আমার বাংলা
মেঘের গায়ে জেলখানা
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
প্রশ্ন- ‘জেলখানায় অসহ্য লাগে অপরাধের তুলনায় শাস্তির এই হেরফের’- কোন জেলখানার কথা বলা হয়েছে? ‘অপরাধের তুলনায় শাস্তির হেরফের’ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন? ১+৪
উত্তর- সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘আমার বাংলা’ গ্রন্থের ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ শীর্ষক পরিচ্ছদে উল্লেখিত বক্সার জেলখানার কথা বলা হয়েছে।
বক্সার জেলখানার কয়েদিদের বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখক একদল অভিজাত শ্রেণীর কয়েদির কথা বলেছেন। এরা জেলখানার অন্যান্য কয়েদিদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এরা বড় ঘরের, বনেদি বংশের শিক্ষিত ‘ভদ্রলোক’। এদের অপরাধের ধরনটাও একটু অন্য রকমের। যেমন- কেউ নোট জাল করে জেলে গেছে, কেউ ব্যাংকের লাখ লাখ টাকা চুরি করেছে, আবার কেউ খাবারে ভেজাল মিশিয়ে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। এরা কেউ তথাকথিত ছোটলোক নয় এবং এদের কাউকে কখনো ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে হয় নি। এদের মনগুলো এতই নরম যে রক্ত দেখলে অচৈতন্য হয়ে যায়! লেখকের ভাষায়- “তারা সুয়োরানীর ছেলে”। বড়লোক বলেই জেলখানায় এদেরকে শাস্তি পেতে হয়না, বরং জেল কর্তৃপক্ষ এদেরকে সম্মান দেয়, সাধারন কয়েদিরাও এদেরকে সমীহ করে চলে।
অপরদিকে, জেলখানার সাধারণ কয়েদিরা যারা পেটের জ্বালায় পকেটমারি করেছে অথবা জমি হারিয়ে পাইক-বরকন্দাজদের সঙ্গে লড়াই-ঝগড়া করে জেলখানায় গেছে, তাদের উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়। অভিজাত শ্রেণীর কয়েদিদের অপরাধের মাত্রা অনেক বেশি কিন্তু জেলখানায় তারা ভদ্রলোক সেজে ঘুরে বেড়ায়; আর অন্যান্য কয়েদীরা সামান্য অপরাধ করে চরম শাস্তি ভোগ করে। এই প্রসঙ্গে লেখক বলেছেন “জেলখানায় অসহ্য লাগে অপরাধের তুলনায় শাস্তির এই হেরফের”।