নানা রঙের দিন
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
প্রশ্ন- নানা রঙের দিন নাটকে অন্য যে সকল নাটকের সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর- অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে অন্য যে সব নাটকের সংলাপ ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলি হল – মনোমোহন রায়ের ‘রিজিয়া’, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘সাজাহান’, উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘ওথেলো’, ‘ম্যাকবেথ’ এবং ‘রিচার্ড দি থার্ড’ নাটক।
নানা রঙের দিন নাটকের প্রধান চরিত্র রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় একজন অভিনেতা। সেইজন্য তিনি কথায় কথায় অন্য নাটকের সংলাপ বলতেই পারেন। কিন্তু আলোচ্য নাটকে নাট্যকার সচেতনভাবেই এইসব সংলাপ ব্যবহার করেছেন এবং প্রতিটি সংলাপ নাটকের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন –
১) রিজিয়া- বিগতযৌবনের জন্য শোকাকুল রজনীবাবু নিজের প্রতিভা প্রমাণ করার জন্য ‘রিজিয়া’ নাটকের “শাহাজাদি! সম্রাটনন্দিনী!..” সংলাপটি বলেন।
২) সাজাহান- রজনীবাবুর মুখে ‘সাজাহান’ নাটকের তিনটি সংলাপ শোনা যায়। প্রথম দুটি সংলাপ যেন নিজেকে নিজের কাছে প্রমাণ করার আপ্রাণ চেষ্টা। বয়সের ভার যে রজনীবাবুকে জব্দ করতে পারেনি, সেটাই তিনি প্রমাণ করতে চান। কিন্তু এই নাটকের তৃতীয় সংলাপটি অর্থাৎ পিয়ারাবানুর উদ্দেশ্যে সুজার কথাগুলি রজনীবাবুকে আবার বাস্তবের মাটিতে নিয়ে আসে।
৩) ওথেলো- প্রতিভা তাকে ছেড়ে চলে গেছে, তাই তিনিও জীবনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বিদায় নিতে চান। ওথেলোর মতো রজনীবাবুও বলেন- “Farewell the tranquil mind..”
৪) ম্যাকবেথ- সময় বলবান এবং তার সাপেক্ষে মানুষের প্রাণ নেহাতই ক্ষুদ্র, তুচ্ছ। ম্যাকবেথের সংলাপে রজনী বাবুর এই উপলব্ধির প্রকাশ ঘটেছে।
৫) রিচার্ড দি থার্ড- ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের শেষতম সংলাপে বিগত যৌবন এবং প্রতিভার জন্য আরেকবার রজনীবাবুর হাহাকার শোনা যায়। একটি ঘোড়ার অভাবে তৃতীয় রিচার্ড তার রাজত্ব হারাতে বসেছিলেন, আর রজনীবাবু সর্বস্ব হারাতে চলেছেন শুধুমাত্র যৌবনশক্তির অভাবে। “A horse! A horse! My kingdom for a horse!”- শুধু একটি সংলাপ নয়, হৃত-যৌবন এবং লুপ্ত-প্রতিভার জন্য রজনীবাবুর বেদনাভরা হাহাকার।