দ্বাদশ শ্রেণি
বাঙালির চিত্রকলা চর্চা
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
প্রশ্ন- চিত্রকলা চর্চায় শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর স্থান নিরূপণ করো। ৫
উত্তর- বিশ শতকে বাঙালির চিত্রকলা চর্চার অন্যতম কান্ডারি ছিলেন নন্দলাল বসু (১৮৮২- ১৯৬৬)। ক্যালকাটা আর্ট স্কুলের কৃতি ছাত্র নন্দলাল শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। শিক্ষাগ্রহণ পর্ব সমাপ্ত করার পর তিনি কিছুকাল ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ অরিয়েন্টাল আর্ট, বিচিত্র সংঘ প্রভৃতি শিল্প-বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এই সময়ই তাঁর ‘সতী’ ছবিটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
নন্দলাল বসু তাঁর শিল্পীজীবনের শুরুতেই ভারতের বিভিন্ন স্থানের শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে পরিচিতি লাভ করার জন্য ভারত ভ্রমণে বেরিয়ে ছিলেন। অবশেষে, ১৯২২ সালে তিনি রবিঠাকুর প্রতিষ্টিত ‘কলাভবন’ শিল্প-বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। সেখানে শিক্ষকতার পাশাপাশি চলে শিল্পচর্চা। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি অজস্র ছবি এঁকেছেন।
বিশেষত্ব
১) অবনীন্দ্রনাথের শিল্পভাবনার দীক্ষিত হলেও নন্দলাল বসুর শিল্পকর্মে স্বকীয়তা ছিল।
২) তাঁর ছবিতে যেমন পুরাণের প্রসঙ্গ এসেছে তেমনি উঠে এসেছে আশেপাশের মানুষ ও প্রকৃতি।
৩) তিনি স্বচ্ছ জলরঙের ওয়াশ পদ্ধতির পাশাপাশি টেম্পেরার কাজেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন।
৪) শিল্পশিক্ষক হিসেবে তিনি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের উপর গুরুত্ব দিতেন।
উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম
শিল্পগুরু নন্দলাল সারাজীবন ধরে অজস্র অসামান্য ছবি এঁকেছেন। তাঁর বিখ্যাত চিত্রগুলির মধ্যে সাবিত্রী ও যম, হলাহল পানরত শিব, গান্ধারী, সতী, হরিপুরা পট, প্রভৃতি উল্লেখ্য। রবীন্দ্রনাথের সহজপাঠের ছবিগুলিও তার আঁকা। ভারতীয় সংবিধানের সচিত্র অলংকরণ করেছিলেন নন্দলাল বসু। চিত্রশিল্প ছাড়া দেওয়াল-চিত্র অঙ্কন করেও তিনি যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
আচার্য নন্দলাল বসু তাঁর শিল্পকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৫৪ সালে ‘পদ্মবিভূষণ’ পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৫৬ সালে তিনি ললিতকলা আকাদেমির ফেলো নির্বাচিত হন। এছাড়াও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডি. লিট, বিশ্বভারতীর দেওয়া দেশিকোত্তম।