মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা বীরাঙ্গনা পত্রকাব্যের একাদশ সর্গ “নীলধ্বজের প্রতি জনা” কবিতা থেকে বড় প্রশ্নের উত্তর।
শ্রেণি- একাদশ|| কবিতা- নীলধ্বজের প্রতি জনা|| বড় প্রশ্ন (মান-৫) [WBCHSE Class 11 Bengali Poem Nilodhwojer Proti Jona]
প্রশ্নঃ ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ কবিতায় জনার চরিত্র বিশ্লেষণ কর। ৫
উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা অন্যতম সেরা কাব্য হল ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’। এই কাব্যের শেষতম কবিতা হল ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’। জনা নীলধ্বজ রাজার পত্নী এবং প্রবীরের মা। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় পরিচয় হল জনা একজন বীরাঙ্গনা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই জনা চরিত্রটি বিচার করলে যুক্তিযুক্ত হবে।
১) প্রেরণাদাত্রীঃ ব্যাপক অর্থে বীরাঙ্গনা শব্দের অর্থ হল পুরুষের প্রেরণাদাত্রী। জনার একমাত্র পুত্র প্রবীরকে অসম যুদ্ধে হত্যা করেছে অর্জুন। কিন্তু রাজা নীলধ্বজ অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ না করে মিত্রতা করেছেন। জনা ভেবেছে যে তার স্বামী হতবুদ্ধি হয়েছেন, তাই ভুল করে অর্জুনকে নরনারায়ন মনে করে পুজো করছেন। এই অবস্থায় জনা নানাভাবে নীলধ্বজকে প্রেরণা জুগিয়েছে যাতে তিনি অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। জনা নানা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করে দেয় যে অর্জুন ভগবান তো নয়ই এমনকি বীর যোদ্ধাও নয়। একজন ক্ষত্রিয় রাজার কী করা উচিত সেকথা জনা বারবার মনে করিয়ে দিয়ে নীলধ্বজকে জাগানোর চেষ্টা করেছে। তাই জনা প্রেরণাদাত্রী।
২) শ্রেষ্ঠা সুন্দরীঃ সাধারণ অর্থে বীরাঙ্গনা হল শ্রেষ্ঠা সুন্দরী রমনী। তবে এই সৌন্দর্য শুধু বাইরের নয়- অন্তরের সৌন্দর্যও। জনার ক্ষেত্রে এই সৌন্দর্যগুলি হল-
ক। মাতৃসত্তাঃ পুত্র প্রবীরের জন্য মমত্ববোধ, তাকে হারিয়ে জনার হাহাকার এবং বীরের মতো লড়াই করেছে বলে মাতৃত্বের অহঙ্কার- এসবই জনার মাতৃত্বের পরিচায়ক।(অথবা, জনার মধ্যে মাতৃত্বের ভাবটি প্রবল। প্রবীরকে সে প্রাণের চেয়ে বেশি স্নেহ করত। পুত্রকে হারিয়ে জনার মনে হয়েছে এই পৃথিবী বোধহয় জনশুন্য হয়েগেছে। প্রবীর বীরের মতো লড়াই করেছে বলেও জনা গর্ববোধ করেছে।)
খ। মহত্তঃ একমাত্র পুত্রের মৃত্যু জনা মেনে নিয়েছে কারণ জন্মিলেই মৃত্যু হবে।
গ। প্রতিবাদীঃ কিন্তু স্বামীর আচরণ জনা মেনে নিতে পারেনি। সে কূলবধু তাই পরাধীন। কিন্তু তাই বলে চুপচাপ স্বামীর এই অন্যায়কে মেনে নেয় নি। জাহ্নবীর জলে আত্মবিসর্জন দিয়ে সে সব অপমানের যোগ্য প্রতিবাদ করেছে।