বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
মধ্যযুগ- অনুবাদ সাহিত্য
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
প্রশ্ন ১- বাংলা মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কে? তাঁর কবি কৃতিত্বের পরিচয় দাও?
উত্তর- বাংলা ভাষায় মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কাশীরাম দাস। ইনি সপ্তদশ শতকের প্রথমার্ধে কাব্যটি রচনা করেন।
যদিও কাশীরাম দাস সমগ্র মহাভারত টি অনুবাদ করেন নি। আদি সভা বিরাট বনের কতদুর রচনা করে কাশীরাম পরলোক গমন করিয়াছেন। বাকি অংশ তার ভ্রাতা এবং জামাতা রচনা করেন। তবে কাশীরাম যে অংশটুকু লিখেছিলেন সেটি যতখানি কাব্যগুন সম্পন্ন বাকি অংশ ততখানি নয়। সে কারনেই কাশীরাম দাসের নামে কাব্যটির পরিচয় হয়। তার কাব্য রচনার বৈশিষ্ট্য গুলি হল-
(১) কাশীরাম দাস সংস্কৃত মহাভারতকে হুবুহু অনুবাদ করেন নি। মহাভারতের কাহিনি পুরানের উপাখ্যানের সঙ্গে নিজের কল্পনা যুক্ত করেছিলেন।
(২) কাশীরাম দাস তার কাব্যটিকে বাঙালির করে গড়ে তুলতে চাননি। যদিও দুই এক জায়গায় বাঙালিয়ানার দাগ রয়েছে তবে তা কৃত্তিবাসের তুলনায় নেহাতেই কম।
(৩) সংস্কৃত ছন্দ, অলংকার কবি দক্ষতার সঙ্গে প্রয়োগ করেছেন। তাছাড়াও গম্ভীর তাৎপর্যবাহ তৎসম শব্দ অনেক ব্যবহার করেছেন। এই জন্য তার কাব্যটিতে মহাকাব্যিক ভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে।
(৪) মাহাভারতের দর্শন এবং ধর্মীয় ব্যাখ্যাকে কবি ততটা গুরুত্ব দেননি। বরং লোকশিক্ষার জন্যই কবি লেখনী ধারন করেছিলেন বলে মনে হয়। সামাজিক ও পারিবারিক আদর্শ, ন্যায়, ধর্ম প্রভৃতির উপর কবি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
পরিশেষে বলা যায়, অষ্টাদশ পর্বের মহাভারতে ৪ টি মাত্র পর্ব অনুবাদ করেও কাশীরাম দাস বাংলা মহাভারতের অমর কবি হয়ে রয়ে গেছেন।