইষ্টদেবে’ – কেন ইষ্টদেবকে আগে পূজা করতে বলা হয়েছে?
উঃ যুদ্ধযাত্রার আগে ইষ্টদেবের আশীর্বাদ নিতে হয়। সেইজন্য ইষ্টদেবকে আগে পূজা করতে বলা হয়েছে।
১৫. ‘অভিষেক করিলা কুমারে।’ – কুমারকে কী দিয়ে অভিষিক্ত করা হয়েছিল?
উঃ বিধি অনুসারে গঙ্গাজল দিয়ে কুমারকে অর্থাৎ মেঘনাদকে অভিষিক্ত করা হয়েছিল।
অভিষেকঃ সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্ন
১)- “জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া”- কাকে ‘মহাবাহু’ বলা হয়েছে? তার বিস্ময়ের কারণ কী? ১+২
উত্তর- মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে রাবণপুত্র মেঘনাদকে ‘মহাবাহু’ বলা হয়েছে।
ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশে লক্ষীদেবী আসেন মেঘনাদের কাছে। তাঁর কাছে মেঘনাদ লঙ্কার সংবাদ জানতে চাইলে তিনি বলেন যে রামের সঙ্গে যুদ্ধ করে তার প্রিয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে। এই খবর শুনেই মেঘনাদ বিস্মিত হয়েছিল। তার বিস্ময়ের কারণ এটাই যে যার সঙ্গে যুদ্ধ করে বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে সেই রামচন্দ্রকে মেঘনাদ নিজের হাতে সংহার করেছিল।
২) “হায়, বিধি বাম মম প্রতি।” – কার উক্তি? এমন উক্তির কারণ কী? ১+২
উত্তর- মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে রাক্ষসরাজ রাবণ একথা বলেছিলেন।
‘বিধি বাম’ বলতে বোঝায় বিধাতা অসন্তুষ্ট হওয়া। আসলে, রাক্ষসাধিপতি রাবণ তার প্রধানতম শত্রু রাম-লক্ষণের কাছে ক্রমশ পরাভূত হচ্ছিলেন। অথচ, শত্রুদল তার বা মেঘনাদের বীরত্বের তুলনায় একেবারেই নগণ্য ছিল। মেঘনাদ ইতিপূর্বে রামকে সংহার করেছিল। কিন্তু দৈবকৃপায় তারা পুনরায় জীবিত হয়ে বীরবাহু এবং কুম্ভকর্ণকে বধ করেছিল। এইজন্য রাবণ বলেছেন যে বিধাতা তার প্রতি অসন্তুষ্ট।
৩)- “হাসিবে মেঘবাহন”- ‘মেঘবাহন’ কে? তিনি হাসবেন কেন? ১+২
উত্তর- মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে ‘মেঘবাহন’ বলতে দেবরাজ ইন্দ্রকে বোঝানো হয়েছে।
দেবরাজ ইন্দ্র হলেন স্বর্গরাজ্যের অধীশ্বর। ইন্দ্রকে জয় করেই মেঘনাদ ইন্দ্রজিৎ উপাধি পেয়েছিল। সুতরাং মেঘনাদ যে একজন মহাপরাক্রমশালী যোদ্ধা এবিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ ছিল না। মেঘনাদের মতে, সে যদি নিজে যুদ্ধে না গিয়ে বৃদ্ধ পিতা রাবণকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠায়, তাহলে দেবরাজ ইন্দ্র হাসাহাসি করবেন।
৪) “এ অদ্ভুত বারতা”- কোন বার্তার কথা বলা হয়েছে? বক্তার কাছে বার্তাটি অদ্ভুত কেন? ১+২
উত্তর- মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদকে ‘অদ্ভুত বার্তা’ বলা হয়েছে।
রামের সঙ্গে যুদ্ধ করে বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু প্রমীলার কাছে আসার আগেই মেঘনাদ রামকে হত্যা করে এসেছিল। মৃত মানুষ যদি পুনরায় জীবিত হয়ে ওঠে, তাহলে আশ্চর্য হওয়ায় স্বাভাবিক। সেইজন্য বক্তা অর্থাৎ মেঘনাদের কাছে এই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ অদ্ভুত বলে মনে হয়েছিল।
৫) “করযোড়ে কহিলা”- উদ্দিষ্ট ব্যক্তি করজোড় করে কী বলেছিল? ৩
উত্তর- মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে মেঘনাদ হাতজোড় করে তার পিতা রাক্ষসরাজ রাবণকে বলেছিল যে সে শুনেছে রাম নাকি মরে আবার বেঁচে উঠেছে। সে বলেছিল যে এই মায়া সে বুঝতে পারেনি কিন্তু তাকে যদি অনুমতি দেওয়া হয় তবে রামকে সমূলে নির্মূল করবে।
কীভাবে শত্রুনিধন করা হবে সেকথাও রাবণকে বলেছিল মেঘনাদ। অগ্নিবাণ নিক্ষেপ করে রামকে ভস্ম করে বায়ুবাণ দিয়ে সেই ভস্ম উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল সে। অথবা, জীবিত অবস্থায় তাকে বেঁধে এনে ফেলত রাক্ষসরাজের চরণে।
অভিষেকঃ রচনাধর্মী প্রশ্ন
১) “নমি পুত্র পিতার চরণে, করজোড়ে কহিলা;” – পিতা ও পুত্রের পরিচয় দাও। পাঠ্যাংশ অবলম্বনে পিতা ও পুত্রের কথােপকথন নিজের ভাষায় লেখাে। ১+8
উত্তর- মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশে পিতা ও পুত্র হলেন যথাক্রমে রাক্ষসরাজ রাবণ এবং মেঘনাদ।
আলোচ্য অংশে পিতাপুত্রের মধ্যে যে কথপোকথন হয়েছিল তা এইরকম-
মেঘনাদ বলল যে, সে শুনেছে রাম নাকি মরে গিয়ে আবার বেঁচে উঠেছে। সে এই মায়া বুঝতে পারেনি কিন্তু তাকে অনুমতি দেওয়া হলে সে আবার সকলকে সমূলে নির্মূল করার কথা বলে।
রাবণ জানায় যে এই প্রাণঘাতী যুদ্ধে বারবার তার প্রিয় পুত্র মেঘনাদকে পাঠাতে ইচ্ছে করে না। বিধাতা তার প্রতি বিমুখ হয়েছেন বলেই রাম মরেও বেঁচে উঠেছে।
মেঘনাদ রাক্ষসরাজকে বলে যে রামের মতো সামান্য একজন মানুষকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। মেঘনাদ আরো বলে যে, তার বর্তমানে যদি লঙ্কেশ্বর রাবণকে যুদ্ধে যেতে হয় তবে দেবরাজ ইন্দ্র হাসবেন এবং আরাধ্য দেব অগ্নি ক্রোধিত হবেন।
রাক্ষসরাজ এবার মেঘনাদকে মহাবলী কুম্ভকর্ণের করুণ পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন যে মেঘনাদ যদি একান্তই যুদ্ধ করতে যেতে চায় তবে সে যেন নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে গিয়ে ইষ্টদেবের পুজো করে। তিনি আরো বলেন যে, মেঘনাদকে তিনি সেনাপতি পদে বরণ করবেন এবং সূর্য যেহেতু অস্তাচলগামী, তাই সে যেন সকালে যুদ্ধ করতে যায়।
২) ‘অভিষেক’ কবিতা অনুসারে মেঘনাদের চরিত্র বিশ্লেষণ করো। ৫
উত্তর- মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ অনুসারে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিতের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি হল এইরকম-
দেশপ্রেমিক- মেঘনাদ একজন যথার্থ দেশপ্রেমিক। ছদ্মবেশী লক্ষীদেবীকে দেখা মাত্রই সে জিজ্ঞাসা করেছিল- “কহ দাসে লঙ্কার কুশল”। তার অনুপস্থিতিতে শত্রুর দল স্বর্ণলঙ্কা ঘিরে ফেলেছে- এই খবর শোনা মাত্রই সে লঙ্কায় ফিরে যেতে চেয়েছিল। ব্যক্তিগত সুখের চেয়ে তার কাছে প্রিয় ছিল তার দেশ। তাই লঙ্কার বিপদের সময় সে ‘বামাদল মাঝে’ থাকার জন্য নিজেকে ধিক্কার জানিয়েছিল।
পিতৃভক্তি- লঙ্কায় ফিরে মেঘনাদ যখন দেখল যে তার পিতা অর্থাৎ রাক্ষসরাজ রাবণ যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন মেঘনাদ নিজেই রামের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি চেয়েছিল। তাছাড়া, তার মতো একজন সক্ষম পুত্রের বর্তমানে যদি রাক্ষসরাজ রাবণ যুদ্ধক্ষেত্রে যান সেটা মেঘনাদের পক্ষে লজ্জাজনক। তার এইরকম মনোভাব থেকে তার আত্মসম্মান বোধেরও পরিচয় পাওয়া যায়।
সাহসী- রাম এবং তার বানরসেনা কুম্ভকর্ণ এবং বীরবাহুর মতো বীর যোদ্ধাদের নিধন করেছিল। তা সত্বেও মেঘনাদ স্বেচ্ছায় যুদ্ধ করতে যেতে চেয়েছিল। শুধু তাই নয়, সেই যুদ্ধে জয়লাভের ব্যাপারেও সে নিশ্চিত ছিল।
দায়িত্বশীল- প্রমীলার কাছে বিদায় নেওয়ার সময় সে তার লঙ্কাযাত্রার কারণ বলেছিল- “সমরে নাশি, তোমার কল্যাণে/ রাঘবে”। অর্থাৎ, তার স্ত্রীর (এবং সমস্ত রাক্ষসকূলের) মঙ্গলার্থে রামকে বধ করার জন্যই সে প্রমীলাকে রেখে লঙ্কায় যেতে উদ্যত হয়েছিল।
এছাড়াও মেঘনাদের চরিত্রের আরেকটি দিক হল গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা। ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশে লক্ষীদেবীকে যেমন সে প্রণাম করেছিল তেমনি লঙ্কায় ফিরেই পিতা রাক্ষসরাজ রাবণকে প্রণাম নিবেদন করেছিল।
৩) ‘হেনকালে প্রমীলা সুন্দরি’- ‘হেনকালে’ বলতে কোন সময়ের কথা বলা হয়েছে? সেই সময় কী ঘটেছিল তা সংক্ষেপে লেখো। ১+৪
উত্তর- মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশে ‘হেনকালে’ বলতে মেঘনাদ যখন লঙ্কায় ফিরে যাওয়ার জন্য রথে চেপেছিল, সেই সময়ের কথা বলা হয়েছে।
স্বামীর দুটি হাত ধরে প্রমীলা সুন্দরী জানতে চেয়েছিল যে তাকে রেখে মেঘনাদ কোথায় যাচ্ছে। সে বলে যে, মেঘনাদকে ছাড়া সে বাঁচতে পারবে না। নিজেকে ব্রততীর সঙ্গে তুলনা করে প্রমীলা একটি উপমার সাহায্যে নিজের দুঃখের কথা তুলে ধরেছিল। প্রমীলা বলেছিল যে, গভীর অরণ্যপথে বনলতা যদি হাতির পায়ে জড়িয়ে যায় এবং সেই হাতি বনলতার রসিকতায় মন না দিয়ে নিজের পথে এগিয়ে চলে, তবুও লতাকে সে পায়ে জড়িয়ে রাখে। নিজেকে মেঘনাদের দাসী বলে পরিচয় দিয়ে প্রমীলা জিজ্ঞাসা করেছিল সে কেন তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
এর উত্তরে মেঘনাদ জানিয়েছিল যে, প্রমীলা তাকে যে দৃঢ় বন্ধনে বেঁধেছে সেই বন্ধন কেউ খুলতে পারবে না। শীঘ্রই ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেঘনাদ প্রমীলাকে বলেছিল যে তার (প্রমীলার) কল্যাণার্থে রামকে বধ করতেই সে যাচ্ছে। এই বলে মেঘনাদ তার প্রিয় পত্নীর কাছে বিদায় চেয়েছিল।
৪) ‘অভিষেক’ কবিতার স্বল্প পরিসরে রাক্ষসরাজ রাবণের চরিত্রের যে দিকগুলি উদ্ভাসিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখ।
উত্তর- মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের প্রধান চরিত্র যদিও মেঘনাদ, তবে রাবণ চরিত্রটিও স্বমহিমায় উজ্জ্বল। আলোচ্য পাঠ্যাংশের ক্ষুদ্র পরিসরে রাক্ষসরাজ রাবণের চরিত্রের দিকগুলি ফুটে উঠেছে সেগুলি হল-
বীরত্ব- লঙ্কাধিপতি রাবণ নিঃসন্দেহে একজন বীর যোদ্ধা ছিলেন। তার যোগ্যতম পুত্র মেঘনাদের অনুপুস্থিতিতে তিনি নিজেই যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। ইতিপূর্বে রামের সঙ্গে যুদ্ধ করে তার প্রিয় পুত্র বীরবাহু এবং প্রিয় ভাই মহাবলী কুম্ভকর্ণ প্রাণ হারিয়েছিল। আপনজনদের হারিয়ে রাবণ ভেঙে পড়েছিলেন ঠিকই কিন্তু শত্রুনিধনের উদ্দেশ্যে যথার্থ বীরের মতো রণসজ্জায় সজ্জিত হয়েছিলেন।
পুত্রস্নেহ- লঙ্কায় ফিরে আসার পর মেঘনাদ রামের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যেতে চেয়েছিল। মেঘনাদের বীরত্বের প্রতি রাবণের কোনো সন্দেহ ছিল না কিন্তু সেই ‘কাল সমরে’ বার বার নিজের প্রিয় পুত্রকে তার মন সায় দেয়নি।
সামরিক জ্ঞান- মেঘনাদ যখন একান্তই রামের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চেয়েছিল, রাবণ তাকে বলেছিলেন পরের দিন সকালে যেতে। কারণ, সেদিন সূর্য ছিল অস্তাচলগামী।
ঈশ্বরে ভক্তি- রাবণ মেঘনাদকে যুদ্ধযাত্রার আগে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবের পূজা করতে বলেছিলেন। এর থেকে তার ঈশ্বরভক্তির পরিচয় পাওয়া যায়।
পরিশেষে বলা যায়, বাল্মীকি রামায়ণে রাক্ষসরাজ রাবণ একজন খলচরিত্র হলেও আলোচ্য কাব্যাংশে রাবণের মানবিক দিকটির পরিচয় পাওয়া যায়।
৫) “সাজিলা রথীন্দ্রর্ষভ”- ‘রথীন্দ্রর্ষভ’ কে? তার সাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। ১+৪
উত্তর- মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে মেঘনাদকে ‘রথীন্দ্রর্ষভ’ বলা হয়েছে।
আলোচ্য কাব্যাংশে মেঘনাদের সাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে। ছদ্মবেশী লক্ষীদেবীর কাছে কনকলঙ্কার দুরবস্থার কথা শুনে মেঘনাদ লঙ্কায় ফিরে যেতে উদ্যত হয়েছিল। তাছাড়া, সে শুনেছিল যে তার পিতা রাক্ষসরাজ রাবণ নিজে যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সে চায়নি যে তার বর্তমানে তার পিতা যুদ্ধক্ষেত্রে যান। তাই রামের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য সে বীরের অলঙ্কারে সজ্জিত হয়েছিল। কবি দুটি ভিন্ন উপমার সাহায্যে মেঘনাদের রণসজ্জার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সেগুলি হল-
১) হৈমবতীর পুত্র কার্তিক তারকাসুরকে বধ করার জন্য যেমন সেজেছিল, মেঘনাদও তেমন সেজেছিল।
২) বিরাট রাজার পুত্র সহ গোধন উদ্ধার করার জন্য বৃহন্নলার ছদ্মবেশধারী অর্জুন শমী গাছের তলায় যেমন সেজেছিল, মেঘনাদের সাজও ছিল তেমন।
যাইহোক, বীরসজ্জায় সজ্জিত হয়ে মহারথী মেঘনাদ তার প্রিয় রথে চড়েছিল। তার মেঘবর্ণ রথের চাকায় যেন বিজলির ছটা, মাথায় রামধনু রঙের পতাকা এবং রথের বাহক ঘোড়াগুলি ছিল দ্রুতগতিসম্পন্ন।