দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
কে বাঁচায় কে বাঁচে
(বড় প্রশ্ন- মান ৫)
প্রশ্ন- “দিন দিন কেমন যেন হয়ে যেতে লাগল মৃত্যুঞ্জয়”-মৃত্যুঞ্জয় কেমন হয়ে যেতে লাগল? তার এমন হয়ে যাওয়ার কারণ কী? ৩+২ (উঃ মাঃ ২০১৮)
উত্তর- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’ গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় দিন দিন কেমন যেন হয়ে যেতে লাগল। সে দেরি করে অফিসে আসত কাজে ভুল করতো চুপ করে বসে বসে ভাবো তো এবং একসময় বেরিয়ে যেত। বাড়িতেও তাকে পাওয়া যেত না। অফিস থেকে বেরিয়ে সে শহরের ফুটপাত ধরে ঘুরে বেড়াতো।
শহরের আনাচে-কানাচে যেখানে যত দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষজন আছে, সেইসব জায়গায় মৃত্যুঞ্জয় যেত। আশ্রয়হীন মানুষগুলিকে সে লক্ষ করত। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে লঙ্গরখানায় অন্নপ্রার্থী মানুষের ভিড় দেখতে সে। যত দিন যায় মৃত্যুঞ্জয়ের এই পাগলামি ততই বাড়তে থাকে।
মৃত্যুঞ্জয়ের এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে একটি ঘটনা। একদিন অফিস যাওয়ার পথে সে প্রথম অনাহারে মৃত্যু দেখলো। শান্ত-নিরীহ মৃত্যুঞ্জয়ের পক্ষে এই অভিজ্ঞতা ছিল খুবই বেদনাদায়ক। একটা পাপবোধ তাকে ক্রমশ গ্রাস করতে থাকে। বহু মানুষ খেতে পাচ্ছে না জেনেও এতকাল সে চার বেলা পেট ভরে খেয়ে এসেছে এবং লোকের অভাবে যথেষ্ট ত্রাণকার্য হচ্ছে না জেনেও সে এতদিন অবসরযাপন করে এসেছে। সে এই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতে চায়। সে চেয়েছিল নিরন্ন মানুষগুলির মুখে অন্ন জুগিয়ে তাদের দুঃখ- দুর্দশা দূর করতে, অথচ সেটা তার একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এই ভাবনা থেকেই সে দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছিল।