দ্বাদশ শ্রেণি
বাঙালির চিত্রকলা চর্চা
বড় প্রশ্ন (মান-৫)
প্রশ্ন– বঙ্গদেশের চিত্রকলার ইতিহাসে ভাস্কর ও চিত্রকর রামকিঙ্কর বেইজের অবদান ও স্বকীয়তা বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো। (৫)
উত্তর– আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর্যকলার একজন বিশিষ্ট শিল্পী ছিলেন রামকিঙ্কর বেইজ (১৯০৬- ১৯৮০)। তাঁকে শুধু একজন শিল্পী বললে কম বলা হবে, তিনি ছিলেন একজন শিল্পসাধক। রামকিঙ্কর ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী এবং ভাস্কর।
রামকিঙ্কর ১৯০৬ সালে বাঁকুড়ার জুগিপাড়ায় এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কুমোরদের কাজ দেখে তিনি বড় হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই কাদা দিয়ে মূর্তি গড়েছেন। এমনি করেই ভাস্কর্য শিল্পের প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯২৫ সালে ‘প্রবাসী’র সম্পাদক রমানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের পরামর্শে তিনি বিশ্বভারতীর কলাভবনে ভর্তি হন। সেখানে আচার্য নন্দলাল বসু ছিলেন তাঁর শিক্ষক। কথিত আছে, কলাভবনে তাঁর কাজের নমুনা দেখে নন্দলাল প্রথম দিনই বলেছিলেন, ‘‘তুমি সবই জানো, আবার এখানে কেন?’’ রামকিঙ্কর ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত শিল্পী ছিলেন, তবে এই শান্তিনিকেতনেই তাঁর ভাস্কর্যকলা পূর্ণমাত্রায় বিকাশ লাভ করেছিল।
বিশেষত্ব
১) রামকিঙ্করের ছবিগুলি ছিল প্রকৃতিকেন্দ্রিক।
২) প্রান্তিক মানুষের দৈনন্দিন জীবনেই ছিল তাঁর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর বহু শিল্পকর্মে এসব মানুষের দেখা মেলে।
৩) উন্মুক্ত ভাস্কর্য নির্মাণে তিনি সিমেন্ট ও পাথর ব্যবহার করতেন।
৪) তিনি পাশ্চাত্য শিল্পীদের মত মডেল ব্যবহার করতেন।
৫) ভাস্কর্যে টেরাকোটা রিলিফ ও পাথর খোদাইয়ে এবং চিত্রশিল্পে জল ও তেলরঙে তিনি বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন।
উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম– চিত্রশিল্পী হিসেবে রামকিঙ্করের প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ‘কুকুর সাথে রমণী’, ‘পিকনিক’, ‘ঝড়ের পরে’, ‘বিনোদিনী’ প্রভৃতি ছবিতে। তাঁর উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যের নমুনা হল ‘সুজাতা’, ‘সাঁওতাল দম্পতি’, ‘হাটের পথে’ প্রভৃতি।
পুরস্কার ও সম্মাননা– তিনি বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত ডি. লিট এবং ভারত সরকারের খেতাব ‘পদ্মভূষণ’ লাভ করেছেন।