গণমাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্রের গুরুত্ব || Ganamadhyam Hisebe Sangbad Patrer Gurutwo
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা করতে হয়। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “গণমাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্রের গুরুত্ব” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে, উচ্চমাধ্যমিক এবং আরো উচ্চতর শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদেরও কাজে লাগবে। এই প্রবন্ধের অনুরূপ প্রবন্ধ হল- বর্তমান দিনে সংবাদপত্রের ভূমিকা।
প্রবন্ধ- গণমাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্রের গুরুত্ব
ভূমিকাঃ সভ্যতার রথের চাকা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। কৌতূহলপ্রবণ মানুষ সাম্প্রতিক বিশ্বের সর্বশেষতম খবর শুনে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে চায়। শুধু খবর নয়, বিশ্বের নানা প্রান্তের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে তার আগ্রহ। মানুষের কৌতূহল নিবারণের অন্যতম উপায় হল সংবাদপত্র। বিশ্বের এক প্রান্তের খবর অপর প্রান্তের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয় সংবাদপত্র। তবে, নিছক সংবাদ পরিবেশন নয়, সংবাদপত্রের আরো বহুবিধ ভূমিকা রয়েছে। এখনো এমন অনেক মানুষ আছেন যারা সকালে খবরের কাগজ পড়ে দিনের কাজ শুরু করেন। সংবাদপত্র বর্তমানে একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
গণমাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্র
যা জনগণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে, তাকেই বলা হয় গণমাধ্যম। ব্যাপকার্থে গণমাধ্যম বলতে বোঝায় সমাজের বৃহত্তর অংশের ভাব প্রকাশের মঞ্চ এবং একইসঙ্গে সমাজের বিভিন্ন মানুষের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করার মাধ্যম বিশেষ। সংবাদপত্রের কাজও ঠিক তাই।
সংবাদপত্রের ভূমিকা
সংবাদ পরিবেশন– সংবাদপত্রগুলি সারা বিশ্বের সংবাদ সংগ্রহ করে আমাদের সামনে তুলে ধরে। জনপ্রিয় দৈনিক সংবাদপত্রগুলিতে একেবারে আঞ্চলিক খবর থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ, ক্রীড়া-সংবাদ, বিনোদন জগতের হালহকিকত, অর্থনীতি এবং শিল্প-বাণিজ্য সংক্রান্ত খবর পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের পাঠকের কথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন বিষয়ের সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
মুশকিল আসান– নিত্যকার সমস্যার সমাধানের পথ-নির্দেশও থাকে সংবাদপত্রে। কোনো কোনো পত্রিকায় সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে চিকিৎসা, আইন, জ্যোতিষী, মনোবিজ্ঞান প্রভৃতি নানা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয় যা পাঠকের নিত্যদিনের সমস্যা সমাধানের পক্ষে সহায়ক।
জনমত গঠন– জনমত গঠনের ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। গণতন্ত্রের জনমতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। প্রবল জনমতের চাপে সরকার জনবিরোধী নীতি প্রণয়ন করতে পারে না।
পাঠকের সমস্যা তুলে ধরা– প্রতিটি সংবাদপত্রে পাঠকের মতামত জানানোর নির্দিষ্ট কলাম থাকে। সেখানে সাধারণ পাঠক তাদের সমস্যার কথা জানিয়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
বিজ্ঞাপন– সংবাদপত্রের সঙ্গে বিজ্ঞাপনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ছাপার অক্ষরে যা লেখা থাকে মানুষ তা বেশি বিশ্বাস করে। এইজন্য বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য সংবাদপত্রকে বেছে নেয়। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে অধিক সংখ্যক গ্রাহকের কাছে পৌঁছনোর সুযোগ থাকে। আবার, সরকারের পক্ষ থেকে জনস্বার্থমূলক বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে অধিক সংখ্যক জনগণের কাছে কোন বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়।
মানবিক আবেদন– সংবাদপত্রে এমন কিছু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় যেগুলি মানবিক আবেদন সমৃদ্ধ। যেমন- নিরুদ্দেশ সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন, শোকবার্তা, বিশেষ গ্রুপের রক্ত এবং কিডনির জন্য আবেদন ইত্যাদি।
সংবাদপত্রের গুরুত্ব হ্রাস
একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বর্তমানে সংবাদপত্রের জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশে কমে গিয়েছে। টিভি খুললেই এখন হাজারটা নিউজ চ্যানেল। সব চ্যানেলেই দিনভর নিত্য নতুন খবর পরিবেশিত হচ্ছে। টেলিভিশন যেহেতু একটি দৃশ্য-শ্রাব্য মাধ্যম তাই খবরের কাগজের চেয়ে নিউজ চ্যানেলের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক। খবরের কাগজে শুধুমাত্র খবর পড়া যায় কিন্তু টেলিভিশনে খবর দেখা এবং শোনা সম্ভব। এজন্য অনেকেই খবর কাগজ পড়ার থেকে টিভিতে খবর শোনা বেশি পছন্দ করে।
সংবাদপত্রের মর্যাদাহানির আরেকটি কারণ হল স্মার্টফোন। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খবরের কাগজের চাহিদা অনেক কমে গেছে। কারণ, স্মার্টফোনে হরেকরকম নিউজ অ্যাপ রয়েছে। সেখানে বিনামূল্যেই খবর পড়া যায়। তাছাড়া প্রায় সবকটি নিউজ চ্যানেল সরাসরি স্মার্টফোন থেকেই দেখা যায়।
সংবাদপত্রের সমস্যা
সংবাদপত্রের প্রধান কাজ সংবাদ পরিবেশন করা। তবে সেই সংবাদ যেন সত্য এবং রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ হয়। মিথ্যা এবং পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ জনমানসে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাছাড়া অনেক সময় রাজনৈতিক নেতাদের ভয়ে সত্য ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বর্তমানে বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রগুলির দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে যে সৎ, নির্ভীক এবং নিরপেক্ষ সংবাদপত্র এখন বড়ই দুর্লভ। সংবাদপত্র সঠিক ভূমিকা পালন করলে গণতন্ত্রের ভিত মজবুত হয়। কিন্তু সংবাদপত্র ভুল পথে চালিত হলে তার ফল মারাত্মক হতে পারে।
দৈনিক সংবাদপত্রের সমালোচনা প্রসঙ্গে অনেক সময় বলা হয়, যে সংবাদপত্রে প্রকাশিত রাজনৈতিক খবরের আধিক্য অনেক সাধারণ মানুষকে সংবাদপত্র-বিমুখ করে দেয়।
উপসংহার
দৈনিক সংবাদপত্র সম্পর্কে উপরোক্ত সমালোচনা সত্ত্বেও বলা যায় যে সংবাদপত্রের গুরুত্ব এখনো সম্পূর্ণ কমে যায়নি। একথা ঠিক যে, এখন টিভিতে হাজারো নিউজ চ্যানেলের ছড়াছড়ি কিন্তু তা সত্ত্বেও বহু মানুষ সকালের কাগজ থেকে সারা বিশ্বের খবর সংগ্রহ করেন। স্মার্টফোনেও এখন খবর পড়া যায় কিন্তু সেই খবরের সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। কারণ, প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে খবরের নাম করে গুজব ছড়ানো হয় এবং তার পরিণতিতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এইজন্য শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ সংবাদপত্রের উপরেই বিশ্বাস রাখেন এবং ভবিষ্যতেও এই বিশ্বাস অটুট থাকবে। তবে ইদানিংকালে সংবাদপত্রের যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে সেগুলি সংশোধন করারও সময় এসে গেছে। সৎ, নির্ভীক এবং নিরপেক্ষভাবে প্রকাশিত সংবাদপত্র প্রকৃত গণমাধ্যম হয়ে উঠবে এবং গণতন্ত্রের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করবে, এটাই সকলের কাম্য।
(শব্দসংখ্যা- ৬৪০)