রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ছুটি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ছুটি|| Chhuti by Rabindranth Tagore

বাংলা ছোটগল্পের পথিকৃৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বহুপঠিত গল্প হলো ছুটি। আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি তেরো বছরের কিশোরের গল্প। তার নাম ফটিক চক্রবর্তী। কিন্তু ‘ছুটি’ শুধু ফটিকের গল্প নয়, বরং বলা যেতে পারে লেখক ফটিকের মধ্য দিয়ে বয়ঃসন্ধিক্ষণের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। এক জায়গায় লেখক বলেছেন, “তেরো-চৌদ্দ বছরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। শোভাও নাই, কোনো কাজেও লাগে না।” ফটিক হল এই ‘তেরো-চৌদ্দ বছর’ বয়সীদের প্রতিনিধি এবং ছুটি হল বয়ঃসন্ধিক্ষণের স্বাভাবিক সমস্যার গল্প।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ছুটি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ছুটি

ছুটি গল্পের কাহিনী সংক্ষেপ

ফটিক তার সমবয়সী বালকদের সর্দার। ফটিক অবাধ্য, উচ্ছৃংখল এবং পড়াশোনায় অমনোযোগী। তার জন্য তার বিধবা মায়ের দুর্ভাবনার শেষ নেই। ফটিকের মা এমনকি এটাও মনে করে যে, ফটিকের জন্য তা ছোটো ভাই মাখননালের বড়সড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। যদিও ফটিক কোনদিন তার ভাইয়ের ক্ষতি করেনি, তবুও শান্ত স্বভাবের মাখনলাল মায়েরে বেশি প্রিয় ছিল।

একদিন ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু তাদের বাড়িতে আসে এবং ফটিকের পড়াশোনার জন্য তাকে কলকাতায় নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। এতে ফটিকের মামী বিরক্ত হয় কারণ তাদের নিজেরই তিনটি ছেলে রয়েছে। যাইহোক, কলকাতায় গিয়ে অনাদরে, অবহেলায় ফটিকের দিন কাটতে থাকে। সে বাড়ি ফিরে যেতে চায়। মামা বলে, পুজোর ছুটিতে অর্থাৎ কার্তিক মাসে তাকে বাড়িতে পাঠানো হবে। কিন্তু কার্তিক মাস তো এখনও অনেক দেরি। মামার বাড়িতে ফটিকের আর মন বসে না।

একদিন তার জ্বর হয়। মামী বিরক্ত হবে জেনেই ফটিক কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। আশেপাশে খোঁজাখুঁজি করার পর যখন তার কোনো খবর পাওয়া যায় না, ফটিকের মামা পুলিশে খবর দেয়। সন্ধ্যার সময় পুলিশের লোক এসে ফটিককে মামার বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে যায়। একে তো জ্বর, তার ওপর সারাদিন ভিজেছে, সারা গায়ে কাদা। থর্ থর্ করে কাঁপছিল সে। মামা তাকে প্রায় কোলে করে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শোয়ায়।

ডাক্তার আসে। ফটিক জ্বরের মধ্যে বিড় বিড় করে অনেক কিছু বলতে থাকে। ডাক্তার জানায়, অবস্থা বড়ই খারাপ। একসময় ফটিকের মাও আসে। ফটিক বলে, ” মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।”

ছুটি গল্প থেকে প্রশ্নের উত্তর:

ছুটি গল্প থেকে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়া হল। এগুলি ছাড়াও যদি অন্য কোনো প্রশ্নের উত্তর চাও তাহলে যোগাযোগ ফর্মের মাধ্যমে জানাবে। যদি প্রশ্নটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে যত শীঘ্র সম্ভব উত্তর দেওয়া হবে।

প্ৰশ্ন: ‘ছুটি’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

উত্তরঃ সাহিত্যে নামকরণের বিশেষ ভূমিকা থাকে। নাম দেখেই পাঠকের মনে উক্ত রচনা সম্পর্কে একটা অগ্রিম ধারণা তৈরি হয়ে যায়। নামকরণ যথাযথ হলে পাঠকের ধারণা এবং সাহিত্যিকের ভাবনা এসে এক বিন্দুতে মিলিত হয়।

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ছুটি’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করা যাক।

‘ছুটি’ কথার সাধারণ অর্থ হল অবসর, অবকাশ বা ফুরসত। কোনো কর্মসূচির পর যে বিরাম, তাকেই বলা হয় ছুটি।

গল্পের প্রধান চরিত্র ফটিক মায়ের অবাধ্য, দুরন্ত এক ছেলে। লেখাপড়া শেখাবে বলে তার মামা তাকে কলকাতায় নিয়ে যায়। কিন্তু কলকাতার দমবন্ধ করা পরিবেশ ফটিকের পছন্দ হয়নি। তার ওপর তার মামীর অনাদর, অবহেলা তাকে প্রতিমুহূর্তে গ্রামের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। সে বাড়ি যেতে চাইলে মামা তাকে জানায়, পুজোর ছুটিতে তাকে মায়ের কাছে পাঠানো হবে। এরপর থেকে ফটিক প্রতিনিয়ত সেই ছুটির জন্য দিন গুনতে থাকে।

তারপর একদিন সে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে পড়ে। অসুস্থ ফটিককে পুলিশের লোক মামার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। প্রবল জ্বরের মধ্যেও সে জিজ্ঞাসা করে, “মামা, আমার ছুটি হয়েছে কি?” দু’দিন পরে মা তাকে দেখতে এলে, ফটিক জানায়, “মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা।…”

ফটিক ছুটি চেয়েছিল, ছুটি পেল। বিষয়বস্তু অনুযায়ী আলোচ্য কাহিনির নাম ‘ছুটি’ ছাড়া অন্য কিছু হতেই পারে না। আবার, গল্পের শেষে ফটিক যে ছুটির কথা বলেছে, তা যদি আসলে ‘জীবনযন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি’ হয়, তাহলে বলতে হয় গল্পের নামকরণটি ব্যঞ্জনাধর্মী হয়েছে। (শব্দসংখ্যা ২০০)

প্রশ্ন: ‘ছুটি’ গল্প অবলম্বনে ফটিক চক্রবর্তীর চরিত্র বিশ্লেষণ করো। (৫)

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ছুটি’ গল্পের প্রধান চরিত্র ফটিক চক্রবর্তী। আলোচ্য ছোটগল্পের ছোটো পরিসরে লেখক ফটিক চরিত্রের কার্যকলাপের পাশাপাশি অত্যন্ত সুচারুভাবে তার মানসলোক ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্প অবলম্বনে তার চরিত্রের বিশেষত্বগুলি হল-

স্বেচ্ছাচারিতাঃ মাঠে-ঘাটে অকর্মণ্যভাবে ঘুরে বেড়ানো, নদীতে যখন তখন ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতার কাটা এবং আরো অনেক কিছু যা অন্যের কাছে উপদ্রব বলে মনে হয়- এইসব করে বেড়ানোই ছিল তার কাজ। একইসঙ্গে, পড়াশোনায় সে ছিল অমনোযোগী। এইজন্য মামার কাছে ফটিকের মা বলেছিল, “ফটিক আমার হাড় জ্বালাতন করিয়াছে।”

নেতৃত্বদানঃ লেখকের ভাষায়, সে ছিল তার সমবয়সী ‘বালকদিকের সর্দার’।

সরলতাঃ ফটিকের মামা যখন তাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়, সে এক বাক্যে রাজি হয়ে গিয়েছিল।

মাতৃভক্তিঃ মা তাকে চিরকাল ভুলই বুঝে এসেছে। তবু, কলকাতার বদ্ধ পরিবেশে যখন তার দমবন্ধ হয়ে আসতো, তখন মাকেই তার বেশি মনে পড়তো। শরীর খারাপের সময়ও সে মায়েরই সঙ্গ চেয়েছিল।

ভ্রাতৃপ্রীতিঃ মাখন অনেক সময় তার মায়ের কাছে ফটিকের বিরুদ্ধে মিথ্যে নালিশ করতো। কিন্তু ফটিক কলকাতা যাওয়ার আগে তার যাবতীয় খেলার সামগ্রী মাখনকে দিয়ে গিয়েছিল।

আত্মমর্যাদা বোধঃ বই হারানোর কথা ফটিক মামীকে জানালে তার মামী উত্তরে বলেছিল, মাসে পাঁচবার করে বই কিনে দেবার ক্ষমতা তার নেই। এই কথাটা তার আত্মসম্মানে আঘাত করেছিল। (শব্দসংখ্যা ১৮০)

প্রশ্ন: ‘ছুটি’ গল্পে ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবুর চরিত্র বিশ্লেষণ করো। (৫)

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ছুটি’ গল্পের একটি অন্যতম চরিত্র হলো ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু। আলোচ্য গল্পে তার সংক্ষিপ্ত অথচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ‘ছুটি’ গল্প অবলম্বনে ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবুর চরিত্রের যে দিকগুলি ফুটে উঠেছে সেগুলি হল-

কর্তব্যপরায়ণ: বিশ্বম্ভরবাবু দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমে কাজ করতে গিয়েছিল। সেইজন্য ফটিকের মায়ের খবর নেওয়া হয়নি। তবে, দেশে ফিরেই সে বোনের বাড়িতে এসে হাজির হয়। শুধু তাই নয়, ফটিকের অবাধ্য উচ্ছৃংখল আচরণ এবং পড়াশোনায় অমনোযোগিতার কথা শুনে সে স্বেচ্ছায় ফটিককে কলকাতায় নিয়ে যেতে চায়। এভাবে সে নিজের বিধবা বোন এবং ভাগ্নের প্রতি কর্তব্য পালন করেছে।

স্নেহশীল: ফটিকের মামী কখনোই তাকে ভালো চোখে দেখেনি। এমনকি তার মামাতো ভাইয়েরাও তাকে কোনোদিন আপন করে নেয়নি। মামার বাড়িতে মামা বিশ্বম্ভরবাবুই ছিল ফটিকের একমাত্র স্নেহের আশ্রয়।
পুলিশের লোক যখন অসুস্থ ফটিককে মামার বাড়িতে দিয়ে যায় তখন মামাই তাকে প্রায় কোলে করে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়।

দায়িত্ববান: সকাল থেকে ফটিকের খোঁজ পাওয়া না গেলে মামা বিশ্বম্ভরবাবু পুলিশে খবর দেয়। অসুস্থ ফটিকের চিকিৎসার জন্য সে ডাক্তার ডাকে। আবার, ফটিকের অবস্থা গুরুতর হলে সে তার মাকেও খবর দিয়েছিল। (শব্দসংখ্যা ১৬১)

প্রশ্ন: ‘ছুটি’ গল্পে ফটিকের মায়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য চরিত্র বিশ্লেষণ করো। (৫)

উত্তরঃ কথায় বলে, “কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা হয় না কখনো।” সন্তানের কাছে মা-ই হলো স্নেহের পরম আধার। কিন্তু একের অধিক সন্তানের জননী হলে হয়তো অপত্যস্নেহের তারতম্য দেখা দেয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পে ফটিকের মা দুই সন্তানের জননী। আলোচ্য গল্পের আলোকে ফটিকের মায়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করা যাক।

রক্ষয়ত্রী: আলোচ্য গল্পে ফটিকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে তার মাকে ‘অত্যাচারিনী, অবিচারিনী’ মনে হতে পারে। আসলে মায়ের চোখে মাখন ছিল দুর্বল, আর ফটিক সবল। ফটিক যাতে কোনোপ্রকারে মাখনের ক্ষতি করে না বসে, সেকথা ভেবে মাকে নিজের বড় ছেলের প্রতি একটু বেশি কাঠিন্য দেখাতে হত। এমনকি, এই ভাবনা থেকেই সে ফটিককে কলকাতায় পাঠাতে রাজি হয়েছিল।

সরল: ফটিকের মা ছিল সরল মনের মানুষ। এজন্য মাখনের কথা কোনোভাবে যাচাই না করেই বিশ্বাস করে নিত।

স্নেহময়ী: ফটিকের মায়ের ‘অত্যাচারিণী’ মাতৃমূর্তির আড়ালে যে এক পরম স্নেহময়ী জননী লুকিয়ে রয়েছে, গল্পের শেষ অংশে আমরা তার পরিচয় পাই যখন ফটিকের অসুস্থতার খবর পেয়ে তার মা কান্নায় ভেঙে পড়েছিল।

অভিমানী: ফটিকের কলকাতায় যাবার প্রস্তাবে তার মা-ই প্রথম সমর্থন জানিয়েছিল, কিন্তু ফটিকের অধিক ঔৎসুক্য দেখে তার মায়ের একটা ক্ষীণ অভিমান হয়েছিল। (শব্দসংখ্যা ১৬৯)

প্রশ্ন: ‘ছুটি’ গল্পে মামাবাড়িতে গিয়ে ফটিকের যে দুরবস্থা হয়েছিল তা নিজের ভাষায় লেখো। (৫) [HS Model Question 2024, WBCHSE]

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ছুটি’ গল্পের প্রধান চরিত্র ফটিক। ভালোভাবে লেখাপড়া শেখাবে বলে তার মামা তাকে কলকাতায় নিয়ে চলে যায়। শুরু হয় তার জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়।

অনাদরের জীবন: নিজের তিন সন্তানকে নিয়ে মামীর সংসারে ফটিক অনাহুত ছিল। সেখানে ফটিকের ভাগ্যে ছিল শুধু অনাদর আর অবহেলা। অবশ্য ফটিক সুযোগ পেলেই মামীর মন জয় করার চেষ্টা করত, কিন্তু কোনোদিন মামীর স্নেহের পাত্র হতে পারেনি।

খাচায় বন্দি: গ্রামে সে ছিল মুক্ত বিহঙ্গের মতো। মামাবাড়িতে এসে যেন সে চার ‘দেওয়ালের মধ্যে আটকা’ পড়ে। তখন তার শুধুই গ্রামের কথা মনে পড়তো। একদিন মামাকে বলে, “মামা, মার কাছে কবে যাব?” মামা বলে, “স্কুলের ছুটি হোক।”

অপমানিত: স্কুলে পড়া না পারায় ফটিককে প্রতিদিন মার খেতে হতো। বই হারিয়ে অবস্থা আরও খারাপ হয়। তার মামাতো ভাইয়েরা তার সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক স্বীকার করতে লজ্জা পেতো। মামীকে বই হারানোর কথা জানালেও তাকে অপমানিত হতে হয়।

মুক্তির সন্ধানে: মামীর অনাদর আর গন্ডীবদ্ধ জীবন থেকে মুক্তির সন্ধানে ফটিক একদিন নিজেই বেরিয়ে পড়ে। পুলিশের লোক তাকে মামার বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে যায়। ফটিক গুরুতর অসুস্থ হয়। মা তাকে দেখতে এলে সে জানাই, “মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা। এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।” (শব্দসংখ্যা ১৭৫)

প্রশ্ন: . “দাও ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দাও।”-কে, কখন এ কথা বলেছে? বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ কী? (২+৩)

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ছুটি’ গল্পে ফটিকের মামী একথা বলেছিল। ফটিকের মামি তার স্বামীকে (অর্থাৎ, ফটিকের মামাকে) উদ্দেশ্য করে বলেছিল যেন ‘ওকে’ অর্থাৎ ফটিককে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশের লোক যখন অসুস্থ ফটিককে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে যায়, তখন ফটিকের মামী এই মন্তব্য করেছিল।

এরূপ মন্তব্যের কারণ: ফটিকের মামী নিজের তিন ছেলেকে নিয়ে গুছিয়ে সংসার করছিল। সেই সংসারে ফটিক ছিল নেহাতই অনাহুত অতিথির মতো। সেইজন্য মামী কোনোকালেই ফটিককে পছন্দ করত না। পরের ছেলেকে নিয়ে অযথা মাতামাতি করা তার মোটেও পছন্দ ছিল না।

দ্বিতীয়ত, গ্রাম থেকে আসা ফটিক মামীর সংসারে নিতান্তই বেমানান ছিল।

তৃতীয়ত, ফটিকের মামা ফটিককে ভালোভাবে লেখাপড়া শেখানোর জন্য কলকাতায় নিয়ে এসেছিল। কিন্তু তার সে উদ্দেশ্য যে সিদ্ধ হয়নি সেকথা বলাই বাহুল্য। পড়া না পারার জন্য ফটিককে প্রতিদিন স্কুলে অপমান এবং মার খেতে হত।

সর্বোপরি, ফটিক যেভাবে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, তাতে তার মামী যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছিল। দুশ্চিন্তায় সারাদিন সে ভালো করে খাওয়া দাওয়া করেনি এবং নিজের ছেলেদেরকেও অহেতুক বকাবকি করেছিল। তাই পরের ছেলে মানুষ করার বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতেই ফটিকের মামী একথা বলেছিল। (শব্দসংখ্যা ১৬৮)

প্রশ্ন: “বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন।”- বিধবার পরিচয় দাও। তাকে কে, কী প্রস্তাব দিয়েছিল? বিধবা তাতে রাজি হল কেন? (১+২+২)

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ছুটি’ গল্পের উদ্ধৃত অংশে ‘বিধবা’ বলতে ফটিকের মাকে বোঝানো হয়েছে।

কে, কী প্রস্তাব দিয়েছিল: কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন পশ্চিমে থাকার পর দেশে ফিরেই ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু তার বোনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। দীর্ঘকাল পর তাদের এই সাক্ষাৎ। সময়ের এই ব্যবধানে তার বোনের দুই ছেলে হয়েছে এবং স্বামীও গত হয়েছে। বিবেকবান বিশ্বম্ভরবাবু বোনের কাছে তার ছেলেদের মানসিক বিকাশ এবং পড়াশোনার খবর জানতে চাইলে সে জানায় যে, তার ছোটো ছেলে অর্থাৎ মাখন শান্ত, সুশীল এবং বিদ্যানুরাগী কিন্তু বড় ছেলেটি অর্থাৎ ফটিক অবাধ্য, উচ্ছৃংখল এবং পড়াশোনায় অমনোযোগী। একথা শুনে ফটিকের মামা প্রস্তাব দেন যে, তিনি ফটিককে কলকাতায় নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে লেখাপড়া শেখাবেন।

রাজি হওয়ার কারণ: ‘বিধবা’ অর্থাৎ ফটিকের মা তার দাদার এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল দুটি কারণে-

প্রথমত, ফটিক ছিল তার আয়ত্তের বাইরে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে লেখাপড়া শেখাতে পারেনি। তাছাড়া, ফটিকের দুরন্তপনা ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছিল। মামাবাড়িতে গিয়ে মামার তত্ত্বাবধানে থেকে যদিবা ফটিকের কিছু উন্নতি হয়, এই আশায় সে দাদার প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, তার আশঙ্কা ছিল ফটিক তার ভাইয়ের (মাখনের) বড়সড় ক্ষতি করে দিতে পারে। এই অহেতুক ভয়ের কারণে সে ভেবেছিল ফটিকের মামাবাড়ি চলে যাওয়াই ভালো। (শব্দসংখ্যা ১৭০)

দ্বিতীয় সেমিস্টারের অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তরঃ 

error: Content is protected !!