নুন
কবি- জয় গোস্বামী
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
প্রশ্ন- “আমরা তো অল্পে খুশি”–‘অল্পে খুশি’ মানুষদের জীবন-যন্ত্রণার যে ছবি ‘নুন’ কবিতায় ফুটে উঠেছে তার পরিচয় দাও৷ ৫
উত্তর- কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতাটি নিছকই একটি কবিতা নয়, বরং বলা যেতে পারে, কবি স্বল্প কথায় সমাজের একটি শ্রেণীর মানুষের জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরেছেন। সেই শ্রেণীটি হল, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, সমাজের দরিদ্র শ্রেণী। আলোচ্য কবিতা অনুসারে তাদের জীবনপ্রণালী নিম্নরূপ-
১) অনাড়ম্বর জীবন- তাদের জীবনযাত্রা একেবারেই বাহুল্যবর্জিত। খেয়ে, পরে বেঁচে থাকা- এটাই তাদের জীবন। খুব সাধারণভাবে, “সাধারণ ভাতকাপড়ে” তাদের দিন কাটে।
২) অল্পেই খুশি- তারা অল্পেই খুশি হতে পারে। অভাব তাদের নিত্যসঙ্গী তবু হাসি মুখে বলতে পারে “কী হবে দুঃখ করে?”
৩) সঞ্চয়হীন- তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জীবিকা নির্বাহ করে। যেটুকু উপার্জন করে তা দিয়ে উদরপূর্তি হয় কিন্তু সঞ্চয় করা সম্ভব হয় না। সেইজন্য অসুখ করলে অনাহারে দিন কাটে এবং চিকিৎসার জন্য ধার-দেনা করতে হয়।
৪) বেহিসেবী জীবন- কোনোদিন বেশি টাকা উপার্জন করলে সেই টাকা জমিয়ে রাখা তাদের স্বভাব-বিরুদ্ধ। সেই টাকা দিয়ে ‘মাত্রাছাড়া’ বাজার করে, গোলাপের চারা কিনে বাড়ি ফিরে আসে।
৫) মাদকাসক্তি- অভাবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে নেশা করার প্রবণতা এবং নেশা করার সময় প্রায়শই লঘু-গুরু জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
৬) সংযমের অভাব- রাতে খেতে বসে ঠান্ডা ভাতের থালায় নুন না পেলে রেগে এমন হুলুস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে দেয় যে পাড়ার কেউ জানতে বাকী থাকে না। কে কী ভাবলো এসবের তারা পরোয়া করে না।
৭) বিদ্রোহী- বেঁচে থাকার সামান্যতম রসদেরও অভাব তাদেরকে বিদ্রোহী করে তোলে। সমাজ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে তারা বলে- “আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।”