Sanglap Rachana || সংলাপ রচনা
সংলাপ বলতেই আমাদের মনে পড়ে যায় নাটকের কথা। নাটকের পাত্রপাত্রীরা নিজেদের মধ্যে যে কথপোকথন করে, সেগুলোকেই বলা হয় সংলাপ। নাটকের সংলাপ রচনা করার জন্য বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয়। কারণ, নাটকে বহু পাত্রপাত্রীর ভিড় থাকে। এবার প্রত্যেক চরিত্রের ভূমিকা অনুযায়ী তাদের সংলাপ লিখতে হয় এবং তাদের সংলাপে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হয়।
সংলাপ লেখার নিয়ম
বর্তমানে দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যসূচিতে কাল্পনিক সংলাপ রচনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন। সেগুলি হল-
১) কাল্পনিক সংলাপে দুটি মাত্র চরিত্র থাকে- সাধারণত দুই বন্ধুর মধ্যে কথোপকথন লিখতে হয়।
২) সংলাপ শুরু করার আগে প্রেক্ষাপট যোগ করা যেতে পারে, আবার না করলেও দোষের নয়। [প্রেক্ষাপট হল সংলাপ শুরুর মুহূর্ত। যেমন, “রাজু আর দীপ টিফিনের সময় মাঠে বসে ছিল। এমন সময় রাজুই শুরু করল…” এইভাবে সংলাপ লেখার আগে লেখা যেতে পারে।]
৩) পুরো রচনাটি বারো-চোদ্দটি বাক্যে লিখতে হয়।
৪) প্রশ্নে যে বিষয় নিয়ে সংলাপ রচনা করতে বলা হয়, সেই বিষয়টিকে নিয়েই লিখতে হবে- অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে লেখা কাম্য নয়।
৫) অন্যান্য রচনার মতো সংলাপের শুরুটা হবে ভূমিকার মতো। অর্থাৎ, যে বিষয়ে সংলাপ রচনা করতে বলা হয়েছে সেই বিষয়ে প্রবেশ করতে হবে একেবারে প্রথম লাইনে।
৬) সংলাপে যেন দুজনের কথার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। যেমন, একজন যদি প্রশ্ন করে তো পরের জন তার উত্তর দেবে।
৭) সংলাপের শেষটা হবে আলোচ্য বিষয়ের উপসংহারের মতো। অর্থাৎ, এরপর আর কিছু বলার থাকবে না।
প্রশ্ন- মোবাইল ফোনের ভালো-মন্দ নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো।
উত্তর– মোবাইল ফোনের ভালো-মন্দ নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ।
রিনা- শুনলাম তোর বাবা কাল তোকে নতুন ফোন কিনে দিয়েছেন?
টিনা- হ্যাঁ রে। অনলাইনে পড়াশোনা করতে গেলে নিজের একটা ফোন খুব দরকার।
রিনা- ঠিকই বলেছিস। আমি দিদির ফোন নিয়ে ক্লাস করি কিন্তু সবসময় তো পাইনা।
টিনা- তুইও বল কাকুকে যেন তোকে একটা ফোন কিনে দেন। এইভাবে অন্যের ফোন নিয়ে কি ক্লাস করা যায়?
রিনা- বাবা তো দিতে চায় কিন্তু মায়ের আপত্তি। মা বলছে আমাকে ফোন দিলে নাকি সারাক্ষণ ভিডিও দেখব, একটুও পড়বো না।
টিনা- সে তো অনেকের মা-বাবার সেইরকম ধারণা রয়েছে। তবে এখন যা পরিস্থিতি, স্কুল টিউশন বন্ধ, অনলাইনে পড়তে হলে একটা করে ফোন বা ট্যাব চাই।
রিনা- দাঁড়া, মাকে গিয়ে বলবো যে টিনাও নতুন ফোন নিয়েছে। এবার মনে হয় মা আপত্তি করবে না।
টিনা- হ্যাঁ, ভালো করে বুঝিয়ে বলবি। আর দেখ, সব জিনিসেরই ভালোমন্দ আছে। যে যেটা গ্রহণ করে সেটা তার উপর।
রিনা- সে তো ঠিক। দেখবি আমাদের ক্লাসের কিছু মেয়ে ফেসবুক করতে শিখে গেছে অথচ ওদের নিজের ফোন নেই।
টিনা- সেটাই কাকিমাকে বুঝিয়ে বলবি। যদি কারো খারাপ পথে যাবার হয় তো ফোন দিলেও যাবে, ফোন না দিলেও যাবে। এই মুহূর্তে একটা ফোন সব ছাত্রছাত্রীর প্রয়োজন।
প্রশ্ন- নারী-স্বাধীনতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ রচনা করাে। (মাধ্যমিক ২০১৭)
উত্তর– নারী-স্বাধীনতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ।
বিজয়া- মাধ্যমিকের পর হোস্টেলে থাকবি তো? বাড়িতে বলেছিস যে তুই সায়েন্স নিয়ে পড়তে চাস?
বিদিশা- না রে আমার আর সায়েন্স নিয়ে পড়া হবে না। এখানেই ভর্তি হব আর্টস নিয়ে, বাড়ি থেকেই পড়তে হবে।
বিজয়া- কেন রে? বাড়ির বাইরে থেকে পড়ার অনুমতি দিল না?
বিদিশা- না। আমাদের পরিবার অনেক রক্ষণশীল।
বিজয়া- ওসব কিছু না। এসব হল আদিম মানসিকতা। কোনো একটা অজুহাত দিয়ে মেয়েদের ঘরে বন্দি করে রাখার মতলব। বুঝলি?
বিদিশা- দেখ না, আগে আমার বাবা নারী স্বাধীনতা নিয়ে কতো কথা বলতো, আমাকে বলতো নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আর এখন আমাকেই হোস্টেল থেকে পড়ার অনুমতি দিচ্ছে না। আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।
বিজয়া- এরপর দেখবি, উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার পরেই বলবে বিয়ে করে নে।
বিদিশা- আমার মা বলেছে মাধ্যমিকের পরেই পাত্র দেখাশোনা শুরু করে দেবে। ভালো পাত্রের সন্ধান পেলেই হয়তো বিয়ে দিয়ে দেবে।
বিজয়া- সে কি রে! মানে আঠারো বছরের আগেই? নাবালিকা-বিবাহ? এতো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আজই আমাদের হেডমিসকে সব কথা জানাবো। এত সহজে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।
বিদিশা- না না, থাক, এতসব করার দরকার নেই।
বিজয়া- থাক কেন? হেডমিসকে বললে উনি তোর বাড়িতে বুঝিয়ে বলবেন। দেখ প্রতিটি মানুষের অধিকার আছে নিজের পায়ে দাঁড়াবার। মেয়ে বলে কি আমরা ফেলনা। এখন তো নারী স্বাধীনতার যুগ। আর তুই তোর পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়তে পাবি না? তুই পড়বি আর নিজের পায়েও দাঁড়াবি।
বিদিশা- তাহলে বলে দেখ মিসকে। আমারও খুব পড়ার ইচ্ছে রে।
প্রশ্ন- কুসংস্কার প্রতিরােধে বিজ্ঞানমনস্কতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ রচনা করাে। (মাধ্যমিক ২০১৮)
উত্তর– কুসংস্কার প্রতিরােধে বিজ্ঞানমনস্কতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ।
অনীক- কী রে, কাল রাতে তোদের পাড়ায় এত হট্টগোল হচ্ছিল কেন?
চিরাগ- আর বলিস না, রাতে একজনকে সাপে কেটেছিল। কিন্তু তার বাড়ির লোক সেই সাপে কাটা রুগীকে হাসপাতালে নিয়ে না গিয়ে ওঝা ডেকেছিল।
অনীক- তারপর?
চিরাগ- পাড়ার কয়েকজন গিয়ে ওদেরকে বোঝায় যে রুগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু ওদের বাড়ির লোক রাজিই হচ্ছিল না।
অনীক- এইসব লোক কবে যে বুঝবে?
চিরাগ- তারপর জানিস, কোনো উপায় না পেয়ে বিজ্ঞান মঞ্চের লোকজনকে খবর দেওয়া হয়। ওরা আসতেই শুরু হয় নতুন বিপত্তি।
অনীক- কীরকম?
চিরাগ- বিজ্ঞান মঞ্চের লোকজন আসতেই ওঝা বেঁকে বসে। সে কাউকেই রোগীর কাছে ঘেঁষতে দেয় না। শেষমেষ পুলিশের ভয় দেখিয়ে রোগীকে ওঝার হাত থেকে বাঁচিয়ে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়।
অনীক- আসল সমস্যাটা হল শিক্ষার অভাব। এইসব মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনার বিস্তার ঘটাতে না পারলে এমনটাই ঘটবে, মানুষ ডাক্তারের চেয়ে ওঝার উপর বেশি ভরসা করবে।
চিরাগ- ঠিকই বলেছিস। কিন্তু সেইরকম উদ্যোগ কে নেবে বল? এদের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনার প্রসার ঘটাবে কে?
অনীক- আমাদেরকেই করতে হবে। আমরা যদি এগিয়ে আসি তারপর দেখবি অনেকেই এই কাজে এগিয়ে আসছে। আর আমাদের বিজ্ঞানের স্যারকে আমাদের পাশে পাবো, একথা উনি আগেই জানিয়েছেন। কুসংস্কার দূর করতে হলে বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসার ঘটাতেই হবে, নাহলে এই মানুষগুলোকে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা যাবে না।
প্রশ্ন- বৃক্ষরােপণ-উপযােগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা করাে। (মাধ্যমিক ২০১৯)
উত্তর– বৃক্ষরােপণ-উপযােগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ।
সিরাজ- অরণ্য সপ্তাহে তোদের স্কুলে কতগুলো গাছ লাগানো হল?
আদিত্য- প্রায় দুশো গাছ লাগানো হয়েছে। তোদের স্কুলে লাগানো হয়নি গাছ?
সিরাজ- না রে। গত বছর অনেক গাছ লাগানো হয়েছিল কিন্তু সেগুলো সব গরু-ছাগলে খেয়ে নিয়েছে। গ্রামের লোকজনকে বলেও কোনো কাজ হয়নি। তাই আমাদের হেডস্যার বলেছেন স্কুলের বাউন্ডারি ওয়াল না হওয়া পর্যন্ত কোনো গাছ লাগানো হবে না।
আদিত্য- সেকথা ঠিক। গাছ লাগানো হলে সেগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হবে, নাহলে গাছ লাগিয়ে কি লাভ?
সিরাজ- দুঃখের বিষয় হল, স্কুলের প্রাচীর তৈরি করার সময় অনেক গাছ কাটা হয়েছে। সেইজন্য কিছু গাছ লাগানো দরকার ছিল। হেডস্যার বলেছেন যে পরের বছর আমাদের স্কুলে এবং আশেপাশের এলাকায় অনেক গাছ লাগানো হবে।
আদিত্য- স্কুলে একটা বাগান থাকলে কতো ভালো লাগে বল? একটা বড়ো গাছ থাকলে গ্রীষ্মকালে টিফিনের সময় তার ছায়ায় বসা যায়।
সিরাজ- হ্যাঁ, সে আর বলতে। আমাদের স্কুলের অনেক গাছ কাটা হয়েছে। এখন তাই কীরকম যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
আদিত্য- আমরাও ঠিক করেছি পরের বছর সারা গ্রামে বেশ কিছু গাছ লাগানো হবে।
সিরাজ- ভালো প্রস্তাব। এখনো নতুন নতুন রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি করার জন্য যে পরিমাণ গাছ কাটা হচ্ছে সে তুলনায় বৃক্ষরোপণ প্রায় হচ্ছে না বললেই চলে।
আদিত্য- পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য গাছ লাগাতেই হবে এবং অবশ্যই সেগুলি যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
প্রশ্ন- মাধ্যমিকের পর কী বিষয় নিয়ে পড়বে, এ বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ রচনা করাে। (মাধ্যমিক ২০২০)
উত্তর– মাধ্যমিকের পর কী বিষয় নিয়ে পড়বে, এ বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ।
মৌ- মাধ্যমিকের পরে কী নিয়ে পড়বি ভেবেছিস? আর্টস, সায়েন্স না কমার্স?
রিয়া- আমার তো ইচ্ছে আর্টস নিয়ে পড়ার। কিন্তু..
মৌ- কিন্তু কী? কাকু কাকিমার কি ইচ্ছে তুই সায়েন্স নিয়ে পড়িস?
রিয়া- হ্যাঁ। বাবার তো খুব ইচ্ছে। মাও চাই যেন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হই।
মৌ- কিন্তু তুই যদি ভাবিস আর্টস নিলেই তোর ভালো হবে তবে তাই কর। জোর করে সায়েন্স নিতে যাস না।
রিয়া- কী করে মাকে বোঝাবো বুঝতে পারছি না। ওরা ভাবে মাধ্যমিকে বেশি নম্বর পেলেই উচ্চমাধ্যমিকে সায়েন্স নিয়ে পড়া যায়।
মৌ- তাছাড়া অনেক বাবা-মা এখনো মনে করে যে আর্টস নিয়ে পড়লে ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তা তো নয়। আর্টস, সায়েন্স বা কমার্স যে বিষয় নিয়েই পড়ি, ভালো করে পড়লে সবক্ষেত্রেই ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
রিয়া- আমিও তাই মনে করি।
মৌ- তাহলে আর দেরি না করে কাকু কাকিমাকে বল যে তুই আর্টস নিয়েই পড়বি।
রিয়া- হ্যাঁ, আজ বলব। আর, তুই কী নিয়ে পড়বি?
মৌ- আমি তো কমার্সই নেব। বাড়িতেও বলেছি। মা, বাবা দুজনেই রাজি হয়েছে।
রিয়া- বাঃ। তাহলে প্রস্তুতি শুরু করে দে।