দ্বাদশ শ্রেণি
বাংলা গানের ধারা
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
প্রশ্ন- বাংলা সংগীতের ধারায় কাজী নজরুল ইসলামের অবদান আলোচনা করো। (৫)
উত্তর- বাংলা সঙ্গীতের ধারায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯- ১৯৭৬) নিজেই যেন একটা অধ্যায়। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং সর্বোপরি একজন সঙ্গীতজ্ঞ। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা তিন হাজারের কিছু বেশি এবং এগুলি বাঙালি সংস্কৃতির অতুলনীয় সম্পদবিশেষ।
গীতিকার হিসেবে নজরুলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯২৮ সালে, গ্রামোফোন রেকর্ড কোম্পানির গীতিকার হিসাবে। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে নজরুলের শিল্পী জীবনের সূত্রপাত হয় ছোটবেলাতেই। লেটোর দলে কাজ করার সময়ই তাঁর গান রচনার সূচনা হয়েছিল। এই ভ্রাম্যমাণ যাত্রাদলের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে নজরুল বাংলার লোকসঙ্গীতের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন এবং একইসঙ্গে হিন্দু পুরাণ-সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। আবার, সৈনিক হিসেবে মিলিটারি ব্যান্ডের মাধ্যমে তিনি পাশ্চাত্য সঙ্গীত ও ফারসি কবিতার সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁর বিচিত্র জীবন-অভিজ্ঞতা গীতিকার নজরুলকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল।
নজরুলের সঙ্গীত প্রতিভা বিচিত্র এবং বহুমুখী। তাঁর গানগুলিকে নিম্নোক্ত শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে।
দেশাত্মবোধক গান– ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’, ‘ঊর্ধ্বগগনে বাজে মাদল’ ইত্যাদি।
গজল– ‘আসে বসন্ত ফুলবনে’, ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই’, ‘দুরন্ত বায়ু পুরবইয়া’, ‘চেয়ো না সুনয়না’, ‘বসিয়া নদীকূলে’ ইত্যাদি।
রাগাশ্রয়ী– বিভিন্ন রাগ-রাগিনী ব্যবহার করে নজরুল অসংখ্য গান লিখেছেন। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল- ‘ভোরের হাওয়া এলে ঘুম ভাঙাতে’ (রামকেলী), ‘আমার কোনো কূলে আজ ভিড়লো তরী’ (খাম্বাজ-দাদরা) ইত্যাদি।
হিন্দু ভক্তিগীতি– ‘শ্যামা বড়ো লাজুক মেয়ে’, ‘জাগো জাগো শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী’, ‘জাগো হে রুদ্র জাগো রুদ্রাণী’ ইত্যাদি।
ইসলামি গান- ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে’, ‘ইসলামের ঐ সওদা লয়ে’, ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে’ প্রভৃতি।
লোকসংগীত– ‘আমি ভাই ক্ষ্যাপা বাউল’, ‘সারাদিন পিটি কার দালানের ছাদ’, ‘কুচ বরণ কন্যারে’ ইত্যাদি।
প্রভাবিত গান– দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গানের সুরে প্রভাবিত হয়ে নজরুল যেসব গান রচনা করেছিলেন, সেগুলিকে প্রভাবিত গান বলা হয়। যেমন, ‘মোমের পুতুল মমীর দেশের মেয়ে’, ‘দূর দ্বীপবাসিনী’ ইত্যাদি।
এছাড়াও রয়েছে হাস্যরসাত্মক এবং প্যারোডি গান, নতুন তালের গান, হিন্দি গান এবং ছায়াছবির গান। এইভাবে তাঁর গানে বাংলা সঙ্গীতের সমস্ত ধারার মিলন ঘটেছে।