বিশেষণ পদ
সূচিপত্র
যে সকল পদ অন্যান্য পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, পরিমাণ, মাত্রা ইত্যাদি প্রকাশ করে তাদেরকে বলা হয় বিশেষণ পদ। বিশেষণ পদ বাক্যের অন্যান্য পদকে বিশেষিত করে থাকে। ইংরেজি গ্রামের Adjective বলতে যা বোঝায়, বাংলা ব্যাকরণে সেটাই বিশেষণ পদ। যেমন- ‘রাম ভালো কিন্তু রিমা খারাপ’ এই বাক্যে ‘ভালো’ পদটি রামকে বিশেষিত করছে এবং ‘খারাপ’ পদটি রিমাকে বিশেষিত করছে। তাই ‘ভালো’, ‘খারাপ’ পদদুটি বিশেষণ পদ।
বিশেষণের শ্রেণি বিভাগ
বিশেষণ পদকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা: ১) নাম বিশেষণ ২) বিশেষণের বিশেষণ এবং ৩) ক্রিয়া-বিশেষণ।
নাম বিশেষণ
যে সকল বিশেষণ পদ বিশেষ্য পদ এবং সর্বনাম পদের দোষ, গুণ, অবস্থা ইত্যাদি প্রকাশ করে তাদেরকে নাম বিশেষণ বলা হয়। নাম বিশেষণ মূলতঃ এইগুলি-
১) বিশেষ্যের বিশেষণ – যে বিশেষণ পদ কোনাে বিশেষ্য পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ প্রভৃতি প্রকাশ করে তাকে বিশেষ্যের বিশেষণ বলা হয়। যেমন-
সুন্দর বাড়ি, পুরোনো দলিল, ভাঙা রাস্তা, গভীর সমুদ্র, দামি ঘড়ি, ছেঁড়া জামা, নতুন পত্রিকা ইত্যাদি।
২) সর্বনামের বিশেষণ- যে বিশেষণ পদ সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে তাকে সর্বনামের বিশেষণ বলা হয়। যেমন-
– তুমি অধম বলে আমি উত্তম হব না কেন?
– আমি কালো বলেই তুমি ফর্সা।
– সে পাপ করেছে তাই সে পাপী।
৩) সম্বন্ধ বিশেষণ- সম্বন্ধ পদ যখন কোনো বিশেষ্য পদকে বিশেষিত করে তখন তাকে সম্বন্ধ বিশেষণ বলা হয়। যেমন-
– গরুর দুধ পুষ্টিকর।
– রবি ঠাকুরের কবিতা আমার প্রিয়।
– ভেঙে পড়ল কাঁচের ঘর।
৪) উপাদানবাচক বিশেষণ – যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ্য পদের উপাদান নির্দেশ করে, তাকে উপাদানবাচক বিশেষণ বলা হয়। যেমন-
– কিনে দে রেশমি চুড়ি।
– পিচ রাস্তার কোণে একটি বটগাছ।
– প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ।
৫) সংখ্যাবাচক বিশেষণ – যে বিশেষণ পদ বিশেষ্যপদের সংখ্যা নির্দেশ করে, তাকে সংখ্যাবাচক বিশেষণ পদ বলা হয়। যেমন-
– সাত দিন ঘরে থাকবো।
– এক ভদ্রলোক এসেছিলেন।
– সাত মহাদেশে বিভক্ত আমাদের পৃথিবী।
৬) ক্রমবাচক বা পূরণবাচক বিশেষণ- যে বিশেষণপদ বিশেষ্যপদের কোনাে ক্ৰম নির্দেশ করে তাকে পূরণবাচক বা ক্রমবাচক বিশেষণ বলা হয়। যেমন-
– সে তার বাবামায়ের পঞ্চম সন্তান।
– প্লুটো আর নবম গ্রহ নয়।
– দিয়া পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
৭) পরিমাণবাচক বা মাত্রাবাচক বিশেষণপদ- যে বিশেষণ পদ বিশেষ্য পদের পরিমাণ বা মাত্রা নির্দেশ করে, তাকে পরিমাণবাচক বা মাত্রাবাচক বিশেষণ বলা হয়। যেমন-
– প্রচুর খাবার খেয়ে ফেলেছি।
– অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
– আজ স্কুলে অনেক ছাত্রছাত্রী এসেছে।
৮) অবস্থাবাচক বিশেষণ- যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ্য পদের বিশেষ অবস্থাকে তুলে ধরে তাকে অবস্থাবাচক বিশেষণ বলা হয়। যেমন-
– ঘুমন্ত শিশুকে জাগিও না।
– ফুটন্ত ভাতের গন্ধ উচ্ছবকে উতলা করে।
– অনশনরত নেতারা ফলের রস খাচ্ছেন।
৯) সর্বনামীয় বিশেষণপদ : যখন কোনাে সর্বনাম পদ বিশেষ্য পদের বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়, তাকে সর্বনামীয় বিশেষণপদ বলা হয়। অন্যভাবে বললে, সর্বনাম পদজাত বিশেষণ পদকে সর্বনামীয় বিশেষণ বলে। যেমন-
– মদীয় বাসভবনে নিমন্ত্রণ রইল।
– তদীয় গৃহে অবস্থান করিবেন।
– স্বীয় মস্তকে বহন করিলেন।
১০) অব্যয়জাত বিশেষণ- যে বিশেষণ পদ অব্যয় পদ থেকে জাত হয় তাকে অব্যয়জাত বিশেষণ বলা হয়। যেমন-
– আচ্ছা লোকটি পেয়েছ।
– বেশ বাড়িটি বানিয়েছ।
১১) ধ্বন্যাত্মক বিশেষণ- ধ্বন্যাত্মক শব্দ যদি বিশেষণ হিসেবে ভূমিকা পালন করে তবে তাকে ধ্বন্যাত্মক বিশেষণ বলা হয়। যেমন-
– ঝমঝম বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হল বজ্রবিদ্যুৎ।
– তোমার রিনরিনে গলা আমার চেনা।
– নদীর কুলুকুলু ধ্বনি কানে এল।
বিশেষণের বিশেষণ
যে বিশেষণ পদ কোনাে বিশেষণপদের পরিমাণ বা মাত্রা ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণের বিশেষণপদ বলা হয়। অন্যভাবে বললে, যে বিশেষণ পদ অপর কোনো বিশেষণ পদকে বিশেষিত করে তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে। যেমন-
– সে খুব ভালো গান গায়।
– গাঢ় নীল আকাশের দিকে চেয়ে।
– তিনি অত্যন্ত উদার প্রকৃতির মানুষ।
ক্রিয়া-বিশেষণ
যে বিশেষণ পদ কোনাে ক্রিয়াপদের পরিমাণ, অবস্থা, মাত্রা ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলা হয়। ইংরেজিতে Adverb বলতে যা বোঝায়, বাংলা ব্যাকরণে তাকেই ক্রিয়া-বিশেষণ বলে। যেমন-
– একলা চলো রে।
– তুমি দ্রুত চলে এসো।
– ছেলেটি জোরে চিৎকার করছে।