বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Prabandha Rachana
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা করতে হয়। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে, উচ্চমাধ্যমিক এবং আরো উচ্চতর শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদেরও কাজে লাগবে।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব
ভূমিকা– বর্তমান যুগ হল বিজ্ঞানের যুগ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষণে জড়িয়ে রয়েছে বিজ্ঞানের অবদান। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমারা যা কিছু ব্যবহার করি, সে সবই বিজ্ঞানের দান। আমাদের চারপাশে যা কিছু চোখে পড়ে তার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে বিজ্ঞান জড়িত রয়েছে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদধন্য হয়ে মানুষ প্রকৃত অর্থেই আধুনিক মানুষ হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা
আদিম মানুষের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিল আগুন জ্বালাতে শেখা। এতদিন পর্যন্ত মানুষ যে আগুন দেখে ভয়ে শিউরে উঠতো সেই আগুনকে বশ করে নিজের কাজে লাগালো। মানুষের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হল চাকা। বর্তমানে মানুষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে অপরিসীম উন্নতি করেছে তার মূলে রয়েছে এই চাকা। আর, যে আবিষ্কারের সুবাদে মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পেরেছে, সেটা হল বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ আবিষ্কার হওয়ার পরই প্রকৃত অর্থে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা সূচিত হয়েছিল। বিদ্যুৎশক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ অনেক নিত্যনতুন জিনিস আবিষ্কার করতে লাগল এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন ঘটাল। যাইহোক, বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ভূমিকা রয়েছে।
প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রায় প্রতিটি জিনিস বিজ্ঞানের দান। বাড়ি তৈরির জন্য রড, সিমেন্ট, রঙ হোক বা বাড়িতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন পাম্প, ওয়াটার পিউরিফায়ার, ফ্যান, হিটার, গিজার, এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদি সবকিছুর মূলে রয়েছে বিজ্ঞান। এই তালিকায় রয়েছে প্রেসার কুকার, মাইক্রোওভেন, ইন্ডাকশন কুকার, মিক্সার, জুসার প্রভৃতি। এইসব যন্ত্রপাতি আধুনিক জীবনকে সহজতর করে তুলেছে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান
চিকিৎসাক্ষেত্রেও বিজ্ঞান কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। আগে যেসব রোগে মানুষ মারা যেত, এখন সেইসব রোগের ওষুধ আবিষ্কার হওয়ার ফলে মানুষের গড় আয়ু অনেক বেড়ে গেছে। এখন ক্যানসার রোগেরও চিকিৎসা সম্ভব। তাছাড়া, বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে রোগ নির্ণয় করা সহজ হয়েছে এবং শল্যচিকিৎসার ক্ষেত্রেও অনেক উন্নতি ঘটেছে।
কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে বিজ্ঞান
উচ্চফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হওয়ার ফলে কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আবার, শিল্পের আঙিনায় বিজ্ঞানের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। শিল্প কারখানায় উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে কম খরচে বেশি পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান
প্রাচীন ভারতের শিক্ষার্থীরা গুরুকুলে শিক্ষালাভ করত। ব্রিটিশরা এদেশে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থাতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। পাঠদানের ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার করে সাধারণ ক্লাসরুমকে স্মার্ট ক্লাসরুম করা হচ্ছে। এখন পাঠ্যপুস্তকের জায়গা কেড়ে নিয়েছে অডিও-ভিজ্যুয়াল স্টাডি মেটেরিয়াল। ইন্টারনেট ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এখন ছাত্রছাত্রীরা ঘরে বসে অনলাইন কোচিং নিতে পারছে, অনলাইন টেস্টও দিতে পারছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি
বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও চরম উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানুষ এখন “দূরকে করেছে নিকট”। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে পৌঁছাতে হলে মানুষের কাছে দূরত্বটা আর কোনো বাধা নয়। জল, স্থল এবং বায়ুপথে মানুষ এখন পৃথিবী পরিক্রমা করতে পারে। তাছাড়া, মানুষের তৈরি রকেট এখন গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে পাড়ি দিচ্ছে।
মনুষ্য এবং পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি তথ্য আদানপ্রদানের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান আজ সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছে গেছে। চিঠি, টেলিগ্রাম, টেলিফোনের যুগ পেরিয়ে আমরা এখন মোবাইল জামানায় এসে পৌঁছেছি। হাতের তালুতে থাকা স্মার্টফোন ব্যক্তিমানুষকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
বিনোদন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান
বিনোদনের জগতে বিজ্ঞানের প্রথম অবদান ছিল চলচ্চিত্র বা সিনেমা। পর্দায় মানুষের নড়াচড়া দেখে সেদিন মানুষ মুগ্ধ হয়েছিল। এরপর মানুষের বিনোদনের তালিকায় যুক্ত হয়েছিল রেডিও এবং টেলিভিশন। সিনেমা, রেডিও এবং টিভি- বিনোদনের এই তিন মাধ্যম নিয়ে মানুষের আশ্চর্য সীমা ছিল না। সেদিন কেউ ভাবতে পারেনি যে একদিন মানুষ তার পকেটে সমগ্র জগতের বিনোদন-ভান্ডার নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। স্মার্টফোন আবিষ্কার হওয়ার ফলে এমনটাই ঘটেছে। বর্তমানে বিনোদন হল সম্পূর্ণ মোবাইল-কেন্দ্রিক।
উপসংহার
একথা ঠিক যে, বিজ্ঞান আমাদের দৈনন্দিন জীবন আরামদায়ক করে তুলেছে। কিন্তু সমস্যাটা হল আরামের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে আমরাও যন্ত্রনির্ভর হয়ে যাচ্ছি। যে মানুষ যন্ত্র তৈরি করেছে সেই মানুষ যদি যন্ত্রের দাস হয়ে যায় তাহলে দুশ্চিন্তার অবকাশ থেকেই যায়। তাছাড়া, পরিবেশের কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। আমাদের নিজেদের সুবিধার্থে অনেক সময় পরিবেশের ক্ষতি করে ফেলি। যেমন, এসি বা ফ্রিজ ব্যবহার করলে সেগুলি থেকে ক্লোরো-ফ্লুরো কার্বন গ্যাস নির্গত হয় যা পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই মানবসভ্যতার স্বার্থে পরিবেশবান্ধব উপায়ে বিজ্ঞানের ব্যবহার করাই কাম্য। (শব্দসংখ্যা- ৫৮০)