শিকার
কবি- জীবনানন্দ দাশ
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
প্রশ্ন- “আগুন জ্বললো আবার” — কেন আগুন জ্বলেছিল? ‘আবার’ কথাটি যোগ করা হয়েছে কেন?
উত্তর- জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় উল্লেখিত দ্বিতীয় ভোরে এই আগুন জ্বলার বর্ণনা রয়েছে। এই আগুন জ্বলেছিল হরিণের মাংস রান্না করার জন্য। নগর সভ্যতার টেরিকাটা মানুষের দল একটি নিরপরাধ হরিণকে হত্যা করেই শান্ত হয়নি, সেটির মাংস রান্না করে উদরস্থ করতে চেয়েছিল। সেই জন্য এই আগুনের আয়োজন। কবির ভাষায়- ‘উষ্ণ লাল হরিণের মাংস তৈরি হয়ে এলো’।
কবিতার প্রথম ভোরের বর্ণনায় আগুন জ্বালানোর উল্লেখ ছিল। দেশোয়ালিরা শীতের রাতে শরীরকে উষ্ণ রাখার জন্য সেই আগুন জ্বেলেছিল, যে আগুন ছিল মোরগফুলের মতো লাল। দ্বিতীয় ভোরের বর্ণনায় পুনরায় আগুন জ্বালার প্রসঙ্গ এসেছে বলেই ‘আবার’ কথাটি যোগ করা হয়েছে।
প্রথমবার যে আগুন জ্বালানো হয়েছিল সে আগুন প্রকৃতির প্রতিকুলতা থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য, কিন্তু দ্বিতীয়বার যে আগুন জ্বলল তা মানুষের ধ্বংসলীলার প্রতীক। প্রকৃতির কোলে নির্ভয়ে বসবাসকারী একটি হরিণকে হত্যা করে তার মাংস দিয়ে ভূরিভোজন করার উদ্দেশ্যে এই আগুন জ্বালা হয়েছিল। সেইজন্য প্রথম ভোরের বর্ণনায় কবি আগুনের রং বলেছিলেন লাল আর দ্বিতীয় ভোরের বর্ণনায় রান্না করা হরিণের মাংসটাকে লাল বলা হয়েছে। আসলে নাগরিক সভ্যতার মানুষগুলির লোভ আগুনের লেলিহান শিখার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।