বাংলা সমাসঃ অতসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
আলোচ্য পোস্টে বাংলা ব্যকরণের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ‘সমাস’ থেকে পঞ্চাশটি অতিসংক্ষিপ্ত (Short Answer type Question) প্রশ্নোত্তর দেওয়া হল. প্রশ্নগুলি বিগত বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এবং টেস্ট পেপার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিটি প্রশ্ন মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন- নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১) ‘সপ্তাহ’ শব্দটির ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখ।
উত্তর– সপ্তাহ= সপ্ত অহের সমাহার, সমাহার দ্বিগু।
২) সমাস পদটির ব্যুৎপত্তি নির্ণয় কর।
উত্তর– সমাস= সম- √অস+অ।
৩) কোন সমাসের সমস্যমান পদ দিয়ে ব্যাসবাক্য করা যায় না?
উত্তর– নিত্য সমাসের ক্ষেত্রে শুধু সমস্যমান পদ দিয়ে ব্যাসবাক্য করা যায় না, অন্য কোনো পদ আমদানি করতে হয়।
৪) পলান্ন শব্দটির ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখ।
উত্তর– পলান্ন= পল মিশ্রিত অন্ন, মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস।
৫) ‘জগদীশ’ শব্দটির ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখ।
উত্তর– জগদীশ= জগতের ঈশ, সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস।
৬) সমাসের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর– পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুই বা তার বেশি পদের মিলনকে বলা হয় সমাস।
৭) অলোপ সমাস কাকে বলে?
উত্তর– যে সমাসে সমস্যমান পদের বিভক্তিচিহ্ন সমাসবদ্ধ পদে লোপ পায় না, সেই সমাসকে অলোপ সমাস বলা হয়।
৮) একটি অলোপ সমাসের উদাহরণ দাও।
উত্তর– হাতে-পায়ে= হাতে ও পায়ে, অলোপ দ্বন্দ্ব সমাস।
৯) অলোপ সমাস মূলত কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তর– অলোপ সমাস মূলত তিন প্রকার। যথা- অলোপ দ্বন্দ্ব, অলোপ তৎপুরুষ এবং অলোপ বহুব্রীহি।
১০) উপমান কর্মধারয় সমাসের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর– কাজলকালো= কাজলের মতো কালো, উপমান কর্মধারয় সমাস।
১১) উপমিত কর্মধারয় সমাসের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর– করপল্লব= কর পল্লবের ন্যায়, উপমিত কর্মধারয় সমাস।
১২) রূপক কর্মধারয় সমাসের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর– মনমাঝি= মন রূপ মাঝি, রূপক কর্মধারয় সমাস।
১৩) উপমিত কর্মধারয় সমাস এবং রূপক কর্মধারয় সমাসের প্রধান পার্থক্য কী?
উত্তর– উপমিত কর্মধারয় সমাসে উপমান এবং উপমেয়বাচক পদের মধ্যে সাদৃশ্য কল্পনা করা হয়, কিন্তু রূপক কর্মধারয় সমাসে উপমান ও উপমেয়বাচক পদের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয়।
১৪) বহুব্রীহি কথাটির আভিধানিক অর্থ কী?
উত্তর– বহুব্রীহি= বহু হয়েছে ব্রীহি (ধান) যার।
১৫) কোন সমাসে পূর্বপদের প্রাধান্য দেখা যায়?
উত্তর– সাধারণত অব্যয়ীভাব সমাসে পূর্বপদের প্রধান লক্ষ্য করা যায়।
১৬) কোন সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়?
উত্তর– তৎপুরুষ এবং কর্মধারয় সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়।
১৭) কোন সমাসে সমস্যমান পদের অর্থ প্রাধান্য পায়?
উত্তর– দ্বন্দ্ব সমাসে উভয় সমস্যমান পদেরই অর্থ প্রাধান্য পায়।
১৮) কোন সমাসে সমস্যমান পদদুটির কোনোটিরও অর্থ প্রাধান্য পায় না?
উত্তর- বহুব্রীহি সমাসে সমস্যমান পদদুটির কোনোটিরও অর্থ প্রাধান্য পায় না।
১৯) ‘সেতার’ শব্দটির ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখ।
উত্তর– সেতার= সে (তিন) তার যার, সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি।
২০) ‘দম্পতি’ শব্দটির ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখ।
উত্তর– দম্পতি= জায়া ও পতি, দ্বন্দ্ব সমাস।
২১) একটি মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ দাও।
উত্তর– মীনাক্ষী= মীনের অক্ষীর ন্যায় সুন্দর অক্ষী যার।
২২) সমানাধিকরণ বহুব্রীহি বলতে কী বোঝো?
উত্তর– যে বহুব্রীহি সমাসে সমস্যমান পদগুলি একই বিভক্তি যুক্ত হয় (সাধারণত শূন্য বিভক্তি), তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি বলে। যেমন, গৌর অঙ্গ যার= গৌরাঙ্গ।
২৩) উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলতে কী বোঝো?
উত্তর– যে তৎপুরুষ সমাসে কৃদন্ত পদের সঙ্গে উপপদের মিলন ঘটে, তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন, অন্ধকার= অন্ধ করে যে।
২৪) ব্যাপ্তি তৎপুরুষ সমাসের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর– চিরস্থায়ী= চিরকাল ব্যাপিয়া স্থায়ী, ব্যাপ্তি তৎপুরুষ সমাস।
২৫) ক্রিয়া-বিশেষণ তৎপুরুষ সমাসের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর– আধমরা= আধ-ভাবে মরা, ক্রিয়া-বিশেষণ তৎপুরুষ।
২৬) অভাব অর্থে অব্যয়ীভাব সমাসের প্রয়োগ দেখাও।
উত্তর– হাভাতে= ভাতের অভাব।
২৭) নৈকট্য অর্থে অব্যয়ীভাব সমাসের প্রয়োগ দেখাও।
উত্তর– উপকূল= কূলের সমীপে।
২৮) সাদৃশ্য অর্থে অব্যয়ীভাব সমাসের প্রয়োগ দেখাও।
উত্তর– প্রতিমূর্তি= মূর্তির সদৃশ্য।
২৯) ক্ষুদ্র অর্থে অব্যয়ীভাব সমাসের প্রয়োগ দেখাও।
উত্তর– উপবন= ক্ষুদ্র বন।
৩০) তদ্ধিতার্থক দ্বিগু সমাসের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর– তিনকড়ি= তিন কড়ি মূল্যে ক্রীত, তদ্ধিতার্থক দ্বিগু সমাস।
৩১) সমস্যমান পদ বলতে কী বোঝো?
উত্তর– যে পদগুলি মিলিত হয়ে সমাসবদ্ধ পদ গঠন করে, তাদেরকে সমস্যমান পদ বলে।
৩২) সমাসবদ্ধ পদ বলতে কী বোঝো?
উত্তর– সমস্যমান পদগুলি মিলিত হয়ে যে পদটি গঠন করে, তাকে সমাসবদ্ধ পদ বলে।
৩৩) সমাসবদ্ধ পদের অপর নাম কী?
উত্তর– সমাসবদ্ধ পদের অপর নাম সমস্তপদ।
৩৪) ব্যাসবাক্য বলতে কী বোঝো?
উত্তর– যে বাক্য দিয়ে সমাসবদ্ধ পদকে ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করা হয় তাকে ব্যাসবাক্য বলে।
৩৫) সহার্থক বহুব্রীহি সমাসের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর– সাবধান= অবধানের সহিত বর্তমান, সহার্থক বহুব্রীহি।
৩৬) না-বাচক বহুব্রীহি সমাসের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর– অনর্থক= নাই অর্থ যার, না-বাচক বহুব্রীহি।
৩৭) ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলতে কী বোঝো?
উত্তর– যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্যমান পদগুলি ভিন্ন বিভক্তিযুক্ত হয়, তাকে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন- বীণাপাণি= বীণা পাণিতে যার।
৩৮) ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখ- হাতাহাতি।
উত্তর– হাতাহাতি= হাতে হাতে যে লড়াই, ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস।
৩৯) অনুষ্ঠানবাচক বহুব্রীহি সমাসের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর– গায়েহলুদ= গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে।
৪০) ব্যাসবাক্যের অপর নাম কী?
উত্তর– ব্যাসবাক্যের অপর নাম হল বিগ্রহবাক্য।
৪১) ‘মিঠেকড়া’ শব্দটির ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখো।
উত্তর– মিঠেকড়া= মিঠে অথচ কড়া, সাধারণ কর্মধারয় সমাস।
৪২) দুটি বিপরীত শব্দ যোগে গঠিত দ্বন্দ্ব সমাসের উদাহরণ দাও।
উত্তর– দিনরাত= দিন ও রাত, দ্বন্দ্ব সমাস।
৪৩) নিত্য সমাস কাকে বলে?
উত্তর– যে সমাসের সাধারণত ব্যাসবাক্য হয়না এবং ব্যাসবাক্য করতে হলে নতুন পদ আমদানি করতে হয়, তাকে নিত্য সমাস বলে। যেমন, জন্মান্তর= অন্য জন্ম, নিত্য সমাস।
৪৪) ‘নির্লজ্জ’ শব্দটির ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখো।
উত্তর– নির্লজ্জ= নাই লজ্জা যার, না-বহুব্রীহি সমাস।
৪৫) ‘দ্বিগু’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ কী?
উত্তর– দ্বিগু= দ্বি (দুই) গরুর মূল্যে ক্রীত, তদ্ধিতার্থক দ্বিগু সমাস।
৪৬) সন্ধি ও সমাসের একটি পার্থক্য লেখো।
উত্তর– সন্ধি হল বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলন আর সমাস হল দুই বা তার বেশি পদের মিলন।
৪৭) ভাষায় সমাস কী ভূমিকা পালন করে থাকে?
উত্তর– ১) সমাস দুই বা তার বেশি শব্দকে একপদে পরিণত করে ভাষা সংক্ষিপ্ত করে এবং ২) ভাষার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
৪৮) সমাস বিষয়টি ব্যাকরণের কোন আলোচনার অন্তর্গত?
উত্তর– সমাস বিষয়টি ব্যাকরণের ‘নতুন পদ গঠন’ সংক্রান্ত আলোচনার অন্তর্গত।
৪৯) একশেষ দ্বন্দ্ব সমাস বলতে কী বোঝো?
উত্তর– দুই বা তার বেশি একবচনাত্মক সর্বনাম পদ সমাসবদ্ধ হয়ে বহুবচনাত্মক সর্বনামের রূপ ধারণ করলে তাকে একশেষ দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
৫০) দুটি বিশেষণ পদ যোগে গঠিত একটি কর্মধারয় সমাসের উদাহরণ দাও।
উত্তর– কাঁচামিঠে= কাঁচা অথচ মিঠে, সাধারণ কর্মধারয় সমাস।