প্রতিবেদন রচনা
প্রতিবেদন বা রিপোর্ট (Report) কথাটির অর্থ হল বিবরণী। এটি একটি বিশেষ ধরনের লিখনশৈলী। সাধারণত কোনো ঘটনার বিবরণকে সংবাদপত্রের পাতায় যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, তাকে বলা হয় প্রতিবেদন। যিনি প্রতিবেদন লেখেন, তাকে বলা হয় প্রতিবেদক। যাইহোক, প্রতিবেদন লেখার সময় কয়েকটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
১) ঘটনার যথাযথ বিবরণ থাকতে হবে। তবে, কোনো অবস্থাতেই কল্পনার আশ্রয় নেওয়া চলবে না।
২) রচনা হবে পরোক্ষ উক্তিতে এবং ভাববাচ্যে। তবে, কোনো বিশেষ ব্যক্তির উদ্ধৃতি যোগ করতে হলে তা উদ্ধৃতিচিহ্ন যোগ করে প্রত্যক্ষ উক্তিতে লেখায় কাম্য।
৩) প্রতিবেদকের নিজস্ব মতামত প্রকাশ বা সমালোচনা করা চলবে না।
৪) একই কথার পুনরাবৃত্তি উচিত নয়।
৫) প্রতিবেদনের ভাষা হবে সহজ-সরল এবং স্পষ্ট। বড় বাক্য রচনা করতে অসুবিধা হলে ছোটো ছোটো বাক্যেই লেখা উচিত। সংবাদপত্রে আমরা যেসব প্রতিবেদন পড়ি, সেগুলি যারা লেখেন তারা লেখালেখিতে সিদ্ধহস্ত। সুতরাং প্রথমেই যে ওইরকম উঁচুদরের লেখা হবে, সেরকমটা আশা না করাই ভালো।
প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশ
১) প্রথমেই একটি শিরোনাম যোগ করতে হবে।
২) দ্বিতীয় অংশটি হল বাইলাইন (Byline)। এখানে প্রতিবেদকের পরিচয় অর্থাৎ তার নাম বা কোনো সংবাদসংস্থার নাম থাকে।
৩) প্রতিবেদনের শুরুতেই ঘটনার স্থান এবং তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
৪) এরপর শুরু হবে প্রতিবেদন বা ঘটনার বিবরণ লেখার পালা। একটি আদর্শ প্রতিবেদনের তিনটি অংশ থাকবে। প্রথম অংশটি হবে ভূমিকার মতো- সংক্ষেপে ঘটনার বিবরণ দিতে হবে। দ্বিতীয় অংশে উক্ত ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ থাকবে। তৃতীয় বা শেষ অংশটি হবে উপসংহারের মতো। এই অংশে ঘটনার ফলাফল, বিশিষ্টজনের মতামত, পরবর্তী পদক্ষেপ ইত্যাদি যোগ করা হবে।
প্রশ্ন- তােমাদের ক্লাবের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করাে।
উত্তরঃ
মেজিয়ায় স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির
নিজস্ব প্রতিবেদনঃ
মেজিয়া, বাঁকুড়া, ২৬শে ডিসেম্বর– এলাকার ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বিবেকানন্দ ইউনিয়ন ক্লাবের উদ্যোগে গতকাল অর্থাৎ শনিবার এক স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের আয়ােজন করা হয়েছিল। রক্তদান মহৎ দান। বিশেষত, এই করোনা অতিমারির কবলে স্বাস্থ্য পরিষেবা যখন চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিটি ব্লাডব্যাংকেই রক্তের অপ্রতুলতা দেখা দিয়েছে, সেই সময়ে এই মহতী উদ্যোগ বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, বিগত দশ বছর ধরে বিবেকানন্দ ক্লাব রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে আসছে এবং প্রতিবছরই রক্তদাতার সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ক্লাবের সম্পাদক রানা ভট্টাচার্যের কথায়, “হাসপাতালে অসংখ্য মুমূর্ষ রােগী রক্তের অভাবে অকালে জীবন দিতে বাধ্য হন। এই করোনা আবহে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। মানুষজন রক্ত দান করতে আসতেও ভয় পাচ্ছেন। অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের রক্তদাতার সংখ্যা যথেষ্ট কম”। মেজিয়া ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের তত্ত্বাবধানে এদিন প্রায় তিনশ জন স্থানীয় মানুষ স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রত্যেক রক্তদাতাকে একটি করে ডোনার-কার্ড দেওয়া হয়।
প্রশ্ন- কোনাে গ্রামীণ এলাকায় একটি সরকারি হাসপাতাল উদবােধন হল- এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করাে। [মাধ্যমিক- ২০১৭]
উত্তরঃ
দেবীপুরে গ্রামীণ হাসপাতাল উদ্বোধন
দেবীপুর, বর্ধমান, ২৬শে নভেম্বর– গতকাল বর্ধমান জেলার রামপুর গ্রামে একটি গ্রামীণ হাসপাতাল উদ্বোধন করলেন মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী অজিতেশ ভট্টাচার্য। বর্তমান রাজ্য সরকারের উদ্যোগে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার এইসব গ্রামে এখনো ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিষেবাটুকুও পাওয়া যায়না। সাপে কাটা রোগী বা অন্য কোনো আপদকালীন চিকিৎসার জন্য গ্রামের মানুষকে দশ কিমি দূরে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয়। এইজন্য গত কয়েক বছর ধরে এলাকার মানুষ একটি গ্রামীণ চিকিৎসা কেন্দ্রের দাবি জানিয়ে আসছিল। অবশেষে তাদের সেই দাবি পূরণ হওয়াতে গ্রামবাসীরা সকলেই খুশি। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য নির্মল বাউরির কথায়, “আগে প্রসূতিদের সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য দশ কিমি দূরের হাসপাতালে যেতে হত। রাস্তাঘাটের যা অবস্থা, পৌঁছতে প্রায় এক ঘন্টা লেগে যেত। গ্রামে নতুন হাসপাতাল হওয়াতে আমরা অনেক উপকৃত হলাম।”
প্রশ্ন- তােমার এলাকায় একটি পাঠাগার উদ্বোধন হল। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করাে। [মাধ্যমিক- ২০১৮]
উত্তরঃ
উদয়পুরে পাঠাগার উদ্বোধন করলেন গ্রন্থাগারমন্ত্রী
উদয়পুর, বীরভূম, ১৫ই সেপ্টেম্বর– বীরভূমের উদয়পুরে একটি গ্রামীণ পাঠাগার উদ্বোধন করলেন মাননীয় গ্রন্থাগারমন্ত্রী সুনীল বরণ চট্টোপাধ্যায়। উল্লেখ্য যে, এলাকার মানুষজনের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল যেন এই প্রত্যন্ত এলাকায় একটি উৎকৃষ্ট মানের গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। সম্প্রতি এখানে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে একটি ডিগ্রি কলেজ স্থাপন করা হয়েছে এবং ইতিপূর্বে বেসরকারি উদ্যোগে একাধিক আইটিআই ও পলিটেকনিক কলেজ গড়ে উঠেছে। কিন্তু উপযুক্ত মানের কোনো গ্রন্থাগার ছিল না। এলাকার বিধায়ক মৌমিতা মন্ডল সেই কথা উল্লেখ করে বলেন যে, “গ্রন্থাগারকে বলা হয় জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রামে একটি গ্রন্থাগার থাকলে শুধু সেই গ্রাম নয় আশেপাশের বহু গ্রামের মানুষও উপকৃত হবেন।” গ্রন্থাগারমন্ত্রী সুনীলবাবু তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, “এই ডিজিটাল যুগেও এখানকার মানুষের বইপ্রেম আমাকে মুগ্ধ করেছে।” প্রাথমিকভাবে এই পাঠাগারে দেশি-বিদেশি সাহিত্য ছাড়াও স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের উপযোগী বেশ কিছু বই সংগ্রহে রাখা হয়েছে। তাছাড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন জনপ্রিয় পত্রপত্রিকা নিয়মিত সরবরাহ করা হবে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রভাত ঘড়ুই।
প্রশ্ন- বিদ্যালয়ের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করাে। [মাধ্যমিক- ২০১৯]
উত্তরঃ
নর্দান হাইস্কুলে সাইবার সচেতনতা শিবির
হুগলি, ১২ই জানুয়ারি– যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইন্টারনেটে অপরাধপ্রবণতা। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশের তরুণ প্রজন্ম যাতে এসব অপরাধের শিকার না হয় সেই জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ইন্টারনেট বিষয়ক সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে হুগলির নর্দান হাইস্কুলে তিনদিন ব্যাপী সাইবার সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। বর্তমানে অনেক স্কুলপড়ুয়ার নিজস্ব মোবাইল ফোন রয়েছে। তাদের অনেকেই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম প্রভৃতি বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। এইসব সোশ্যাল সাইটের মোহে অনেক তরুণ কুপথে চালিত হয়, অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাছাড়া, সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, সমগ্র ইন্টারনেটেই প্রতারণার জাল ছড়িয়ে রয়েছে। একটু অসাবধান হলেই বিপদ। প্রযুক্তির ব্যাপারে অনভিজ্ঞ তরুণ-যুবাদের সতর্ক করার জন্যই এই শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। এই এলাকার বহু ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, এমনকি সাধারণ মানুষ এই শিবিরে যোগদান করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তরুণ দাসের মতে, “সারা দেশে এইরকম সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা উচিত কারণ ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে মানুষের জ্ঞান খুবই নগণ্য।”
প্রশ্ন- তােমার এলাকায় অরণ্য সপ্তাহ পালিত হ’ল- এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করাে। [মাধ্যমিক- ২০২০]
উত্তরঃ
রঘুনাথপুরে পালিত হল অরণ্য সপ্তাহ
রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া, ১২ই জুলাই- এক হাজার চারাগাছ রোপন করে অরণ্য সপ্তাহ পালন করল পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ব্যবসায়ী উন্নয়ন সমিতি। সম্প্রতি জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে এলাকার বেশ কিছু পুরোনো গাছ কাটা হয়েছিল। অবশ্য পরে সরকারি উদ্যোগে নবনির্মিত সড়কের দু’পাশে অনেক নতুন গাছ লাগানো হয়েছিল কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। ফলে সবুজের ঘাটতি রয়েই গিয়েছিল। তাছাড়া, বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আমফান বহুসংখ্যক গাছ সমূলে উপড়ে ফেলেছে। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য এক হাজার চারাগাছ রোপন করার সিদ্ধান্ত নেয় সমিতি। গত ৫ই জুলাই থেকে ১১ই জুলাই পর্যন্ত রঘুনাথপুর এবং আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় এইসব গাছ রোপন করা হয়। এলাকার বিভিন্ন ক্লাবের সদস্য ছাড়াও অনেক সাধারণ মানুষ বৃক্ষরোপন অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। অরণ্য সপ্তাহের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গিরীশ কেডিয়া বলেন, “সাধারণ মানুষের যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি। আগামী বছর দশ হাজার চারাগাছ রোপন করার কথা ভাবা হচ্ছে।”