প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপোতা আবিষ্কার

তেলেনাপোতা আবিষ্কার: প্রেমেন্দ্র মিত্র|| Telenapota Abishkar by Premendra Mitra

প্রেমেন্দ্র মিত্রের একটি অসাধারণ ছোট গল্প ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’। গল্পের বিষয়বস্তু সাধারণ কিন্তু লিখনশৈলীর গুনে গল্পটি অসাধারণ হয়ে উঠেছে। যেমন, গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র যে পুরুষটি তার নাম কোথাও উল্লেখ নেই, গল্প জুড়ে তাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। সহৃদয় পাঠক মাত্রই এর মানে বুঝতে পারবে। যাইহোক, ছাত্র-ছাত্রীদের বলব গল্পটি অন্তত তিন-চারবার পড়বে। এবার খুব সংক্ষেপে গল্পের বিষয়বস্তু তুলে ধরা যাক।

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্প
তেলেনাপোতা আবিষ্কার

তেলেনাপোতা আবিষ্কার: কাহিনি সংক্ষেপ

কলকাতা থেকে তিনজন শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত যুবক তেলেনাপোতা অভিযানে যায়। তেলেনাপোতা একটি গ্রামের নাম, কলকাতা থেকে মাত্র ত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত। এক-দেড়শ বছর আগে ম্যালেরিয়ার প্রকোপে গ্রামটি চলমান জীবন্ত জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। গ্রামের বেশিরভাগ লোক এখন বাইরে চলে গেছে; নেহাত অক্ষম এবং অসমর্থ যারা তারাই এই গ্রামে রয়ে গেছে।

তিন যুবকের মধ্যে একজন, যার নাম মণিদা, তার আদি বাসস্থান এই তেলেনাপোতা গ্রামে। বাকি দুজন তার বন্ধু। এদের একজন নিদ্রাবিলাসী, ঘুমোতে ভালোবাসে। আরেকজন, যে এই গল্পের প্রধান পুরুষ চরিত্র, সে হল শখের মৎস্যশিকারি। বড়শি দিয়ে মাছ ধরবার লোভে তার তেলেনাপোতায় আগমন। অবশ্য এই অভিযানের সেই মূল উদ্যোক্তা।

তেলেনাপোতা অভিযান প্রাথমিকভাবে ব্যর্থ হয় কারণ মৎস্যশিকারি বন্ধুটি একটিও মাছ ধরতে পারেনি। মাছ না পেলেও, একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে ঘাটে সে একটি মেয়েকে দেখতে পায়। সে মেয়েটি মণিদার জ্ঞাতি এবং তাদের ঘরেই দুপুরের খাবার আয়োজন হয়েছিল। তার নাম যামিনী।

বছর কয়েক আগে নিরঞ্জন নামে এক যুবক যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদেশে গিয়েছিল। কিন্তু সে আর ফিরে আসেনি। যামিনী জানতো সে আর ফিরে আসবে না কিন্তু জামিনের অন্ধ, শয্যাশায়ী মা বিশ্বাস করত যে নিরঞ্জন ফিরে আসবে এবং যামিনীকে বিয়ে করবে। মণিদার সঙ্গে আসা যুবকদের একজন নিশ্চয় নিরঞ্জন, এই ভেবে যামিনীর মা খুব জিদ করতে থাকে নিরঞ্জনের সঙ্গে কথা বলার জন্য। মৎস্য শিকারী বন্ধুটি স্বেচ্ছায় নিরঞ্জনের ভূমিকায় অভিনয় করে এবং যামিনীর অন্ধ মাকে কথা দেয় যে কয়েকদিন পর ফিরে এসে সে যামিনীকে বিয়ে করে নিয়ে যাবে।

গল্পটা ভালোই এগোচ্ছিল। কিন্তু কলকাতায় ফিরে এসে সেই যুবকের ম্যালেরিয়া হয় এবং দীর্ঘ অসুস্থতার পর যখন সে সেরে ওঠে ততদিনে তেলেনাপোতার স্মৃতি ফিকে হয়ে যায়। আর যামিনী? সে হয়তো ভাঙা বুকে আবার একরাশ স্বপ্ন নিয়ে নির্জন ধ্বংসপুরীতে বসে বসে দিন গুণতে থাকবে।

তেলেনাপোতা আবিষ্কার: গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্প থেকে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়া হল। এগুলি ছাড়াও যদি অন্য কোনো প্রশ্নের উত্তর চাও তাহলে যোগাযোগ ফর্মের মাধ্যমে জানাবে। যদি প্রশ্নটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে যত শীঘ্র সম্ভব উত্তর দেওয়া হবে।

১। “মনে হবে তেলেনাপোতা বলে কোথাও কিছু সত্যি নেই”- এ কথা কার মনে হবে? এই মনে হওয়ার কারণ কী? (একাদশ বার্ষিক পরীক্ষা ২০১৪, ২০১৮, ২০২২)

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের প্রধান পুরুষ চরিত্র, গল্পে যাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে, তার একথা মনে হবে।

তেলেনাপোতা গ্রামটি একসময় বেশ সমৃদ্ধ জনপদ ছিল। কিন্তু এক-দেড়শো বছর আগে ম্যালেরিয়ার প্রকোপে গ্রামটি সর্বস্বান্ত হয়েছিল। সেই তখন থেকে তেলেনাপোতা যেন ‘চলমান জীবন্ত জগতের’ এক ‘বিস্মৃতিবিলীন প্রান্তে’ রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মহানগর থেকে আগত তিনজন যুবক তেলেনাপোতার অস্তিত্ব পুনরাবিষ্কার করে। এই তিন যুবকের মধ্যে একজন, গল্পে যাকে মৎস্যশিকারি বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সে আবেগতাড়িত হয়ে তেলেনাপোতা গ্রামের এক মেয়ে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তেলেনাপোতা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় সে মনে মনে বলেছিল “ফিরে আসব, ফিরে আসব”।

শহরে ফিরে যাওয়ার পর প্রথম কয়েকটা দিন তেলেনাপোতার স্মৃতি তার মনে ‘সুদূর অথচ অতি অন্তরঙ্গ একটি তারার মতো উজ্জ্বল’ হয়ে ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তার নিজের অজান্তেই সব স্মৃতি ম্লান হতে থাকে। তারপর যেদিন সে তেলেনাপোতায় ফিরে যাবার জন্য প্রস্তুতি নেয়, সেদিন বুঝতে পারে তার ম্যালেরিয়া হয়েছে।

দীর্ঘদিন রোগভোগের পর সে যখন একটু সুষ্ঠ হয়ে উঠল, ততদিনে তার মনে তেলেনাপোতার স্মৃতি একেবারেই ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। সেইসময় তার মনে হয়েছিল “তেলেনাপোতা বলে কোথাও কিছু সত্যি নেই”। কারণ, যার জন্য সে তেলেনাপােতায় ফিরে যাবে বলেছিল সেই যামিনী ছিল তার “দুর্বল মুহূর্তের অবাস্তব কুয়াশার কল্পনা”।

২। তেলেনাপােতা যাওয়ার কারণ কী? একে লেখক ‘আবিষ্কার’ বলেছেন কেন? ১ + ৪ (২০১৯)

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তিনজন যুবকের তেলেনাপোতায় যাওয়ার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। উক্ত তিনজন যুবকের একজন ছিল মৎস্যশিকারি, আরেকজন পানরসিক এবং তৃতীয়জন নিদ্রাবিলাসী। তবে, মৎসশিকারি বন্ধুর সঙ্গী হিসেবেই অপর দু’জন তেলেনাপোতায় গিয়েছিল।

তেলেনাপোতা একসময় একটি সমৃদ্ধ গ্রাম ছিল। কিন্তু এক-দেড়শো বছর আগে ম্যালেরিয়ার প্রকোপে গ্রামের বহু মানুষ মারা যায়। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে বহু মানুষ অন্যত্র বসতি স্থাপন করে। কেবল যাদের গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার উপায় ছিল না, তারাই রয়ে গেল সেখানে। সেই তখন থেকে তেলেনাপোতা যেন ‘শ্মশানের দেশ’। মহানগরী থেকে মাত্র তিরিশ মাইল দূরে থেকেও লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে গিয়েছিল তেলেনাপোতা। আলোচ্য গল্পে তিনজন শহুরে যুবক তেলেনাপোতায় গিয়েছিল।

তবে, তাদের এই যাওয়াটা নেহাত ভ্রমণ বা পর্যটন নয়, লেখক তাদের যাওয়ার ঘটনাকে আবিষ্কারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বস্তুতপক্ষে, ‘আবিষ্কার’ বলতে বোঝায় অজ্ঞাত বা অপ্রকাশিত কোনো বস্তু বা বিষয়ের সন্ধান পাওয়া। প্রাচীনকালে অভিযাত্রীর দল নতুন দেশ আবিষ্কারের নেশায় দূর সমুদ্রে পাড়ি দিত এবং পৌঁছে যেত অজানা-অচেনা দেশে। গল্পে উল্লেখিত তিন যুবক যেন বিস্মৃতির অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া তেলেনাপোতাকে নতুন করে আবিষ্কার করেছিল। তাদের মাধ্যমেই প্রকাশ্যে এসেছিল মৃত্যুপুরী তেলেনাপোতা এবং সেখানকার মানুষের কথা। সেইজন্য লেখক একে ‘আবিষ্কার’ বলেছেন।

৩। “কে, নিরঞ্জন এলি?” নিরঞ্জন কে? কোন পরিস্থিতিতে গল্পকথক নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন? [১+৪] (২০১৬)

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের প্রধান নারী চরিত্র যামিনীর সঙ্গে যার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তার নাম নিরঞ্জন। সে ছিল যামিনীর মায়ের দূর সম্পর্কের বোনপো।

তেলেনাপোতা আবিষ্কারে গিয়ে গল্পের প্রধান পুরুষ চরিত্রের দৃষ্টি এবং হৃদয় আকর্ষণ করেছিল যামিনী। সে ছিল মণিদার জ্ঞাতিস্থানিয়া। যামিনীদের বাড়িতেই তাদের মধ্যাহ্নভোজনের আয়োজন হয়েছিল। খাওয়ার পর তিন বন্ধু যখন বিশ্রাম করছিল তখন যামিনী এসে মণিদাকে ডাকে এবং নিচু স্বরে কিছু কথা বলে যায়। মণিদার মুখ থেকে বাকি দু*জন নিরঞ্জন-বৃত্তান্ত শোনে।

চার বছর আগে নিরঞ্জন এসে যামিনীর মাকে কথা দিয়েছিল যে বিদেশ থেকে ফিরেই সে যামিনীকে বিয়ে করবে, কিন্তু সে আর ফিরে আসেনি। যামিনীর মা মণিদার দুই বন্ধুর মধ্যে কোনো একজনকে নিরঞ্জন ভেবেছিল এবং তার কাছে নিরঞ্জনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যামিনীকে জোর করছিল। মাকে শান্ত করার জন্যই যামিনী মণিদাকে ডাকতে এসেছিল।

সব শুনে উক্ত প্রধান পুরুষ চরিত্রটি যামিনীর মায়ের সাথে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর মনিদার সঙ্গে যামিনীর মায়ের কাছে গেলে দৃষ্টিশক্তিহীন বৃদ্ধা তাকে নিরঞ্জন বলে সম্বোধন করেন। এভাবেই তাকে নিরঞ্জন সাজতে হয়েছিল। (শব্দসংখ্যা ১৬০)

৪। তেলেনাপোতা আবিষ্কার কি আসলে আধুনিকতার মোড়কে শকুন্তলা-কাহিনি ?

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে প্রধান নারী চরিত্রটি হল যামিনী। তার করুণ জীবনবৃত্তান্ত আমাদের শকুন্তলার কথা মনে করিয়ে দেয়।

শকুন্তলা বৃত্তান্তঃ মহাভারতের আদিপর্বে শকুন্তলা আখ্যানটি রয়েছে। মহর্ষি কণ্বের পালিতা কন্যা শকুন্তলা। রাজা দুষ্মন্তের সঙ্গে তার গান্ধর্বমতে বিবাহ হয়েছিল। বিবাহের পর রাজা দুষ্মন্ত রাজধানিতে ফিরে যান। যাবার সময় তিনি শকুন্তলাকে কথা দিয়ে গিয়েছিলেন যে শীঘ্রই ফিরে এসে তিনি শকুন্তলাকে নিয়ে যাবেন। শকুন্তলা দুষ্মন্তের জন্য প্রহর গুনতে থাকে কিন্তু দুষ্মন্ত আর ফিরে আসেন নি। এদিকে, স্বামী বিরহে কাতর শকুন্তলাকে অহংকারী মনে করে ঋষি দুর্বাশা অভিশাপ দেন যে যার চিন্তায় সে মগ্ন সেই তাকে চিনতে পারবে না। যাইহোক, বাবার সঙ্গে শকুন্তলা স্বামীর কাছে হাজির হয়। কিন্তু দুষ্মন্ত তাকে চিনতে পারেন নি। ভাগ্যাহত শকুন্তলা এরপর এক তপোবনে থাকতে শুরু করে।

যামিনী চরিত্রে শকুন্তলার ছায়াঃ তেলেনাপোতার অভিশপ্ত জীবনে পঙ্গু মায়ের সেবা করে দিন কাটায় যামিনী। নিরঞ্জন নামে একজনের সঙ্গে তার বিয়ে হবার কথা ছিল। নিরঞ্জন কথা রাখেনি। তারপর তার শুন্য জীবনে আসে আরেকজন- যাকে গল্পে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। যামিনীর জ্ঞাতিস্থানীয় মণিদার সঙ্গে সে তেলেনাপোতায় এসেছিল মাছ ধরার জন্য। যামিনীর দুঃখের কাহিনি শুনে, আবেগের বশে সে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেয়। যামিনীর নিস্তরঙ্গ জীবনে ঢেউ তুলে সে শহরে ফিরে যায়। কিন্তু শহরে ফিরে যাবার পর তার মন থেকে যামিনীর স্মৃতি ম্লান হতে থাকে। এমন সময় দুর্বাশার অভিশাপের মতো ম্যালেরিয়ার জীবাণু তাকে গ্রাস করে। দীর্ঘদিন রোগভোগের পর যামিনীর মুখচ্ছবি তার মন থেকে একেবারে মুছে যায়। ওদিকে তেলেনিপোতার মৃত্যুর তপোবনে তখনো পথ চেয়ে বসে থাকে যামিনী।

৫। ‘ব্যাপারটা কী এবার হয়তো আপনারা জানতে চাইবেন’- কোন ব্যাপারের কথা বলা হয়েছে? ব্যাপারটা জানার পর উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী করেছিলেন? ৩+২

উত্তর- প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তিনজন বন্ধু তেলেনাপোতায় বেড়াতে গিয়েছিল। তাদেরই একজন মণিদার পুর্বপুরুষের বাড়ি সেখানে। মণিদার জ্ঞাতিস্থানীয়া যামিনীদের বাড়িতে তারা দুপুরে খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রিত হয়েছিল। কিন্তু যামিনীর বৃদ্ধা, অন্ধ মা মনে করেন যে মণির সঙ্গে যারা এসেছে তাদের একজন নিরঞ্জন।

এই নিরঞ্জন আসলে যামিনীর মায়ের দূর সম্পর্কের এক বোনপো। সে যামিনীকে বিয়ে করব বলেছিল কিন্তু আর ফিরে আসেনি। যাইহোক, যামিনীর মায়ের দৃঢ় বিশ্বাস যে নিরঞ্জন এসেছে। আর তাই তিনি বারবার যামিনীকে ডেকে বলেন যেন একবার নিরঞ্জনকে তার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। উদ্ধৃত অংশে এই ব্যাপারের কথা বলা হয়েছে।

মনিদার মুখে বাকি দু’জন ব্যাপারটি সবিস্তারে জানতে পারে। মণিদা ভাবতে থাকে কী করে যামিনীর মাকে আশ্বস্ত করা যায়। এমন সময় একজন বন্ধু বিশেষ আগ্রহ দেখায়। গল্পে যাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে, সে নিজে থেকে যামিনীর মায়ের কাছে যায় আর নিজেকে নিরঞ্জন বলে পরিচয় দেয়। যামিনীকে দেখে সে আগে থেকেই মুগ্ধ ছিল, এবার যামিনীর মায়ের কথা শুনে সে নিতান্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। তাই যামিনীর মায়ের কাছে সে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসে।

৬। বাস থেকে তিনটি চরিত্র যেখানে নামল সেই স্থানটির পরিচয় দাও।

উত্তর- প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তিনটি চরিত্রের অদ্ভুত এক অভিযানের কাহিনি বর্নিত হয়েছে। একদিন পড়ন্ত বিকেলের রোদে জিনিসে-মানুষে ঠাসাঠাসি একটি বাসে তারা তিনজন উঠে পড়ল। দু’ঘণ্টার কষ্টকর বাসযাত্রার পর যে স্থানে নামল লেখক সেই স্থানটির পরিচয় দিয়েছেন এইভাবে-

যেখানে বাসটি থামল সেটি রাস্তার মাঝখান, শেষপ্রান্ত নয়। তার চারিদিকে ঘন জঙ্গল- সুর্য অস্ত যাবার আগেই সেখানে যেন অন্ধকারের রাজত্ব শুরু হয়ে গেছে। স্থানটি যে শুধু নির্জন তাই নয়, ভয়ঙ্করভাবে নির্জন। পাখিরাও যেন সভয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে চলে গেছে।
বড় রাস্তার পাশেই একটি কাদাজলে পূর্ণ জলা। সেখান থেকে একটি নালা জঙ্গলে ঢুকে অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেছে। নালার দু’পাশে বাঁশঝাড় এবং অন্যান্য ঝাঁকড়া গাছের সারি স্থানটির নির্জনতা ও নিষ্প্রাণতাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।

মহানগর থেকে মাত্র তিরিশ মাইল দূরে অবস্থিত এই স্থানটি যেন বাস্তব জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। সেখানে চির-অন্ধকারময় অসম্ভবের রাজত্ব। মনুষ্য-বর্জিত এই স্থানটিতে প্রকৃতিও যে কতখানি বিরূপ লেখক তার সুন্দর বর্ননা দিয়েছেন। সেখানকার আবহাওয়া স্যাঁতস্যাঁতে, ভিজে আর ভ্যাঁপসা। রাস্তার নিচের জলা থেকে একটি নির্মম-নিষ্ঠুর জলীয় অভিশাপ যেন তার ভয়ঙ্কর ফণা তুলে উঠে আসছে।

যে স্থানে তারা নেমেছিল সেই স্থানটি আমাদের পরিচিত জগত থেকে ভিন্নতর। সন্ধ্যার অন্ধকারে মশাদের অত্যাচারে স্থানটিকে আরও বন্য করে তুলেছে। সর্বোপরি, লেখকের বর্ণনার গুণে উক্ত স্থানটি যেন পাঠকের চোখের সামনে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

৭। “আপনার আসল উদ্দেশ্য আপনি নিশ্চয় বিস্মৃত হবেন না”- আসল উদ্দেশ্যটি কী ছিল? সেই উদ্দেশ্য সাধনে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী করলেন? ১+৪

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের প্রধান পুরুষ চরিত্র, যাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে তার আসল উদ্দেশ্য ছিল মৎস্যশিকার। পৃথিবীর সরলতম মাছেরা নাকি তেলেনাপোতার সরোবরেই রয়েছে। সেই মাছগুলিকে বড়শিবিদ্ধ করবার উদ্দেশ্যেই উদ্দিষ্ট ব্যক্তির মহানগর থেকে তেলেনাপোতায় আগমণ।

তেলেনাপোতার ধ্বংসপুরীতে রাত্রিযাপনের পর সকাল থেকেই উদ্দিষ্ট ব্যক্তি মাছ ধরবার তোড়জোড় শুরু করে দেয়। উত্তম মৎস্যশিকারীর মতো ‘ষোড়শোপাচার আয়োজন’ নিয়ে সে শ্যাওলা-ঢাকা, ভাঙা ঘাটের একপাশে বসে পড়ে। তারপর ‘যথোচিত নৈবেদ্য’ সমেত বড়শি জলে নামিয়ে দেয়। গুড়ি-পানায় সবুজ পুকুরের ঘাটে অধীর আগ্রহে সে মাছেদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

ক্রমশ বেলা বাড়তে থাকে কিন্তু উদ্দিষ্ট ব্যক্তির স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। তার অবস্থা দেখে যেন মাছরাঙা পাখিও তাকে বিদ্রুপ করতে শুরু করে। একজোড়া ফড়িংয়ের নাচানাচি, ঘুঘুর ডাক এবং সবশেষে একটি মেয়ের আবির্ভাব- এমনি করেই সময় পেরিয়ে যায়। একটিও মাছ ধরতে না পারায় নিতান্ত হতাশ হয়ে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি মাছ ধরবার সাজসরঞ্জাম নিয়ে উঠে পড়েন এবং তেলেনাপোতা অভিযানের আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

৮। “আমি তোমায় কথা দিচ্ছি মাসিমা”- কে, কাকে, কোন প্রসঙ্গে, কী কথা দিয়েছিল নিজের ভাষায় লেখো। ১+১+২+১

উত্তর- প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের প্রধান পুরুষ চরিত্র, গল্পে যাকে আপনি বলে সম্বোধন করা হয়েছে, সে যামিনীর মাকে কথা দিয়েছিল।

আলোচ্য গল্পে দেখা যায়, মৎস্য শিকারের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তি দু’জন বন্ধুর সঙ্গে তেলেনাপোতা গ্রামে হাজির হয়। মাছ ধরতে না পারলেও একটি মেয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। মেয়েটি মণিদার জ্ঞাতিস্থানিয়া, নাম তার যামিনী। দুপুরে যামিনীই সকলের খাবার আয়োজন করেছিল।

ঘটনাক্রমে সে জানতে পারে যে, নিরঞ্জন নামের কোন এক যুবক যামিনীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদেশে চাকরি করার নাম করে চলে যায় এবং আর ফিরে আসে না। এদিকে, যামিনীর বৃদ্ধা মা মণির সঙ্গীদের কাউকে নিরঞ্জন ভাবেন এবং যামিনীকে জোর করেন নিরঞ্জনকে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অসহায় যামিনী মণিদাকে ডাকতে এসেছিল তার মাকে শান্ত করার জন্য। মণিদা বিরক্ত হলেও ওই ব্যক্তি স্বেচ্ছায় যেতে চান যামিনীর মায়ের কাছে।

মণিদার সঙ্গে যামিনীর মায়ের কাছে গেলে শয্যাশায়ী অন্ধ বৃদ্ধা তাকে ‘নিরঞ্জন’ বলে ডাকেন। ওই ব্যক্তি আত্মপরিচয় গোপন করে নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এবং যামিনীকে বিয়ে করার কথা দেয়। (শব্দ সংখ্যা ১৫৫)

দ্বিতীয় সেমিস্টারের অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ 

error: Content is protected !!