দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা কবিতা
জীবনানন্দ দাশের শিকার
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
প্রশ্ন- ‘শিকার’ কবিতায় ভোরের পরিবেশ যেভাবে চিত্রিত হয়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখো। সেই পরিবেশ কোন ঘটনায় করুণ হয়ে উঠল? ৩+২ (২০১৮)
উত্তর- জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় নানা দৃশ্যপট রচনার মাধ্যমে কবি ভোরের পরিবেশ আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। কবিতায় বর্ণিত ভোরের প্রথম দৃশ্যটি একটি অকৃত্রিম প্রাকৃতিক ভোর।
তখন আকাশের রং ঘাস ফড়িং-এর শরীরের মতো কোমল নীল। চারিদিকে পেয়ারা, নোনা প্রভৃতি গাছগাছালি। ভোরের আলো তখনও সম্পূর্ণ প্রকাশ পায়নি। তাই একটি তারা তখনও আকাশে ছিল। কবির কল্পনায় এই তারাটি কোন এক গ্রাম্য বধূর মতো অথবা সেই মুক্তার মতো যা মিশরের এক মানবী কবির নীল মদের গ্লাসে রেখেছিল। দেশোয়ালিরা শরীরকে উষ্ণ রাখার জন্য আগুন জ্বেলেছিল- মোরগ ফুলের মতো লাল সেই আগুন সূর্য ওঠা পর্যন্ত জ্বেলেছিল। সব মিলিয়ে কবি এমন এক ভোরের চিত্ররূপ আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন যেখানে প্রকৃতি ময়ুরের ডানার মতো ঝলমল করছে।
এরপর একটি হরিণের প্রসঙ্গ এসেছে। সারারাত অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করে হরিণটি ভোরের আলোয় নেমে এসেছে। প্রকৃতির মুক্ত কোলে নিজেকে নিরাপদ মনে করেই সে কখনো ঘাস ছিড়ে খেয়েছে আবার কখনো নদীর ঠাণ্ডা জলে নিজেকে সঁপে দিয়েছে। হঠাৎ একটি অদ্ভুত শব্দ সেই হরিণটিকে মাংসপিণ্ডে পরিণত করে। কয়েকটি টেরিকাটা মানুষ নির্বিকারে সেই মাংস খায়।
এইভাবে একটি নিষ্পাপ হরিণের অকাল-মৃত্যুতে ভোরের নির্মল পরিবেশ করুণ হয়ে উঠেছিল।