রূপনারানের কূলে
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
প্রশ্ন- “মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে”- ‘সকল দেনা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? সে দেনা কীভাবে শোধ করতে চেয়েছিলেন কবি? [২+৩]
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবির দার্শনিক ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে পথচলা, সেই দীর্ঘ পথচলাকে কবি রূপকের আশ্রয়ে তুলে ধরেছেন।
কবির মতে, মানবজীবন সর্বদা দুঃখময়। মানুষ সারাজীবন ধরে দুঃখের তপস্যা করে। এই তপস্যা চলতে থাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। কবি বলেছেন, “আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এই জীবন”। তবে এই তপস্যার ফল কিন্তু স্বাদু হয়। তপস্যা করেই ‘সত্যের দারুণ মূল্য’ লাভ করা যায়। ইহজীবনে মানুষ যাকিছু লাভ করে অর্থাৎ ধনদৌলত, মান-যশ ইত্যাদি সবই হল সত্যের দেওয়া একেকটি উপহার। আবার, জীবনে চলার পথে আমরা যেসব পার্থিব জিনিস অর্জন করে থাকি, সেসবই হল জীবনের কাছে আমাদের দেনা বা ঋণ। প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে কবি এই দেনার কথাই বলেছেন।
মৃত্যুতেই জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। অন্যভাবে বললে, জন্মের পর থেকে যে পথচলা শুরু হয়, মৃত্যুতেই তার পূর্ণবিরতি। জন্মের সময় মানুষ যেমন একাই আসে, মৃত্যুর সময়েও তাকে একাই ফিরে যেতে হয়। সারাজীবন ধরে দুঃখের কঠোর তপস্যা করে সে যাকিছু অর্জন করে, সেইসব পার্থিব জিনিস ফেলে রেখেই তাকে চলে যেতে হয়। তাই কবি মৃত্যুর মাধ্যমে সেই দেনা শোধ করতে চেয়েছিলেন। (শব্দসংখ্যা- ১৬০)