বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস || একাদশ শ্রেণী
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ। বাংলা গদ্যের বিকাশে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান। একাদশ শ্রেণির বাংলা।
প্রশ্নঃ বাংলা গদ্যের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা কর। ৫
উত্তর- যদিও বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছিল খ্রিস্টীয় দশম শতকে কিন্তু খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত বাংলা সাহিত্য ছিল কাব্যময়। কিছু চিঠিপত্রে এবং দলিল দস্তাবেজে বাংলা গদ্যের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। খ্রিষ্টান মিশনারীগণ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে কিছু বাংলা গদ্য রচনা করেছিলেন। তবে বাংলা গদ্যসাহিত্যের প্রথম সার্থক শিল্পী ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন একাধারে সমাজ সংস্কারক, শিক্ষা সংস্কারক এবং সর্বোপরি একজন লেখক। বাংলা ভাষায় গদ্য সাহিত্যের ভান্ডার সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি বেশ কিছু সাহিত্য অনুবাদ করেছিলেন। সেগুলি হলো ‘শকুন্তলা’, ‘সীতার বনবাস’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’, ‘বাংলার ইতিহাস’, ‘মহাভারতের উপক্রমণিকা’ প্রভৃতি।
বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যাসাগর মহাশয় কয়েকটি শিক্ষামূলক গ্রন্থ রচনা রচনা করেছিলেন। সেগুলি হল ‘বর্ণপরিচয়’, ‘কথামালা’, ‘চরিতাবলী’, ‘আখ্যানমঞ্জরী’ প্রভৃতি।
সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্যে বিদ্যাসাগর কিছু গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। সেগুলি হল ‘বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’, ‘বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার’ প্রভৃতি। ছদ্মনামে রচিত তাঁর গ্রন্থগুলি হল ‘অতি অল্প হইল’, ‘আবার অতি অল্প হইল’ প্রভৃতিও বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন সংস্কৃত ভাষার বিদগ্ধ পন্ডিত। ভাষা বিষয়ক তাঁর একটি মৌলিক রচনা হল ‘সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব’। তাঁর অন্যান্য রচনাগুলির মধ্যে যোগ্য হল উল্লেখযোগ্য হলো ‘রত্নপরীক্ষা’, ‘ব্রজবিলাস’ ‘প্রভাবতী সম্ভাষণ’ এবং আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘বিদ্যাসাগর চরিত’ (অসমাপ্ত)।
পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলা গদ্যের যথার্থ শিল্পী যার হাত ধরে বাংলা সাধু গদ্যের বিকাশ হয়েছিল। পরবর্তীকালের বাংলা গদ্য সাহিত্য তাঁর অনুসৃত পথেই প্রবাহিত হয়েছিল।
সাহিত্যের আধুনিক যুগঃ অন্যান্য প্রশ্নোত্তর