দ্বাদশ শ্রেণি
বাঙালির বিজ্ঞান চর্চা
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
প্রশ্ন- চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে বিধানচন্দ্র রায়ের অবদান আলোচনা করো। (৫)
উত্তর- পশ্চিমবঙ্গের রূপকার তথা পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধানচন্দ্র রায় (১৮৮২- ১৯৬২) চিকিৎসক হিসেবে তাঁর জীবদ্দশাতেই একজন কিংবদন্তী হয়ে উঠেছিলেন। ১৯০৬ সালে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এল. এম. এস ও এম. বি. পাশ করেন এবং ১৯০৮ সানি এমডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯০৯ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড গিয়ে একইসঙ্গে এম. আর. সি. পি এবং এফ. আর. সি. এস পাশ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
দেশে ফিরে তিনি প্রথমে ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক (১৯১১) এবং পরে কারমাইকেল মেডিকেল কলেজে মেডিসিনের অধ্যাপকের পদ (১৯১৮) গ্রহণ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি প্রাইভেট প্র্যাকটিসও শুরু করেন। চিকিৎসক হিসেবে তাঁর খ্যাতি কেবল কলকাতা বা বাংলার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তাঁর সমকালে ডঃ রায় ভারতের চিকিৎসকদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন। ভারতের বাইরেও তাঁর চিকিৎসার কদর ছিল।
তাঁর রোগীদের তালিকায় ছিলেন তখনকার দিনের বিখ্যাত সব গুণীজন। যেমন- দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, মোতিলাল নেহরু, মহাত্মা গান্ধী, বল্লভ ভাই প্যাটেল, মৌলানা আজাদ, জওহরলাল নেহরু, তাঁর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী প্রমুখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ডঃ বিধানচন্দ্র রায়ের চিকিৎসা-পরামর্শ নিতেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট এটলি প্রমুখ রাষ্ট্রনেতা তাঁর গুণগ্রাহী ছিলেন। গান্ধীজি অনশন করলেই সব কাজ ছেড়ে বিধানচন্দ্র রায় ছুটে যেতেন তাঁর সেবা করার জন্য।
মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি নিজের বাড়িতে নিয়মিত বিনা পয়সায় রোগী দেখতেন। এই কাজে তিনি নিজ অর্থব্যয়ে আরো দু’জন চিকিৎসক নিযুক্ত করেছিলেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এই অকৃতদার মানুষটি মানবসেবায় ব্রতী ছিলেন। ১৯৬১ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ পান। ১৯৬২ সালে নিজের জন্মদিনেই অর্থাৎ ১লা জুলাই তিনি পরলোকগমন করেন। তাঁর সম্মানে প্রতিবছর ওই দিনটি ‘চিকিৎসক দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।