‘..জেগে উঠিলাম’- তাৎপর্য

রূপনারানের কূলে

বড় প্রশ্ন (মান-৫)

প্রশ্ন-  “রূপনারানের কুলে/ জেগে উঠিলাম”- ‘রূপনারান’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? এই জেগে ওঠার তাৎপর্য নিজের ভাষায় লেখ। ১+৪

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি কবিজীবনের অন্তিম লগ্নে লিখিত দার্শনিক ভাবসমৃদ্ধ একটি কবিতা। রবীন্দ্রদর্শন অনুযায়ী, রূপ হল দৃশ্যমান এই জগৎ; অন্যভাবে বললে, জগতের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সকল বস্তুই হল রূপ। এই কবিতায় কবি ‘রূপনারান’ বলতে দৃশ্যমান তথা ইন্দ্রিয়গোচর জগতসংসারকে বুঝিয়েছেন।

রূপনারানের কূলে

কবিতার শুরুতেই কবি বলেছেন “রূপনারানের কূলে জেগে উঠিলাম”। সাধারণভাবে এই কথাটির অর্থ হল, রূপনারান নদীবক্ষে ভ্রমণ করার সময় কবি নিদ্রিত ছিলেন এবং কূলের কাছাকাছি এসে কবির নিদ্রাভঙ্গ ঘটল। কিন্তু এই আক্ষরিক অর্থের পাশাপাশি পঙক্তিটির একটি অন্তর্নিহিত অর্থ রয়েছে। ‘রূপনারান’ এখানে কোন নদী নয় বরং দৃশ্যমান এই পৃথিবীকে কবি ‘রূপনারান’ বলেছেন। কিন্তু সরাসরি কোন নদীর কথা না বললেও কথাটির মধ্যে নদীর নির্যাস রয়েছে আর সেখানেই কথাটির তাৎপর্য লুকিয়ে রয়েছে।

কবি-সাহিত্যিকগণ প্রায়শই সময়ের ধারাকে বহতা নদীর সাথে তুলনা করে থাকেন। আলোচ্য অংশে সময়ের স্রোতে জীবনের পথচলাই হল রূপনারানের বক্ষে কবির ভ্রমণ। আবার জীবন স্বভাবতই মোহময় হয় কিন্তু জীবনের শেষপ্রান্তে মানুষের মোহমুক্তি ঘটে। “রূপনারানের কুলে জেগে ওঠা” বলতে কবি ইঙ্গিত করেছেন জীবনের শেষপ্রান্তে উপনীত হয়ে পার্থিব জগতের মোহমুক্তি এবং আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ।

error: Content is protected !!