আমাদের দিন ফুরিয়েছে’…

নানা রঙের দিন

বড় প্রশ্ন (মান-৫)

১। ‘আমাদের দিন ফুরিয়েছে’- কে কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? বক্তার এই উপলব্ধির কারণ ব্যাখ্যা কর।  ২+৩

নানা রঙের দিন
নানা রঙের দিন

উত্তর-  অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় এই খেদোক্তি করেছেন। বয়স বাড়ার কারণে থিয়েটারে এখন তাঁর কদর কমে গেছে। তাই তাঁর কণ্ঠে স্পষ্টতই হতাশার সুর। এই হতাশা থেকে মুক্তি পেতেই তিনি পুরনো দিনের কিছু নাটকের সংলাপ বলতে থাকেন। তাঁর প্রতিভা এখনো যে মরেনি- এটাই তিনি নিজের কাছে প্রমাণ করতে চান। তারপর নিজের অভিনয়ে নিজেই মুগ্ধ হন। কিন্তু এই মুগ্ধতার রেশ বেশিক্ষণ থাকে না। জীবনের অনিবার্য সত্য বার্দ্ধক্য এবং মৃত্যু- এই সত্য তিনি উপলব্ধি করেন। সেই প্রসঙ্গেই রজনীবাবু এই উক্তি করেন।

পেশাদারী নাট্যমঞ্চের এককালীন সফল অভিনেতা রজনী চট্টোপাধ্যায়। থিয়েটারের প্রতি ভালোবাসা তাঁর এমনই ছিল যে ‘থিয়েটার করা’ ছেড়ে দিতে হবে শুনে নিজের প্রেমকে বিসর্জন দিতেও তিনি দ্বিধা করেননি। অভিনয় জীবনে দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশটা বছর কেটে গেছে। কিন্তু ব্যক্তি রজনীবাবুর প্রাপ্তি তখনো শুন্য- সঙ্গীহীন জীবন। তাই নিজের নিঃসঙ্গতা ভুলে থাকার জন্য তিনি বেশি করে থিয়েটারকে আঁকড়ে ধরেছেন।

বয়সটা কমিয়ে রাখতে প্রতিদিন হাফ শিশি করে কলপ লাগান, ছেলে ছোকরাদের সঙ্গে ইয়ার্কিও মারেন। কিন্তু সেই মধ্যরাত্রে নির্জন রঙ্গমঞ্চে দাঁড়িয়ে যেন তাঁর চৈতন্য হল। থিয়েটারের ব্ল্যাকওয়ালে তিনি দেখলেন তাঁর ফেলে আসা জীবন। মধ্যরাত্রির নির্জনতা আর তাঁর জীবনের নিঃসঙ্গতা যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল। তিনি উপলব্ধি করলেন যে তাঁর জীবনে ‘এখন শুধু মাঝরাত্রিরের অপেক্ষা’। তাই নাটকের শেষে তিনি কালিনাথ সেনকে এত সহজেই বলতে পেরেছেন- “ আমাদের দিন ফুরিয়েছে”।

error: Content is protected !!