সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান

বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা

বড় প্রশ্ন (মান-৫)

প্রশ্ন- বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান।

উত্তর- যে বাঙালি বিজ্ঞানীর গবেষণা এই একবিংশ শতকেও সমান প্রাসঙ্গিক তিনি হলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। হিন্দু স্কুলের এই মেধাবী ছাত্রটি ১৯০৯ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পঞ্চম স্থান অধিকার করে ১৯১১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আই এসসি, ১৯১৩ সালে বি এসসি এবং ১৯১৫ সালে মিশ্রগণিতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

বাঙালির বিজ্ঞান সাধনা
সত্যেন্দ্রনাথ বসু

তরুণ অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে তিনি শিক্ষকতার সঙ্গে গবেষণাকর্ম চালিয়ে যান। ইংল্যান্ডের বিজ্ঞান গবেষণা বিষয়ক পত্রিকা ‘ফিলোজফিক্যাল ম্যাগাজিন’-এ প্রকাশ্রের জন্য তিনি ‘প্লাঙ্ক সূত্র ও আলোকতত্বের কোয়ান্টাম প্রকল্প’ নামে একটি মৌলিক প্রবন্ধ পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তাঁর প্রবন্ধটি প্রকাশের অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় ফেরত আসে। এবার তিনি তাঁর লেখাটি আপেক্ষিক তত্বের জনক আলবার্ট আইনস্টাইনের কাছে পাঠিয়ে দেন। বিশ্ববরেণ্য এই বিজ্ঞানী প্রবন্ধটির গুরুত্ব বুঝতে পেরে সেটিকে প্রকাশের ব্যবস্থা করে দেন। এর পরই বিজ্ঞানী হিসেবে সত্যেন্দ্রনাথ বসু আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। কোয়ান্টাম সঙ্খ্যাতত্বের জনক হিসেবে তিনি স্মরণীয় থাকবেন। তাঁর পদবি বসু থেকেই ‘বোসন’ কণার নামকরণ হয়েছে।

বিজ্ঞানসাধনা ছাড়াও সাহিত্য অনুরাগী হিসেবেও তিনি বাঙালিদের কাছে বিশেষভাবে বরেণ্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর একমাত্র বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থ ‘বিশ্বপরিচয়’ উৎসর্গ করেছিলেন এই বাঙালি বিজ্ঞানীকে। বসু সম্পর্কে তাঁর মত- ‘a man of genius with a taste for literature and who is a scientist as well.’ সত্যেন্দ্রনাথ বসু মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার অন্যতম সমর্থক ছিলেন। ১৯৪৮ সালে তিনি বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাভাষায় বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে তিনি ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। এইভাবে সারাজীবন ধরে স্বদেশে এবং বিদেশে বিজ্ঞানসাধনার অজস্র কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

error: Content is protected !!