সন্ধি
সূচিপত্র
পরস্পর সন্নিহিত দুই ধ্বনির মিলনকে বলা হয় সন্ধি। যেমন- জল + আশয়= জলাশয়। কথাকে সংক্ষিপ্ত করার জন্য ব্যাকরণে সন্ধির প্রয়োজন হয়। ব্যাকরণে আরো একটি বিষয় আছে যেখানে দুই বা তার বেশি পদের মিলন ঘটে। সেটা হল সমাস। কিন্তু সমাস আর সন্ধি সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। এই প্রসঙ্গে সমাসের সঙ্গে সন্ধির পার্থক্যগুলি জেনে রাখা প্রয়োজন।
সন্ধি বনাম সমাস
প্রথমত, সন্ধিতে বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলন ঘটে কিন্তু, সমাসে পদের সঙ্গে পদের মিলন হয়।
দ্বিতীয়ত, সন্ধিতে অর্থ-সম্পর্ক বড় কথা নয় কিন্তু সমাসের ক্ষেত্রে অর্থ-সম্পর্কটাই আসল। পরস্পর সন্নিহিত দুটি পদের মধ্যে অর্থ সম্পর্ক না থাকলে সমাস হয় না।
তৃতীয়ত, সন্ধিতে সন্ধিবদ্ধ পদগুলির অর্থ অপরিবর্তিত থাকে কিন্তু, সমাসের ক্ষেত্রে অর্থ পরিবর্তিত হতেও পারে।
চতুর্থত, সন্ধিতে পদের ক্রম বজায় থাকে কিন্তু, সমাসে কখনও কখনও পদের ক্রম পরিবর্তিত হয়।
সন্ধির প্রকারভেদ
সন্ধি মূলত তিন রকম। যথাঃ ১) স্বরসন্ধি ২) ব্যঞ্জনসন্ধি এবং ৩) বিসর্গসন্ধি। এই তিন প্রকার সন্ধি ছাড়াও আরেকরকম সন্ধি হয়ে থাকে। তাকে বলা হয় নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি। কয়েকটি সাধারণ সূত্র মেনে সন্ধি হয়ে থাকে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক বিভিন্ন প্রকার সন্ধির নিয়মাবলি।
স্বরসন্ধি
স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনকে বলা হয় স্বরসন্ধি। যেমন- মহা+ আশয়= মহাশয়। নীচে তৎসম শব্দের স্বরসন্ধির কয়েকটি সূত্র তুলে ধরা হল-
[সূত্র ১] অ-কার কিংবা আ-কারের পর অ-কার কিংবা আ-কার থাকলে উভয়ে মিলে আ-কার হয় এবং তা পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন-
[অ+অ= আ] হিত+অহিত=হিতাহিত।
[অ+আ= আ] দেব+আলয়=দেবালয়।
[আ+অ= আ] কথা+অমৃত =কথামৃত।
[আ+আ= আ] সদা+আনন্দ=সদানন্দ।
[সূত্র ২] অ-কার কিংবা আ-কারের পর ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে এ-কার হয় এবং তা পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়।যেমন-
[অ+ই= এ] নর+ইন্দ্র= নরেন্দ্র।
[অ+ঈ= এ] নর+ঈশ= নরেশ।
[আ+ই= এ] যথা+ইষ্ট= যথেষ্ট।
[আ+ঈ= এ] মহা+ঈশ= মহেশ।
[সূত্র ৩] অ-কার কিংবা আ-কারের পর উ-কার কিংবা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ও-কার হয় এবং তা পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনে যুক্ত হয়। যেমন-
[অ+উ= ও] হিত+উপদেশ= হিতোপদেশ।
[অ+ঊ= ও] গৃহ+ঊর্ধ্ব= গৃহোর্ধ্ব।
[আ+উ= ও] যথা+উচিত= যথোচিত।
[আ+ঊ= ও] গঙ্গা+ঊর্মি=গঙ্গোর্মি।
[সূত্র ৪] অ-কার কিংবা আ-কারের পর ঋ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ‘অর্’ হয়। যেমন-
[অ+ঋ= অর্] দেব+ঋষি=দেবর্ষি।
[আ+ঋ= অর্] মহা+ঋষি = মহর্ষি।
[ ব্যতিক্রম:- অ-কার কিংবা আ-কারের সঙ্গে পরপদে কাতর অর্থে ‘ঋত’-শব্দ থাকলে ‘অর্’ না হয়ে ‘আর’ হয়। যেমন- (অ+ঋ=আর্) ভয়+ঋত= ভয়ার্ত, (আ+ঋ=আর্) ক্ষুধা +ঋত= ক্ষুধার্ত ইত্যাদি।]
[সূত্র ৫] অ-কার কিংবা আ-কারের পর এ-কার কিংবা ঐ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঐ-কার হয়। যেমন-
[অ+এ=ঐ] সর্ব+এব= সর্বৈব।
[অ+ঐ =ঐ] রাজ+ঐশ্বর্য= রাজৈশ্বর্য।
[আ+এ =ঐ] সদা+এব= সদৈব।
[আ+ঐ=ঐ] মহা+ঐশ্বর্য= মহশ্বৈর্য।
[সূত্র ৬] অ-কার কিংবা আ-কারের পর ও-কার কিংবা ঔ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঔ-কার হয়। যেমন-
[অ+ও= ঔ] বন+ওষধি= বনৌষধি।
[অ+ঔ= ঔ] পরম+ঔষধ= পরমৌষধ।
[আ+ও= ঔ] মহা+ওষধি= মহৌষধি।
[আ+ঔ= ঔ] মহা+ঔষধ= মহৌষধ।
[সূত্র ৭] ই-কার কিংবা ঈ-কারের পর ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে দীর্ঘ ঈ-কার হয়। যেমন-
[ই+ই=ঈ] গিরি+ইন্দ্র= গিরীন্দ্র
[ই+ঈ=ঈ] গিরি+ঈশ= গিরীশ
[ঈ+ই=ঈ] সতী+ইন্দ্র= সতীন্দ্র
[ঈ+ঈ=ঈ] সতী+ঈশ= সতীশ
[সূত্র ৮] ই-কার কিংবা ঈ-কারের পর ই ও ঈ ভিন্ন অন্য স্বর থাকলে ই বা ঈ আনে ‘য’ (বা য-ফলা) হয়। যেমন-
[ই+অ=য্] অতি+অন্ত= অত্যন্ত।
[ই+আ=য্] অতি+আচার= অত্যাচার।
[ই+উ=য্] অতি+উক্তি=অত্যুক্তি।
[ই+ঊ=য্] প্রতি+ঊষ= প্রত্যূষ।
[ই+এ=য্] প্রতি+এক= প্রত্যেক।
[ঈ+আ=য্] মসী+আধার= মস্যাধার।
[ঈ+অ=য্] নদী+অম্বু= নদ্যম্বু।
[সূত্র ৯] উ-কার কিংবা ঊ-কারের পর উ-কার কিংবা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঊ-কার হয়। ঊ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জন ধ্বনির সাথে যুক্ত হয়। যেমন :
[উ+উ=ঊ] কটু+উক্তি= কটূক্তি।
[উ+ঊ=ঊ] লঘু+ঊর্মি= লঘূর্মি।
[ঊ+উ=ঊ] বধূ+উক্তি= বধূক্তি।
[ঊ+ঊ=ঊ] ভূ+ঊর্ধ্ব= ভূর্ধ্ব।
[সূত্র ১০] উ-কার বা ঊ-কারের পর উ-কার ও ঊ-কার ভিন্ন অন্য স্বর থাকলে উ বা ঊ স্থানে ব-ফলা হয়। যেমন-
[উ+অ=ব] পশু+অধম= পশ্বধম।
[উ+আ=ব] পশু+আচার= পশ্বাচার।
[উ+ই=ব] অনু+ইত= অন্বিত।
[উ+ঈ=ব] তনু+ঈ= তন্বী।
[উ+এ=ব] অনু+এষণ= অন্বেষণ।
[সূত্র ১১] ঋ-কারের পর ঋ ভিন্ন অন্য স্বর থাকলে ‘ঋ’ স্থানে ‘র’ হয় এবং সেটি র-ফলা রূপে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন-
পিতৃ+আলয়= পিত্রালয়।
পিতৃ+আদেশ= পিত্রাদেশ।
পিতৃ+ইচ্ছা= পিত্রিচ্ছা।
মাতৃ+ আদেশ= মাত্রাদেশ।
[সূত্র ১২] প্রথম শব্দের শেষে ‘এ’ বা ‘ঐ’ ধ্বনি এবং দ্বিতীয় শব্দের শুরুতে ‘অ’ ধ্বনি থাকলে তাদের মিলনে যথাক্রমে ‘অয়’, ‘আয়’ হয়। যেমন :
[এ+অ=অয়] নে+অন=নয়ন।
[ঐ+অ=আয়] নৈ+অক=নায়ক
[সূত্র ১৩] প্রথম শব্দের শেষে ও বা ঔ ধ্বনি এবং দ্বিতীয় শব্দের শুরুতে ‘অ’ ধ্বনি থাকলে তাদের মিলনে যথাক্রমে অব্ ও আব্ হয়।
[ও+অ=অব] পো+অন=পবন।
[ঔ+অ= আব্] পৌ+অক=পাবক।
[সূত্র ১৪] প্রথম শব্দের শেষে ও ধ্বনি এবং দ্বিতীয় শব্দের শুরুতে ‘আ’, ‘ই’, ‘এ’ ধ্বনি থাকলে তাদের মিলনে যথাক্রমে অবা, অবি ও অবে হয়।
[ও+আ= অবা] গো+আদি=গবাদি।
[ও+ই= অবি] পো+ইত্র=পবিত্র।
[ও+এ= অবে] গো+এষণা=গবেষণা।
[সূত্র ১৫] প্রথম শব্দের শেষে ‘ঔ’ ধ্বনি এবং দ্বিতীয় শব্দের শুরুতে ‘ই’, ‘উ’ ধ্বনি থাকলে তাদের মিলনে যথাক্রমে ‘আবি’, ‘আবু’ ও ‘অবে’ হয়।
[ঔ+ই= আবি] নৌ+ইক=নাবিক
[ঔ+উ= আবু] ভৌ+উক=ভাবুক
ব্যঞ্জনসন্ধি
স্বরধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনির, ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির অথবা ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনির মিলনকে বলা হয় ব্যঞ্জনসন্ধি। নীচে বিভিন্ন প্রকার ব্যঞ্জনসন্ধির সূত্রসহ উদাহরণ তুলে ধরা হল।
স্বরধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনির
[সূত্র ১] অ/আ/ই/উ+ছ = চ্ছ
পূর্ণ+ছেদ= পূর্ণচ্ছেদ
প্র+ছদ= প্রচ্ছদ
প্ৰ+ছায়া= প্রচ্ছায়া
ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির
[সূত্র- ক,ট,ত,প+স্বরধ্বনি= গ,ড,দ,ব]
বাক্+ঈশ্বরী= বাগীশ্বরী।
ষট+আনন= ষড়ানন।
জগৎ+অম্বা= জগদম্বা।
সুপ্+অন্ত= সুবন্ত।
ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনির
[সূত্র ১] প্রথম শব্দের শেষে বর্গের প্রথম ধ্বনি এবং দ্বিতীয় শব্দের শুরুতে বর্গের তৃতীয় বা চতুর্থ ধ্বনি বা য, র্, ল্,ব্, হ্ ধ্বনি থাকলে প্রথম ধ্বনির জায়গায় তৃতীয় ধ্বনি হয়। যেমন-
বাক্+জাল= বাগ্জাল।
দিক্+বিদিক= দিগ্বিদিক।
ষট্+ যন্ত্র= ষড়যন্ত্র।
ষট্+ ভূজ= ষড়ভূজ।
ষট্+ দর্শন= ষড়দর্শন।
উৎ+ ঘাটন= উদ্ঘাটন।
সৎ+ ভাব= সদ্ভাব।
উৎ+ যোগ= উদ্যোগ।
[সূত্র ২] ত্, দ্+ চ্/ ছ্ = চ্চ/ চ্ছ
সৎ+চিন্তা=সচ্চিন্তা।
উৎ+ চারণ= উচ্চারণ।
উৎ+ছেদ=উচ্ছেদ।
বিপদ+ছায়া=বিপচ্ছায়া।
[সূত্র ৩] ত্, দ্ + জ্/ ঝ্ = জ্জ/ জ্ঝ
সৎ+জন= সজ্জন।
উৎ+ জীবন= উজ্জীবন।
বিপদ+জাল= বিপজ্জাল।
তদ+জন্য= তজ্জন্য।
কুৎ+ঝটিকা= কুজ্ঝটিকা।
তদ+ ঝঙ্কার= তজ্ঝঙ্কার।
[সূত্র ৪] ত্, দ্+ শ= চ্ছ
উৎ+শ্বাস= উচ্ছ্বাস।
চলৎ+শক্তি= চলচ্ছক্তি।
উৎ+শৃঙ্খল= উচ্ছৃঙ্খল।
[সূত্র ৫] ত্, দ্+ হ= দ্ধ
তদ+হিত= তদ্ধিত।
উৎ+হৃত= উদ্ধৃত।
পদ+হতি= পদ্ধতি।
[সূত্র ৬] ত্, দ্+ ল= ল্ল
উৎ+ লাস= উল্লাস।
উৎ+ লিখিত= উল্লিখিত।
তদ+ লোক= তল্লোক।
[সূত্র ৭] ত্, দ্+ ন/ম= ন্ন/ন্ম
জগৎ+ নাথ= জগন্নাথ
উৎ+ মেষ= উন্মেষ
তদ+নিমিত্ত= তন্নিমিত্ত
তদ+ময়= তন্ময়
মৃৎ+ ময়= মৃন্ময়
চিৎ+ ময়= চিন্ময়
[সূত্র ৮] ক্+ন/ম= ঙ<ক (ক থেকে ঙ হয়)
বাক্+ ময়= বাঙময়।
দিক্+ নাগ= দিঙ্নাগ।
দিক্+ মন্ডল= দিঙ্মন্ডল।
[সূত্র ৯] ম্+ ত, থ, দ, ধ, ন= ন্< ম্
গম্+ তব্য= গন্তব্য।
সম্+ দেশ= সন্দেশ।
সম্+ ধান= সন্ধান।
সম্+ ন্যাসী= সন্ন্যাসী।
[সূত্র ১০] চ, ছ, জ, ঝ+ ম্= ঞ্ < ম্
কিম্+ চিৎ= কিঞ্চিৎ
সম্+ জয়= সঞ্জয়
[সূত্র ১১] চ্, জ্+ ন্= ঞ্ <ন্
যাচ্+না= যাচ্ঞা।
রাজ্+ নী= রাজ্ঞী।
[সূত্র ১২] ম্+ ক, গ, য, ও, ল, ব,শ, ষ, স, হ =ং (ম্ -এর জায়গায় অনুস্বার হয়।)
শম্+কর= শংকর
সম্+গত= সংগত
সম্+যম= সংযম
সম্+যোগ= সংযোগ
সম্+বাদ= সংবাদ
সম্+রক্ষণ= সংরক্ষণ
সম্+লাপ= সংলাপ
সম্+শয়= সংশয়
সম্+সার= সংসার
সম্+হার= সংহার
সম্+হতি= সংহতি
[সূত্র ১৩] ষ্+ত্, থ্= যথাক্রমে ট্, ঠ্
কৃষ্+তি= কৃষ্টি।
বৃষ্+তি= বৃষ্টি।
ষষ্+ থ= ষষ্ঠ।
[সূত্র ১৪] উৎ+ স্থা= ত্থা
উৎ+স্থাপন= উত্থাপন।
উৎ+ স্থান= উত্থান।
উৎ+ স্থাপক= উত্থাপক।
বিসর্গ সন্ধি
বিসর্গের সঙ্গে স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জনধ্বনির মিলনকে বলা হয় বিসর্গসন্ধি। যথা: নিঃ + রব = নীরব, দুঃ + অবস্থা= দুরবস্থা। এবারে দেখে নেওয়া যাক বিসর্গসন্ধির কিছু নিয়ম।
[সূত্র-১] প্রথম শব্দের শেষে যদি অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ যুক্ত থাকে(অঃ) এবং দ্বিতীয় শব্দের প্রথম ধ্বনিটি যদি বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ বা পঞ্চম ব্যঞ্জনধ্বনি হয় বা কোনো অন্তঃস্থ ব্যঞ্জনধ্বনি হয় বা হ ধ্বনি থাকে তবে প্রথম শব্দের ‘অ’ ধ্বনিটি ‘ও’ হয় এবং ও-কার হিসেবে আগের ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন-
অধঃ + মুখ = অধােমুখ।
অকুতঃ + ভয় = অকুতােভয়।
তিরঃ + ধান = তিরােধান।
মনঃ + বাসনা = মনােবাসনা।
শিরঃ + ধার্য = শিরােধার্য।
মনঃ + রম = মনােরম।
[সূত্র-২] বিসর্গের পর ‘ত’ ধ্বনি থাকলে উভয়ে মিলে ‘স্ত’ হয়।
নিঃ + তেজ = নিস্তেজ।
নিঃ+ তরঙ্গ= নিস্তরঙ্গ।
নিঃ+ তার= নিস্তার।
দুঃ+ তর= দুস্তর।
[সূত্র-৩] বিসর্গের পরে ‘চ’ থাকলে ‘শ্চ’ হয় এবং ‘ছ’ থাকলে ‘শ্ছ’ হয়।
দুঃ + চিন্তা = দুশ্চিন্তা
নিঃ + চয় = নিশ্চয়
নিঃ + চিন্ত = নিশ্চিন্ত
নিঃ + ছিদ্র = নিশ্ছিদ্র
শিরঃ+ ছেদ= শিরশ্ছেদ
[সূত্র-৪ ] ই বা উ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ যুক্ত থাকলে পরের শব্দের প্রথম ধ্বনিটি যদি ক্, খ্, ট্, ঠ্, প্, ফ্ ধ্বনি থাকলে বিসর্গের স্থানে ‘ষ্’ হয়। যেমন-
নিঃ + কাম = নিষ্কাম।
নিঃ + কৃতি = নিম্কৃতি।
ধনুঃ+ টঙ্কার= ধনুষ্টঙ্কার।
নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর।
নিঃ + প্রয়ােজন = নিষ্প্রয়ােজন।
ভ্রাতুঃ + পুত্রী = ভ্রাতুষ্পুত্রী।
নিঃ + ফল = নিষ্ফল।
[সূত্র ৫] অ বা আ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ যুক্ত থাকলে পরের শব্দের প্রথম ধ্বনিটি যদি ক্, খ্, প্, ফ্ ধ্বনি থাকলে বিসর্গের স্থানে ‘স্’ হয়। যেমন-
মনঃ + কামনা = মনস্কামনা।
তিরঃ + কার = তিরস্কার।
পুরঃ + কার = পুরস্কার।
[সূত্র- ৬] বিসর্গের পর স্বরধ্বনি থাকলে বিসর্গের স্থানে করা হয়।
অন্তঃ + আত্মা = অন্তরাত্মা।
নিঃ + অতিশয় = নিরতিশয়।
নিঃ + আকার = নিরাকার।
নিঃ + আনন্দ = নিরানন্দ।
নিঃ + ঈহ = নিরীহ।
নিঃ + আমিষ = নিরামিষ।
পুনঃ + অপি = পুনরপি।
পুনঃ + আবিষ্কার = পুনরাবিষ্কার।
নিঃ + অবধি = নিরবধি।
দুঃ + আত্মা = দুরাত্মা।
নিঃ + অঙ্কুশ = নিরঙ্কুশ।
নিঃ + উদ্বেগ = নিরুদ্বেগ।
[সূত্র-৭] বিসর্গের (র্-জাত বিসর্গ) সঙ্গে বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ধ্বনির বা অন্তঃস্থ ব্যঞ্জনধ্বনির বা ‘হ’ ধ্বনির মিলনে র্ হয় এবং দ্বিতীয় শব্দের প্রথমে থাকা ব্যঞ্জনের সঙ্গে রেফ আকারে যুক্ত হয়।
নিঃ + মােহ = নির্মোহ
অন্তঃ + লীন = অন্তর্লীন
অন্তঃ + গত = অন্তর্গত
নিঃ + লােভ = নির্লোভ
পুনঃ + বার = পুনর্বার
দুঃ + দান্ত = দুর্দান্ত
[সূত্র-৮] র্-জাত বিসর্গের সঙ্গে র্-ধ্বনির মিলনে বিসর্গের জন্য উচ্চার্য র্-ধ্বনিটি লোপ পায় এবং পূর্ববর্তী হ্রস্বস্বরটি দীর্ঘস্বর হয়ে যায়।
নিঃ+ রোগ= নীরোগ।
নিঃ+ রস= নীরস।
নিঃ+ রব= নীরব।
নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি
এমন কিছু সন্ধি হয় যেগুলি সন্ধির সাধারণ নিয়মের মধ্যে পড়ে না। নিয়ম বহির্ভূত এসমস্ত সন্ধিকে বলা হয় নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি। নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি স্বরসন্ধি হতে পারে, ব্যঞ্জনসন্ধি হতে পারে, এমনকি বিসর্গসন্ধিও হতে পারে।
নিপাতনে সিদ্ধ স্বরসন্ধি
প্র + ঊঢ় = প্রৌঢ়
অক্ষ + ঊহিনী = অক্ষৌহিণী
কুল+অটা= কুলটা
গো+অক্ষ= গবাক্ষ
প্র+ঊঢ়= প্রৌঢ়
অন্য+অন্য= অন্যোন্য
মার্ত+ অণ্ড = মার্তণ্ড
সম+ অর্থ = সমর্থ
সীমন্+ অন্ত = সীমন্ত
স্ব + ঈর= স্বৈর
দশ + ঋণ= দশার্ণ
শুদ্ধ + ওদন = শুদ্ধোদন
বিম্ব+ওষ্ঠ= বিম্বোষ্ঠ
নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জনসন্ধি
গাে + পদ = গােষ্পদ।
দিব্ + লােক = দ্যুলােক।
বন + পতি = বনস্পতি।
আ + পদ = আম্পদ।
এক+দশ= একাদশ।
বন্+পতি= বনস্পতি।
বৃহৎ+পতি= বৃহস্পতি।
তৎ+কর= তস্কর।
পর+পর= পরস্পর।
মনস্+ঈষা= মনীষা।
ষট্+দশ= ষোড়শ।
এক্+দশ= একাদশ।
পতৎ+অঞ্জলি= পতঞ্জলি।
নিপাতনে সিদ্ধ বিসর্গসন্ধি
অহঃ+পতি= অহর্পতি/অহস্পতি।
অহঃ+নিশ=অহর্নিশ।
অহঃ+অহঃ=অহরহ।
মমোঃ (মনস্) + ঈষা = মনীষা।
খাঁটি বাংলা সন্ধি
সংস্কৃত সন্ধির সূক্ষ্ম নিয়ম না মেনে, উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাংলা শব্দের মুখে মুখে যে সন্ধি হয়, তাকে খাঁটি বাংলা সন্ধি বলা হয়। যেমন-
বার+ এক= বারেক।
শত+ এক = শতেক।
নিন্দা+ উক= নিন্দুক।
লাঠি+ আল= লাঠিয়াল। (বাংলা স্বরসন্ধি)
রাত+ দিন= রাদ্দিন।
বট+ গাছ= বড়গাছ।
নাত্+ জামাই= নাজ্জামাই।
বদ্+ জাত= বজ্জাত। (বাংলা ব্যঞ্জনসন্ধি)